গোলমালে বেড়ে ওঠার একটা সময় ছিলো যখন দুপুর বেলা ফুটবল খেলতে বেরিয়ে পড়তাম হাফ-স্কুল থাকলেই। ইশকুলে স্যারদের বেত আর টিফিনের একটাকার পুরি খেতে খেতে দিনগুলো দৌড়ে দৌড়ে পার হয়ে যেতো। এই ফার্স্ট টার্মিনাল দিলাম তো ষান্মাসিকের ঘন্টা, কোনমতে ষান্মাসিক যদি পার করেছি তো দ্বিতীয় সাময়িক এসে টুঁটি চেপে ধরতো, আর সেটা শেষ করার আগেই বার্ষিক। বার্ষিক শেষ করেই বা রেহাই কোথায়, সেইতো নতুন বছর, সেইতো আবার পুরনো সেই চক্র। তবু খারাপ তো লাগতো না কোনদিনও। তীর্থের কাকের মতো চোখ করে চেয়ে থাকতাম ক্যালেন্ডারের দিকে, কখন শুরু ঈদের ছুটি, কখন পাবো ম্যাট্রিকের বন্ধ। ফি বছর সেইক্যালেন্ডারের পাতা দেয়াল থেকে এসে জমা হতো বইয়ের মলাটে, আর নতুন নতুন পাতা ঘুরে যেতো মাসের পর মাস।
এটা এমন এক সময়ের গল্প যখন সময় আরেকটু জোয়ান ছিলো। বছরগুলো এখনকার চেয়ে বেশ জোরে ঘুরতো, আর মিনিটগুলো নিদেন পক্ষে তিনগুণ কি চারগুণ গতিতে তো ছুটতোই। ইদানীংকার সময় বড় বুড়ো হয়ে গেছে, একেক সময় তো এমন ধুঁকতে থাকে যে মনে হয় এই বুঝি থেমে পড়লো চিরকালের মতোই।
আর স্মৃতিও স্কুলের ফরহাদের মতোই বিরাট ধাপ্পাবাজ। মনে হয় যেন একা অন্ধকার এক রাস্তায় রেস করছি, আর এক এক করে স্ট্রীটল্যাম্পের মতোই পেছনে ফেলে আসছি একেকটা স্মৃতি। ঠিক করে মনে পড়ে না, শুধু মনে পড়ে, ছিলো দুর্দান্ত কোন জলধারার মতো এক শৈশব। বড় বদমায়েশ এই স্মৃতি, যা মনে করতে চাই তার আশেপাশে ঘোলাকাঁচ দিয়ে ঢেকে রাখে, আর ভুলে যেতে যাই যখন তখন ক্লোজ-আপ ইস্তেমাল করে চোখের সামনে এসে দাঁত খিঁচোতে থাকে বেশ করে।
হুশহাশ করে কখন জানি কলেজেও উঠে গেলাম, কই খারাপ লাগেনি তো তখনো। বরং এক নব্য স্বাধীনতার খোঁজ পেয়ে গেলাম, পকেটে শুধু ভাড়াটা নিয়ে আলটপকা উঠে পড়েছি টঙ্গীর বাসে, সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আশুলিয়া, ভাগ্যিস দুপুরে গোল্ড লীফ কেনা ছিলো পাঁচটা, নইলে কী হতো? নয়তো তিন ক্লাস করে ভরদুপুরে বেরিয়ে পড়েছি, পুরনো ঢাকার কোন গলিতে গরুর ঝাল আর পেঁয়াজ দিয়ে বেশ করে ভাত খেয়ে নীলক্ষেত, দরাদরি করে সস্তায় কোন রত্নভান্ডার কিনে বিকেলে বড় ভাইদের ভীড়ে চারুকলার দোতলায় ঠ্যাঙ ঝুলিয়ে সূর্যটাকে বেশরমের মতো ডুবে যেতে দেখেছি। তালঠ্যাঙা সাগর আর আমি মিলে হেঁড়ে গলায় "ভয় কি মরণে" গাইতে গাইতে যাচ্ছিলাম, হুট করে দোতলার দুটো জানলা খুলে গেলো এহেন অবক্তব্য সঙ্গীত সমস্যার রহস্য উদঘাটন করতে। পাশ কেটে চলে গেলাম রমনা পার্ক, সেই গোল্ড লীফ, সন্জীবের গান, সেই চাঁদের আলোয় চিকচিক করা লেক।
সেই কলেজও পার হয়ে গেলো জানি কখন।
চিরকালের ফ্যাসিনেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার বহিরাগত নয়, নিজের অধিকারেই ঢুকে গেলাম। প্রেম হলো, কার্জন হলে কি টিএসসির চিপায় প্রেমিকাকে বগলদাবা করে বসে থাকা হলো, পয়লা বসন্তে পান্জাবী আর ক্লাস শেষে ভেলপুরি নয় রাভেনাস এর খিচুড়ীও হলো, শুধু হলো না পড়ে থাকা সেইসব সময়ে। মাউন্টেন ডিউ ও বেনসনের সমাসে ক্লাসের মধ্যের সময়গুলো কাটানো শেষ হয়ে গেলো, শেষ হলো পরীক্ষার দিন সকালে বাংকারে বসে বসে তাস পেটানোর দিনগুলো, শেষ হয়ে গেলো যার খাতা দেখে পরীক্ষা দিতাম তাকে বের করে দেয়ার দুই মিনিটের মাথায় হল থেকে আমারও বেরিয়ে যাওয়া, শেষ হয়ে গেলো সব আড্ডা আর গান।
আগামীকাল কনভোকেশান। পরীক্ষা দিয়ে ম্যালা আগেই বের হয়েছি, চাকরি-বাকরিতে ঢুকে ছেড়েছি চিরচেনা এই ঢাকা, তবু সুতোটা কোথায় একটু আঁটকে ছিলো। এবার সেটা ছেঁড়ার পালা। কোথা থেকে অন্জন গেয়ে ওঠে -
মন্তব্য
মন খারাপ করে দিলেন। তাওতো দেশে আছেন, আমিতো হাজার মাইল দুরে; সুতোটাই সাথে আছে কেবল, নাটাইবিহীন।
এইবেলা একটা কপিলা খুঁজে নিয়ে গাঁটছড়া বেঁধে ফেলুন, দেখবেন নাটাই না, একেবারে নোঙ্গর পেয়ে গেছেন।
-------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
বাহ! কী সুন্দর প্রকাশ!
