• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

ঐশী আর রোহিতপুরের ভূত

মৃদুল আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন মৃদুল আহমেদ (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/০৩/২০১০ - ১২:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
সকালবেলা স্কুলে যাবার আগে নাস্তার টেবিলে বসে বসে খানিকটা পত্রিকা পড়ে ঐশী। এই অভ্যাসটা বাবাই তৈরি করে দিয়েছে। বাবা বলে, প্রতিদিন পত্রিকা পড়ে ঘর থেকে বের হবি, নিজের মধ্যে একটা গরম ব্যাপার থাকবে। আশেপাশে কী ঘটছে তার কমবেশি তুই জানিস। কেউ এসে আচমকা একটা খবর জানিয়ে তোকে হাবা বানিয়ে দেবে, এরকমটা করার সুযোগ তুই তাকে দিবি কেন?
কিন্তু আজকের ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। সকালে উঠেই ধড়মড় করে পত্রিকা খুলে বসেছিল ঐশী। এই সদানন্দপুরেরই দু-তিনটা স্থানীয় পত্রিকা। পাতা খুলেই প্রথমে চমকে উঠল সে। তারপরে হেসে উঠল হো হো করে।
বাবা পাউরুটিতে জেলি মাখাতে মাখাতে ভুঁরু কুঁচকে বলল, হাসছিস কেন?
হাসির ব্যাপার, সেইজন্যই হাসছি! তুমি পড়লে তুমিও হাসবে! এই দেখ...
কই দেখি!
বাবা পত্রিকাটা হাতে নিয়ে খবরটা পড়তে পড়তে এবার তিনিও হেসে উঠলেন হো হো করে। সে এক বিচিত্র দৃশ্য। খাবার টেবিলে বাবা আর মেয়ে প্রতিযোগিতা করে হেসেই যাচ্ছে। হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেছে, পেট ব্যথা হয়ে গেছে, তারপরও দুজন পেটে হাত দিয়ে হেসেই চলছে!
রান্নাঘর থেকে ডিম ভেজে এনে এই দৃশ্য দেখে ঐশীদের কাজের বুয়া হা হয়ে গেল। বার বার বলতে লাগল, হইছেডা কী? আফা আর খালু কি একলগে পাগল হইলেন নি? এইডা ক্যামনে সম্ভব?
ঐশী আর তার বাবার হাসির কারণ জানতে আমাদেরকে একটু অতীতে ঘুরে আসতে হবে। বেশি দূরে না। এই গত সপ্তাহে।

