প্রতিপোস্ট : আমার অবিকশিত অন্তর...

মৃদুল আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন মৃদুল আহমেদ (তারিখ: বুধ, ১৩/০৮/২০০৮ - ১১:৪২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হুমমম। ভারী একখানা উপযুক্ত প্রসঙ্গ তুলেছেন স্নিগ্ধাদি। সেখানে মন্তব্য করতে গিয়েই একরাশ কথা বেরিয়ে এল। মন্তব্যের ঘরে না দিয়ে আলাদা পোস্টই দিলাম।
আমার জীবনের আদর্শ “ছিলেন” রবীন্দ্রনাথ। লেখালেখির ক্ষেত্রে ছাড়াও ব্যক্তিত্ব হিসেবে। ভারী ভদ্র মানুষ ছিলেন তিনি। অনন্যসাধারণভাবে মিশতে পারতেন মানুষের সাথে। খুব যতœ করে সুন্দর ভঙ্গিতে কথা বলতেন। কখনো বাজেভাবে কথা বলতেন না। সারাক্ষণ থাকতেন সৃষ্টির নেশায় বুঁদ হয়ে। তাঁর যখন চিকিৎসা চলছে শেষ বয়সে, এক নার্সকে ছাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল প্রয়োজন নেই বলে। রবীন্দ্রনাথ তখন শয্যাশায়ী অবস্থায়, ঠিকমতো কথাও বলতে পারতেন না। এর মধ্যেও মৈত্রেয়ী দেবীকে বার বার বলছিলেন, নার্সটিকে যেন ভালোভাবে বলা হয়, সে যেন মনে কষ্ট না পায়... সে আবার কিছু মনে করে নি তো?
তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে গল্প করার কিছু নেই। আপনারা তো ভালোই জানেন।
রবীন্দ্রনাথকে আদর্শ ধরে আমি টিকে থাকতে পারি নি। মানুষের সাথে সবসময় সুন্দর কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি অনেক সময় অনেক বেয়াদব মানুষের সঙ্গে সংস্পর্শে আসতে হয়েছে বলে। সময় সময় অনেক মানুষকে অনেক মিথ্যা কথাও বলতে হয়। পেশাগত কারণেই, উপায় নেই। ভালো করে কথা বললে, অনেক মানুষ ভুল অর্থ করে, দুর্বল ভাবে, সেটাও দেখতে হয়েছে। যে আমার প্রতিযোগী, তার শঠতার সমস্ত খবর পেয়েও সরল মনে হাসিমুখে তাকে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছি, আর সে ভেবেছে আমি নিতান্তই একটা বলদ, এমনও হয়েছে। রাস্তায় চলতি পথে, বাজার করতে গিয়ে, বা যেকোনোখানে আপনাকে প্রথামাফিক মিথ্যা কথা বলা, চোখ ওল্টানো, ফাঁকা ধামকি দেয়া, সূক্ষè কিছু মিথ্যা কথা বলা এগুলো করতেই হয়। এমনকি, মিডিয়াতে কাজ করতে গেলে সবাই জানেন, অনেক গালিগালাজ করতে হয়, সে আপনি যতই সৃষ্টিশীল মানুষ হন না কেন... কারণ কাজ করাবার জন্য গালিগালাজই সেখানে কোড ল্যাঙ্গুয়েজ। এছাড়া আপনি ভালো কাজ আদায় করতে পারবেন না। এরকম নানাবিধ কারণেই আমি একসময় আবিষ্কার করেছি, ঐ আদর্শে চলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার জীবনযাপনে অনেক খাদ মেশাতে হবে, নইলে আমি বেঁচে থাকতে পারব না।
তাই বলে আমি এখন কোনো অসৎ, মারমুখী কিংবা লোভী মানুষ নই। নিছকই সাদামাটা একজন। তবে যে শ্রেষ্ঠতম জীবন আমি যাপন করতে চেয়েছিলাম, তাও আমি পারি নি।
