সকালটা খুব রোদে ঝকমকে। এরকম সকাল হলে অমিতের ঘুম আপনি ভেঙ্গে যায় আর শুয়ে থাকতেও ইচ্ছা করে না। ইচ্ছে করে ছাদে উঠে বসে থাকতে পুরনো দোলনাটাতে। পুরনো একটা ঝাঁঝরি আছে ছাদে পড়ে, মরচে ধরা। একসময় ছাদে কয়েকটা ফুলের গাছ লাগিয়েছিলেন অমিতের বাবা, তখন ওটাতে করে পানি দেয়া হতো গাছগুলোতে। মধ্যে একবার সবাই মিলে বেড়াতে গিয়েছিলো গ্রামের বাড়িতে, তখন গাছগুলোতে পানি দেয়ার কেউ ছিলো না দেখে মরে গিয়েছিলো সেগুলো। অমিতের অবশ্য খুব অবাক লেগেছিলো, কারণ গ্রামের বাড়িতে দেখেছিলো কত গাছ, আর সেগুলোতে কেউ পানি দেয়ও না, তবুও ওগুলো তো মরে না। বাবাকে জিজ্ঞেষ করতে খুব একচোট হেসেছিলেন ।
এমন সকাল হলে অমিতের ইচ্ছা করে সেই ঝাঁঝরিতে পানি ভরে গাছে গাছে পানি দেয়। গাছ নেই অবশ্য এখন, তবু অমিত মাঝে মাঝে ঝাঁঝরিতে পানি ভরে এদিক-সেদিক ছিটায়। খুব সাবধান থাকতে হয় যদিও, যাতে গায়ে ছিটে না পড়ে। মা টের পেলে সাড়ে সর্বনাশ। ঝাঁঝরি পুরোটা ভরলে আলগাতে কষ্ট হয় অমিতের, তাই অল্প পানি ভরে কিছুক্ষণ ছিটাছিটি করলো অমিত। দুটো কাক এসে বসেছিলো কার্নিশে, অমিত হুশহুশ করে ছুটে গিয়ে পানি ছিটিয়ে দিলো কাকগুলোর গায়ে। কাকগুলো খুব বিরক্ত হয়ে একটু উড়ে আবার এসে বসলো কার্নিশের আরেক দিকে।
অমিতদের বাসার পেছনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা, ওখানে একটা টিনশেডে অমিতদের গাড়ি থাকতো একসময়। টিনশেডের ঠিক পাশ ঘেঁষে একটা বড় গাছ, তিনতলা ছাদের থেকেও উঁচু। কয়েকটা ডাল পাতার ভারে নুয়ে পড়েছে ছাদের ওপর। যখন এমন সূর্য ভরা আকাশ থাকে, পাতার ফাঁক দিয়ে আলো এসে পড়ে ছাদের পাঁচিলে। অমিত যখন আরো ছোট ছিলো, তখন সেই টুকরো টুকরো আলো দেখে ধরতে চাইতো হাতের মুঠোয়। কিন্তু যেই না আলো ধরতে যায়, আলো বাইরে এসে পড়ে থাকে তার হাতের ওপর। এখন অবশ্য অমিত জানে, আলো ধরা যায় না। বাতাসও ধরা যায় না। শুধু গাছের পাতাগুলো যখন একবার এদিকে একবার ওদিকে যায় তখন বোঝা যায় বাতাস আছে।
আজকে শুক্রবার, স্কুল নেই। আর শুক্রবার দেখে বাবা-মা দুজনেই বেলা করে ঘুমোচ্ছেন। অন্যদিন হলে এতক্ষণে মা উঠে অমিতকে স্কুলের ড্রেস পরিয়ে দিতেন। পিছনে পিছনে ছুটতেন হরলিক্সের গ্লাস নিয়ে। অমিতের একদম ভালো লাগে না হরলিক্স খেতে, তবু মা একদিনও ছাড়বেন না।
ছাদে আরো কিছুক্ষণ হুটোপুটি করে অমিত পা টিপে টিপে নেমে আসে। মা যদি টের পায় . . . তবে এখনো ওঠেনি নিশ্চয়ই, উঠলে ঠিকই ডাকাডাকি শুরু হয়ে যেতো। আস্তে করে গিয়ে অমিত শুয়ে পড়ে দিদিভাইয়ের পাশে। দিদিভাই এখনো ঘুমোচ্ছে, রাত জেগে জেগে কত পড়া করে প্রতিদিন। বাবা বলেছে দিদিভাই ডাক্তার হয়ে গেলে অমিতকে একপাতা করে সিভিট এনে দেবে প্রতিদিন। অমিত ঠিক জানে, দেবে না। বড়রা কেন যে এত মিধ্যে বলে, মনে করে ছোটরা কিচ্ছু বোঝে না। অমিত মনে মনে ঠিক করে রেখেছে, ও যখন বড় হবে, তখন একদম মিথ্যে বলবে না ছোটদের সাথে, শুধু বড়দের সাথেই বলবে।
একটু পর মা এসে খুব ডাকাডাকি শুরু করে দিলেন। অমিত দিদিভাইয়ের চুল ধরে একটান দিয়ে উঠে পড়লো বিছানা থেকে, একদৌড়ে বাথরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ। শুক্রবার সকালটার এই এক নিয়ম, অমিত টানাটানি করে দিদিভাইয়ের ঘুম ভাঙ্গায়, আর দিদিভাই ধরতে পারলে অমিতের কানদুটো আচ্ছা করে মলে দেয়। আজকে অবশ্য পারেনি।
শুক্রবার সকালের আরো একটা মজা, প্রতিদিনের মতো পাউরুটি আর জেলি খেতে হয় না। আজকে যেমন মা পরোটা আর ডিমভাজি করে দিয়েছেন। অমিত হরলিক্স না খেতে চাইলে বাবা পিরিচে একটু করে চা ঢেলে দেন, অমিত সুরুত সুরুত শব্দ করে টেনে খেয়ে ফেলে। বাবা যে কীভাবে শব্দ না করে চা খায় অমিতের বুঝে আসে না।
