আমি আর তুই

মৃদুল আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন মৃদুল আহমেদ (তারিখ: সোম, ২১/০৪/২০০৮ - ১:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তুই আমি ঠিক অপু-দুর্গার মতো--
স্বপ্নের পাখা মেলে দূরে গেছি কত!
হাতে হাত ধরে ছুটে গিয়ে কাশবনে
দেখেছি রেলের গাড়ি--আছে তোর মনে?
ভোরে উঠে জুঁইফুল কুড়িয়েছি কত!
তুই আমি ঠিক অপু-দুর্গার মতো...

সারাদিন হেসেখেলে করে ছুটোছুটি,
সন্ধে হলেই ভয়ে ভাইবোন দুটি
ধরা পড়ে উঠোনে পা ফেলে এক দুই--
আমাকে আড়াল করে মার খেতি তুই!
তোর কোলে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়েছি কত--
তুই আমি ঠিক অপু-দুর্গার মতো...

কী যে ছোটাছুটি হত রেলগাড়ি সেজে,
ঝগড়াটা হত বলে ইঞ্জিন কে যে,
শেষে মারামারি হত এই কথা নিয়ে,
খেয়েছি খামচি তোর চুল টেনে দিয়ে,
চোখ মুছে নিয়ে পরে মিলেছি যে কত--
তুই আমি ঠিক অপু-দুর্গার মতো...

বল দেখি তুইও দুর্গার মতো শেষে
হারিয়ে কি যেতে চাস আঁধারের দেশে?
বল তুই মরে গেলে কী আমার হবে--
তোকে ছাড়া ভাত খাওয়া, ঘুম হল কবে?
রাখব জড়িয়ে ধরে পারি জোরে যত--
তুই আমি ঠিক অপু-দুর্গার মতো...


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চমত্-কার !
আপনি এতো ভালো লেখেন কী করে ..!
অভিনন্দন, মৃদুল আহমেদ

জনৈক "বেক্কল ছড়াকার"

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

ধন্যবাদ। চেষ্টা করি ভালো লিখতে। ততটা হয় কিনা কে জানে?

-----------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

স্বপ্নাহত এর ছবি

লা জওয়াব।

খুবই জোস হইসে...

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

ফারুক হাসান এর ছবি

লগ ইন করলাম শুধু এটুকু জানানোর জন্য যে কবিতাটি অসাধারণ লেগেছে।
সত্যিই খুব ভালো লিখেছেন আপনি।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুন হইসে, জোস হইসে!

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

ধন্যবাদ ফারুক ভাই। অনেক ধন্যবাদ।

------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতিথি লেখক এর ছবি

উলুম্বুশ

ভাইয়া অসাধারণ কবিতা। আমার পুরান আফসোসটা আবার জেগে উঠল। দূর্গার মত আমার একটা বোন থাকল না কেন। কবিতাটা জম্পেশ।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

এক কথায় অসাধারণ!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

চমৎকার !

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

অসম্ভব ভাল --- কেমন চিনচিন করে উঠল বুকটা ------ সময়ের ধাপগুলো কত দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছি----------
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

অতিথি লেখক এর ছবি

হেঁ হেঁ মৃদুল ভাই কবিতা লেখে। তাইলে বিজ্ঞাপনের কপি লেখার কি হইবো!

পান্থ রহমান রেজা

হিমু এর ছবি

চমৎকার লেগেছে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রায়হান আবীর এর ছবি

চরম!!
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍অতীব চমত্কার।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি একগামী পুরুষ। একমাত্র নারীদের ভালোবাসি চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

হিমু এর ছবি

‘দুর্গা আর চাহিল না।
আকাশের নীল আস্তরণ ভেদ করিয়া মাঝে মাঝে অনন্তের হাতছানি আসে---পৃথিবীর বুক থেকে ছেলেমেয়েরা চঞ্চল হইয়া ছুটিয়া গিয়া অনন্ত নীলিমার মধ্যে ডুবিয়া নিজেদের হারাইয়া ফেলে---পরিচিত ও গতানুগতিক পথের বহুদূরপারে কোনো পথহীন পথে---দুর্গার অশান্ত, চঞ্চল প্রাণের বেলায় জীবনের সেই সর্বাপেক্ষা বড় অজানার ডাক আসিয়া পৌঁছিয়াছে। ---’

বিভূতিভূষণ এ জায়গাটা কখনো শুষ্ক চোখে পার হতে দেন না। যতবারই পড়ি চোখ ভিজে আসে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