কিন্তু এখনও আমি চেষ্টা করি মানুষের প্রতি চরম বন্ধুভাবাপন্ন থাকতে। মানুষকে ভালোবাসতে। যে ধর্মান্ধ মানুষটি আমাকে ঘৃণা করছে, বা যে সফল মানুষটি চরম অবজ্ঞায় আমার দিক থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে নিল... আমি তাদেরকে ক্ষমা করতে চেষ্টা করি। যে মানুষটি আমাকে শত্র“ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ধারণা করে আমার সঙ্গে নানা ছুতোয় লাগতে চেষ্টা করছে, আমি চেষ্টা করি তাকে পাশ কাটিয়ে যাবার। ভাবি, এই মানুষটিরও আমার মতোই স্বপ্ন আছে, ভালোবাসা আছে, কষ্ট আছে, সুন্দরতম সম্পর্ক আছে, কত প্রিয় মুহূর্ত আছে। আমারই মতো একজন মানুষ, স্রেফ পরিস্থিতির কারণে আমরা আজকে একজন আরেকজনের মুখোমুখি। এই ব্যাপারটা আমি অনুভব করতে পারলেও সে পারছে না। এখানেই আমার সঙ্গে তার পার্থক্য। কারো সাফল্য দেখে আমার ঈর্ষা হলে আমি সেই ঈর্ষাকে জয় করার চেষ্টা করি। ভাবার চেষ্টা করি, ঐ সাফল্যের পেছনে মানুষটির কত না কষ্ট আছে, আমি কি আর সেই মূল্য দিয়েছি?
মানুষ তো আসলে শেষপর্যন্ত মানুষই, তাই না? মানুষের ওপর তো কোনো কথা নেই, তাকে ধর্ম, জাতীয়তাবাদ, দেশের সীমানা, ভাষার সীমাবদ্ধতা কোনোকিছু দিয়েই ধরা যাবে না। আকাশের চেয়েও অনেক বিশাল একটি জিনিস এই মানুষ। মানুষে আমার বড় নেশা। আমার একমাত্র ঈশ্বর এই মানুষ। রক্তমাংসের মানুষ। আমারই মতো। মানুষকে আমি কখনোই খাটো করে বিচার করতে রাজি নই। যে আমার ক্ষতি করে, তাকেও না। সে আসলে স্রেফ কিছু পরিস্থিতির শিকার। আমার বাসায় যে কাজের বুয়াটা টুকটাক চাল-ডাল আঁচলে বেঁধে চুরি করে নিয়ে যায়, তার অভাব তাকে এ জায়গায় এনেছে। এখন আমি যদি বিশ্বাস করতে শুরু করি, “কাজের বুয়ামাত্রই চোর” তাহলে সেটা খুব কাজের কিছু নয়। এই মেয়েটি যদি কোনো কোটিপতির ঘরে জন্ম নিত, হয়ত আজকে তার প্রতিষ্ঠানেই আমাকে চাকরি করতে হত, বা এই মেয়েটি যদি আমার মতোই কোনো মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নিয়ে আমার সহপাঠিনী হত, তাহলে আমার প্রিয় বান্ধবীও হতে পারত। তা হয় নি, তার কারণ পরিস্থিতি। জন্ম, পরিবার, পরিবেশ, সময় তার আর আমার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান তৈরি করেছে। তার চুরি ঠেকানোর জন্য আমি তাকে ভালো ভাষায় শাসন বা সাবধান করতে পারি, তার বেকার জামাইকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়ে তার অভাবের মূল জায়গাটা ঘোচাবার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু তাকে “শ্রেণীগত চোর” ভেবে ঘৃণা করতে শুরু করাটা মানুষ হিসেবে আমারই ক্ষুদ্রতা।
মানুষকে ভালোবাসলে আর বুঝতে চেষ্টা করলেই অনেক সমস্যা সহজ হয়ে যায়। শুধু সবসময় বোঝার এবং বিচার করার ধৈর্য্য আমাদের থাকে না এই আর কি!
আমি রবীন্দ্রনাথের আদর্শে চলতে পারি নি, কখনো পারবও না। শ্রেষ্ঠতম মানুষ হওয়ার যে স্বপ্ন আমি দেখি, তা কখনো সম্ভব হবে না। যোগ্যতার বিচারে হরেদরে আর পাঁচটা মানুষের মতোই আমি! খাইদাই, ঘুরিফিরি। সাধারণ পড়াশোনা, টুকটাক লেখালেখি, একখানা চাকরি, কিছু খ্যাপ, বাসায় ফিরে বউ-বাচ্চার সঙ্গে গল্প... এই তো আমি! মানুষের জন্য, সমাজের জন্য আমার সত্যিকার অনুভূতির স্বাক্ষর কোথায়? আমি বিশেষ একজন মানুষ কোথায় হলাম?
কিন্তু আমি চেষ্টা করে যাই। আমার চেষ্টা চলতেই থাকে। একটা নীরব সাফল্য লাভের সংগ্রাম আমাকে ঘিরে রাখে। আমি সবসময় মানুষকে ভালোবাসার চেষ্টা করে যেতে থাকি... আর কিছু না হোক, এই সাফল্যটুকু যেন পাই!


