!!১!!
মর্কট বেল্লিক আলুর খোসা।
পুরনো সেই দৃশ্য, মামা একাই কথা বলতে বলতে ঢুকে পড়েছেন আমার রুমে। মাত্র দুপুরের ভাত খেয়ে উঠলাম, একটা ভালো দেখে বই নিয়ে শোয়ার আয়োজন করছি মাত্র, এমন সময়ই ভগ্নদূতের আগমন। জিজ্ঞেষ করি, কি হলো মামা?
আর বলিস না, এতো করে তোর মামীকে বল্লুম সোনাপাখি সেমাইয়ে এট্টু কাসুন্দি দাও, স্বাদটা খুব খুলবে। শুনবে কেন? ধুস বাঙ্গালী মেয়েরা আর কী বুঝবে রান্নার?
তো কে বুঝবে মামা?? বলেই প্রমাদ গুণি, এখনই মামার কেচ্ছা শুরু হবে, দুপুরের ঘুম কেঁচে গেলো আর কি।
যা ভেবেছি, মামা গ্যাঁট হয়ে ঘরের কোণে রাখা একটা প্যাঁটরার উপর বসে শুরু করলেন:
তখন মাত্র কিলিমান্জারোর খুনে কালো পান্জার রহস্য ভেদ করে কক্সবাজার গিয়েছি এট্টু আরাম করতে। দু'চারদিন বেশ চিল কর্লুম, কিন্তু এর মধ্যে ডাক এসে গেলো।
কে ডাক্লো তোমায় মামা? মাঝে মাঝে এট্টু দু'চার্টা কথা ফাঁকে দিয়ে ঢুকিয়ে দি, নইলে মামা আবার ভাবে তার কথা বোধহয় শুনছি না।
আরে কেউ ডাকে নি, ডাক এসেছে মানে চিঠি এসেছে। তখন তো আর এতো মুবাইল ই-মেইল শি-মেইল ছিলো না। চিঠি পাঠিয়েছে কঙ্গোর এক বঙ্গো বাদক জুলু ম'বাবা। কিলিমান্জারোর খুনে পান্জা ওর্ফে ট্যান্গোম্যাঙ্গো, যাকে কিনা আমি ধরিয়ে দিলুম, সে তারই জমজ ভাই নাকি, ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছিলো মেলায়।সে যাই হোক, তাকে ধরে আমি নাকি ভালো কাজ করি নি, এজন্য আমাকে পস্তাতে হবে। আমার ভুডু বানিয়ে সে আগামী অমাবস্যায় বলি দেবে। আগামী দশ দিন আমি যেন ঘুরে-ফিরে বেঁচেবর্তে নি, এরপরই আমার দিন্শেষ।
চিঠি পড়ে আমি ত্যামন পাত্তা দিলাম না, এতো অল্পে ভয় পাবো ত্যামন অলপ্পেয়ে আমি নই। চিঠিটাকে কুটি করে ফেলছি, এমন সময় ধুম করে তাল হারিয়ে পড়ে গেলাম মেঝেতে, মনে হলো আমার দুটো পা'ই যেন মোচড় দিচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে জানালা ভেঙ্গে একটা কুঠার সোজা এসে গেথেঁ গেলো আমার আরাম চেয়ারে, তাতে লটকালো একটা চির্কুট। কোনমতে খুলে দেখি তাতে লেখা, জুল ম'বাবা মিথ্যে ভয় দেখায় না। এতো শুধু ভুডুর পুতুলে হাল্কা মোচড় দিলাম, আগামী অমাবস্যায় প্রথমে তোর হাত ভাঙ্গবো প্রথমে, এরপর ঠ্যাঙ, এরপর একটা একটা করে তোর পাঁজর, আর শেষে তোর মুন্ডুটা ছিঁড়বো রে নচ্ছার। সিগনেচার এ দেখলাম একটা হাঁড়গোড় ওয়ালা বঙ্গোর ছবি।
এইবার সত্যই ভয় পেলুম। এহেন কালো জাদুকে কুপোকাত করার কোন কায়দা কি করে করা যায় তা তো জানা নাই। জুডোর প্যাঁচে কি আর ভুডো, আই মিন ভুডুকে বাগে আনা যাবে? এই যাত্রা কি তবে মর্তেই হবে? কে দারা কে পুত্র এসব ভাবতে ভাবতে বসে পড়েছি সেই ভগ্ন কেদারাতেই, ফলাফল চিৎপটাং। সামান্য আঘাত পাওয়ায় চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটলো খানিকের জন্য, কিন্তু তা নেহায়েতই ক্ষণিকের জন্যই। হাজার হোক, সমুদ্রে পেতেছি শয্যা শিশিরে কী ভয়? কথাটা মনে হয় ঠিক জুৎসই হলো না। বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদিনী হবে মনে হয়। নাহ্, তাও না। কী জানি হবে কথাটা - এই নিয়ে বেশ ভাবনাটা জমিয়ে এনেছিলাম - এমন সময় কোথ্থেকে জানি সাক্লায়েন এসে দুম করে ঢুকে পড়লো ঘরে।
এ পর্যন্ত শুনে আবার হোঁচট খাই আমি। শুধাই, সাক্লায়েনটা আবার কে?
