।।১।।
হঠাৎই ভাতঘুম ভেঙ্গে যায় চেরাগ আলীর। চরম একটা স্বপ্নের ক্লাইম্যাক্সের আগেই ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় মহা বিরক্তি লেগে ওঠে তার। তার উপর মনে হলো যেন পেটের কাছটা কে যেন আচ্ছা করে শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষেছে কিছুক্ষণ, এরপর হাতুড়ি দিয়ে ঠুনঠুন পিটিয়েছে। এহেন গাত্রপ্রদাহে মেজাজ খাপ্পা হয়ে ওঠে তার। অবেলায় যার ডাকে ঘুম ভেঙ্গেছে সেই অজ্ঞাতকূলশীল ব্যক্তির উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে, আরে বাবা ডাকবি তো ভদ্র ভাবে ডাক। একটা হালকা রেশমী রুমাল দিয়ে মোলায়েম করে কাতুকুতু দিলেও তো চলতো, না কি? তা না, এরকম বর্বরতা! তবে সাথে একটু অবাকও হয়, অনেক দিন তো তার ঘুমে কেউ বাঁ হাত গলিয়ে দেয় নাই।
গজগজ করতে করতে ক্যাটকেটে হলুদ একটা পাজামা বের করে পরতে থাকে সে। আহ, কতদিন পর এই পাজামাটা পরছে, সেই কবে বাগদাদ থেকে আনা। বাগদাদের কথা মনে পড়তেই মনে পড়ে যায় সেই ক্ষীণতনু তরুণীর কথা, আহা সেই ঘন কালো কেশ.... কী যেন নাম ছিলো...হ্যাঁ, মনে পড়েছে - জেসমিন। জেসমিনের কথা মনে পড়তেই মনটা ফুরফুরে হয়ে ওঠে চেরাগ আলীর, এমনকি সেই শিরীষ-ঘর্ষণকারীর উপরও রাগটা কমে যায়। বেচারা নিশ্চয়ই তার জন্য অপেক্ষা করছে এখন বাইরে। হুড়মুড় করে বেরিয়ে পড়ার একটা ইচ্ছা জাগে চেরাগ আলীর মনে, কিন্তু এতদিন পর বাইরে বেরোচ্ছে - একটু সাজুগুজু ছাড়া কি চলে? তাছাড়া মান-ইজ্জত-ঐতিহ্যেরও একটা ব্যাপার আছে। খুঁজেপেতে নকশাদার পাগড়িটা বের করে পরে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরখ করে নেয় চেরাগ - নাহ, এখনো আগের মতোই জেল্লাদার আছে সে; খানদানি ভুড়িটার ওপর আদর করে একটু টাক-ডুমাডুম বাজিয়ে নেয়। একটু দেরি হয়ে গেলেও এখন যাওয়া যায় বাইরে, সকলে জানুক, অনভ্যাসে চেরাগ আলীর জাঁকজমকের কোন কমতি পড়ে নাই।
বাইরে বেরিয়েই পুরানো অভ্যাসবসে হোঃহোঃহোঃ একটা অট্টহাসি দেয় চেরাগ। সামনের দিকে চোখ পড়তেই দেখে একটা অল্পবয়সী কিশোর মেঝের ওপর পড়ে আছে। আশ্চর্য হয়ে যায় চেরাগ আলী - এটা কোন ধরণের অভদ্রতা!তাকে ঘুম থেকে তুলে নিজে পড়ে পড়ে ঘুমানো! রোখ চেপে যায় তার, স্লা, আমাকে ঘুমাতে দিলি না, তোর ঘুম আমি বের করছি। প্রবল ধাক্কাধাক্কি শুরু করে, কিন্তু কিছুতেই টনক নড়ে না কিশোরের। কিছুক্ষন পর হাল ছেড়ে দেয় চেরাগ, ধুস্, এতো সাজুগুজু সব বৃথা গেলো। ভেতরে গিয়ে কাপড়-চোপড় ছেড়ে নাকে একটু সরিষার তেল লাগিয়ে নিয়ে ঘুমানোর আয়োজন করে চেরাগ আলী।
।।২।।
"কিরে আলাউদ্দীন, তুই কামকাইজ ছাইড়া ঘুমাইবার লাগছোস কেলা? ওঠ ওঠ কইতাছি।"
মালিকের ডাক শুনে চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে আলাউদ্দীন। "না ওস্তাদ, আমি পুরানো মালগুলা ঝাড়বার-পুঁছবার লাগছিলাম, মইধ্য দিয়ে কি জানি দেখলাম ধুঁয়াধুঁয়া, মাথাটা কেমুন জানি চক্কর দিয়া উঠলো।" "আবার কতা কয়, ওঠ মেলা কাম পইড়া আছে।" আলাউদ্দীন আবার কাজে লেগে যায়, দোকানের পেছনে যে এত পুরানো মাল পড়ে আছে খেয়ালই করা হয় নাই এতদিন। এখন সব ঝেড়েঝুড়ে পরিষ্কার করে রাখছে সে। এরমধ্যে একটা পুরানো পিদিম তার পছন্দম হয়েছে, ঝাড়ার পর বেশ চকচক করছে। আজকে যাবার সময় আস্তে করে বাসায় নিয়ে যাবে, মালিক এতো কিছু খেয়াল করবে না নিশ্চয়ই।
(চলতে পারে)
মন্তব্য
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
দ্রুত পরের পর্বের প্রত্যশায়।
আশা করি দ্রুতই দিতে পারবো।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ভালো হচ্ছে, চলুক!
ধন্যবাদ মামুন ভাই। আপনার মত চমৎকার লেখকের কাছ থেকে এই উৎসাহটুকু পেয়ে খুব ভালো লাগলো।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ভাষাটা তো দারুন। তবে আরেকটু লিখো পারলে প্রতি পর্বে, একটু বেশি কম মনে হইতাছে।
আলাউদ্দিনের চেরাগ, হুমম! আগাওই না!
লেখার ইচ্ছা থাকে আরো বেশী, কিন্তু সময়ে কুলায়ে উঠতে পারি না। তাও চেষ্টা করবো নিশ্চয়ই।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ইন্টারেস্টিং!
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব লিখুন না৷
--------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
লিখবো নিশ্চয়ই! ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
এই পিদিম বাগদাদ থাইকা বাংলাদেশের ঘরের পিছনে ময়লার জঙলায়? এই পিদিম কি তাইলে যুগে যুগে, দেশে দেশে আলাউদ্দীন নাম্নী লোকজনরে তাড়া করে ফিরছে!
- জানতে হলে অবশ্যই পরের পর্ব পড়ুন সূধী দর্শকমণ্ডলী...
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পিদিমরা এমনই হয় গো ধুগোদা। সময় থাকতে নাম এফিডেভিট কইরা আলাউদ্দীন হয়ে যাই চলেন, দুই-চারটা দৈত্য পাই কিনা।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
পর্ব গুলো আরেকটু বড় হলে ভাল হয়। চলুক
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ। চালানোর ইচ্ছা আছে বটে। আপনরা পড়লেই এখন হয় ।(হাসি)
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
নতুন মন্তব্য করুন