----------------------------
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু।
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।।
- ললিতবিস্তর
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
তুমিও দেখি দাঁত খিঁচাচ্ছো, বেশক বেশক।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
স্মৃতিকাতর হলাম। সুন্দর লেখা হয়েছে ভুতুম। একেবারে সামারি।
আগামী দিনগুলো আনন্দে কাটুক। সময়টাকে উপভোগ করুন। ভালো কিছু করার চেষ্টা করুন। নিজে সৎ থেকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। মেলা উপদেশ দিয়ে ফেললাম
...............................
নিসর্গ
ধন্যবাদ পিপিদা, মন্তব্য ও উপদেশ উভয়ের জন্যই।
-------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
শেষ সুতো ছেঁড়ার জন্য অভিনন্দন!
ধন্যবাদ!
-------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
খুব সুন্দর লিখেছেন।
আশা করি সফল হবেন। আমি হয়েছি কি না জানি না।
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
এ সুতো না ছেঁড়াই বোধহয় ভালো। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আর কয়েকদিন পর আমাদের ও কনভোকেশন। লেখা পড়ে নিজের জীবনের ফেলে আসা দিন গুলো মনে পড়ছে। সারা জীবন যদি মাথার উপর একটা আব্বা থাকতো, আর আমি বাউন্ডুলের মত কাটিয়ে দিতে পারতাম
স্পার্টাকাস
হায়রে আসলেই যদি পারতাম।
--------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ছাত্রজীবনই সন্দরতম সময়। এরপর শুধু দায় টেনে যাওয়া, নিজের ও অন্যের।
=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
আসলেই। এই সময়টাতেই যদি আটকে থাকা যেতো...
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আহা, মনটাই খারাপ হয়ে গেলো...। আমার এখনো ছাত্রত্ব শেষ হতে বছর দুয়েক- তবুও ক্যামন বুড়োটে হয়ে গেছি আজকাল...। নিজের জন্যে বড় হচ্ছি না- অন্য, অজানা কারো জন্যে বড় হচ্ছি্...
ভালো থাকুন।
-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
নিজের এক্তিয়ার থাকলে আমরা কে-ইবা বড় হতাম সুহান ভাই?
আপনিও অনেক ভালো থাকুন।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
বড়ো হয়ে গেলেই বুড়ো হয়ে ওঠার পালা !দুত্; ভাল্লাগে না.... *তিথীডোর
সেই.....
-------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
অভিনন্দন ভুতুম! লেখাটা বড় সুন্দর হয়েছে। তবে ভাই আমি কিন্তু পড়াশুনার সেই সূতা ছিড়ে মহা খুশী! জীবনে আর ঐদিকে পা দেয়ার ইচ্ছা নাই!
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
পড়াশোনা কি আমিও আর করতে চাই রে ভাই? শুধু ঐ কেয়ারফ্রি জীবনটা চাই।
--------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আমি আবার ছাত্রত্ব ধরে রাখার আপ্রাণ প্রয়াস চালাচ্ছি, কে জানে কি হয়!
তয় ভুতুম, লাইফটা কিন্তুক সিগ্রেটের দামের মতই, একবার হইয়া গ্যালে আর পিছন ফিরা নাই
আমার ডিশকাউন্ট কই ?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
লাইফে যখন ডিশকাউন্ট মিলে না, তখন সিগ্রেটে আর ডিশকাউন্ট দিয়া কী লাভ সিমন ভাই? তয় আমার ট্রিটে খাইতে পারেন মুফতে কোন একদিন।
-------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
নতুন মন্তব্য করুন