ভদ্রলোকের নাম মীর মশাররফ।
খুবই বিখ্যাত লেখকের নামে নাম, কিন্তু দুঃখের বিষয়, তিনি যখন ছোটবেলায় স্কুলে পড়তেন, তখন ক্লাসের সবার মুখে মুখে তার নাম ছিল মশা।
ছোটবেলায় স্কুলে থাকতে সবারই এরকম নাম থাকে, কেউ মোটকা হলে তার নাম হাতি, লিকলিকে চিকন হলে চিকা, ধ্যাড়ধেড়ে লম্বা হলে কুতুব মিনার। সুতরাং মশাররফ সাহেবের এই নিয়ে মন খারাপ করার কথা না, কিন্তু তিনি মন খারাপ করতেন। তার কারণ, তার নামের সঙ্গে চেহারাকে জড়িয়ে আবার দু লাইনের একটা ছড়াও বানানো হয়েছিল। ছড়াটা এরকম, মশা... তোর চেহারার এ কী দশা... ?
এই ছড়া শুনলেই তার মেজাজটা যেত খিঁচড়ে। তার কারণও আছে। সে প্রসঙ্গেই আমরা এখন আসি।
তার চেহারা ভূতের মতো।
শুনে চমকে উঠলেন? চমকে ওঠার কিছু নেই, তার চেহারা আসলেই ভূতের মতো। ভূতের চেহারা কেমন কেউ তা জানে না, কিন্তু ভূতের যদি কোনো চেহারা থাকত, সেই চেহারাটা মশাররফ সাহেবের মতোই হত, এ বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই!
সম্ভবত মশাররফ সাহেবের নিজেরও নেই।
সারা গায়ের রঙ মিশমিশে কালো, টকটকে লাল দুটো পুরু ঠোঁট, থ্যাবড়া নাক, চওড়া কান দুটো দু পাশে ছড়ানো (রূপকথায় রাক্ষসের কানকে কুলোর মতো কান বলা হয়, তার কানও অনেকটা সেই টাইপেরই), আর এ সমস্ত কিছুর ভেতর থেকে হাঁসের ডিমের মতো মস্ত বড় দুটো চোখ ড্যাবডাব করে তাকিয়ে আছে। দেখলে দিনেদুপুরেই যে কারো পিলে চমকে যায়। (আমার বর্ণনা শুনে মনে হতে পারে বাড়িয়ে বলছি, কিন্তু বাস্তবে মশাররফ সাহেবের চেহারার অবস্থা আরো খারাপ!)
সুতরাং চেহারা নিয়ে এরকম ছড়া শুনলে মেজাজ বিগড়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু চেহারা তো আর গায়ের সার্ট না যে, পছন্দ হল না যখন, তখন খুলে রেখে দিলাম! কাজেই মশাররফ সাহেবকে এই চেহারা নিয়েই ঘুরেফিরে বেড়াতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে চেহারা নিয়ে বিপত্তিও বেঁধে যায় সাঙ্ঘাতিক।
এই তো সেদিনই, এক বৃহস্পতিবারে হাফ অফিস শেষে ঠা ঠা রোদভরা দুপুরে মশাররফ সাহেব বাসার দিকে ফিরছেন। এক গলিতে হঠাত্ ঢুকেছেন, কোনো লোকজন নেই, একেবারে ধু ধু নির্জন। মশাররফ সাহেব আসছেন নিজের মনে। সেই সময়ই এক ডিমঅলা "ডিম নিবেন, ডি......ম, বড় বড় ডিম, মুরগির ডিম, হাঁসের ডিম, ডি.....ম!" বলতে বলতে সেখানে এসে হাজির।
আজকাল আর কেউ এরকম ডিম ফেরি করে বেড়ায় না, দোকানেই ডিম পাওয়া যায়। সেদিন আবার মশাররফ সাহেবের নিজেরই বাসার জন্য ডিম কেনার কথা, কাজের চাপে ভুলে গিয়েছিলেন। ডিমঅলাকে দেখেই তিনি ভাবলেন, ওঃ এই তো ডিম পেয়েছি!