২.
সদানন্দপুর প্রাইমারি স্কুলে আজ বেশ একটা হইচই।উৎসব উৎসব ভাব।
কারণ আছে। আজকে স্কুলে বেড়াতে আসবেন এলাকার বিশিষ্ট এক সন্তান। তাঁর নাম মহিউদ্দিন পাটোয়ারী।
এলাকার সন্তান হলেও এলাকাতে অবশ্য তাকে গ্রামের অনেক লোকই দেখে নি। তাঁর চেহারাও খুব একটা ভালো করে চেনে না। কারণ পাটোয়ারী সাহেব রাজনীতি করেন ঢাকায়।
তিনি রাজনীতি করেন, রাস্তায় নামেন, পুলিশের মার খান, গ্রেফতার হয়ে গরম গরম ডায়লগ দেন। এই তো স্বৈরাচারি সরকার এরশাদের আমলে রাস্তায় আন্দোলনের সময় তাঁর মাথা ফেটে গিয়েছিল। চারপাঁচটা পুলিশ তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলছে আর তিনি আঙ্গুল তুলে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন বলে চেঁচাচ্ছেন, এই ভিডিও ফুটেজটি বিটিভির খবরে প্রচার হবার পর পাটোয়ারী সাহেব বেশ বিখ্যাত হয়ে যান।
যেহেতু সদানন্দপুরের অতি অল্প কয়েকজন লোকের বাসাতেই তখন টিভি ছিল, ফলে নিজ গ্রামের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষই পাটোয়ারী সাহেবের এই মহান ঐতিহাসিক দৃশ্য থেকে বঞ্চিত হল। গ্রামের সরল সাধারণ মানুষের জীবনে গর্ব করার বিষয় খুব বার বার আসে না। এলাকার এই বিপ্লবী সন্তানকে নিয়ে গর্বিত হবার এই দুষ্প্রাপ্য সুযোগটিও তাঁরা হাতের মুঠোয় পেয়ে হারিয়ে ফেলল!
যাই হোক, ব্যাপারটি এখন দাঁড়িয়েছে এমন। সদানন্দপুরের লোকজন জানে না—
ক. মহিউদ্দিন সাহেব দেখতে কেমন।
খ. তিনি কোন দলের পক্ষে রাজনীতি করেন। (তিনি দু-তিনবার দল বদল করেছেন আদর্শের ভিত্তিতে, ফলে এখন কোন দলে আছেন বলা মুশকিল)।
গ. তিনি এতদিন ঢাকায় ছিলেন, এখন আচমকা কেন এদিকে আসছেন।
ঘ. তিনি সকালের নাস্তায় ঘিয়ে ভাজা পরোটার সাথে বুটের ডাল দিয়ে খাসির মাংস বেশি পছন্দ করেন, নাকি মশলায় কষানো গরুর মাংস? (এই জিনিস নিয়ে সদানন্দপুর প্রাইমারি স্কুলের মাননীয় চেয়ারম্যান সাহেব খুবই টেনশনে আছেন এবং গতকাল রাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে দুটোই থাকবে)।
এই সমস্ত জিনিস না জানার পাশাপাশি কানাঘুষায় যেসব জিনিস শোনা গেল—
ক. ঢাকায় তিনি যে দল করতেন, সেখান থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফলে ঢাকার আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়াবার স্বপ্নটি খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়ায় তিনি এলাকার সন্তান এলাকায় ফেরত এসেছেন। এখান থেকেই তিনি স্বতন্ত্র পদে দাঁড়াবেন।
খ. ঢাকায় তাঁর তিনটি বাড়ি, গুলশান আর ধানমন্ডিতে দুটো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, কক্সবাজারে একটা ফাইভ স্টার হোটেল আছে।
গ. স্বৈরাচারি এরশাদের আমলে তাঁকে যে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছিল, সেটা নাকি রক্ত ছিল না, মহিউদ্দিন নিজেই মাথার মধ্যে তরল রঙ গুলে পুলিশদের ওপর হামলে পড়েছিলেন।
ঘ. তরুণ বয়সে মহিউদ্দিন ছিলেন এলাকার রাজাকার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড। মূল কমান্ডার ছিল তাঁর বাবা মোকশেদ পাটোয়ারী। মুক্তিযুদ্ধের পর মোকশেদকে মেরে ফেলে মুক্তিবাহিনী। মহিউদ্দিন ছিলেন পলাতক। তখন তাঁর নাম ছিল মাহি। সদ্য কৈশোর পেরোনো এক তরুণ।
যাই হোক, মহিউদ্দিন সাহেব সদানন্দপুর প্রাইমারি স্কুলে বিশাল পরিমাণ টাকা অনুদান দিয়েছেন। এত টাকা দিয়েছেন যে স্কুলের চেয়ারম্যান এত ব্যস্ততার মধ্যেও একটু পর পরই আপনমনে চমকে উঠছেন।
ব্যস্ততার তো কোনো কমতি নেই। মহিউদ্দিন সাহেব আসবেন। তিন-চারদিন থাকবেন। দুদিন পর ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। সেই উপলক্ষে সারা স্কুল জুড়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। গান, নাচ, আবৃত্তি, অভিনয়, উপস্থিত বক্তৃতা ইত্যাদি। ।অনুষ্ঠান শেষে সবার হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন এলাকার গর্ব মহিউদ্দিন পাটোয়ারী।
স্কুলের জন্য তিনি এত করছেন, তাঁর খেদমত তো ঠিকমতো করতে হবে। স্কুলের কয়েকজন টিচার অবশ্য প্রশ্ন তুলেছিলেন এরকম বিতর্কিত একটা লোককে এখানে আনা ঠিক হবে কিনা, যে লোক কিনা একাত্তরে ছিল রাজাকার। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব তাদেরকে ভালোমতো ধমকে দিয়েছেন। টাকার মধ্যে কোনো বিতর্কিত ব্যাপার নেই। রাজাকারের দেয়া টাকায় স্কুল চললে সেখান থেকে সবাই পাস করে রাজাকার হয়ে বেরোবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। একটা স্কুল চালাতে কত যে আর্থিক কষ্ট, সেটা তিনি জানেন।
