মন্ট্রিয়াল থেকে এই পণ করে এসেছিলাম যে, এখন থেকে ভ্রমক হয়ে যাব। একেবারে পাকাপোক্ত ভ্রমক। পুরো বাংলাদেশটা যত পারব ঘুরে দেখব। হেথায় যাব, হোথায় যাব, সারা বাংলাদেশে!
আসার পর অবশ্য এই তেল ফুরিয়ে যেতে বেশিদিন লাগে নি। কারণ দুগ্ধপোষ্য দুই বাচ্চার বাপ হয়ে আর যাই হোক, ভ্রমক হওয়া ভারী মুশকিল। ভাদাইম্যা হওয়া যায় বড়জোর।
শেষপর্যন্ত ভাদাইম্যাই হতে হল আমাকে!
বউ জয়েন করে ফেলল তার অফিসে, তার ভালো চাকরি, ওটায় যেতেই হবে। আমিই পড়লাম বাঁটে। চার মাসের ছুটি নিয়ে গিয়েছিলাম অফিস থেকে। ফিরে এসে আর জয়েন করা হয় নি। সার্বক্ষণিক কাজের লোক এখনো জোটে নি। তাই সারাদিন বাসায় বসে আমাকেই তার প্রক্সি দিতে হচ্ছে। দুই বাচ্চার খাওয়াদাওয়া, ডায়াপার চেঞ্জ, বিনোদনের ব্যবস্থা সবই এখন আমার ডিপার্টমেন্টের সাবজেক্ট।
হাউস ওয়াইফের পুং সংস্করণ এখন আমি, একদম হাউস হাজব্যান্ড যাকে বলে!
এর মধ্যেই আচমকা হঠাৎ হঠাৎ বেরিয়ে পড়া।
চারদিনের জন্য ঘুরে এলাম কেওকারাডং ট্রেকিংয়ে।
এসেই কদিন পর চলে গেলাম চাঁদপুর। এবার সপরিবারে। বহুদিন পর লঞ্চে চড়ে দুনিয়ার সব ঝালমুড়ি, ভাজাভুজি, সেদ্ধ ডিম, লবণ মরিচ ছড়ানো ক্ষীরা খেতে খেতে বিরল এক বুক আনন্দ নিয়ে পৌঁছে গেলাম, ঘুরে এলাম।
এরপর তক্কে তক্কে ছিলাম কোথায় যাওয়া যায়। নজরুলের ফোন এল এর মধ্যে। মুস্তাফিজ ভাইয়ের বাড়িতে যাব আমরা, ইচ্ছে আছে নাকি যাবার?
আমি লাফ দিয়ে উঠলাম। আমার বউও। বাচ্চাগুলোর বড়টা লাফ দিল, ছোটটা এখনো বসতে পারে না বলেই হয়ত লাফ দিতে পারল না।
বউয়ের একটু কিন্তু কিন্তু ছিল। কাউকে চেনে না সে এখানে। এরকম যাওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে। গিয়ে কি ভালো লাগবে? শীতে বাচ্চাদের বেশি কষ্ট হবে না তো? যেখানে যাচ্ছি, সেখানে রাতে থাকার মতো সেরকম ব্যবস্থা আছে তো?
মুস্তাফিজ ভাইয়ের মাইক্রোতে বসেই তার সমস্ত সঙ্কোচ কেটে গেল। রীতা ভাবি ভালোমানুষ জানতাম, তবে সহজেই এত আপন করে নেবার ব্যাপারটাও যে তাঁর মধ্যে ছিল, সেটা আমিও দেখলাম এই প্রথমবারের মতোই।
মুক্তাগাছার রসুলপুর। বিশাল বড় বাড়ি মুস্তাফিজ ভাইদের। আশপাশে প্রচুর জমি। উনারা তো মোটামুটি পুরো রসুলপুরটাই কিনে ফেলেছেন বলে মনে হল আমার।
রাত তিনটা পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে সকাল আটটায় উঠে রসের পিঠা আর চা দিয়ে নাস্তা করে বড়ই বাগানে দুর্দান্ত এক ভ্রমণে গেলাম আমরা। ফিরে এসে আড্ডা আর ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো। ধানক্ষেতের আল দিয়ে হেঁটে যাওয়া, ছুটোছুটি, ইকোপার্কের সবুজ চারপাশ। মুস্তাফিজ ভাইদের বাড়ির আশপাশটা এখনো একদম গ্রাম। তাকিয়ে থাকতে কী যে ভালো লাগে! মফস্বল শহরের চাতুর্যমাখা চেহারাটা এখনো এসে পৌঁছায় নি এখানে!