খাওয়ার টেবিলে বসে বাবা বললেন, অমিত, আজকে কিন্তু বাসায় মেহমান আসবে। তুমি একদম দুষ্টামি করবে না, তোমার দিদিভাইয়ের রুমে চুপচাপ বসে পড়া করবে। জোরে টিভি ছেড়ো না।
অমিত প্রশ্ন করার আগেই দিদিভাই বলে, কে আসবে বাবা?
পিছনের জমিটা অনেকদিন ধরেই বিক্রি করতে চাইছিলাম, একটা পার্টির সাথে কথাবার্তাও খুব এগিয়েছে। আজকেই হয়তো তারা বায়না করে যাবে।
অমিত অবাক হয়, বড় মানুষের আবার কিসের বায়না? বাবাকে জিজ্ঞেষ করে, কি বায়না বাবা? কেন কিনবে? ওটা তো আমাদের জমি।
বাবা বলেন, আরে আমাদের জমি দেখেই তো কিনবে। ওদের জমি হলে কি আর কিনতো নাকি? ওখানে ওরা বাড়ি বানাবে।
অমিত বলে, কেন? ওরা আমাদের জায়গায় কেন বাড়ি বানাবে?
বাবা হেসে ওঠেন, বলেন, শোনো বোকা ছেলের কথা। আমরা বিক্রি করে দিলে ওটা কি আমাদের জায়গা থাকবে? ওটা তো তখন ওদের হয়ে যাবে।
অমিত বলে, তাহলে আমাদের গাছ?
বাবা বলেন, ওটাও ওদের হয়ে যাবে। ওটা কেটে ফেলবে, আমাদের পুরনো টিনশেড গ্যারেজটা ভেঙ্গে ফেলবে, এরপর সে না বাড়ি বানাবে।
অমিতের বুকটা কেমন যেন মুচড়ে ওঠে, কেটে ফেলবে গাছটা? ওর টুকরো আলো আর বাতাসের গাছটা কেটে ফেলবে? অমিত তাহলে আর ছাদে উঠে কি করবে? অমিতের চোখে অভিমানে পানি চলে আসে, তাড়াতাড়ি মুখ নামিয়ে নেয়। দিদিভাই দেখতে পেলে যা ক্ষ্যাপাবে!
মন্তব্য
রবীন্দ্রনাথের বলাই এর কথা মনে করিয়ে দিলেন ভাই।
স্পার্টাকাস
উরেবাবা, কী বলেন?
-------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
হু-আ এর 'পুতুল' উপন্যাসের শুরুর মতো লাগলো...
______________________________________________________
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
পড়েছি বলে মনে পড়ছে না, ক্যামন?
---------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
কিশোর উপন্যাস...। সম্প্রতি মোরশেদুল ইসলাম এইটা নিয়ে একই নামে একটা ছবিও করেছেন।
______________________________________________________
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
পড়ে নিতে হয় দেখছি।
---------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
বেশ ভালো লাগলো!
এক তারা কে বাড়িয়ে দিলাম।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
তারায় কিবা আসে যায় . . .
ধন্যবাদ সিমন্ভাই।
--------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ভালো লাগলো বেশ!
----------------------------
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু।
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।।
- ললিতবিস্তর
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ধন্যবাদ বালিকা।
-------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
চমৎকার লাগলো। একেবারে শৈশবে ফেরানো একটা লেখা।
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
অজস্র ধন্যবাদ ওডিন্ভাই।
-------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
দ্বিতীয়বার পড়ে আরো ভাল্লাগলো, জানিয়ে দিতে লগ ইন করলাম!
--------------------------------------------------
"সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমিও লগ-ইন করে ফেল্লাম ধন্যবাদ জানাতে।
-----------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
নতুন মন্তব্য করুন