যথাসময়ে তিনি এলেন। মহিউদ্দিন পাটোয়ারী। বিশাল কালো এক পাজেরো চেপে।
স্কুলের গেটে ছেলেমেয়েরা সবাই ফুল দিয়ে তাঁকে বরণ করল। ফুল ছিটানোর গ্রুপে ঐশীও একজন। সে এই স্কুলের ক্লাস ফাইভের ক্লাস ক্যাপ্টেন। মহিউদ্দিন গাড়ি থেকে নামার পর ঐশী দেখল, লোকটার চেহারা দুনিয়ার কুৎসিত। হাইটও এমন কিছু না, ঐশীর থেকে বড়জোর ইঞ্চিদুয়েক লম্বা। যেমন বেঁটে, তেমনই মোটা। গাড়ি থেকে নামার পর যখন দাঁত বের করে সবার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে হাসল, ঐশীর মনে হল কসাইয়ের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে একটা ক্ষুধার্ত হায়না আত্মতৃপ্তির হাসি হাসছে।
মহিউদ্দিন সারা স্কুল ঘুরে দেখলেন, তার আগে হেডমাস্টারের রুম থেকে পানির জগ নিয়ে স্কুলের গেটের কাছে হ্যাক থুঃ হ্যাক থুঃ করে মুখ ধুলেন। স্কুলের বাথরুম থেকে বের হয়ে মাঠের মধ্য দিয়ে হেডমাস্টারের রুম পর্যন্ত হেঁটে আসতে আসতে পুরোটা সময় পায়জামার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে এলেন। আরো নানান কীর্তি তিনি করতেন বোধহয়, কিন্তু চেয়ারম্যান স্যার তাড়া দিলেন। ওদিকে বুটের ডাল দিয়ে খাসির মাংস ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
ব্যাপারটি নিয়ে বেশ ঝামেলা হতে পারে ভেবেছিলেন অনেকে। তার রাজাকারি নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি কিংবা কোনো সংগঠনের প্রতিবাদ সমাবেশ। কিন্তু তেমন কিছু হল না। স্থানীয় পত্রিকা ফলাও করেই লিখল মহিউদ্দিনকে নিয়ে। কোনো সংগঠনও কিছু বলল না। মহিউদ্দিন সাহেব কাঁচা লোক না। মাটি খুঁড়ে বীজতলা তৈরি করে যেমন গাছের বীজ ছড়াতে হয়, তেমনি তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে টাকা ছিটিয়ে বীজতলা তৈরি করে এসেছেন!
শুধু ঝামেলাটা বাধল ২৬ মার্চে। সেই ঘটনার সাক্ষী ঐশী নিজেই।
চিত্রাঙ্কণের টিচার তিনজন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনবে, তারপর যে যার মতো করে ছবি আঁকবে। সেই আঁকা ছবির ওপর তিন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হবে।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দুজনই এলেন না। এলেন স্রেফ একজন। তাঁর নাম আজহার হোসেন। বয়স্ক মানুষ। ষাটের ওপরে বয়স, চুল যদিও ততটা পাকে নি। মুখে দাড়িগোঁফ নেই। খুব গম্ভীর মানুষ।
বাচ্চাদের ঘিরে তাঁর গল্প বলার আসর বসল। আজহার হোসেন ভারী গলায় বললেন, গল্প শুরু করার আগে বলে নিই। তোমাদের এখানে গল্প করার জন্য আরো দুইজন মুক্তিযোদ্ধার আসার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা আসেন নি রাগ করে। কারণ আজকের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে যিনি এসেছেন, তিনি একজন রাজাকার। রাজাকাররা উনিশশো একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে, অত্যাচার করেছে, মেয়েদেরকে অপমান করেছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাঙালি মারতে সবরকম সহায়তা দিয়েছে। সেই কারণে চিরকালই তারা আমাদের কাছ থেকে ঘৃণা ছাড়া আর কিছু পাবে না! ...অন্যরা না আসলেও আমি এসেছি, কারণ একটা রাজাকারের জন্য তোমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা জানবে না সেটা হতে পারে না!
আজহার হোসেন একটু থামলেন। তারপর বলতে শুরু করলেন মুক্তিযুদ্ধের কথা। কত নিরীহ মানুষ অকারণে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা গেল। তিনি নিজের চোখেই দেখেছেন কত লাশের দৃশ্য।
গুলি করার সময় কোলের শিশুটিকে মা জড়িয়ে ধরে পিছ ফিরেছেন যেন বাচ্চার গায়ে গুলি না লাগে, কিন্তু বুলেট তাঁর শরীর ভেদ করে গেছে দুজনকেই। পরম ভালোবাসায় দুটো শরীর পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে নিথর শুয়ে আছে। এক মুক্তিযোদ্ধার সাত মাসের মেয়েকে বুটের নিচে মাড়িয়ে মেরে ফেলল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, দেশ স্বাধীন করে এসে তার বাবা আর খুঁজে পেলেন না মেয়েকে, মৃত্যুর সময় তার পরনের জামাটাকেই বাবা সারাজীবন বয়ে নিয়ে বেড়ালেন বুকে করে...
আজহার হোসেনের গল্প যখন শেষ হল, তখন সবাই হাউমাউ করে কাঁদছে। মহিউদ্দিন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে বাচ্চাদের কথা বলা হচ্ছে শুনে চেয়ারম্যান সাহেব পড়িমড়ি করে ছুটে এসেছিলেন, এখন তিনিও এক পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছেন।
আজহার হোসেন গল্প শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর চোখ দুটো টকটকে লাল। ক্লান্ত গলায় তিনি বললেন, চলি!