সাক্লায়েন কে? সাক্লায়েন কে?? সাক্লায়েন কে??? - হাহাকার করে ওঠেন মামা। আরে সাক্লায়েন হলো যাকে কিনা ফরাসীরা বলে এল টোরো স্প্যানিশরা বলে ভেল্টআনশাউঙ জর্মনরা পাঁর্দোমোয়া আর সাদা বাংলায় আমরা বলি জিগরি দোস্ত জন্নত-এ-দিল তরন্নুমে শায়েরিয়া! আরে সাক্লায়েন আমার বাল্যকালের বন্ধু বলে মামা আরেক প্রস্থ ফিরিস্তি দিয়ে বসেন তার ও সাক্লায়েনের বাল্যবন্ধুত্ব নিয়ে আমার এহেন বালখিল্যতাকে প্রতিবাদ করে। স্পষ্ট জানিয়ে দেন বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ হতে পারে, তাই বলে বাল্যবন্ধুত্ব নয়। তারা, অর্থাৎ তিনি ও সাক্লায়েন কি একসাথে মোড়ের দোকান থেকে লবেঞ্চুস চুরি করে খাননি? তারা কি নিয়মিত আট্টান্নি খরচ করে এক টিকিটে দুই ছবি দেখতে যাননি? তারা কি নিয়ম করে ছুটির সময় কুকিরুন্নেসা স্কুলের সামনে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকেননি টানা দুই বছর? বাল উৎপাটনের জন্য সাক্লায়েনই কি তাকে প্রথম রেজর কিনে দেয়নি? এরপরও কি তাদের বাল্যবন্ধুত্ব নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে?
মামার এহেন ব্রাশফায়ারের শিকার হয়ে আমি নিজের অবিমৃষ্যকারিতা স্বীকার করি, সত্যিই তো, এমন পাপ কি আমার করা আমার বড়ই অন্যায় হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে গোপূরীষ খাবার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরই মামা শান্ত হলেন কিছুটা। কপালের ঘাম মুছে শুরু করলেন আবার সেই গল্প:
তো সাক্লায়েন ঝড়ের বেগে ঘরে এসেই বললো, কে মহেন্জোদারো অ্যামো? আমি তখন চেয়ারের ভাঙ্গা দুটো পায়াকে বগলদাবা করে মেঝেতে বসে আছি। মাথাটা ক্যামন জেনো ভোঁভোঁ করছিলো তখনো নানা চিন্তায়। এর ভেতর মহেন্জদারো-হরপ্পার এহেন আগমন আমার কাছে নেহায়েতই অনাত্মীয়সুলভ মনে হলো। এহেন অনাহূত আগমন যে আমার বড়ই না-পসন্দ সেটা না বলে পারলাম না আমি। সাক্লায়েন বললো, অ্যাঁ? কে মহেন্জোদারো অ্যামো? আরে মর্কট, আমি তো বল্লুম
এ ক্যামনতরো ব্যামো? আখেরে কি এস্থলেই আখেরাতের দরগা পেতে হবে?
