(সতর্ক করে দিয়ে রাখি আগে থেকে, কাবজাব কোন জার্মান কি আর্মেনিয়ান চিন্তাবিদ/ লেখক/ দার্শনিক বা অন্য কোন পেশাজীবীর নাম নয়। কাবজাব = হাবিজাবি, আবঝাব )
।।১।।
সুখ-শান্তি-পরিতৃপ্তি এইসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার লোকের অভাব নাই। সক্রেটিস থেকে শুরু করে লাউ জু - সবাই আপ্তবাক্য দিয়ে গেছেন এই নিয়ে। জীবনকে খুব বেশি থিওরাইজ করায় আমার বিশ্বাস নাই, বা করা সম্ভব বলেও মনে করি না। তবু কিছু কিছু ধ্যান-ধারনা-দর্শন সবারই থাকে, আমারও আছে। এই লেখাটা ঐসব নিয়েই।
জীবনে পরিতৃপ্তি আসাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে সুখ আর পরিতৃপ্তির মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। সুখ ব্যাপারটা আমার মনে হয় পরিপার্শ্ব নির্ভর, এবং ক্ষণস্থায়ী। একটু উদাহরণ দিয়ে বলি, ধরেন আমি কোন বন্ধুকে ছিল দিয়ে বেশ ভরপেট খেয়ে নিলাম, ফলে দিলখোস হয়ে গেলো - এইটা হলো খুশী। এটা বেশ ক্ষণস্থায়ী, দুপুরে খেলে বিকেলেই শেষ। ধরেন ভালো কামাই করতেছি, ঘরে-বাইরে সেরকম কোন অশান্তি নাই, এইটাকে বলা যেতে পারে সুখ। কিন্তু টাকা-পয়সার টানাটানি চলে আসলে, কি বউ এর সাথে ঝগড়া চলতে থাকলে সুখ থাকে না বেশিক্ষণ। অপরপক্ষে পরিতৃপ্তি জিনিষটা অন্তর্নিহিত, ভিতর থেকে আসে সেটা, পারিপার্শ্বিকতা তার উপর প্রভাব রাখতে পারে না। জুইশ বুক অফ প্রোভার্ব থেকে একটা কোটেশন তুলে দেয়া যেতে পারে এই কনসেপ্টটা নিয়ে: Contentment is a feast without end.[ পরিতৃপ্তি নিঃশেষ, এটা এমন একটা মানসিক অবস্থান যেখানে অন্তর্নিহিত শান্তির কাছে বাহ্যিক দুঃখ-কষ্ট মোটেও পাত্তা পায় না। পরিতৃপ্তি আসে জীবনকে বুঝতে পারা থেকে, একটা এনলাইটেন্ড আত্মোপলব্ধি থেকে। মহাপুরুষরা এটা অর্জন করতে পারেন বলেই অনেক দুঃখে-কষ্টেও হাসিখুশী থাকেন, আর আমরা পারি না বলে হা-পিত্যেশ করে মরি। আমাদের কী আছে তার ওপর পরিতৃপ্তি নির্ভর করে না। কে যেন বলে গেছিলো - ডিওজেনেসের জন্য একটা চৌবাচ্চাই কাফি ছিলো, আর আলেকজান্ডারের জন্য গোটা দুনিয়াও যথেষ্ট ছিলো না। তবে পরিতৃপ্তি অর্জন মনে হয় না সচেতন ভাবে সম্ভব। আই আন্ডারস্ট্যান্ড বলে জীবনের সাকার-পান্চগুলা পাত্তা না দিয়ে হাসিমুখে ঘুরে বেড়ানো চাইলেই করা যায় না, একটা উচ্চতর অবস্থানে (হেইটেন্ড সেল্ফ) পৌঁছতে হয় তার জন্য। এখন প্রশ্ন হলো এই অবস্থানটাতে পৌঁছবোটা কীভাবে? আবার বলছি, মনে হয়না সচেতন ভাবে সেটা সম্ভব। অনেক পড়াশোনা, অনেক খোলামন , অনেক সহনশীলতা, অনেক পর্যকেক্ষণ আর বিশ্লেষণ - সর্বোপরি মস্তিষ্ক আর মনের ব্যাপক ব্যবহারের পরেই এই পর্যায়টা আসে। কিন্তু মাথায় যদি এই চিন্তাই ঘুরতে থাকে যে আর দুইটা বই পড়ে নি মামা, এরপর আমি তো মহাপুরুয; বা জগত-সংসার নিয়ে আজকে অফিসের পর চিন্তা করতে বসবো, এরপর সব বুঝেসুঝে কম্মোসাবাড়, একদম সুখী মানুষ হয়ে কম্বলের হোলসেল দোকান দিয়ে বসবো - তাইলে মনে হয় না জিন্দেগীতেও সম্ভব ঐ পরিতৃপ্তি অর্জন করা।
তইলে ক্যামনে কী? রিসার্চ মেথড নামে একটা কোর্স করতে হয়েছে বিবিড় পড়ার সময়, তখন আমাদের শিক্ষক মহোদয়, রাহী স্যার, প্রবলেম আর সিম্পটম - সমস্যা আর লক্ষণ - এর মধ্যে গুলিয়ে ফেলার ব্যাপারটা বুঝিয়েছিলেন। আমরা বেশিরভাগ সময়ই সমস্যাটা ফেলে লক্ষণ কিউর করতে ছুটি। একটা সাধারণ উদাহরণ - মাথা ব্যাথা হলে আমরা পানি দিয়ে দুইটা প্যারাসিটামল খেয়ে ফেলি। কিন্তু মাথা ব্যাথা তো আর সমস্যা না, মাথা ব্যাথা হলো লক্ষণ। সমস্যাটা হয়তো চোখে। প্যারাসিটামল খেয়ে লক্ষণটা আপাতঃ নিরাময় হলেও সমস্যাটাতো রয়ে যায়, সুতরাং দুই দিন আবার মাথা ব্যাথার সগৌরবে প্রত্যাবর্তন। আমাদের জীবনের ব্যাপারটাও তাই। নিজেরা শান্তি চাই শান্তি চাই বলে মাথা খুঁড়ে মরি, কিন্তু ছুটি কখনো টাকা, কখনো সুন্দরীদের পিছে ( অবশ্য সুন্দরীদের না বাগাতে পারলে শান্তি দিয়েই বা কাম কি?? )। অথচ গৌতম বুদ্ধের মতে শান্তি হলো এই চাওয়ার হাত থেকে মুক্তি! গোড়াতেই তো গলদ, শান্তির আম্মু কাজেই মেয়েকে আমাদের কাছে পাঠাতে চায় না
তবে পরিতৃপ্তি আবার পশ্চাতেগুলিও করতে পারে। একজন পরিতৃপ্ত মানুষের পক্ষে আত্মোন্নয়ন সম্ভব না, অথচ মানব সভ্যতা বেড়েই উঠেছে নিজের উন্নয়নের পিছে ছোটাছোটিগুলো যোগ করে। কাজেই সবাই সুখী নীলগঞ্জ অধিবাসী হয়ে গেলে দুনিয়া রসাতলে যাবে। এই কারণে ইউটোপিয়া কখনো আসেও নাই, আসবেও না, কারণ ইউটোপিয়া মানুষকে ক্রমশ ঠেলে দেবে স্থবিরতার দিকে।
।।২।।
দিনকাল যেভাবে যাচ্ছে সেটাকে খারাপ বলা কঠিন, তবে পরিবর্তন আসছে। সময় ঠুকঠুক ঘুরে যাচ্ছে, আশেপাশের সবকিছুও বড় হয়ে যাচ্ছে, বানের জলের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেসে যাচ্ছে পুরনো অভ্যাস আর দিনযাপনের রীতিনীতি। পড়াশোনা মোটামুটি শেষ করেছি, চাকরিতে ঢুকলাম, স্বাভাবিক চলাফেরাটা বজায় রাখা আগের মতো তো আর সম্ভব না। সেটা মেনে নিয়েই কর্মজীবনে প্রবেশ। যতক্ষণ আগের সেই কেয়ারফ্রি জীবনের কথা না ভাবি, ততক্ষণ বেশ ভালোই থাকি, কাজের জায়গাটা কোন ভাবেই মন্দ না যেহেতু। কিন্তু যখন হুট করে মনে পড়ে যায় অবেলায় ঘুরাঘুরির কথা, সন্ধ্যায় তাস আর সিগারেটের জমাট আড্ডা, কিংবা সবকিছু বাদ দিয়ে ক্লাস বাংক করে প্রেমিকাকে বগলদাবা করে রমনায় হেঁটে বেড়ানোর স্মৃতি - তখন একটা বিষণ্নতা পেয়ে বসে। মনে হয়, এরকমই কী হতে হয়?