জাহিদ হোসেন এর ছবি

চিরকালই মনে একটা বিশাল আক্ষেপ ছিল যে আমার কোন বড় বোন নেই। পথের পাঁচালী পড়বার এবং দেখবার পর মনে হয়েছিল যে ভাগ্যিস আমার কোন বড় বোন নেই। যদি সে দুর্গার মত অকালে হারিয়ে যেত তবে তা আমি কোনভাবেই সামলে নিতে পারতাম না।

হিমু-আপনার মন্তব্যের সাথে আমি একমত। একই ভাবে পথের পাঁচালী ছবিটিতে দুর্গার মৃত্যুসংবাদটি যখন তার বাবাকে দেওয়া হয়, সেই মুহুর্তটিও আমার বড় প্রিয়। মজার ব্যাপারটি এই যে এই সীনটিতে সত্যজিত্ রায় কোন ডায়ালগ দেননি। নেপথ্যে শুধু রবিশংকরের বাজনা ছিল। কন্যার মৃত্যুসংবাদ পিতাকে দেবার মত কি কোন উপযুক্ত শব্দাবলী আছে? এই দৃশ্যটি দেখবার সময় প্রতিবারই আমার না জন্মানো বোনটির কথা মনে হয়।
আর লিখছিনা। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা প্রশ্ন -
আপনি কি "ছোটদের কাগজ" এ লিখতেন?

জনৈক "বেক্কল ছড়াকার"

অতিথি লেখক এর ছবি

কবিতাটি স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন। তবে এত সচ্ছন্দ স্বরবৃত্ত লেখার কৌশল টা কী ভাই।

(ক্লান্ত পথিক)

.....................................................................................
কাব্য জগতে যার নাম আনন্দ তারি নাম বেদনা

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

জনৈক বেক্কল ছড়াকারকে বলছি, হ্যাঁ, আমি ছোটদের কাগজে লিখতাম! আমার টাইটেলটা তখন অন্য ছিল, আমি ছিলাম মৃদুল ভৌমিক! বিয়ের পর মেয়েদের নাম পাল্টাতে হয়... এই নিয়মের আমি ঘোর বিরোধী বলে বিয়ের পর নিজের নামটা পাল্টে ফেলেছি! ভালো করি নি বলুন? বছর দশ বাদে মৃদুল রোজারিও হয়ে ওঠার একটা সুপ্ত বাসনা আছে... আরো বছর সাত-আট বাদে বুড়ো থুত্থুরে অবস্থায় মৃদুল সাংকৃত্যায়ন। যদি বেঁচে থাকি!
আপনার প্রতি একটা অনুরোধ, বেক্কল ছড়াকার নামটি পাল্টে অন্য কোনো নামে আসুন। এই নামটি শুনলে কেন যেন মনে হয়, একজন আঘাত খাওয়া মানুষ নিজেকে নিয়ে খেলা করছেন...

আমার এই লেখাটার মন্তব্যগুলো পড়ে খুবই ভালো লাগল এই কারণে যে, বিভূতিভূষণের নাম আরো কয়েকবার উচ্চারিত হবার পিছনে আমার একটুকু ভূমিকা তৈরি হল!
যারা বিভূতিভূষণের ভক্ত, তাদের জন্য জিজ্ঞাস্য, আপনারা কি তাঁর ছেলে তারাদাস বন্দোপাধ্যায়ের লেখা পড়েছেন? বাংলাসাহিত্যের এই রত্নটিকে কেউ যদি আবিষ্কার করে না থাকেন, তাহলে আজকেই পাত্তা লাগান! বিভূতিভূষণের সৃষ্টি "তারানাথ তান্ত্রিক" চরিত্রটা নিয়ে তিনি এমন সব কাহিনী ফেঁদেছেন, যা আর কহতব্য নয়। বাংলাসাহিত্যে এরকম আশ্চর্য স্বাদের গা ছমছমানো লেখা আমি আর কখনো পড়ি নি! কত যে বিচিত্র কথা জেনেছি!

--------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

খেকশিয়াল এর ছবি

বিভূতিভূষণের তারানাথ তান্ত্রিকের দুটো গল্পই আমার পড়া শ্রেষ্ঠ ভয়ের গল্পগুলির মধ্যে একদম প্রথম পাঁচে, তারাদাস বন্দোপাধ্যায়ের কিছু পড়া হয়নি, উনি কি তারানাথ তান্ত্রিকের আরো গল্প লিখেছেন নাকি ?! বলেন কি, কই পাওয়া যাবে ??!!
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বেশ বেশ ।

s-s এর ছবি

আহা -- বড় মিষ্টি আপনার হাত --
আদরের অর্ক ভাইয়ার কথা মনে করিয়ে দিলো --

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।