সাক্লায়েনের এহেন মৃত্যু সম্ভাবনায় আমি নড়েচড়ে বসি। কেই বা চায় আপন বন্ধুহারা হতে? পরক্ষণেই মনে হলো, আমিই তো টেঁসে যেতে বসেছি। সাক্লায়েনের কতই না কষ্ট হবে বন্ধুহারা হতে! এরচেয়ে ও-ই আগে চলে যাক। বল্লাম, পেলে পাবি, কি আর? মর্ত্যে এসেছিস যখন, মরতে হবেই একদিন। আগে আর পরে এই যাহ।
সাক্লায়েন মহা বিরক্ত হয়ে দুম করে একটা কিল বসিয়ে বললো, আরে মর্কট, আমি আমার না, তোর মরার কথা বলছি রে। এইদেখ বাসার ঠিকানায় কি এসেছে।
তখন আবার আমি আর সাক্লায়েন বাংলাবাজারের একটা দোতলা বাসা ভাড়া করে থাকি। দেখলাম ওর হাতেও আমার কাছে যেই চিঠি এসেছে তারই এক কার্বন কপি। বুঝলাম, জুলু ম'বাবা কোন ঝুঁকি নেই নি, বাসায়ও পাঠিয়ে রেখেছে একটা লেফাফা। কে জানে, হয়তো বাসার কোন চেয়ারে এখন থিরথির করে কাঁপছে একটা কুঠার।
সাক্লায়েনকে এহেন বিচলিত হতে দেখে আমার ভয় আরো বেড়ে গেলো। ও বেচারা আবার এসব কালো জাদুর লাইনে আমার মতো গোবেচারা নয়, একসময় রীতিমতো নিয়ম করে প্লাঁসেৎ করতো। ওর গলায় ঝুলে পড়ে কেঁদে বললাম, দোস্ত এ যাত্রা কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। বাঁচা আমায় বাঁচা।
সাক্লায়েন আরো বিরক্ত হয়ে গেলো, আরে বন্ধ কর এসব মেলোড্রামা। এখন ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে কী করা যায়।
!!২!!
কাসোঙ্গো। রাত সাড়ে একটা। ঘুটঘুটে অন্ধকার, অমাবস্যার আগের রাত্রি।
আমি বললাম, মামা সাড়ে একটা কি? দেড়টা বলো।
আরে কঙ্গোতে কি আমি গিয়েছিলাম না তুই? তোর ভুডু পুতুল বানিয়েছিলো না আমার? রাত ভর জুলু ম'বাবার ম্যান্সনের বাইরে সেৎসি মশার কামড় তুই খেয়েছিলি না আমি? আরে আমার এমন এমন জায়গায় কামড়েছে যেসব জায়গা আছে বলেই আমি জানতাম না - পুরনো কামড়ের জ্বালা মামার যেন আবার চিড়বিড়িয়ে ওঠে।
আমি আবার ঘাবড়ে গেলাম, কোনমতে বল্লাম, না না সাড়ে একটাই সই। বলো তুমি।
ঠ্যাংদুটো একটু চুলকে নিয়ে মামা আবার শুরু করলেন তার গল্প।
আমি আর সাক্লায়েন বসে আছি জুলু ম'বাবার আস্তানার বাইরে একটা ঝোপের মধ্যে। আশেপাশে জনমনিষ্যির দেখা নাই। শুধু থেকে থেকে মনে হলো তক্ষক ডাকছে, কিন্তু আফ্রিকায় কি তক্ষক আছে? কে জানে। কোন কথাবার্তা কেউ বলছি না, কে জানে কখন কে কোথ্থেকে শুনে ফেলে।