তারপর ডিমের কথা বলার জন্য লোকটার দিকে যেই এগিয়েছেন, তিনি চোখের সামনে দেখতে পেলেন, ডিমঅলার মুখটা প্রথমে হাঁ হয়ে গেল, তারপর পুরো থুতনিটা ঝুলে পড়ল সামনে, চোখ দুটো হয়ে গেল মাছের মতো মরা মরা, এরপরই থপাত করে তার হাত থেকে সমস্ত ডিম মাটিতে পড়ে গেল!
পুরো এক ঝাঁকা ভর্তি ডিম!
আর এর ঠিক পরপরই ডিমের পাশেই ঝপাত করে পড়ল ডিমঅলা নিজেই! একদম অজ্ঞান! এই ধুধু দুপুরে নির্জন গলিতে মশাররফ সাহেবের বিখ্যাত চেহারার ধাক্কাটা সে আর সামলাতে পারে নি!
মশাররফ সাহেব অবশ্য এই ধরনের পরিস্থিতির সাথে পরিচিত। তিনি জানেন, এই সমস্ত ক্ষেত্রে কী করতে হয়। তিনি ডিমঅলাকে ধরতেও গেলেন না, আহা উহুও করলেন না। চুপচাপ সুট করে কেটে পড়লেন। ডিমঅলার জ্ঞান হলে প্রথমে তাঁকেই ক্যাঁক করে চেপে ধরবে, মিয়া, আপনের লাইগাই তো আমার সব ডিম পুরা ঘোড়ার ডিম অইয়া গেল! এইরকম চেহারা নিয়া ঘুইরা বেড়ান ক্যা? বাইর করেন আমার ডিমের ট্যাকা!
এর আগেও নিজের চেহারার খেসারত দিতে হয়েছে মশাররফ সাহেবকে। একবার এলাকার কমিশনার সাহেবের আম্মা দেশের বাড়ি থেকে এসেছেন ঢাকায় চিকিৎসা করাতে। বুড়ো মানুষ, বড় বড় ডাক্তাররা তাকে বিভিন্ন ওষুধ খেতে দিলেন। সেই ওষুধ খেয়ে তাঁর বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যা দেখা দিল। তিনি দুপুরবেলায় ভয় পান, আচমকা কী সব দেখে যেন চমকে ওঠেন, আর হঠাত্ হঠাত্ই ফিট হয়ে পড়ে যান।
কমিশনার সাহেব কেন যেন একটা ধারণা করলেন, এই ঘটনার পেছনে মশাররফ সাহেবই মূল কারণ। তাঁর অসুস্থ আম্মা হয়ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে কোনো না কোনোভাবে মশাররফ সাহেবকে দেখেছেন, আর সেই দেখার পর থেকেই তার মাথায় কালবৈশাখি ঝড় শুরু হয়ে গেছে (বরাবর যেরকম হয় আর কি!)।
পাশের এলাকার কুতুবউদ্দিন হাড়বজ্জাত একটা লোক, প্রতি বছর কমিশনার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে হেরে যায়। তিনি আরো ধারণা করলেন, পাশের এলাকার সেই কুতুবউদ্দিনই বোধহয় পয়সা খাইয়ে মশাররফ সাহেবকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছে।
তিনি মশাররফ সাহেবের জন্য নিয়ম করলেন, তাঁর আম্মা যতদিন সুস্থ না হবেন, ততদিন মশাররফ সাহেব কমিশনার সাহেবের বাসার সামনের মেইন রোড দিয়ে আর যাওয়া আসা করবেন না। তাঁকে যাওয়া আসা করতে হবে পাড়ার পেছনের গলি দিয়ে।
কী আর করা, সকালবেলা সবাই অফিস যায় মেইন রোড দিয়ে, আর তিনি যান পেছনের সরু গলি দিয়ে। চোরের মতো। না না, ভুল বলা হল, ভূতের মতো!