৩.
আজহার হোসেন চোখ কপালে তুলে বললেন, তুমি আমার ঠিকানা পেলে কোথায়?
ঐশী হাসল, আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমার বয়স দশ। এইটুকু গোয়েন্দাগিরি আমার জন্য কোনো ব্যাপার না!
আজহার হোসেন হাসলেন হো হো করে। তারপর গম্ভীর হয়ে বললেন, আমার কাছে কী চাও?
ঐশীও গম্ভীর হয়ে বলল, আমাদের প্রতিবাদ করা উচিত!
কোনটার—ও!
আজহার হোসেন একটু চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, প্রতিবাদ করার মতো অবস্থা কি আছে? মাহি রাজাকার তো পয়সা দিয়ে সবাইকে কিনে রেখেছে! তোমরা বাচ্চারা বরং সবাই মিলে প্রতিবাদ কর। একমাত্র বাচ্চাদেরকেই এখনো পয়সা দিয়ে কেনা যায় না!
ঐশী বলল, আমরা প্রতিবাদ করেছি অলরেডি। আপনার গল্পের পর্ব শেষ হবার পর সেদিন প্রত্যেকটা বাচ্চাই মুক্তিযুদ্ধের ছবি এঁকেছে রাজাকার মহিউদ্দিনকে নিয়ে। মহিউদ্দিনের রাক্ষসের মতো দাঁত, কুলোর মতো কান, মাথায় রামছাগলের মতো বড় বড় শিং, হাতে রক্তের দাগ, সব মিলিয়ে এক বীভৎস অবস্থা! চেয়ারম্যান স্যারের তো মাথা খারাপ অবস্থা! আমাদের ড্রয়িংয়ের টিচারকে অনেক বকাবকি করলেন! যাই হোক, এবার আপনাদের, মানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ জানাবার পালা!
আজহার হোসেন খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ঠিক আছে, দেখি! তবে কিছু করতে হলে সবাই মিলে করাটাই ভালো!

