সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি

রাহা এর ছবি
লিখেছেন রাহা (তারিখ: রবি, ০৯/১২/২০০৭ - ২:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি । হয়তো এখন কথাটা সঠিক নয় । জনসংখ্যা সাতকোটি পেরিয়ে গেছে চৌদ্দ কোটিতে । এসেছে আত্মপরিচয় নিয়ে ভেদাভেদ , বাঙালি না বাংলাদেশী । বাংলাদেশী বিশ্বাসী হবে ধরুন পাচঁ কোটি তারপরও থেকে যায় বারো কোটি বাঙালি । আমরা সেই বারো কোটি বাঙালি , বাঙালি হয়ে রইলাম আর মানুষ হওয়া হলো না । হচ্ছে না ।
কেন ??
সে প্রশ্ন হয়তো সবার ।
কিন্তু উত্তরটা কেউ খোজেঁনা , খোজাঁর দরকারও পড়েনা ।
আমরা জানি, শিশুদের হাতে আগুন কিংবা লোহা দিতে হয়না আর পাগলকে সাকোঁ না নাড়ানোর কথা বলতে হয়না । তারপরও শিশুদের হাতে লোহা চলে যায় আর পাগলকে মনে করিয়ে দেয়া হয় সাকোঁ নাড়ানোর কথা ।
এরপর ?? যা হবার কথা তাই হয় ।
আর আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি, এবং বলতে তাকি এজন্যই তো বলে ছিলাম.......

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন সম্মানিত শিক্ষককে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছে সম্মানিত আদালত। সম্মানিত আদালত, সম্মানিত শিক্ষকদের কারাদণ্ড দেবার আগে কি একবারো ভেবেছে কেন আদালত সরকারের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে ?? নাকি হরলিক্স এর মতন কোনদিন আমাদের শুনতে হবে 'সবাই তো ব্যবহৃত হচ্ছে তাই আমিও'।
তাহলে সেটা ঠিক হবেনা । কেননা আমরা এখন এই শব্দটাকে ব্যবহারের আগে সম্মানিত লিখি । এভাবে কারো জন্য ব্যবহৃত হলে তাদের সামনে থেকেও এই সম্মানিত শব্দটা সরে যাবে , বিলুপ্ত হবে । যেমন অনেক শব্দই এখন তার আগে এই বিশেষণটা আর যোগ করতে পারেনা ।
শিক্ষক, সবসময়ই সম্মানিত শিক্ষক (তিনি দল করুক আর বেশ্যাই হোক) । তাকে অসম্মানিত করলে ব্যাক্তি শিক্ষক অপমানিত হননা । অপমানিত হয় সেই জাতি , রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থা ।
অবশ্য যদি আপনি শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড মনে করেন । হাতের ডাণ্ডা কিন্তু মেরুদণ্ড নয়, মেরুদণ্ড হচ্ছে আপনাকে যে দণ্ডটা মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে রাখে । অবশ্য আমরা দেশের স্বার্থে জনগণের নিরপত্তার জন্য কিছু মানুষের কাছ থেকে মেরুদণ্ডটা কেড়ে নিয়ে হাতে ধরিয়ে দেই । সেই মানুষগুলোর এই মেরুদ্ণ্ডহীনতাকে খাটো করবেন না । বরং তাদের দেশের স্বার্থে এমন ত্যাগকে আমাদের সাধুবাদ জানানো উচিত। সভ্যতার কাছে সবসময়ই কিছু মানুষ নিঃস্বার্থ ভাবে সবকিছু ত্যাগ করে সভ্যতাকে এগিয়ে নেয় । যেমন রাজাবাদশাহদের আমলে রাজকন্যা কিংবা রাণীদের ব্যক্তিগত দেহরক্ষাকারী পুরুষদের একটি বিশেষ দণ্ড উৎসর্গ করে তাদের দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হতো । এমনকি তাদের কথা বলার শক্তি কে বিনাশ করা হতো জিহ্বা কেটে দিয়ে যেন রাজ্যের গোপনীয়তা প্রকাশিত না হয় । সভ্যতার পালাবদলে দেশকে , রাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য সভ্যতা নিয়োজিত করেছে এমন কিছু রক্ষী যাদের মেরুদণ্ড উৎসর্গ করে তারা সেইকাজে যোগ দিতে হয় । শুধু তাই নয় তাদের কাছ থেকে রাষ্ট্র মর্গেজে রখে দেয় মেধা-মনন-বুদ্ধি-মানবিকতা । তাদের এই আত্মত্যাগ সভ্যতা নিশ্চয়ই মনে রাখবে । কিন্তু রোবটই বলুন আর রক্ষীই বলুন, তারা সবসময়ই আপনার বাধ্যনুগত থাকেনা । ডিজ অর্ডার হলেই তারা অবাধ্য । মানুষের হাতেই জন্ম নেয়া , মানুষের জন্য এই রক্ষীরাই হয়ে ওঠে অবাধ্য , ফ্রাংকেস্টাইন ।
সেই মেরদণ্ড ত্যাগী , মেধা-মনন-বুদ্ধি-মানবিকতা রাষ্ট্র এর মর্গেজে রাখা মানুষ গুলো যখন ফ্রাংকেস্টাইন হয়ে ওঠে, তখন তারা কেবল ধ্বংস করতে জানে কিছু তৈরী করতে জানে না। তাদের তো সৃষ্টির কাঝ শেখায় না মানুষ , তাদের শুধু রক্ষার কাজ শেখানো হয় । ফ্রাংকেস্টাইনদেরও কখনও রাজ্য পরিচালনার শখ হয় । কিন্তু সেই মেরুদণ্ডহীন, মেধা-মনন-বুদ্ধি-মানবিকতাহীন ফ্রাংকেস্টাইনদের কাছে রাষ্ট্রের নিরপত্তার ভার দেয়া যায় কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার ভার দেয়া যায় না । বোকা ফ্রাংকেস্টাইনদের বোঝেনা কেন তাদের কাছ থেকে মানুষ কিছু জিনিস রেখে দেয় । তাদের পক্ষে কতোটুকু কৃষ্টি-সৃজনশীলতা সম্ভব ?? তাদের তৈরী করা হয়ে রাষ্ট্রের নিরপত্তা রক্ষার জন্য , রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নয় ।
তাই রাষ্ট্রে এতো শ্রেণীর মানুষ, সবার জন্য সব কিছু নয় , সবার সবকিছু জানার কিংবা পারার দরকার হয়না । যেমন শিশুদের হাতে আগুন কিংবা লোহা দিতে হয়না আর পাগলকে সাকোঁ না নাড়ানোর কথা বলতে হয়না ।
তেমনি ফ্রাংকেস্টাইনরা কবিতা পড়তে জানে, লিখতে নয় । তারপরও কখনও যদি কোন ফ্রাংকেস্টাইন কবি হয়ে ওঠে তবে অবশ্যই জেনে রাখবেন তার পেছনে নিশ্চয়ই একজন মানুষ আছেন । ফ্রাংকেস্টাইন কবি হবার আগে মানুষ হও । মানুষ না হলে কবি হওয়া যায় না ।
ফ্রাংকেস্টাইন,তবেই তোমার হাতের রাইফেল থেকে বুলেট নয় গোলাপ ফুটুক । গোলাপের ঘ্রাণে পাবে বিশুদ্ধ ভালোবাসা ।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