এর মধ্যের কাহিনীটা একটু বলে নিই। ওদিনের পরদিনই আমি আর সাক্লায়েন ঢাকায় আসি, এরপর একটা প্রাইভেট প্লেন নিয়ে উড়াল দিই তান্জানিয়ার দিকে। কেজি বিশেক গান্জা নিয়ে নিয়েছিলাম সাথে, একটা পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপে ল্যান্ড করে ওখানকার লোকাল সর্দারকে ওগুলো ঘুষ দিয়ে তার গুরুর পালের সাথে লুকিয়ে বর্ডার পার হয়ে ঢুকলাম কঙ্গোতে। এসবই জুলুর চোখে ধুলো দেয়ার জন্য, নিশ্চয়ই সে কড়া নজর রেখেছে কোনদিক দিয়ে আমরা ঢুকে পড়ি কিনা দেখার জন্য।
বর্ডার পার হয়ে ওখান থেকে কিছুটা ট্রাকে করে, আর কিছুটা ট্র্যাকিং করে পৌঁছলাম জুলুর শহর কাসোঙ্গোতে। ওখানে ওর বিশাল বঙ্গোর কারখানা, তার আড়ালে চলে ওর নানা আকাম-কুকাম। আমরা দুইজন ছদ্মবেশ নিয়ে ছিলাম, ওখানে নাম ভাঁড়িয়ে উঠলাম একটা কৌরববিবর্জিত হোটেলে। আমি হলাম ইবনে সুদানী, সুদানের লবঙ্গ পাইকার, আর সাক্লায়েন সাজলো আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট খিন্জির।
এরমধ্যে ব্যাটা প্রতিদিন সময় করে ঠিক বেলা এগারোটায় কখনো ভুডুর হাতে কখনো পায়ে মোচড় দেয়, আর আমি যেখানেই থাকি উল্টিয়ে পাল্টিয়ে পড়ে ব্যথায় কাতরাই কিছুক্ষণ। একবার তো ইয়ে ধরে মোচড় দিলো - মামা ব্যথায় মুষড়ে পড়লেন।
যাই হোক, ওখানে গিয়ে প্ল্যান ছিলো যে করে হোক জুলুর সাথে দেখা করতে হবে। আমি ছদ্মবেশ ধরে আছি, চিনতে পারবে না। দুটোদিন খুব ঘুরঘুর করলাম ব্যাটার বঙ্গোর অফিসে। ঘুষ-টুষ দিয়ে ব্যাটার ম্যানেজারকে হাত করে অবশেষে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট জোগাড় করলাম বহু কষ্টে। ওদিকে হাতে সময় তখন আর মাত্র একদিন বাকি অমাবস্যার। আমার চুল পড়ে যাচ্ছিলো চুলচেরা যত চিন্তা করতে গিয়ে, সাক্লায়েনের অবস্থাও তথৈবচঃ।
অ্যাপয়েন্টমেন্টমতো ঠিক সাড় দশটায় ড হাজির হলাম জুলু ম'বাবার অফিসে। ব্যাটাচ্ছেলেকে দেখে রীতিমতো চমকে উঠলাম। বেটেখাঁটো গাবলু একটা, মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল, স্যুট বাগিয়ে বসে বসে চেয়ার দোল খাচ্ছে। কে বলবে এই নাখান্দা একটা কালো জাদুকর! রীতিমতো অভদ্র একটা, বসতেও বললো না। আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে নিজেরাই বসে পড়লাম।
ব্যাটা প্রশ্ন করলো, বলুন আপনাদের কী খেদমত করতে পারে জুলু ম'বাবা?