মন্তব্য

রাফি এর ছবি

আমি সবসময় মানুষকে ভালোবাসার চেষ্টা করে যেতে থাকি... আর কিছু না হোক, এই সাফল্যটুকু যেন পাই!

আমিন..

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

সবচেয়ে শেষটা... থেকে যায় চেষ্টা!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

ভবঘুরে এর ছবি

ধেৎ, যে লেখাগুলো মনকে নাড়া দিয়ে যায় সেগুলোতে মোটেই মন্তব্য করতে পারি না আমি। ৩ বার ডিলিট মারলাম। কোনটাই জুৎসই মনে হলনা।

স্নিগ্ধা'র পোস্ট পড়েও অনেক্ষন চেষ্টা করেছি কিছু একটা বলতে। পারিনি!

এক্কেবারে অসামাজিক রয়ে গেলাম।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

তাতে কী? আমার মতো “চেষ্টা” তো অন্তত করে যেতে পেরেছেন.... দেঁতো হাসি
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় মৃদুল, আপনার প্রতিদিনের জীবনেই অনেক সাফল্য আছে সেগুলোকে চিনতে চেষ্টা করুন, ভালোবাসুন, চর্চা করুন। মানুষকে ভালবাসার আপনার অবিরাম চেষ্টার ফলে জীবনে অন্তত কিছু মানুষের কাছে হলেও আপনি প্রিয়মুখ হতে পেরেছেন। একি কম বড় সাফল্য? মানুষের কষ্টের ভাগ নিতে না পারেন, তাদের সাথে সমব্যথীতো হতে পারেন। এরপর, জীবনে একজন মানুষের মাঝেও যদি এই বোধ সঞ্চারিত করতে পারেন তাহলেই আপনি পরিপূর্ন সফল মানুষে পরিনত হবেন।

================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হ্যাঁ, সাফল্যের বিভিন্ন চেহারা আছে। তার মধ্যে কোনোটা সরব, কোনোটা নীরব। ভুলে গেলে চলবে না, গান্ধীজি কিন্তু অহিংস নীতি দিয়েই ইংরেজ সাম্রাজ্য কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন! হয়ত বলা যায়, সময় এখন পাল্টে গেছে... কিন্তু একথাটা সত্য, সময় পাল্টে গেলেও মানুষের মৌলিক অন্তস্থলটা কখনো বদলায় না। আমাদের মতো দুর্বল মানুষেরা এসব কথা বলি বলে কোনো প্রভাব নেই তেমন, কিন্তু আরেকটা গান্ধীজি আসুক, দেখবেন আমরা সবাই এক লাইনে খাড়া হয়ে গেছি...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