হয়তো হতে হয়, হতেই হয়। জীবনজুড়ে স্বপ্ন ছিলো কাঁধে একটা ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে হাতে একটা পাকানো লাঠি নিয়ে ঘর থেকে চিরতরে বেরিয়ে পড়বো একদিন। অনেকটাই অবাস্তব সবসময়ই জানতাম, তবু এক্কেবারে উড়িয়ে দিইনি কখনোই। এখন নিজেকে এই বলে প্রবোধ দিই যে চিরতরে না হোক, কালে-ভাদ্রে ঠিকই বেড়িয়ে নেব, দুগ্ধস্বাদ না পাই, ঘোল মিস দিব না।
মন্তব্য
একই স্বপ্নের পথিক।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
স্বপ্ন সত্যি হোক - সবাই বলি আআমিন।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আমি তো মাঝেমাঝেই কাঁধে ব্যাকপ্যাক নিয়ে ২-৩ দিনের জন্য বেরিয়ে যাই৷ কখনও কখনও সেলফোন অফ করে দিই৷ ব্যপক লাগে৷ একবার এরকম করে ভারত-চীন বর্ডারে চক্রাতায় মিলিটারি ঘাঁটিতে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম৷ লাল টুকটুকে গালের বাচ্চা বাচ্চা মিলিটারিদের সে কী বিস্ময়! তারা জীবনেও এরকম উদ্ভট মেয়ে দেখে নি৷ সেখানে আবার চীন বর্ডার বলে সেলফোন চলে না৷ পুরো দুদিন পরিচিত পৃথিবীর বাইরে৷ অপূর্ব্ব অভিজ্ঞতা৷
ইচ্ছে আছে কোনও একদিন সব ছেড়েছুড়ে রেশমপথ ধরে হেঁটে যাবার৷
আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল৷
--------------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
চরম হিংসা জানাচ্ছি!
আর শুভেচ্ছাও রইল অনেক।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ভাল লাগল লেখাটা। সমস্যা-লক্ষণ অংশটা দারুণ। আপনার শেষ প্যারার স্বপ্নটা সার্থক হোক। ফ্রোডো ব্যাগিনস হয়ে যান
আমার যে ধরন-ধারন, তাতে স্যামওয়াইজ হতে চাওয়াটাই মানাবে বেশি।
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
'হাবিজাবি + আবজাব = হাবজাব' বানাতে পারতেন
দারুন লাগলো আর্টিকেলটা ভুতুম! সচল হইলে পাঁচতারা পাইতা! খুব উপলব্ধি থিকা লিখছো বুঝাই যায়।
সাধু! সাধু! আহ!