যাক গিয়ে, এরপর থেকে মশাররফ সাহেব সাবধান হয়ে গেছেন!
কিন্তু তার মাথা আকাশ ভেঙ্গে পড়ল তখনই, যখন তাকে তার মেয়ের স্কুল থেকে ডেকে পাঠানো হল!
মশাররফ সাহেবের চেহারাটা ভূতের মতো হতে পারে, কিন্তু তার একটা বেশ মিষ্টি চেহারার বৌ আছে, আর আছে একটা আরো মিষ্টি চেহারার মেয়ে। তার বয়স ছয় বছর। তার স্কুল থেকেই ডেকে পাঠানো হল মশাররফ সাহেবকে।
তিনি একটু ভয়ে ভয়েই গেলেন। হেডমাস্টারের রুমে ঢুকলেন ভয়ে ভয়ে, কিন্তু ঢুকে দেখলেন হেডমাস্টার তার চেহারা দেখে নিজেই ভয়ে কাঠ হয়ে বসে আছেন।
হেডমাস্টার একটু ফ্যাকাশে হাসি হেসে যা বললেন, তার সারমর্ম এরকম, তিনি যে রোজ সকালে তার মেয়েকে স্কুল পৌঁছে দিতে আসেন, এখন থেকে তিনি না এসে বাচ্চার মাকে পাঠালেই ভালো হয়। কারণ ছোট বাচ্চারা তাকে দেখে ভয় পায়, স্কুলে আসতে চায় না। এই নিয়ে বাচ্চাদের অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে, কাজেই তিনি যদি...
মশাররফ সাহেবকে আর বেশি কিছু বুঝিয়ে বলতে হল না। তিনি এসব জিনিস খুব দ্রুতই বুঝে যান।
স্কুল থেকে বের হয়ে এসে তাঁর প্রথমে মনে হল, যাই, মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবন থেকে নিচে একটা লাফ মারি! সেনাদের না হলেও তার এলাকার লোকের বিরাট কল্যাণ হবে! আর তখন থেকে তিনি অন্তত সত্যিকার ভূত হয়ে যাবেন!
এরকম চিন্তাভাবনা নিয়ে তিনি যখন মগ্ন ছিলেন, তখনই তার জীবনে একটা চমৎকার ঘটনা ঘটে গেল!
মতিঝিলেরই শাপলা চত্বরের মোড়ে এক ভিক্ষুক রাস্তা পার হবার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। বুড়ো একজন মহিলা, সে চোখে দেখতে পায় না।
চোখে দেখতে পায় না, তাহলে পাশের কোনো একজন মানুষকে বললেই হয়, আমাকে রাস্তাটা পার করে দাও! সেটা না করে এমনি এমনি পার হবার কোনো মানে হয়?
মশাররফ সাহেবের রাগও হল, কিন্তু তিনি দৌড়েও গেলেন তাকে ধরতে! ধরে রাস্তাটা পার করে দিলেন!
বুড়িটা ঐপারে পৌঁছে খুশি হয়ে তাকে বলল, খুব উপকার কইল্লে গো বাবা!
মশাররফ সাহেব মনে মনে বললেন, আর উপকার! চেহারা দেখলে আর উপকারের কথা মুখে আনতে না!
বুড়ি তার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যেতে যেতে বলল, বাবার চেহারাডাও বড় সোন্দর!