ফারুক হাসান এর ছবি

মৃদুল ভাই, আপনার লেখাটা পড়লাম। গদ্যটা দারুণ কিন্তু বক্তব্য তার চেয়েও বড় বেশি আবেদনময়। আপনার মত করে সবাই ভাবতে পারলে জগতটা অনেক বেশি সুন্দর হত তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সমস্যা হচ্ছে, আসলেই জীবনে খাদ না মেশালে চলা মুশকিল হয়ে উঠছে ইদানীং। ধরুন, আপনার সাথে যে শত্রুতা করছে সামনে পেছনে গোপনে আবডালে আড়ালে,আপনি হয়ত মহত্ব দেখিয়ে তাকে ভালোবাসলেন, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বললেন, আহা বেচারি পরিস্থিতির শিকার। কিন্তু সেই লোকটা যদি আপনার আশেপাশের মানুষকেও আপনার প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, আপনার বিরুদ্ধে কানকথা লাগায়,অন্যের কান ভারী করে তোলে, আর পরিশেষে তারাও সত্য না জেনে আপনাকে ভুল বোঝে- তাহলে এইবার বলুন কতদূর পর্যন্ত আপনি সেই লোককে ক্ষমা করতে রাজী?

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আমার কথাটা আমি বোধহয় সেরকম পরিষ্কার করতে পারি নি। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম : পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়। আবার গীতায় শ্রীকৃষ্ণ যেমন অর্জুনকে তার আত্মীয়দের হনন করতে বলছে, কারণ ওটাই তার কর্তব্য। কর্তব্যের প্রয়োজনে যাকে ভালোবাসি, চাইলে তাকেও আঘাত করতে হবে...
আমার আমার পেছনে লাগা ঐ লোককে অবশ্যই আটকানোর চেষ্টা করব, তাকে প্যাঁচে ফেলতেও চেষ্টা করব, ঘাড়ে ধরে যদি দুটো ধামকি দিতে হয়, সেটাও দেব... কিন্তু আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, তার প্রতি কোনো বৈরীভাব পোষণ করে রাখতে আমি রাজি নই। শত্র“তার চিন্তা, ঘৃণা এগুলোর ওজন অনেক বেশি। এগুলোই কিন্তু আমাদেরকে একসময় খিটখিটে বুড়ো বানিয়ে দেয়। আমি খিটখিটে বুড়ো হতে চাই না কিছুতেই।
কিন্তু কেউ আমার দিকে যদি বন্দুকের নল তাক করে, আমি অবশ্যই সে ট্রিগার চাপার আগে আমার বন্দুক দিয়ে তার খুপরি উড়িয়ে দেব... নইলে তো সেই লোকটাই আমাকে মাটিতে শুইয়ে দেবে... কিন্তু নিহত সেই মানুষটির সামনে দাঁড়িয়ে আমার চোখে পানি আসা উচিত... যদি না আসে, তাহলে আমি নিজে মানুষ নই!
লীলেন ভাইয়ের নিমনাখারা বইটার দ্বিতীয় “নাটাঙ্গি” গল্পটায় হাসান আজিজুল হকের একটি গল্পকে নিয়ে নাটক বানানোর কাহিনী আছে। সেই গল্পের কাহিনী এরকম : এক পাকিস্তানি সিপাহী ধরা পড়ে গেছে গ্রামবাসীর হাতে। কিন্তু তরুণ এই সিপাহীটা খুবই নিরীহ, তার হাত বাঁধতে চাইলে হাত এগিয়ে দেয়, কোনোকিছুতেই কোনো প্রতিবাদ করে না। গ্রামবাসীরা একে নিয়ে ভারী বিপদে পড়ে গেল। ঘাউড়া একটা সিপাই হলে তাকে পিটিয়েই লাশ বানিয়ে দেয়া যেত, কিন্তু এ যে নিতান্তই এক নিরীহ তরুণ, যে কোনোকিছুতেই কোনো প্রতিবাদ করে না। তাকে নিয়ে বিভ্রান্ত গ্রামবাসীরা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিল। দুই তরুণ মুক্তিযোদ্ধা তার হাত-পা বেঁধে নৌকায় তুলল, সেই সিপাইটাও কোনো প্রতিবাদ করল না, তাকিয়ে রইল নির্বাক...
গুলি করে মারলে পাকিস্তানিরা টের পেয়ে যাবে, তাই প্ল্যান হচ্ছে তাকে নদীর মাঝখানে নিয়ে গলা টিপে ফেলে দেয়া হবে। যার ওপর গলা টেপার ভার, সেই তরুণটির হাত কাঁপছে... কী করে সে গলা টিপে মারবে আরেকজন মানুষকে, যে মানুষটা বাধা দেয় না চেঁচামেচি করে না, পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে না, লাথি মারে না, গালিগালাজ করে না... সেরকম একটা কিছু বললেই তো শালা শুয়োরের বাচ্চা বলে গলা টিপে মেরে ফেলা যেত, কিন্তু এখন...
শেষপর্যন্ত সেই তরুণ কর্তব্যের খাতিরে গলা টিপে হত্যা করে সেই পাকিস্তানি তরুণ সেপাইটাকে... তারপর গলা ছেড়ে কেঁদে উঠে... একটু পর দেখা যায় দুইজন মুক্তিযোদ্ধাই জড়াজড়ি করে কাঁদছে নৌকার ওপর... ক্রন্দনরত দুই তরুণকে নিয়ে ভেসে যেতে থাকে সেই অবাক নৌকা...
পাকিস্তানিদের আমরা ঘৃণা করি, তাদের গলা টিপে মারার কর্তব্য করতেও আমাদের দ্বিধা নেই, কিন্তু আমাদের ভেতরের মানবিক মানুষটাকে যেন কখনো গলা টিপে মেরে না ফেলি...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