তবে একটা কথা, এসব ছোটখাট জিনিস নিয়া মন খারাপ করা, তারপর সমাধান কইরা মন ভাল হওয়াও আবার জীবনের 'মজা'-র অংশ। জীবন থেকে শুধু 'ভাল'টা চাওয়া আমার মতে বোকামি, 'খারাপ' আছে বলেই 'ভাল'! আর বুদ্ধের ফিলোসফিটা আবার আরেক লাইনেই চলে গেছে, এজন্য বেশিরভাগরেই খালি বলতে শুনি, করতে দেখি না।
আগে হোক, পরে হোক, সবাই-ই আমরা মরুম (অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকিলে...)। সুতরাং জীবনে ফুলফিলমেন্ট বা peace of mind আমার মতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন মেটারিয়াল পজেশনের থেকে! তুমি যে বললা:
কথাটা দারুন বলছো। সেটা এমনে এমনে হয় না, 'সময়' দিলে হয়, 'ইনক্লাইনেশন'-ও লাগে। আমার মতে একটা চাবিকাঠি 'থট-শেয়ারিং', যার কিছু এফিশিয়েন্ট মাধ্যম হইল বই পড়া, বই পড়া, বই পড়া, তারপর গেম খেলা, তারপর হয়তো সিনেমা-টিনেমাও দেখা। ওটা আমার মত। কেউ কেউ আবার সরাসরি অন্যান্য মানুষের থেকে খুব সুন্দরভাবে তথ্য এক্সট্রাক্ট করতে পারে, তাদের জন্য সেটাও গুরুত্বপূর্ন।
তবে মাঝে মাঝে আয়ান ব্যাংকসের একটা উদ্ধৃতি মনে পড়ে: জীবনের অর্থ জিজ্ঞেস করাই একটা অর্থহীন কর্ম!
যাহোক, এই লেখাটা আমাকে চিন্তা করাইছে, এর চেয়ে বড় কমপ্লিমেন্ট আর কি দিব। সুপার!!
এরকম আরো লিখো, ভাইজান!
অসংখ্য ধন্যবাদ সিরাত ভাই। আমার পাওয়া বেস্ট কমেন্ট এটা
একমত। পরিতৃপ্তি বলতে আমি সমস্যা ইগনোর করা বুঝাই নাই, বরং সমস্যাকে অ্যাকসেপ্ট করতে পারা বুঝাইছি। ভ্যাজাল থাকবেই, কষ্ট-বেদনাও থাকবে, কিন্তু সেটা মেনে নিতে পারার ক্ষমতা বেশিরভাগেরই থাকে না। আর থাকে না বলেই সবসময় একটা অসুখী মনোভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু সেটাকে মেনে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করলে সমস্যা উধাও না হয়ে গেলেও আপনাকে আর বিরক্ত করার ক্ষমতা হারায়। ঐটাই বলতে চাইছি আর কী.....
আবারও ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আমার আগেই একজন কোট করে ফেলছেন। তাও বলি আমিও একই স্বপ্ন দেখি ...
আপনিও আসেন তাইলে, সকলে জোরেশোরে বলি আআআআআআমিন।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
তোমার এই লেখাটা পইড়া আমি অফিসে আমার চ্যাতার ব্যাপারটা আবার রি-ইভালুয়েট করতেছি, মিয়া! কি লেখাই দিছো! যদিও সাকার-পাঞ্চ না, তবুও, এইসব আমার কি করতে পারবে; কেন এনলাইটেন্ডভাবে দেখা যাবে না?
বেশি ডিটেইলে কওয়া যাইবো না, বাট ভাই, আই লাভ হাউ ইউ থিংক!
এটার পরের অংশ ছাড়। বা ফিশ!
অফিসের ব্যাপারটা অবশ্য ভালো জানি না, কাজেই নো কমেন্টস। তবে আসলেই ভালো লাগলো লেখাটা আপনার মনে ধরছে দেখে। এখন আচ্ছা-খাসা একটা লেখা দিয়া দেন, দেখবেন আমাদের এনলাইটমেন্টের ঠেলায় আপনার ভ্যাজাল গায়েব হয়ে যাবে।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
দারুণ লাগলো !
আমার কাছে সুখের চেয়ে পরিতৃপ্তিটা বেশি জরুরি।
ভালো লাগলো, ভুতুম।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার কাছেও পরিতৃপ্তির মূল্য বেশি।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
নতুন মন্তব্য করুন