শিক্ষকদের শাস্তি প্রদানের একটা ভালো দিক হলো-বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নামের যে ফাজলামো,তা যে আসলে ফাজলামোই সেটা প্রমানিত হওয়া ।
শুরুর দিকে এই সরকারের প্রতি মোহগ্রস্ততা ছিল প্রায় সকলেরই । সাহস করে যে স্বল্পসংখ্যক মানুষ এর পরিনতির কথা ভাবছিলেন তাদেরকে সমালোচিত হতে হয়েছিল । ধীরে ধীরে সাধারন মানুষের এই মোহ কাটছে ।
মোহটা কেটে যাওয়া দরকার ।

-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সহমত। লেখা সময়োচিত।

নামহীন এর ছবি

এসব শিক্ষকরা কি দুধে ধোয়া তুলসি পাতা? এনারা কেন রাজনৈতিক দলের পা চাটেন? এর উত্তর শিক্ষকদেরই দিতে হবে। রাজনৈতিক মতামত/মতাদর্শ একেকজনের একেকরকম হতেই পারে। তাই বলে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক দলের পা চাটা স্বার্থ হাসিলের জন্য----- কি রকম শিক্ষার নমুনা? স্কুলেও তো আমাদের শিক্ষকরা আছেন। তারা মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে অনশন করেন। তাদের জন্য কেন আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করি না? কেন তারা অবহেলিত আর এই শিক্ষকরূপী স্বার্থহাসিলকারী একটি শ্রেনীর জন্য এত আমাদের মাথাব্যাথা? শিক্ষক হলেই কি সাত খুন মাফ?

বিদ্র : লেজুরবৃত্তি না করা কিছু শিক্ষক আজও আছেন। তাদের কাউকে হয়রানি করা হলে তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।