খেকশিয়াল এর ছবি

আমার বাসায় যে কাজের বুয়াটা টুকটাক চাল-ডাল আঁচলে বেঁধে চুরি করে নিয়ে যায়, তার অভাব তাকে এ জায়গায় এনেছে। এখন আমি যদি বিশ্বাস করতে শুরু করি, “কাজের বুয়ামাত্রই চোর” তাহলে সেটা খুব কাজের কিছু নয়। এই মেয়েটি যদি কোনো কোটিপতির ঘরে জন্ম নিত, হয়ত আজকে তার প্রতিষ্ঠানেই আমাকে চাকরি করতে হত, বা এই মেয়েটি যদি আমার মতোই কোনো মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নিয়ে আমার সহপাঠিনী হত, তাহলে আমার প্রিয় বান্ধবীও হতে পারত। তা হয় নি, তার কারণ পরিস্থিতি। জন্ম, পরিবার, পরিবেশ, সময় তার আর আমার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান তৈরি করেছে। তার চুরি ঠেকানোর জন্য আমি তাকে ভালো ভাষায় শাসন বা সাবধান করতে পারি, তার বেকার জামাইকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়ে তার অভাবের মূল জায়গাটা ঘোচাবার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু তাকে “শ্রেণীগত চোর” ভেবে ঘৃণা করতে শুরু করাটা মানুষ হিসেবে আমারই ক্ষুদ্রতা।

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আবার এমনও কিন্তু হতে পারত, সে হচ্ছে বাড়ির গৃহিণী। আর আমি তাদের গাড়ির ড্রাইভার। হয়ত তাকে বলতে হত, ম্যাডাম, স্যারেরে বইলা সামনের মাস থিকা বেতন কিছুটা বাড়ায়া দ্যান, জিনিসপত্রের দাম যা বাড়ছে...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
আমি রবীন্দ্রনাথের আদর্শে চলতে পারি নি, কখনো পারবও না। শ্রেষ্ঠতম মানুষ হওয়ার যে স্বপ্ন আমি দেখি, তা কখনো সম্ভব হবে না।

এই যে চেষ্টা আছে, কিছুটা স্বপ্নও আছে, তাও কি মিথ্যা? আমি বলবো অবশ্যই না। এই চেষ্টাটুকু, এই স্বপ্নটুকুই একজন মানুষকে গড়পরতা মানুষের থেকে কিছুটা হলেও আলাদা রাখে। আর সেখানেই প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে মানুষটির স্বাতন্ত্র্য।
ভালো পোস্ট। ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ফারুক হাসানের মন্তব্যের সাথে সহমত। মাঝে মাঝে ক্ষমার পরিমাণ এতো বেশি হয়ে যায় যে নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারি না।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

ভাই, মন থেকে ক্ষমা করতে বলা হয়েছে, কাজে না। যে তোমার পেছনে একটা আঙ্গুল দিতে চায়, তার পেছনে তুমি দুটো আঙ্গুল না দিলে সে তোমার পেছনে পুরো হাতটাই প্রবেশ করিয়ে দেবে সন্দেহ নেই! আমরা তো রবীন্দ্রনাথ কিংবা গান্ধীজি নই, বিশাল দর্শন ঘাড়ে করে বড় ধরনের ক্ষমা প্রদর্শন আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কখনো কখনো কিন্তু ক্ষমা করাও অপরাধ। আমি বলছি যে, জীবনের মাঠে তো আমরা একেকজন গ্লাডিয়েটর, আরেকজনকে না মারলে তোমার বেঁচে থাকা অসম্ভব। কিন্তু আক্রমণটা বেঁচে থাকার ইচ্ছে থেকেই হোক, ঘৃণা থেকে না।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

তানবীরা এর ছবি

মৃদুল, এটা হয়তো আমাদের অনেকেরই আত্ম কথন যা আপনি সুন্দর করে লিখেছেন।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হবে হয়ত।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

দেশের বাইরে থেকে দেশের প্রতি ভালোবাসাটা অনেকটা বিয়োগাত্মক ছবির প্রেমপাগল নায়ক-নায়িকার বেদনার মতোই যন্ত্রনাদায়ক।

দেশের এটা হচ্ছে না, সেটা হচ্ছে না ... নানান অভিযোগ মনের ভেতরে সবসময় ঘুরপাক খেতেই থাকে। হঠাৎ কিছু একটা দেখে, কারু কথা শুনে মাঝে মাঝে সেই ভাঙ্গা পালেও হাওয়া ঠেকে ...

হয়তো ভালোমানুষদের কথা আমরা কম শুনি, এটা হবে না যদি ভালো মানুষগুলো তাদের কথা আরো বেশী বেশী বলে আমাদেরকে... তাই না হাসি

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হুমমম। ভালোমানুষ কিন্তু অনেক আছে, কিন্তু দেশ গড়ার মতো ভালোমানুষ নেই।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

হিমু এর ছবি

আমার এ গাঁঢ় মারিয়াছে যে বা
আমি ঢাকি তার গাঁঢ়
আদর করিতে খুঁজিয়া বেরাই
যে মোরে দিয়াছে মার।

যে মোরে হাসিয়া দিলো মুলি বাঁশ
লুঙি তুলি ঘুরি তারি চারিপাশ
এক গালে চড় দিলে আর গাল
ফিরাই শতেকবার।
তবু তুই শালা আন্টির পোলা
খোঁচাখুঁচি করা ছাড়!

হো হো হো

আমার অন্তর বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না আসলে। পেছন বাঁচাতে ছুটছি শুধু।

মনে পড়ে যাচ্ছে শ্রী পুরন্দর ভাটের সেই অজরামর কবিতা,

ঘরের বাহিরে শত্রু খাড়া
ঘরের ভেতরে গরীব বাঁড়া
করিয়া হেলা, মারিছে ঠেলা
ডাকিয়া তবুও মেলে না সাড়া

মেঘের আড়ালে উড়ছে বোমারু
যুদ্ধজাহাজ, নাম পোঙামারু ...

বাকিটা ভুলে গেছি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অভিজিৎ এর ছবি

হাঃ হাঃ... এইডাই ভালা হৈছে!

অন্তর মন্তর বিকশিত করণের আগে ফরজ কাম সারন লাগবো, পেছন বাঁচলে পরে কথা। হাসি



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

মনজুরাউল এর ছবি

ভুলে গেলে চলবে কেন ? শ্রী পুরন্দর ভাট বলে কথা !