মনে মনে বললাম, দে না বাবা পুতুলটা আমাকে। মুখে বললাম, আমি হলাম ইবনে সুদানী, সুদানের বিখ্যার লবঙ্গ ব্যবসায়ী। কঙ্গোতে আমার ব্যবসা বাড়াতে চাইছি, তাই ভাব্লাম আপ্নার সাথে মোলাকাত করি।
ব্যাটা বল্লো, কিন্তু লবঙ্গের সাথে আমার সম্পর্ক কী? আমি সামান্য গাতক মানুষ, বাদ্য বেচি, দুবেলা খাই।
সাক্লায়েন বল্লো, হুজুর, আপনি হলেন আফ্রিকার সবচয়ে বড় বঙ্গো বানানেওয়ালা, এখন তার সাথে লবঙ্গো মিশলে আপনার শান-শওকাত আকাশে গিয়ে ঠেকবে। তাছাড়া দেখুন আমাদের লবঙ্গের গুণ, আসুন আমাদের গাড়ির নিকট, আই মিন, এই নিন, বলে একটা বোতল বের করে ঝোলা থেকে জুলুর হাতে ঠেসে দিয়ে আবার গপ্পো ফেঁদে বসলো, এই বোতলে আছে লবঙ্গের তেল। দিন দিন আমি আপনার মাথায় লাগিয়ে দিই, দেখবেন ক্যামন ঠান্ডা হয়ে যায় কলিজাটা বলে তেলটা হাতে নিয়ে দুহাতে আচ্ছা করে ও ব্যাটার মাথার তালুতে ঘষে দিলো।
এহেন তৈল পেয়ে ব্যাটা মনে হয়ে খুশি হলো। বললো, বাঃ, বঙ্গো আর লবঙ্গ মিলে তো বেশ একটা ভালোই হবে। মাখো লবঙ্গ বাজাও বঙ্গো। মাখো লবঙ্গ বাজাও বঙ্গো। মাখো লবঙ্গ বাজাও বঙ্গো। দু'তিনবার আওড়াতে থাকলো মন্ত্রের মতো করে। হঠাৎ করে ঘড়ির দিকে তাকাতেই সে কেমন ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে বললো, ইয়ে আপনারা আজকে আসুন কাল আবার এসব নিয়ে কথা হবে। তড়িঘড়ি করে আমাদেরকে বের করে দিয়েই সে দরজা ঠুকে দিলো।
আমরাও চটজলদি ওর অফিস থেকে বেরোতো না বেরোতেই আঃ! ব্যাটা এগারোটা বাজতেই পুতুলের ঠ্যাঙ ধরে মুচড়ে দিয়েছে। কিন্তু সাক্লায়েন দেখলাম বেশ খুশি। বললো, নিশ্চয়ই পুতুলটা ব্যাটা সাথে সাথেই নিয়ে ঘোরে, নাহলে এতো তাড়াতাড়ি মোচড়াতে পারতো না।
ঐদিনই রাত সাড়ে একটায় আমরা বসে আছি ওর ম্যান্সনের সামনে। আমার হাতে একটা ব্লো পাইপ, আর সাক্লায়েনের হাতে ডার্ট গান। জানিসই তো, আই ব্লো রিয়েলি ওয়েল। মামা বেশ গর্ব ভরে আমাকে জানালেন।
ব্যাটার বাড়ির আশেপাশে গার্ডের অভাব নাই, কিন্তু পাঁচমিনিটের মধ্যে সবাই গভীর ঘুরে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো ঘুমপাড়ানি ডার্ট খেয়ে। এরপর তালা খুলে ঢুকে যেতে আর কতক্ষণ। কিছুক্ষণ বাড়ির মধ্যে ঘুরাঘুরি করতেই পেয়ে গেলাম জুলু ম'বাবার বেডরুম। এবার আরো সন্তর্পনে ঢুকে গেলাম ভেতরে।
ভিতরে ঢুকেই নিশ্চয়ই গুলি চালিয়ে দিলে? আমি বেশ বুঝে গেলাম মামার গল্পের শেষটা।
আরে আমিও তো ভেবেছিলাম তাই করবো, কিন্তু সাক্লায়েন বললো এসব ভুডুওয়ালাদের নাকি শারীরিক ক্ষতি করা যায় না এভাবে। কেবম মাত্র জাদু দিয়েই ওদের ধরা সম্ভব। কিন্তু আফসুস, সাক্লায়েনের সেই জাদুই ক্ষমতা ছিলো না।
সে যাই হোক, ঢুকতেই দেখি এলাহী কারবার। বিশাল একটা মুরগীর ঠ্যাঙের মতো পায়ার ওপর একটা পালন্ক বসানো, সেটা আবার আস্তে আস্তে ঘুরছে। তার মধ্যে রাজরাণীর মতো শুয়ে আছে জুলু, আর তার বালিশের তলা দিয়ে উঁকি মারছে একটা ভুডু পুতুল। পা টিপে টিপে আস্তে করে হাত গলিয়ে দিলাম বালিশের নিচে, পুতুলটা ধরে আস্তে আস্তে টেনে আনতে লাগলাম আমার দিকে।
কিন্তু বিধি বাম, নড়াচড়ায় জেগে গেলো জুলু ম'বাবা। এক ঝটকায় আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পুতুলটা কুক্ষিগত করে লাফ দিয়ে উঠলো। যেইনা তার দিকে আগাতে গেছি কি জানি এক মন্ত্র পড়লো আর আমাকে আর সাক্লায়েনকে ঘিরে ফেললো দুটো জালের মতো, একটুও নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ফেল্লাম আমরা।
ব্যাটা সামনে এসে বজ্রনির্ঘোষে বললো, তুই না সুদানীর পো? কোন সাহসে ঢুকেছিস আমার ঘরে?ব
ভয়ই পেতাম, কিন্তু ব্যাটাচ্ছেলে শোবার সময় কিনা একটা গোলাপী শিফনের নাইটগাউন পরেছে। তাই কেমন জানি হাসিই পেলো। বললাম, ব্যাটা জুলু, আমি হলাম তোর যম, তুই যার পুতুল হাতে ধরে আছিস, আমি সেই।
কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে, এরপর ঘরদেোর ফাটিয়ে হাসতে শুরু করলো জুলু। তুই? তুই?? তুই??? গোটা দুনিয়া ঘুরে মরতে এসেছিস তাহলে আমার ঘরে এসেই???? এই বলে আরেক দফা হেসে নিলো। হাসির শব্দে আমার মাথা কেমন জানি চক্কর দিয়ে শুরু করলো। বল্লাম, তোর ওসব টোটকায় আমি ডরাই না রে, পারলে মেরে দেখা! ব্যাটা ভন্ড পাজী বুজুরুক উজবুক বেল্লিক চিমসে পটাশ! পারলে মেরে দেখা রে মেরে দেখা।
জুলুর চোখমুখ বেগুনী হয়ে গেলো রাগে, তুই আমার ঘরে বসে আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস। জানিস এক্ষুনি তোর মুন্ডু ছিঁড়ে নিতে পারি আমি?
বল্লাম, ছেঁড় না দেখি, ছেঁড়। কৈ কৈ ছেঁড়।
দুর্মূখ এই দেখ তবে, বলে একটানে পুতুলের মাথাটা ছিঁড়ে ফেললো জুলু ম'বাবা।
কী??? আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
হ্যাঁ, একটানে ঘ্যাচাঙ করে ছিঁড়ে আনলো মুন্ডুটা।
তাহলে তুমি???
হেঃ হেঃ, তোর মামাকে এর উল্লুক পেয়েছিস? জানিসই তো কীভাবে ভুডু ডল কাজ করে? একটা ডল বানিয়ে যার ক্ষতি করতে চাইছিস তার শরীরের কিছু একটা লাগিয়ে দিতে হয় তার সাথে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চুল ব্যবহার করে সবাই। সকালে সাক্লায়েন জুলুর মাথায় তেল ঘষার নাম করে এক গোছা চুল তুলে এনেছিলো, আর আমি ওর বালিশের তলায় হাত ঢুকিয়ে আস্তে করে আমার চুলটা সরিয়ে সেখানটাতে জুলুর চুল আঁটকে দিয়েছিলাম। এরপরই একটু জোরে নড়াচড়া করে ব্যাটার ঘুম ভাঙ্গালাম। যখন মুন্ডুটা ছিঁড়লো, তখন জুলুর নিজের মুন্ডু ঢপাৎ করে মাটিতে এসে পড়লো। মামা বেশ একটা পরিতৃপ্তির হাসি হাসলেন।
কিন্তু এটার সাথে সেমাই আর কাসুন্দির সম্পর্কটা কোথায় মামা? আমি প্রশ্ন না করে পারি না। মামা খুব বিরক্তি নিয়ে বল্লেন, ধুর বেটা সেমাই-কাসুন্দি আসলো কোথ্থেকে?
