১৯৭১ সালে যখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা ভারতে একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছিল সেখানে আমাদের চলচ্চিত্রকাররাও অংশগ্রহন করেন । সেসময় অস্থায়ী সরকার কর্তৃক মুলত জহির রায়হানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল চলচ্চিত্র নিমার্ণের । যে চলচ্চিত্রটি স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এবং নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গনহত্যার স্বাক্ষ্য দেবে; পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশ কিভাবে তার মুক্তি সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছের তাও সচিত্র বিবৃত করবে । সে উপলক্ষ্যে ফান্ড জোগাড় যন্ত্র শুরু হয় । যতোদূর জানি কনসার্ট ফর বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ সংগ্রহ হয় তাই দিয়ে পুর্নাঙ্গ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু করা হয় আর চলচ্চিত্রের জন্য বরাদ্দ হয় ৮০ হাজার টাকা । জহির রায়হান সেই খরচ বাচিয়ে রঙ্গীন চলচ্চিত্রের বদলে বেছে নেন সাদা কালো আর পরিল্কনা করেন ৪ টি চলচ্চিত্র নিমার্ণের । ২০,০০০ টাকায় তারা শেষ করবেন এককটি তথ্য চিত্র । সেভাবে কাজ শুরু হয়, নির্মিত হয়ঃ
১. জহির রায়হান পরিচালিত স্টপ জেনোসাইড
২.আলমগীর কবির পরিচালিত Liberation Fighters :
৩. বাবুল চৌধুরী পরিচালিত Innocent Millions
৪. A State is Born এই মুহুর্তে পরিচালকের নাম মনে আসছে না । আরকেটি ছিল জহির রায়হান পরিচালিত Let There Be Light যেটি সম্পূর্ণ শেষ করে যেতে পারেনি পরিচালক ।
এছাড়া ভারতের বিখ্যাত পরিচালক সুখদেব নির্মান করেন নাইন মান্থ অব ফ্রিডম । আর জাপানের অর্থ সহয়তায় নির্মিত হয় জাপান সরকারের মাধ্যমে জয়বাংলা ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র দেশের বিভিন্ন মুক্ত এলাকায় ভ্রাম্যমান মঞ্চ ট্রাকে করে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার গান শুনিয়ে অনুপ্রাণিত করত আর সেই দায়িত্বটি নিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা সেই দলটির সাথে জুটে ক্যামেরা একজন মার্কিন সাংবাদিক( যার নাম মনে করতে পারছি না )... শিল্পীদের বিভিন্ন পরিবেশনা এবং নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে গান গাওয়া থেকে শুরু করে একটি ট্রাকে শিল্পীরা কিভাবে দিনরাত কাটিয়ে দিচ্ছেন একটি স্বাধীন দেশের জন্য পরিচালক মুলত তাই চিত্রধারণ করেছিলেণ । পরবর্তীতে সেই ধারণকৃত রিল আর কোথা প্রকাশিত হয়নি । পরবর্তীতে তারেক মাসুদ ৯০ এর দশকের শেষে সেই ফুটেজ পান এবং সেখান থেকে নির্বাচিত অংশ নিয়ে এবং কয়েকটি শট পূর্ণনির্মান করে তৈরী করেন, মুক্তির গান । সম্ভবত ৯৭-৯৭ এ ।
আর মুক্তির গান প্রদর্শিত হবার পরপরই সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে সারা দেশের গ্রাম-গঞ্জ, হাটে-বাজারে অসংখ্যবার মুক্তির গান প্রদর্শিত হয় । সেই মুক্তির গান দেখতে এসে অনেকেই খুজে পেয়েছেন নিজেকে কিংবা নিজের স্বজন এর ছবি । সেই সব মানুষের অনুভূতি সাক্ষাৎকার এবং মুক্তির গানের প্রদর্শনীতে মানুষের উত্তেজনা আর আবেগের চিত্রায়িত হয়েছে মুক্তির কথায় । যখন সারা দেশে তুমুল উত্তেজনায় মুক্তির গানের প্রদর্শনী চলছিল সেই সময়কে নিয়ে, সেই প্রদর্শনীর গল্প আর মুক্তির গান দেখে মানুষের স্মৃতিচারণ, অনুভূতি কিংবা নিজেকে বা নিজের স্বজনকে খুজে পাওয়ার গল্পই মুক্তির কথা প্রামাণ্য চিত্রে ।
এছাড়া নানা সময়ে নানা ভাবে মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেক প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে ।
সর্বশেষ যে প্রামাণ্যতচিত্রদুটি আলোড়ন তুলেছিল তার একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ মার্চ কালো রাতের গণহত্যা নিয়ে কিছু ফুটেজ আর রিমেক অংশ নিয়ে নির্মিত হয়েছে ২০০৪ সালে সেই রাতের কথা বলতে এসছি । পরিচালনা করেছেন কাওসার চৌধুরী । তিনি এছাড়া খুলনার বধ্যভুমি নিয়েও একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মান করেছিলেন । আরেকটি চলচ্চিত্র হলো ইয়াসমি কবিরের স্বাধীনতা । দুটি ডকুমেন্টারী দেশে এবং দেশের বাহিরে আলোচিত ছিল । স্বাধীনতা চলচ্চিত্র টি নিমার্ণ করা হয়েছে হ্যান্ডিক্যামে, মূলত যে চরিত্রটি কেন্দ্র করা তা হলো ১৯৭১ এর বীরাঙ্গনা গুরুদাসী যিনি এখন বরিশালে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঘুরে বেড়ান... তার পিছু ছুটে ছুটেই পরিচালক সেই অসাধারণ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন।
মন্তব্য
বেশ কিছু জিনিস অজানা ছিল ,,,ভাল লাগল
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
মুক্ত-মনার ডাটাবেজ থেবে তথ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ উইকিয়াতে একটি তালিকা করেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্রের। এখানে তালিকার লিংকটা দিলাম:
http://muktijuddho.wikia.com/wiki/মুক্তিযুদ্ধ_বিষয়ক_স্বল্পদৈর্ঘ্য_ও_প্রামাণ্য_চিত্র
---------------------------------
মুহাম্মদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
জানলাম...... কিপ ইট আপ
রাকিব হাসনাত সুমন
ধন্যবাদ!
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...
নতুন মন্তব্য করুন