_ ঘরের বাহিরে শত্রু খাড়া
ঘরের ভিতরে গরিব বাঁড়া
করিয়া হেলা মারিছে খেলা
সহসা ঘাড়েতে নামিবে খাঁড়া
মেঘের আড়ালে উড়িছে বোমারু
যুদ্ধজাহাজ_ নাম পোঙামারু
তবুও ডাকিয়া মেলে না সাড়া
ঘরের বাহিরে শত্রু খাড়া

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍@ হিমু

ছড়ার জন্য জাঝা গুল্লি (বিপ্লব)

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

হিমু এর ছবি

পাঝালুস্তা, পাঝালুস্তা হাসি ...


হাঁটুপানির জলদস্যু

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আমিও দাদা বলছি সেটাই
ইচ্ছে করে জোরসে পেটাই
যখন ব্যাটা গায়ের জোরে
পশ্চাতে ঐ ক্ষুদ্র দ্বারে
দেয় সেঁধিয়ে বাঁশ...
থাকলে বসে বাড়বে আরো
আমার সর্বনাশ!
তাই আমিও বাঁশ দিয়ে যাই
আইক্কাঅলা পাই বা না পাই
বাঁশে বাঁশে জর্জরিত
হয়ে ভীষণ জ্বর-জড়িত
এক্কেবারে কোমা...
তখন তাকে অনায়াসেই
করতে পারি ক্ষমা! দেঁতো হাসি
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কিন্তু আমি চেষ্টা করে যাই। আমার চেষ্টা চলতেই থাকে। একটা নীরব সাফল্য লাভের সংগ্রাম আমাকে ঘিরে রাখে। আমি সবসময় মানুষকে ভালোবাসার চেষ্টা করে যেতে থাকি... আর কিছু না হোক, এই সাফল্যটুকু যেন পাই!

সত্যিই মৃদুল ভাই, আপনার লেখাটা ভীষণরকম ভালো লাগল। আর লেখাটা পড়ে কিছু কিছু চিন্তাভাবনায় আপনার সাথে আরো গভীরভাবে একাত্মতা অনুভব করছি আর ব্যক্তিগত জীবনেও কখনো দেখা করার তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ করছি।

খাদ মেশা মানেই কিন্তু পরাজয় নয়। পরিস্থিতির কারণে আমাদের অনেককেই নিজের সাথেই এক সমঝোতায় আসতে হয়। যা করতে চাই না, যা বলতে চাই না, যা ভাবতে চাই না, নিরূপায় হয়ে হয়ত তাই করতে হয়, বলতে হয় বা ভাবতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, (ব্যতিক্রম ছাড়া) পরিস্থিতির কারণে কেউ আপাতদৃষ্টিতে কোন খারাপ কাজ করলে তাকে খারাপ বলার কোন যুক্তি নেই, যদি না সে সেটাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলে। আপনি হয়ত অনেক কিছুই করতে বাধ্য হয়েছেন যা কখনো করার কথা কল্পনাও করেননি। তার মানে এই না যে আপনি আপনার নৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। আপনার লেখা কিন্তু তা প্রমাণ করে।

আর, যদি এক জীবনে একজন মানুষের ভালোবাসাও পান, সেটাই কিন্তু অনেক বিশাল পাওয়া। আর অজ্ঞাতে হয়ত অসংখ্য মানুষের জীবন স্পর্শ করেছেন আপনি, আপনার নিজেরও হয়ত তা জানা নেই! আপনার সাফল্য কামনা করছি এবং প্রার্থনা করি যেন এই সুন্দর মনটাকে সবসময় এমন রাখতে পারেন। আপনার মতো মানুষের সংখ্যা আজকাল আসলেই অনেক কমে গেছে!

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আরে না না, যত ভালোমানুষ ভাবছেন, ততটা আমি নই! খোঁজ করলেই আমার নামে কতজনের কাছে কত কী শুনতে পারবেন! দেঁতো হাসি
আর মানুষের ভালোবাসার কথা বলছেন? আপনার অনুভূতি তো আমি দিব্যি টের পাচ্ছি!
দেখা হবে তো নিশ্চয়! চলে আসুন একদিন গুলশান-১-এর দিকে... সকাল নটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা-আটটা পর্যন্ত থাকি এদিকে। এলে আড্ডা হবে অনায়াসে।
আর ফোন নাম্বার আপনাকে পাঠিয়ে দেবখন। এখানে আর দিলাম না। কারণ কে জানে, এইদেশেই অনেক লোক আছে, যারা হয়ত লেখালেখির কারণে আমাদেরকে ক্ষমা করতে রাজি না... হাসি