মন্তব্য
ভালোই। ঘনাদা (৮০%) - টেনিদা (২০%) র কাছে ঋণ একটু বেশি ই, তবুও খারাপ না। ৎসে ৎসে তো জানতাম মাছি, মশা হলো কবে থেকে?
শিব্রামের কাছে তো মনে হয় আরো বেশি ঋণ। আর হ্যাঁ, মিস্টেক, মাছিই হবে।
ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
বস, ভূগোলটা একটু গোলমেলে লাগতেসে ঘটনার প্যাঁচে... আরেকটু ডিটেইলস দিয়েন।
... আমার বেশ ভাল্লাগসে।
-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
ভূগোল আর কি, আফ্রিকায় কঙ্গো, তার ডান পাশে বর্ডার আছে তান্জানিয়ার, আর বর্ডার থেকে কাছের শহর হলো কাসোঙ্গো।ব্যস!
-----------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
বস, ভূগোলটা একটু গোলমেলে লাগতেসে ঘটনার প্যাঁচে... আরেকটু ডিটেইলস দিয়েন।
... আমার বেশ ভাল্লাগসে।
-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
মজা পাইছি। জবর।
মামায় তো দেখা যায় রাপু খাপাং।
-------------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
মামারা এমুনি হয়! ধন্যবাদ।
------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
মজা পাইলাম। মামাসিরিজ হবে নাকি?
যেরকম নিয়মিত আমি লিখি সেরকম নিয়মিত একটা সিরিজ হলেও হতে পারে।
ধন্যবাদ।
-------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
কীরে মামা তুইও এক ঢিলে দুই পাখি মারা শুরু করলি?
গপ্পো মজার হৈসে
ঢিলই ঠিকমতোন মারা শিখলাম না, তা দিয়ে আবার পাখি, তাও আবার দুটো? কি যে বলেন্না মামুন্ভাই!
--------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
অ.
কাল রাতে ঘুম আসছিলো না, শুয়ে শুয়ে মোবাইলে লেখাটা পড়লাম। দুর্দান্ত!
আ.
যদিও ভাষায় স্থানে স্থানে খানিকটা জড়তা আছে, তবে আমার মনে হয় একমাস বিরতি দিয়ে যদি আবার পড়েন, তাহলে সেই জায়গাগুলো আপনি ধরতে পারবেন। মানে, ওগুলোতে পড়ার স্পিডটা মাঝে মাঝেই থেমে যাচ্ছিলো। যেমন- এক ঝটকায় আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পুতুলটা কুক্ষিগত করে লাফ দিয়ে উঠলো এখানে কুক্ষিগত শব্দটায় গিয়ে পড়ার স্পিডটা একটু কমে যাচ্ছে। এর চেয়ে অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করলে বোধহয় ভালো হতো।
অবশ্য এটা পাঠকের দোষও হতে পারে। তবে টেনিদা আর ঘনাদা- দুজনকেই মনে করিয়ে দিলেন।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ধন্যবাদ গৌতমদা। আর হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, একমাস না, এখনই পড়তে গিয়ে বুঝতে পারছি জায়গায় জায়গায় কিছু পরিবর্তন করলেই মনে হয় ভালো হতো। জানেন কী, একবার লিখে ফেললে একটা আলস্য পেয়ে বসে, আর সেটাকে ঘষতে-মাজতে ইচ্ছা করেনা। তবে সামনে থেকে আরো খেয়াল করবো।
------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
মজা পাইছি বলা যায়।
মহসীন রেজা
বলেই ফেলুন না, শুনতে পেলে লেখক খুশি হবেন নিশ্চয়ই।
-------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ভালু লাগলো। ঘনাদা, টেনিদা আর মামুদের ভালা পাই
ইহাদের ভালু পাওয়া এক্টি চমৎকার অভ্যাস!
------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
নতুন মন্তব্য করুন