অন্ধরা তো আর দেখতে পায় না, মুখে হাত বুলিয়ে তারা চেহারা কল্পনা করে।
মশাররফ সাহেব তার কথা শুনে চমকে ফিরে তাকালেন, বলে কী বুড়িটা? বুড়ি ততক্ষণে তার পথে হাঁটা দিয়েছে।
সারাদিন বুড়ির কথাটা মশাররফ সাহেবের কানে লেগে রইল। জীবনে এই প্রথম কোনো মানুষ তাকে সুন্দর বলল! সারাদিন ধরেই তার কানে বাজতে লাগল কথাটা!
এর ঠিক এক সপ্তা পরেই মশাররফ সাহেব আচমকা একটা কাণ্ড করে ফেললেন। বড় একটা ব্যবসার জন্য টাকা জমাচ্ছিলেন তিনি, বেশ বড় মাপেরই একটা টাকা। সেই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে সোজা তুলে ফেললেন তিনি, কাউকে কিছু না জানিয়ে একটা স্কুল দিয়ে ফেললেন। খুব বড় নয়, ছোট একটা স্কুল। নাম, "জীবনদৃষ্টির পাঠশালা"।
না, আর দশটা স্কুলের মতো স্কুল সেটা নয়। সেখানে পড়ে শুধুই দৃষ্টিহীনরা। যারা চোখে দেখতে পায় না।
তারা সেখানে পড়ার পাশাপাশি কাজ শেখে। সবাই মিলে গান গায়, গল্প শোনার আসর বসায়। যারা দিনে সংসার নিয়ে ব্যস্ত, তারা আসে রাতে।
মশাররফ সাহেব সারাদিন অফিস করেন, আর বিকেলবেলা অফিস থেকে ফিরেই সেখানে গিয়ে একটা চেয়ার পেতে সবার সঙ্গে বসে সারাদিনের খোঁজখবর নেন।
সন্ধ্যা হয়ে যায়, রাত চলে আসে, কিন্তু মশাররফ সাহেবের যেন আর সেখান থেকে উঠতেই ইচ্ছে করে না। তাকে দেখে কেউ পালিয়ে যাচ্ছে না, বা চমকে উঠছে না, বরং তার চারপাশ ঘিরে এই মানুষগুলো গভীর আন্তরিকতা নিয়ে বসে আছে, এটা তার কাছে নতুন ব্যাপার, এবং অবশ্যই আনন্দের।
একদিন তো গল্প করতে করতে তিনি নিজের চেহারা নিয়েই কথা বলতে শুরু করে দিলেন, হাসতে হাসতে বললেন, জানো, আমার চেহারার অবস্থা তো ভয়াবহ রকম খারাপ, একেবারে ভূতের মতো। ছোটবেলায় তাই আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে ছড়া বানিয়েছিল, মশা, তোর চেহারার এ কী দশা? হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ!
মশাররফ সাহেব হাসতে হাসতে তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের গল্পটা সবচেয়ে আনন্দের সঙ্গে বলে যেতে লাগলেন...
মন্তব্য
প্রথম দিকে মশারফের উপর অবিচারে আপনার উপর রাগ হচ্ছিল খুব। কঠিন কোন মন্তব্য লেখার জন্যে তৈরী হচ্ছিলাম। বাকিটুকো পড়ে পড়ে ভিজে উঠলো মন। খুব খুব খুব মনকাড়া গল্প...!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
তীরুদা, আমি জানি... একটা লেখা, বিশেষত গল্প বা ইমোশনাল কবিতা আসামাত্র আপনার একটা কমেন্ট এসে যাবে। একটুকু দেরি করেন না আপনি মতামত (সাধারণত প্রশংসা) জানাতে। আর আপনার সেই মতামতটা পড়লেও বোঝা যায়, আপনি লেখাটি পড়েছেন ভারী মন দিয়ে, ভালোবাসার সাথে।
ভারী চমৎকার লাগে আপনার এই স্মার্টনেসটি।
তবে আমি কিন্তু দুর্দান্ত ক্যালাস... লেখা পড়ে মত দিতে ভুলে যাই। কখনো কখনো স্কোর দিতে গিয়ে পিসিতে হয়ত আরেকটা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। বা মতামত দিলেও হয়ত সেটাতে চিন্তার সহজাত ছাপটা থাকে না।
শুধু লেখা না, মত প্রকাশের ক্ষেত্রেও আপনি আদর্শ। ধন্যবাদ আপনাকে।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
মশারফ সাহেবের 'জীবন'দৃষ্টির পাঠশালায় আমাদের বেশীরভাগেরই ভর্তি হওয়া উচিৎ - সারাজীবন কত মানুষ যে কত অনর্থক ক্ষত বয়ে বেড়ায়, আমাদের কারণেই!