---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

না ভাই, নিজে যতটুকু বুঝেছি তাতেই আমি খুশি। অন্যের কাছে খোঁজ নেবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নাই হাসি আর খোঁজ নিলেও আমি নিশ্চিত ভাল ছাড়া মন্দ কিছু শুনব না দেঁতো হাসি
ফোন নাম্বার পেয়েছি। সেটা এখন আমার ফোনবুকে ঢুকে গেছে। আমার অফিস বারিধারায়। কাজের প্রয়োজনে মাঝে মাঝে অবশ্য গুলশান-১ হয়ে নানান জায়গায় যেতে হয়। দেখা হবে তাহলে কোন না কোন একদিন।
আর অসংখ্য ধন্যবাদ আমার না বলা অনুভূতি বুঝে নেবার জন্য, সহজ করে দিলেন অনেক হাসি
আরেকটা কথা, আপনার "ক্রিয়েটিভ রাইটিং"-এর ফোটু দেখলাম একটা। ব্যাপক মজা পাইছি চোখ টিপি

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ভাই মৃদুল, এই লেখাটা আর উপভোগ করা হলো না, অনুভব করতে হলো। বুদ্ধের ওই প্রণত ভঙ্গির আনত মুখের মানে বুঝি বা এটাই।

কিন্তু আমরা কি আমাদের ছাড়িয়ে গিয়ে ভালবাসতে পারি? যখন বাসি তখন তো তার মতো করে নয়, আমার মতো করেই বাসি? সেই বাসাবাসি যদি তাকে পীড়া দেয়? তবুও আকাঙ্ক্ষাটাই প্রাথমিক। এ না থাকলে যে কিছুই হয় না।

অনেক অভিনন্দন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আমিও অনুভব করছি আপনার কথা। নিজেকে ছাড়িয়ে আসলে কিছুই নয়।
জীবনের প্রয়োজনে মানুষ কখনো মিথ্যুক, কখনো খুনি, কখনো লোভী, কখনো পাপী...
কিন্তু ভেতরের মানুষটা তো আসলে বিরাট মাপের। আকাশের চেয়েও বিশাল।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মূর্তালা রামাত এর ছবি

কিন্তু আমি চেষ্টা করে যাই। আমার চেষ্টা চলতেই থাকে। একটা নীরব সাফল্য লাভের সংগ্রাম আমাকে ঘিরে রাখে। আমি সবসময় মানুষকে ভালোবাসার চেষ্টা করে যেতে থাকি... আর কিছু না হোক, এই সাফল্যটুকু যেন পাই!

এই চেষ্টাটুকুই বা কজন করতে পারে।

মূর্তালা রামাত

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হ্যাঁ, চেষ্টা না থাকলে আর আছে কী?
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

স্নিগ্ধা এর ছবি

মৃদুল - আমার অবিকশিত অন্তর এতই অন্ধকার যে তাতে এত্ত ক্ষমা টমা, ভালোবাসা টাসা ধরেই না। আমি মানুষটা ভয়ানক খ্যাচ খ্যাচে, কেউ একটু কিছু বললেই আমি খ্যাক খ্যাক করে তেড়ে উঠি মন খারাপ

নাহ্‌, যতই পোস্ট লিখি না কেন, আমার আর এ জীবনে বিকশিত ফিকশিত হওয়া হবে না (দী ঈ ঈ ঈ র্ঘশ্বাস)।
দেখি, জ্ঞানীগুণিদের পথ অনুসরণ করে - রয়েসয়ে যদি মনটাকে একটু মুক্ত করার চেষ্টা করতে পারি ...... হাসি

তবে আপনি যে অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি মনের অধিকারী, সেটা অনেক আগে থেকেই পরিস্কার। অনেক ধন্যবাদ আবেগময় এই লেখাটার জন্য ....!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।