চির বসন্তের দেশে - ৩

রাহা এর ছবি
লিখেছেন রাহা (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০১/২০০৮ - ১১:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাতের কুনমিং৩.
ইস্টার্ন এয়ার আকার আয়তন কিংবা যাত্রীসেবার মান একবারেই ডমেস্টিক ফ্লাইটের মতন । সর্ব সাকুল্যে ১৪০ কিংবা তার কাছাকাছি যাত্রীধারণ ক্ষমতা । ঢাকা থেকে কুনমিং পৌছাতে লাগে মাত্র ২ ঘন্টা । আর প্লেনে নাকি তিল ধারণের জায়গা থাকেনা , দেশী লোকাল বাস, এসব শুনেছিলাম । তবে তেমন ভিড় না হলে খুব কম আসনই ফাকা ছিল । তবে আমি তিন সিট জুড়ে বেস পড়েছি, আমার সংঘী কোন যাত্রী ছিল না । তাই পুরো পথ জুড়ে জানালা দিয়ে চোখ গলিয়ে নীচের প্রাকৃতি দৃশ্য দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম । নীচের পাহাড়ের সাড়ি, আর মাঝে মাঝে চিকন সুরু সাপের মতন নদী বেশ লাগছিল । সবসময় জার্নির সময়টায় ট্রেন-বাস নৌকা যে বাহনই হোকনা কেন আমি চারপাশ দেখতে দেখতে যাই । বারে বারে বোঝার চেষ্টা করছিলাম যাত্রা পথটা কোন কোন দেশের উপর দিয়ে যাচ্ছি । কিন্তু পাহাড়-পর্বতের তো চেহারা আলাদা করে বোঝা যায় না , বাংলাদেশ না ভারত না বার্মা না থাইল্যান্ড । সব পাহাড়ই এক । তবে পাশ থেকে একজন বয়স্ক যাত্রী (সম্ভবত বনিক হবেন) দেখেন নিচে কিছু নাই না শহর, না গ্রাম না রাস্তা মানে হইল গে হয় ইন্ডিয়া বা বাংলাদেশ । নিচে কিছু দেখলেই বুঝবেন যে চায়না এসে গেছে । ওরা ১ ইঞ্চি জায়গা বাদ দেয়নি উন্নয়ন করতে । বয়স্ক মানুষ, সমঝদার লোক । মাথা নেড়ে আমি সায় জানালাম । কিন্তু তার থিওরিতে আরো কনফিউজ হয়ে গেলাম । বাড়ে বাড়ে মনে হতো লাগল একটু ম্যাপটা দেখে বের হলেই তো হতো । তাহলে তো যাত্রা পথটা ঠাহর করতে পারতাম । অন্যান্য প্লেনে যাত্রাপথের ম্যাপ-ট্যাফ মনিটরে দেখাত । এটা কোন মনিটর দেখতে পেলাম না ।
ইস্টার্ন চায়না এয়ারলাইন্স যখন কুনমিং এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করল তখন আমার ঘড়িতেসাড়ে চারটা পেরিয়েছে । আর চীনের লোকাল টাইম হবার কথা ৬:৩০ এর বেশী । ২ ঘন্টা হেরফের । তখন আকাশে সূর্য়ের আলো, অনেকটা কনে দেখা আলোর মতন । এয়ারপোর্টে আমার অপেক্ষায় আছে বউ। ওনি আমার আগেই চীনে এসেছেন । লাগেজ নিয়ে ইমিগ্রেশন পার হয়েই পেয়ে গেলাম তাকে । এয়ারপোর্টের বাইরে বেরুতে ঠান্ডা হাওয়া পরশ । একটু কুকড়ে উঠলাম । আমারা সংগী বলল আজ ঠান্ডা কম । ও এসেছে ১ তারিখে, ওদিন ছিল ৪ ডিগ্রী । আমি পেলাম ১২ ডিগ্রী। আমাদের উত্তরবঙ্গে এমন ঠান্ডা থাকে শীতকালে । এয়ারপোর্ট থেকে রেস্ট হাউজ ৭ মিনিটের পথ । এখানে সূর্য ডোবে দেরীতে । রেস্ট পৌছানোর পর গোধূলি শেষ হয়নি । এই শহরে কি গোধূলি হবে নাকি গাধূলি হবে?? মানে গাড়ীর ধূলি.....
যে রেস্ট হাউজে এলাম সেটা বাঙালি রেস্ট হাউজ । কুনমিং এ এরকম ১৪ টি রেস্ট হাউজ আছে বাঙালিদের । কেননা চীনে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আসতে হলে আপনাকে অবশ্যই কুনমিং একরাত থাকতে হবে । কানেক্টিং ফ্লাইট সব পরদিন । তাই বাঙালি সব বনিকেরা আশ্রয় নেয় এইসব রেস্ট হাউজে । বাঙালিরা বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে এমন রেস্ট হাউজ গড়ে তুলেছে । আমরা যে রেস্ট হাউজ বেছে নিলাম সেটি একটি আবাসিক এলাকা । রেস্ট হাউজ থেকে একটু ফ্রেস হয়ে আমরা বেরুলাম একটু ঘুরব বলে । আমার সংগী কুনমিং এসেছিল অফিসিয়াল ট্যুরে । (৩ দিনেই বেশ রাস্তাঘাট চিনে নিয়েছেন!!) আর চলাচলের ব্যবস্থা হিসেবে সংগ্রহ করে কিছু চিরকুট । আমরা যে জায়গা গুলোতে যাব তার নাম ইংরেজী আর হিব্রু থুড়ি চাইনিজ ভাষায় লেখা । আরো আছে কিছু ভিজিটিং কার্ড । সেই এড্রেসটা ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ধরিয়ে দিয়ে যেতে হবে ।
আমরা একটা ট্যাক্সিতে চড়ে বসলাম, এড্রেস দেখিয়ে, যাবো ক্যারফোর । আমার সংগীর ভাষ্যমতে চাইনিজরা একবিন্দু ইংরেজী বোঝে না । তাই এ ব্যবস্থা । কিন্তু একটু সন্দেহ নিয়ে আমি সেটা পরীক্ষা করতে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলাম ইংরেজীতে ক্যারফোর, সে গাড়ি থামিয়ে ফেলল, চাইনিজ ভাষায় কিসব বলতে শুরু কলল, আমি ক্যারফোর, ক্যারিফোর সম্ভাব্য সকল ইংরেজী উচ্চারণ আওড়ালাম কিন্তু চালকের কথা থাকেনা । বউ হাসিতে গড়াগড়ি সে আবার চিরকুটটা চালকের হাতে দিতেই গাড়ি চলতে শুরু করল । আমি একটু ঘাবড়ে গিয়ে চুপ মেরে গেলাম ।


মন্তব্য

রানা মেহের এর ছবি

গোধুলি আর গাধুলি ব্যাখ্যা
হেভি হয়েছে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

কনফুসিয়াস এর ছবি

কাহিনি জমতেছে। চলুক।
তবে ফেইসবুকে আপনার ছবি দেইখা একসাথে তিন সিট নিয়া বসার তর্জমা বুঝে গেছি!
হাসি
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।