৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসংগে সদা সতর্ক থাকুন (যেন সর্ষের মধ্যে থেকে ভূত না বের হয়)

রাহা এর ছবি
লিখেছেন রাহা (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/১১/২০০৭ - ৩:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত কয়দিন থেকে শুধু ব্লগ নয় সারাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী , ঘাতক , রাজাকার মুজাহিদী আর তার দল জামায়তের নেতাদের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য তীব্র প্রতিক্রিয়া চলছে । আর জামায়াত-শিবির-রাজাকার ব্লগে বিষয় হিসেবে বেশী হিট এর সম্ভবনা । তাছাড়া সবার পোস্টে এই বিষয় কোন না কোনভাবে এসে যাচ্ছে , হয়তো এসব কারণে অনেকটা একঘিয়েমিতে পেয়ে বসতে পারে ।
কিন্তু তারপরও যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি জরুরী । এ বিষয়ে সবার বিভিন্ন দৃষ্টিভংগিতে আলোচনা এবং অংশগ্রহন জরুরী মনেকরি

ইতমধ্যে যুদ্ধাপরাধী খুনীদের বক্তব্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষ করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে । সেই সাথে দেশের বর্তমান সরকার প্রধান, প্রধান উপদেষ্টা , সামরিক বাহিনীর প্রধানসহ নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে । এবার , এবারই নিশ্চয়ই আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের গ্লানি, কালিমা ধুয়ে মুছে ছাপ করে ফেলব , যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব । কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় ?? প্রচলিত আইনে নাকি প্রয়োজনে সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রনয়ণ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে ??

মানুষ হিসেবে আমি হয়তো অনেকখানি হতাশাবাদী । নৈরাশ্য আর নৈরাজ্যের বাসিন্দা । তাই ঘর পোড়া গরুর মতন সিদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পাই । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যেমন আশাবাদী হয়ে উঠেছি আবার তেমনি অজানা আশংকায় তীব্র ভয় পাচ্ছি । প্রচলিত আইন তথা দুশো বছর পুরোন বিট্রিশ আইনের ফাক ফোকর গলিয়ে যদি এই ধূর্ত নেকড়ের দল বেরিয়ে যায় ??

শংকার কিংবা আশংকিত হবার আরো অনেক কারণ রয়েছে । এই সরকার আসার পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে সংস্কার শুরু হয়েছে তা থেকে কেন যেন এই যুদ্ধাপরাধী ধর্ম ব্যবসায়ী রাজাকারের দলটি কেন যেন বাইরে থাকছে । আবার এ সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা জামাতের মুখপাত্রের মতন মন্তব্য করেছেন , জামাতের সাফাই গেয়েছেন । রাজনৈতিক দল গুলোর উপর সংস্কারের যে চাপ আছে তা সরকার কিংবা সেনাবাহিনী কিংবা সহজভাবে দেশী বিদেশী বিভিন্ন মহলের চাপ তা তেকে জামাত মুক্ত । এমন কি অনেক রাজনীতিবিদ এর উপর দেশের বাহিরের যাবার নিষেধাজ্ঞা থাকলে জামাতের নেতাদের উপর নেই ।

এই সরকার আসার পর পরই দেশের সেনাপ্রধান প্রথম নাগরিক মতবিনিময় সভা করেছিলেন সেখানে জামাতের নেতাদের এবং জামাত সমর্থিত নাগরিকদের সংখ্যা সর্বাধিক ছিল । শুধু বর্তমান সামরিক বাহিনী সমর্থিত সরকারই নয় জামাত তার জন্ম লগ্ন থেকেই সেনাবাহিনীর সংগে সখ্যতা এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সবসময়ই সুবিধা প্রাপ্ত হয়েছে । যা এসময়ও লক্ষনীয় ।

জামাত স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই ইদুরের গর্তে ঢুকে যায় । আর কিছু যুদ্ধাপরাধী বন্দি হয় । কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে তারা শুধু জেল থেকেই মুক্ত হয়নি তারা আবার রাজনীতি করার সুযোগ পায় । পাকিস্থানী আমলে কিংবা যুদ্ধকালীন সময়ে জামাত যেভাবে সেনক্যাম্পের ছত্রছায়ায় অপকর্ম করেছে , পাকিস্থানী সেনাবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে তার বিনিময়ে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী তাদেরআগলে রেখেছে । আবার ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে আমাদের সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় জামাত তাদের শাখা প্রশাখা ডাল পালা বিস্তৃত করেছে আর ধর্মের বর্মে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের কর্মী সমর্থক বানিয়েছে । সকল সামরিক সরকারের আমলেই তাদের মদদে জামাত এগিয়েছে ।