দুপুরে দুর্দান্ত সব রান্না খেলাম। এত চমৎকার খাসির ঝোল আমি বহুদিন খাই নি। খাওয়া এখন কমিয়ে দিয়েছি, কিন্তু সেদিন আবার চলে গিয়েছিলাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফেরার পথে মুক্তাগাছার স্পেশাল মণ্ডা নিয়ে ফিরে এলাম। রমেন্দ্রনাথ পালের মণ্ডা, ২৮৬ টাকা কেজি। আমি আবার মিষ্টি ভালু পাই। এক কেজি নিয়ে ঢাকা ফিরে এলাম দাঁত কেলিয়ে।
বেশি কথা না বাড়াই। এটা আসলে মুলত ছবিব্লগ। আমি প্যাট প্যাট করে চলেছি রাজনীতিবিদদের মতো খামাখাই।
পান্থকে নাকি কাজের ছেলে হিসেবে সাথে নিয়ে আসা হয়েছে। উপযুক্ত কাজের ছেলে হিসেবে তার প্রশংসাও করেছে সবাই। আমিও করছি। পান্থ মৌনামীকে কোলে নিয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছে। আমার কোমরটি সেজন্য কৃতজ্ঞ তার কাছে।
সকালের ঝকঝকে ভাবটার সাথে নূসরাতের ঝকঝকে হাসিটা বেশ মানিয়ে যাচ্ছিল। চটপট তুলে নিলাম মেমরি কার্ডে। ও হো, নূসরাত নূপুর ভাবির বান্ধবী!
বড়ই বাগানে মা ও কন্যা। দুজনকেই বড় সুখি সুখি দেখাচ্ছে। শহরের ঘেরাটোপ ছিঁড়ে বেরোতে পেরে।
বড়ইগুলো বেশ বড়ই। খুব মিষ্টি লাগে নি অবশ্য। মৌনামীও একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। বড়ই ফেলে দেবে, না খুব আহামরি করে খাবে।
এই একটা বাজে অভ্যাস হয়েছে মৌনামীর, হাঁটতে চায় না, স্রেফ কোলে বসে থাকাতেই তার আনন্দ। বাপ-মার ধাতানি খেয়ে তাই সে অরাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিল দিশার কোলে।
বাগান পাহারা দেবার টং ঘরে বসে নূসরাত, দিশা আর তৃষিয়া।
টং ঘরের নিচে দুই পিলারের ফাঁকে উঁকি দিয়েছে মৌনামীর মুখ।
নূপুর ভাবি আর নিধি। বেশ কয়েকটা ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছি তাদের। সেগুলোর মধ্যে সেরাটাই দিলাম।
বাগানে ঘুরতে ঘুরতে আমরা চলে গিয়েছিলাম মান্দাইদের বাড়িতে। সেখানে বিশ্রাম নিতে বসা সবার। সেখনেই এক ফাঁকে মুস্তাফিজ ভাই আর মাতিস।
আরো এক ফাঁকে দিশা। মানে আমাদের সচলায়তনের দুষ্ট বালিকা।
দুপুরে খাবার আগে আমরা গ্রামের মাঝ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গিয়েছিলাম ইকো পার্কের দিকে। যাবার পথে সৌরাত্রিকে নিয়ে উদিতার উচ্ছ্বাস।
আমার মেয়েরা হয়ত দেশের বাইরেই প্রায় পুরোটা জীবন কাটিয়ে দেবে। হয়ত বিয়ে করবে বাইরেরই কাউকে। কিন্তু শিকড়ের গন্ধ যেন কখনো মুছে না যায় ওদের পা থেকে। সৌরাত্রির ছবিতে তাই গ্রামের গন্ধ মাখিয়ে দিলাম।
যাবার পথেই পুকুরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল গ্রামের কয়েকজন লাকড়ি মাথায় নিয়ে। প্রতিবিম্বসহ তাদের ছবি বানিয়ে ফেললাম অবিলম্বে।
ইকো পার্কে ঢোকার মুহূর্তকার ছবি। ছবিটা বেশ সুন্দর। কিন্তু যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এই ছবিতে, সেটা গাছ চুরির। ব্যাপারটা দুঃখজনক। এরা অবশ্য সাধারণ মানুষ। স্রেফ গায়ে খাটার পয়সা পাবে, চুরির ভাগ না।
মন্তব্য
মৃদুল'দা, ছবিগুলা দারুণ হইছে। তবে আসল কথা সেটা না। আসলে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলাম এরপর কোথায় যাওয়া যায় বলেন তো?
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
মোস্তাফিজ ভাই আর শেষের দু'টো ছবি সেইরকম। সব মিলিয়ে ভালো লাগল।
==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
- আপনারে আর নজু ভাইরে কইষ্যা মাইনাস। কারণ জিগাইয়েন না।
আর মণ্ডা? খাড়ান না খালি একবার, আইসা লই। পোড়োবাড়িতে, সেই ঐতিহাসিক উঠানে বইসা চমচম খামু। নাটোর গিয়ে কাচাগোল্লা খামু। খামু তো খামু, গামছায় বাইন্ধা নিয়াও আসুম। তখন চাইয়েন খালি, দিমুনে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মৌনামি তো পুরা মৃদুল ভাই! অবশ্য মেয়েরা বাপের মতই হয়।
আমার ছবিগুলো এখনো আপ্লোড করা হয় নাই। খাড়ান, এই শুক্কুরবারে আমিও একটা ছবি ব্লগ নিয়া জাহির হইতেছি
আপনারে উত্তম জাঝা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভালাইসে। সৌড়াটড়ীড়ে নিয়ে তৃষিয়াপুর তোলা আমার ছবিতো বিয়াপক হিট। ওরে দিবেন মৃদুলদা?
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
তৃষিয়াপুর তোলা ছবি মৃদুলদা দেবেন কী করে?
[img=auto][/img]
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
কীবোর্ড নষ্ট। বানান বিভ্রাট নিয়া আমি ছরি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ভালু ভালু সব ছবি
কিন্তুক ড্রাইভার কে একবার ধন্যবাদ দিলেন না?
...........................
Every Picture Tells a Story
প্রছইন্ড হিংসা লাইগতেছে। মাইনাছ দিই গেলাম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হিংসা পরম ধর্ম
দীর্ঘশ্বাস...... হবে না। খেলতাম না। মাইনাছ।
___________________________________________________
আনন্দে থাকি, আনন্দে রাখি
___________________________________________________
আনন্দে থাকি, আনন্দে রাখি
মন্ডা খুব মযার; ামি খুব মিস করি ।
দারুন লাগলো, প্রাণবন্ত সব ছবি যদিও কাউকে চিনি না ব্যক্তিগতভাবে শুধু
লেখার সাথে পরিচিত। আগামীতে আরো আনন্দ ভ্রমণ করুন এবং
আরও ছবি শেয়ার করুন।
--------------------------------------
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
নুপূর আপু আর নিধির ছবিটা সবচাইতে জোশ...
আপনার কন্যাদ্বয়ের নামগুলো খুব পছন্দ হলো!
--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
মাইনাস ও দিলাম একটা!
--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
পাঞ্চ। মানে, পাঁচ!
নূপুর আপার বন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য মৃদুল ভাইকে পাঁচলক্ষ তারা!
হুম, আমারে আক্ষরিক অর্থেই কাজের ছেলে বানাইছিলেন!
.....................................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
ঈর্ষামুক্ত মহামানব নই... তাই "মাইনাস" দলের অনুরাগী হয়ে গেলাম।
প্রজ্ঞার কিন্তু মৌনামীর কথা ভালোই মনে আছে ... ওদের দুজনকেই আদর।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
কইষ্যা মাইনাস।
ছবিগুলা জোশ আসছে, নতুন ক্যামেরা নাকি?
আমিও দুইটা ছবি দিলাম
...........................
Every Picture Tells a Story
মৃদুল, পিটায় একদম লম্বা বানায় দিবো!! আর মন্ডা যদি শুনি গুড়ের ছিলো, তাইলে একদম তক্তা বানায় দিবো ......
পিটান, ওর লম্বা হউনের দরকার আছে, না পারলে আমাকে ভাড়া করেন
...........................
Every Picture Tells a Story
করলাম ভাড়া, দ্যান পিটা! আপনাদের বিয়ের বার্ষিকীতে অভিনন্দন জানানো হয় নাই, স্যরি - এখন দিলাম একদম একখানা গ্র্যান্ড স্ল্যাম অভিনন্দন
মিস কর্সি, বড়সড় কিসু হৈলেই আমি মিস করি- মনে অয় কপাল...
_________________________________________
সেরিওজা
গৃহক থেকে ভ্রমক
বোহেমিয়ান
ওরে মিদুল দা
কোপাকুপি সব ফটু!
কিন্তু কেওক্রাডাং নিয়া লেখাটা দিলেন না যে......?!
তুফান হৈসে
হেব্বি মাস্তি কইরা আসলেন সবাই!
ছবি পুরা জোশিলা হইছে মুদুল ভাই !!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
্মৃদুল ভাই,
ঢাকায় আপ্নারে টাইন্যাও ঘর থেইকা বাইর করতে পারলামনা। কন্যাদ্বয়ের উসিলা দিয়া সটকাইয়া থাকলেন। আমি আসনের পরে দেখি দেশ ভ্রমণে বাইর হইছেন।
খালেদ
মিয়া, এখন ঝটপট ১ পোটলা মুক্তাগাছার মণ্ডা দেন, খামু
এরাম ছবি মাইনষে তুলে কেমতে? হাত দিয়া না পা দিয়া, মিয়া এখনো চোখ ঝলসায় আছে। নমস্য গুরু, নমস্য
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
নতুন মন্তব্য করুন