আপনার লেখা টেখা নিয়ে নতুন কিছু আর বলার নেই
আপ্লুত হলাম। কেমন করে লেখেন এসব!?!
ভাল লাগল খুব ।
অভী আগন্তুক
--------------
এই... অ্যাতো প্রশংসা করবেন না তো, লজ্জা পাচ্ছি! অনেক পরিশ্রম দিয়ে অনেক ভালো লেখা দিতে চাই... সেদিন অবশ্য প্রশংসাও চাই...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
এই ভূতের মতো চেহারা নিয়েই তিনি ছোট বোনের সাথে প্রেম করে শেষে বড়ো বোনকে বিয়ে করেছেন
চেহারা সুন্দর হলো না জানি কী করতেন...
বরাবরের মতোই খাসা। খুব ভালো লাগলো।
একদম ...........একদম অন্যরকম লেখা।
খুব ভালো লাগল, মজার আবার কষ্টের, ছোটবেলায় আমার বন্ধুদের দেয়া ডাক নামগুলো মনেপরে গেল। অবশ্য কোনটাই আমার অপছন্দ ছিলনা। আচ্ছা ভুতকে আমরা কালো ভাবি কেন? ভুত তো সাদা হওয়ার কথা।
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
আফ্রিকার রূপকথায় ভূতের রং কিন্তু সাদা
ওখানে সুন্দর মানুষের রং কালো আর ভূতের রং সাদা
এবং তারা বলে ঈশ্বরের অভিশাপে মানুষ সাদা হয়
কিন্তু আমাদের বিষয়টা উল্টো। আর্যদের গায়ের রং সাদা ছিল বলে তাদরে বানানো যত শয়তান এবং ভূত সবকিছুকেই তারা রং দিতো কালো
আর তাদের শাসনে থাকতে থাকতে এদেশের কালো মানুষরাও এক সময় বিশ্বাস করতে শুরু করে যে সাদারাই শ্রেষ্ঠ এবং কালোরা নীচ কিংবা ভূত
এর পরে ইউরোপিয়ানদের অনুসরণ করতে করতে আমরা নিজেরাও এখন মনে করি যে ভূত হলে অবশ্যই তাকে কালো হতে হবে
কিন্তু গ্রামের জমিতে এখনও যে কাকতাড়ুয়া বানানো হয় তার মেজর রং কিন্তু সাদা
এর থেকে মনে হয় কোনো এক কালে আমাদরে ভূতও ছিল সাদা
যখন কালো রং নিয়ে আমরা লজ্জিত হতাম না
০২
বাংলাদেশের অনেক কালো আদিবাসীর রূপকথায়ও কিন্তু ভূতের রং সাদা
কিছু সাধারন জিনিস আমাদের চোখের সামনে দিয়ে চলে যায়, কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি না । আপনি বলার পর খেয়াল করলাম, আমি ছোটকালে "সাদা ভুতুম" এবং "কাল ভুতুম" দুই ধরনের বিশেষন ব্যবহার করতাম । কোনটা কোত্থেকে শিখেছিলাম আমি নিজেও জানি না ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
লীলেন ভাই অনেক ধন্যবাদ, কিন্তু আমরা বাংগালিরাও যে বলি "ভুত দেখার মত সাদা লাগছে" বা "ভুতের মত ফ্যাকাশে লাগছে" সেটা কেন? আর ওয়েস্টার্নরা মুভি গুলোতে কিন্তু ভুত সাজলে সাদা কাপর দিয়ে ঢেকে ভুত সাজে বা কার্টুনে কারো আত্তা দেখালে সাদা দেখায়। আমরা বাংগালি, ইন্ডিয়ান এরকম বাদামি রংয়ের সবাই ভুতকে কালো ভাবি। এমনও তো হতে পারে যে ওয়েস্টার্নরা সাদা তাই ওরা ভাবে ওরা মরে গেলে সাদাই থাকে আর আমরা কালো/বাদামি মানুষরা ভাবি মরে গেলে আমাদের ভুতও কালোই থাকে?
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
বাংলাদেশে কিন্তু জ্বীন আর ভূত দুইটা জিনিসের রূপকথা প্রচলিত
ভূত পাপাত্মা বা নেগেটিভ কারেকটার
আর জ্বীন পূন্যাত্মা বা পজেটিভ কারেকটার
বাংলায় ভূত দেখতে কালো এবং বেশিরভাগ সময়ই এদের পরণে কোনো পোশাক থাকে না
আর জ্বীন সব সময় সাদা পোশাক পরে থাকে
জ্বীন এর মিথটা আমরা পেয়েছি পার্শিয়ানদের থেকে
এবং মুসলিম কালচারে সাদা পোশাক হচ্ছে পবিত্রতার প্রতীক
(মরা বাড়িতে মুসলিমরা সাদা পরে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে। কারণ মুসলিম ধর্মে মৃত্যু শোকের প্রতীক নয়। সন্তুষ্টির প্রতীক)
ওয়েস্টার্ন আত্মা কিন্তু পবীত্রতার প্রতীক। এজন্য সব সময়ই তাকে সাদা হিসেবে দেখানো হয়
০২
ভূত দেখার মতো ফ্যাকাশে বা ভূত দেখে সাদা হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাদা কিংবা ফ্যাকাশে কথাগুলো কিন্তু রক্তশূন্যতা অর্থে ব্যবহার করা হয়
রং হিসেবে নয়
০৩
উপমহাদেশে ভূতের কালো রং খুব সম্ভবত মহাভারত থেকে এসেছে
মহাভারতে সরাসরি ভূত শব্দটা ব্যবহার না করলেও দানব- দৈত্য-রাক্ষস কথাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে
এবং এদের সবার গায়ের রংই ছিল কালো
এই দানব (যারা দ্বীপে বাস করে। মহাভারতের লেখক কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন নিজেও ছিলেন কালো এবং একজন দানব। যদিও পরে তাকে সম্মান দেখিয়ে বলা হয় দ্বৈপায়ন)
মহাভারতের এই লোকগুলোর সবাই ছিল শূদ্র শ্রেণীর। আর যারা উচ্চ শ্রেণীর ছিল তাদের সবার শরীরের রংই ছিল সাদা
বলা হয় এই সাদা লোকগুলো ছিল আর্য আর যাদেরকে রাক্ষস- দৈত্য বলা হয়েছে তারাই ছিল এই দেশের মূল অধিবাসী
০৪
ভারত অঞ্চালে দাড়িওয়ালা ভূতের নাম মামদো ভূত
মামদো ভূত মানে হলো মোহাম্মদীয় ভূত
গোঁফ ছাড়া দাড়িওয়ালা হুজুরদেরকে ভ্যাংচানো হতো মামদো ভূত বলে
পরে মামদো ভূতের গায়ের রংও কালো করে দেয়া হয়
০৫
আমরা কালো ঘরানার লোক হলেও মনে মনে কিন্তু সাদাকে সুন্দর মনে করি
এজন্যই ভূতকে বানাই কালো
বুঝলাম এখন । জানলামও অনেক কিছু। অনেক ধন্যবাদ।
--------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
হাহা ব্যাপারগুলা আসলেই মজার
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ঈর্ষা করতে চাচ্ছি। কিন্তু পারছি না। মুগ্ধতা আর ঈর্ষা পাশাপাশি রাখা কঠিন। ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
ছোটবেলায় আপনার বন্ধুরা আপনাকে কী নামে ডাকত, দয়া করে বলবেন কি?
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
মৃদুল ভাই আমার ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত নামের লিস্ট করলে এখানে জায়গা হবেনা আর নামগুলো মন খারাপ হওয়ার মত ছিলনা তাই জেনে মজাও পাবেন না। তবে কয়েকটির কথা বলছি, এতে মজা পেতেও পারেন। অফিসে বা ইউনিতে সবাই আমাকে ভাল নামেই চিনে তবে কাছের অবাংগালিরা বন্ধুরা জানে আমার বাংলা ডাক নাম "মুমু"/"Mumu"। যাইহোক আমরা বাংলাদেশে যেমন গরুর ডাককে বলি "হাম্বা হাম্বা" সেরকম এখানে গরুর ডাককে বলে "Moo Moo"। তাই অবাংগালিরা বন্ধুরা দুষ্টমি/আদর করে "MooMoo", "মু", Mooooooooo" ডাকে।
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
এখনও আমার প্রকৃত বন্ধু যারা সেই নামটাই পছন্দ করে। কিন্তু আমি যে বলতে শরম পাই...
১৯৮৬র দিকে নিমসার কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় কুমিল্লার সাপ্তাহিক আমোদের অফিসে একটা রিপোর্টিংএর ব্যাপারে গিয়েছিলাম, তখন সম্পাদক ফজলে রাব্বী সাহেব আর তাঁর স্ত্রী শাসুন্নাহার রাব্বী দুজনেই মিলেই ডাক নাম সহ আমার আকীকার নাম নিয়ে খুবই প্যাদানী দিলেন। সাহিত্যিকদের নাম কি এমন হয়?
তারপর অনেক বছর বাদে ২০০৫-এ আমার নতুন নাম রাখি-
জুলিয়ান সিদ্দিকী
** ইয়ে... মানে... ক্রস কানেকশন হইয়া গেল নাকি?**
আপনার লেখাগুলোয় যে-ব্যাপারটি আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করে, তা হলো আপনার তীব্র মানবতাবাদ।
খুবই মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
মৃদুলদা, সত্যজিত রায়ের গল্পগুলির কথা মনে পড়ে গেল, দারুন একটা গল্প লিখেছেন । আপনের গল্পগুলির মধ্যে ফুঁটে ওঠা মানবতাবাদ সন্ন্যাসীদার মত আমাকেও মুগ্ধ করে ।
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
চমৎকার!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ধন্যবাদ সবাইকে। হ্যাঁ, আমার ধর্ম তো এটাই। মানবতাবাদ। আর কোনো ধর্মে আমি ঠিক স্বস্তি বোধ করি না।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
চমৎকার।
মন ছুঁয়ে যাওয়া............
কি মাঝি? ডরাইলা?
দারুণ লেখা। মানুষের চেহারা যে মনের পরিচয় নয়, সেটি চরম সত্য। চেহারায় যারা মশগুল হয়, তাদের খুব উপকারে আসবে লেখাটি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভালো লাগলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খুবই ভালো লাগলো পড়ে। এমন গল্প আরো চাই।
হাঁটুপানির জলদস্যু
-
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কতোদিন পরে আবার পড়লাম!
প্রথম যখন পড়া হয়েছিলো তখন সচলে মন্তব্য করাও হতোনা!
ভাইয়া, লিখোনা কেন? সত্যজিতের পটলবাবু ফিল্ম স্টার গল্পটা মনে পড়ে গেলো, কেন জানি!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নতুন মন্তব্য করুন