জামাত এবং জামাতের রাজাকার নেতারা অনেক ধূর্ত । তারা ৩২ বছরে গুটি গুটি পায়ে এগিয়েছে । তাদের মতন মিথ্যেবাদী , ধূর্ত , শঠ ব্যক্তি হুট করেই এমন কথা বলার যুক্তি নেই । এর পেছনে আছে আরো বড় কোন চক্রান্ত । আর জামাত রয়েছে অনেক বিদেশী প্রভু , যাদের প্রত্যক্ষ মদদে জামাত নিজেদের করেছে শক্তিশালী । একটি নীর নক্সা নিয়ে ধর্মভীরু মানুষকে ধর্মের ভয় দেখিয়ে জামাত দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি অংগনে তাদের নেতা কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে একরকম দখল করেছে । বর্তমান সময়ে জামাত সরকারের প্রতিটি সেক্টরে ঘাপটি মেরে বসে আছে । সময় ও সুযোগ মতন তার বেরিয়ে আসবে । তাদের স্বপ্ন দেশের ক্ষমতা দখল । সেই লক্ষ্যেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে । এমন সময়ে তারা যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি জন প্রকাশ্যে এনে জনগনকে ক্ষিপ্ত করার পেছনে আর কোন পরিকল্পনা নেই তো ??
তাছাড়া দীর্ঘ ৩৬ বছরের জামাত-রাজাকারের বিরুদ্ধে যেসব যুদ্ধাপরাধারের দলিল ছিল আমি নিশ্চিতে বলতে পারি তাও তারা নিশ্চিহ্ন করেছে ।আর প্রচলিত আইনে বিচার হলে আইনের ফাকফোকর গলিয়ে বের হয়ে আসার সম্ভবনা ক্ষিন নয় । তাই কি অতি সাহসী হয়ে তারা রাজাকার রাজাকার নাম মুছতে এই ভূমিকা নেমেছে । আর বিচার বিভাগ স্বাধীন হতে যাচ্ছে । বিচারকদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছিল সেখানেও যে জামাতের লোক ঘাপটি মেরে নেই তা নিয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়না ।
রাজাকারদের এমন ধৃষ্টতা , এমন উদ্ধতপূর্ণ আচারণ , স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ এবং সর্বোপরি দেশের সংবিধান বিরোধী বক্তব্য দেয়ার সাহস এই যুদ্ধাপরাধীরা কোথা থেকে পায় ?? মনে রাখা প্রয়োজন তারা একা নয় । তাদের পিছনে আছে আন্তর্জাতিক চক্র , যারা বারে বারে আমাদের নিগৃহীত করার চেষ্টা করেছে ।

তারপরও আমরা ভীত নই । মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী খুনি রাজাকারদের পিছনে ১৯৭১ সালে প্রশিক্ষিত অস্ত্র সজ্জিত আর্মি ছিল । ছিল আমেরিকা, চীন , সৌদীআরব সহ অনেক আন্তর্জাতিক চক্র । আমরা মুক্তিকামী বাঙালি সকল রক্ত চক্ষুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের পরাস্থ করেছি । সেই ক্ষোভ তারা কোনদিন ভুলতে পারেনি । যেমন পারেনি রাজাকার জামাত । তারা বারে আমাদের পবিত্র সংবিধান , সার্বভৌমত্য উপর আঘাত করেছে । আমাদের দ্বিধান্বিত করেছে । আর আমাদের দেশ মাতৃকাকে অপমান করেছে । ১৯৭১ সালে সেই জামাত-শিবির-রাজাকার চক্রটিকে যদি আমরা পরাস্থ করতে পারি আজও পারব । তাদের যে ষড়যন্ত্রই থাকুক আর যাদের সংগে নিয়েই তারা ষড়যন্ত্রে মাতুক আমরা এবার এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব ।
আমাদের শুধু সদাসতর্ক থাকতে হবে । যেন সর্ষের মাঝ থেকেই ভূত না বেরিয়ে আসে । মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার গৌরবে গরবিত মানুষদের মাঝে যেন কোনক্রমেই বিভাদ সৃষ্টি না করতে পারে । আসুন আমার সদাসতর্ক থাকি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সক্রিয় ভূমিকা রাখি ।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এক অপশক্তি আরেক অপশক্তিকে দুধেভাতে বাড়িয়েই তুলবে শুধু । '৭১ এ ও কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় অপশক্তি প্রতিরোধ হয়নি,এখনো হবেনা ।
আইনি প্রক্রিয়ার মারপ্যাঁচে শেষে তাদেরই লাভ হবে । আরো অনেক ভোগান্তি,আরো অনেক দুর্দিন সামনে আছে ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

সারছে তাইলে !!

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

thumbs up


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

বিপ্লব রহমান এর ছবি

এই সরকার আসার পর পরই দেশের সেনাপ্রধান প্রথম নাগরিক মতবিনিময় সভা করেছিলেন সেখানে জামাতের নেতাদের এবং জামাত সমর্থিত নাগরিকদের সংখ্যা সর্বাধিক ছিল । শুধু বর্তমান সামরিক বাহিনী সমর্থিত সরকারই নয় জামাত তার জন্ম লগ্ন থেকেই সেনাবাহিনীর সংগে সখ্যতা এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সবসময়ই সুবিধা প্রাপ্ত হয়েছে । যা এসময়ও লক্ষনীয় ।

অতি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

হ্যাঁ, এবং তারাই প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নটি তোলে। এবং তখন থেকেই রাজনৈতিক সংস্কারের থেকে দৃষ্টি সরে আসে এ প্রশ্নে।

'''শুধু বর্তমান সামরিক বাহিনী সমর্থিত সরকারই নয় জামাত তার জন্ম লগ্ন থেকেই সেনাবাহিনীর সংগে সখ্যতা এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সবসময়ই সুবিধা প্রাপ্ত হয়েছে । যা এসময়ও লক্ষনীয় ।'''
তাই-ই যদি হবে তাহলে সেই সেনাবাহিনী থেকেই কেন জামাতকে বেকায়দায় ফেলার আয়োজনের সূত্রপাত হলো? এর ব্যাখ্যা তো লেখার স্পিরিটের সঙ্গে যায় না।
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রাহা এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফ আপনি লেখা পড়লেই বুঝতে পারবেন আমি কোন পয়েন্ট নিয়ে কথা বলেছি । তাদের যুদ্ধাপরাধী বিষয়টা থেকে অবহতি দিতে হলেও বিচার দরকার ।

..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।