৪.
ঐশী আর তার বাবা যে খবর পড়তে পড়তে হাসছিলেন, সেটা এরকম।

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ

স্কুলের শিশুকিশোরদের ক্ষোভ ও ধাওয়ার মুখোমুখি হয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মহিউদ্দিন পাটোয়ারী। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী, মাইজ্যা পাড়ার যে বাড়িতে পাটোয়ারী অবস্থান করছিলেন, গত শনিবার বিকেল চারটার দিকে ‘রাজাকার, বাংলা ছাড়!’ স্লোগান দিতে দিতে তিন মুক্তিযোদ্ধা আজহার হোসেন, কামাল খান ও ফিরোজ জামাল চৌধুরী উপস্থিত হন সেই বাড়ির সামনে। তাঁদেরকে অনুসরণ করে পেছনে আসে প্রায় দুই শতাধিক স্কুলের ছাত্রছাত্রী। বাড়ির মালিক জানান, সে সময় মহিউদ্দিন ঘুমোচ্ছিলেন।
স্লোগান দিতে দিতে ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি ঘিরে ধরলে তিনি খালি গায়ে লুঙ্গি পরা অপ্রস্তুত অবস্থায় দেয়াল টপকে পালাবার চেষ্টা করেন। ছাত্রছাত্রীদের ধাওয়ার মুখে তিনি মাইজ্যাপাড়ার পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে আর খুঁজে না পেলেও পরবর্তিতে একটা কাঁটাঝোপে আটকানো অবস্থায় তাঁর সবুজ সাদা ডোরাকাটা লুঙ্গিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
সদানন্দপুর থানার ওসি জানান, এ বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। এদিকে এই ঘটনা বিভিন্ন মহলে জন্ম দিয়েছে নানাবিধ তর্কবিতর্কের... ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরপরে আরেকটি পত্রিকার ভেতরের দিকের খবর।

রোহিতপুরে ভূতের আবির্ভাব

সদানন্দপুরের পাশ্ববর্তী গ্রাম রোহিতপুরের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ভূত আছে বলে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস করে আসছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এবার পাওয়া গেল তার হাতেনাতে প্রমাণ। গত শনিবার সন্ধ্যায় হালিম তরফদার (২৮) নামক এক তরুণ বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সেই কথিত ভৌতিক বাড়ির পাশ দিয়ে আসার সময় এক ন্যাংটো ভূত তাকে ধাওয়া করে। হালিম তার হাতে ধরা ইলিশ মাছের দিকে ভূতের নজর বুঝতে পেরে সে দুটো ভূতের দিকে ছুঁড়ে মারে। কিন্তু ভূত তাতে নিবৃত্ত না হয়ে তাকে তাড়া করতেই থাকে। এ সময় ভূতটি নাকি ‘লুঙ্গি! লুঙ্গি’ বলে চেঁচাচ্ছিল। হালিম কোনোক্রমে তার বাড়িতে পালিয়ে ফিরে আসে।
ভূতেরা সাধারণত মাছ চেয়ে থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রমী এই লুঙ্গিভূত জনমনে ব্যাপক ভীতি ও আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হালিম তরফদার ঢাকার একজন ডিম ব্যবসায়ী। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় ‘প্রোটিন হাউস’ নামে তার একটি ডিমের দোকান আছে। রোহিতপুরে সে ফুপুর বাসায় বেড়াতে এসেছিল।

(গল্পটি এবার ভোরের কাগজ-এর ইষ্টিকুটুম পাতার স্বাধীনতা দিবস সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল)


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

সব রাজাকারগুলোকে লুঙ্গি-ভূত বানানো দরকার :D

---------------------
শান্ত নদী

পুতুল এর ছবি

আশা করি সব ুদির পুতেরা এখন লুঙ্গী খুলে দেবে ছুট। কিন্তু পালাতে যেনো না পারে। মজার গল্প হইসে বস।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নাশতারান এর ছবি


একমাত্র বাচ্চাদেরকেই এখনো পয়সা দিয়ে কেনা যায় না!

(চলুক)

শিশুদের কখনো কেনা যায় না। কিন্তু ঘুম পাড়িয়ে রাখা যায়। তাই গোড়া থেকেই তাদের জাগিয়ে তোলা জরুরি।


মহিউদ্দিন পাটোয়ারী কুৎসিত, বেঁটে, মোটা না হয়ে দুর্দান্ত সুদর্শন হলেও ক্ষতি ছিলো না। অপরিশীলিত রুচির মানুষ না হয়ে সে নিপাট ভদ্রলোকও হতে পারত। গল্পের খল চরিত্র মাত্রই কুