ঘটনাটি যেখানে ঘটেছিল, সে জায়গাটা অনেকেই চেনেন। বিশাল একটা বইয়ের দোকান, সঙ্গত কারণেই নামটা বলছি না, দোকানটা গুলশান-২-এ! সেখানে কাজ করত আমারই এক ছোট ভাই, তার নাম খালেদ। অফিসের ম্যানেজমেন্ট, বইয়ের খোঁজ, কেনাকাটা, সাজানো সব দায়িত্বই তার হাতে।
বিশাল বইয়ের দোকান। বাংলার চেয়ে ইংরেজিই বোধহয় বেশি। সেখানে ফরেনারও আসে যথেষ্ট পরিমাণ, সেইসঙ্গে আসে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের ইঙ্গবঙ্গীয় সংস্করণ... যাদের কথা বাংলা না ইংলিশ ধরাই মুশকিল! আর কথাও বলে চিবিয়ে চিবিয়ে, ন্যাকামির চূড়ান্ত দেখিয়ে।
এই দোকানে কাজ করার জন্য চাই বুদ্ধিমান, স্মার্ট পোলাপান, যারা কাস্টমারের চাহিদা বুঝে বই সামনে এগিয়ে দেবে... আর অন্তত ইংরেজিতে কমিউনিকেট করতে পারবে!
কিন্তু মুশকিল যে, সেরকম ছেলে পাওয়াই যায় না! তুখোড় ছেলেদের জন্য অনেক ভালো চাকরি আছে, তারা এখানে আসবে কেন?
ফলে একটু সরল সোজা ছেলেরাই থাকে এখানে, এবং মাঝেমধ্যেই কাস্টমারের চাহিদার সামনে তাদের হতবুদ্ধি হওয়ার বিরল সব কাহিনী শুনতে পাওয়া যায়...
এরকমই একটা ঘটনা।
এক সকালে কাজ করছিল সেই ছেলেটি। অল্প কয়দিন হয় চাকরিতে ঢুকেছে, কাস্টমারের সামনে যাওয়ার আগে বুকভরা দম নিয়ে নেয়। ফরেনার দেখলে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে।
কাজ করতে করতেই সে দেখে একটি সদ্য তরুণী ঢুকেছে দোকানের দরজা দিয়ে। গোলাপের মতো পেলব তার রূপ, হাল আমলের স্লিভলেসের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে অন্তর্বাসের ফিতে, গায়ে ভুর ভর করছে বিদেশি পারফিউম...
বিদেশি নয়, বাংলাদেশি মেয়ে!
ছেলেটি একটি ঢোঁক গিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। কাস্টমার আসলে একটি স্বাগতম মার্কা হাসি দেয়া নিয়ম।
মেয়েটি চুইংগাম চিবাতে চিবাতে চারদিকে তাকিয়ে বিভিন্ন বইগুলো দেখে সংক্ষেপে বলল, নাইস!
ছেলেটি জবাবে একটা ফ্যাকাশে হাসি হাসল!
তারপর ছেলেটির দিকে তাকিয়ে মেয়েটি বলল চিবিয়ে চিবিয়ে... অ্যাখচুঅ্যালি আপনাডের অ্যাকটা কশ্চেন কড়ার ছিল আমাড়...
ছেলেটি শীতের ঠোঁটফাটা হাসি দিয়ে বলল, জ্বি ম্যাম, বলুন...
মেয়েটি এবার সরাসরি তাকাল তার চোখের দিকে... আপনাডের অ্যাখানে কি বুক বড়ো কড়া যায়?...
কী? ...ছেলেটি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না! বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল, সরি ম্যাম?
মেয়েটি বলল, বোঝেহ্হন নি... বলছিলাম... আপনাডের অ্যাখানে কি বুক বড়ো করা যায়?
ছেলেটি কান দুটো পাকা টমোটোর থেকেও লাল হয়ে গেল, চোয়াল ঝুলে পড়ল মরা মাছের মতো, হাঁটু দুটো ভেঙ্গে পড়ে পড়ে অবস্থা... সে সজোরে মাথা নেড়ে বলল, না না ম্যাম, আমাদের এখানে সেরকম কোনো ব্যবস্থা নেই! এরকম কোনো বইও নেই আমাদের এখানে!
আমার ছোট ভাই খালেদও খানিকটা দূরে বসে। ব্যাপারটা দেখে সে এগিয়ে এল।
মেয়েটির মুখে তখন কিছুটা বিরক্তি আর ছেলেটির চোখে শুন্য দৃষ্টি। বর্তমান প্রজন্মের এই খোলামেলা যৌন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে সে চোখে অন্ধকার দেখছে!
খালেদ এগিয়ে এসে জানতে চাইল মেয়েটির কাছে, কী চাচ্ছে সে। তারপর তার কোশ্চেন শুনে সে মেয়েটিকে জানাল, না ম্যাম, আমাদের এখানে "Book Borrow" করা যায় না। তবে আপনি চাইলে আমাদের ছোট্ট ক্যাফেটেরিয়ায় বসে "Book Read" করতে পারেন...
"বুক বড়ো" করার এই আধুনিক নিয়মটি অভিজাত এলাকার এই আধুনিক লাইব্রেরিটিতে চালু নেই দেখে বিরক্তি প্রকাশ করে আরো একরাশ পারফিউমের গন্ধ ছড়িয়ে মেয়েটি উধাও হল!
আর ছেলেটি? সে তখন পাশের ফার্মেসিতে শার্ক এনার্জি ড্রিঙ্ক খাচ্ছে!
মন্তব্য
মৃদুল ভাই, লোক হাসাতে পারেন বটে। বহুত মজা পেলাম।
পান্থ রহমান রেজা
হা হা হা...হো হো হো...
জটিল ঘটনা...অনেক জোস করে লিখসেন...
রিজভী
--------------------------------
কেউ যাহা জানে নাই- কোনো এক বাণী-
আমি বহে আনি;
"বুক বড়ো" মানেটা একদমই আমার মাথায় আসেনি তাই বুঝতে পারছিলামনা হাসির ব্যাপারটা কি, কিন্তু পরে ছেলেটা কি ভেবেছিল বুঝতে পেরে খুব হাসি পেল বেচারা
---------------------------------------------------------
মূর্ছনা কেটে গেছে সুর
জোছনা ছড়ায় বেদনা, হৃদয় আনমনা ... চির চেনা তুমি অচেনা।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
বাহ্... বেশ দুষ্টু হইছে... মজা পাইছি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খাইছে আমাড়ে!!! অনেক মজাদাড় হইছে।
---------------------------------
আপনাদের এখানে কি বুক বড় করা যায়...
ওরে আমারে কেউ ধর্..........হাহাহা...হোহোহো......
সৈয়দ আখতারুজ্জামান
মঝা পাইশি...
দারুণ পানশালার গল্প হয়েছে!
হাঁটুপানির জলদস্যু
হা হা হা
চরম জটিল !
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ডেঞ্জারাছ!
ঐ দোকানে চাকরি নিতে পারলে খারাপ হয়না
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
'বুক বড়ো' পড়েও বুঝতে পারছিলাম না ব্যাপারটা কি!
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
হাসতে হাসতে হুটোপুটি!
ফেরারী ফেরদৌস
জটিলস্য!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেবো। কিন্তু কী পাবো তার বদলে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
চরম মজা পেলাম
সচলে আমার প্রথম পাঁচ আপনাকে দেয়া হল।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
হা হা হা...।হেভি মজা পাইছি।
-নিরিবিলি
আই সি... সচলে রেনেটের প্রথম পাঁচ তাহলে আমিই পাইসি...
সবার এত মজা লেগেছে দেখে ভালো লাগল! "ফুচকি দিল মুচকি হাসি ঠোঁটের কোনে " নামে একটা সিরিজ করব ভাবছি (গুরুগোরে দেইখ্যা সাহসাইছি), আপনারা কী বলেন ভাইসব...
সবাই যদি রাজি হন
মগবাজারের কাজী হন
তবে পড়াই বিয়ে
মগজ এবং কম্পুটারের--শুনুন মন দিয়ে...
আসছি তবে কালপরশুই নতুন লেখা নিয়ে--
কেউ যদি নিমরাজি হন,
সেই কথাটা আজই কন...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
হাসতে হাসতে বিষম খেলাম। অসাধারণ! সিরিজের অপেক্ষায় থাকলাম।
কী আর বলতাম বস.. আপনি পারেনও..!!
সারছে।
সেইরকম।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
এক্কেরে সেইরম।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
- 'বড়ো' করার কথা জিজ্ঞেস করছে অল্পতে ইজ্জত বাঁচছে ভদ্রলোকের।
'বুক টা টেনে বেড় করে ধিনতো প্লীজ' জাতীয় অনুরোধ শুনলে ফার্মেসীন শার্কে আর কাজ হতো না জনাবের!
___________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লিখা ব্যাপক দুষ্টু হইছে। (বিপ্লব)
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বহুত মজা পাইছি। আরও পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম ।
রবিন
জোস্ হইসে!!
--
স্পর্শ
পুরোটা পড়ে শেষ করার পর বুঝলাম আসল ঘটনা!!
কল্পনা আক্তার
..................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা
আপনার পুরোনো লেখাগুলো পড়ছিলাম। এটায় মন্তব্য করতেই হল।
আমিতো শুরুতে তা-ই ভেবেছিলাম!
ঘটনা এক্কেবারে 'বুকের ভিতর ওদুটো কি'র মত হইছে।
হা হা হা হা
---- মনজুর এলাহী ----
আপনার মনের ভেতর ঐ তিনজন কে?
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
হা হা হা ... এরকম আমিও একটা গল্প শুনেছিলাম প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর আগে
গল্পটা এরকম: কোন এক কোচিং সেন্টারে ইংরেজী দ্বিতীয়পত্রের (মানে গ্রামার আরকি) ক্লাস হচ্ছে। ছোকড়া শিক্ষক বেশ ত্যাঁদড়। সবাইকে এক এক করে পড়া জিজ্ঞেস করছে। এক ছাত্রীর সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে "বুক এর মধ্যে ও দুটো কি?"
প্রশ্ন শুনে কোচিং এর ছেলে মেয়ে সবারই কান মৃদুল ভাইয়ের গল্পের এই ছেলেটার মতো হয়ে গেল।
পরে ছোকড়া শিক্ষক বেশ একটা ভাব নিয়ে বলল, "এই সামান্য প্রশ্নের উত্তর জানোনা?, বুক এর মধ্যে ও দুটো ভাওয়েল।"
নতুন মন্তব্য করুন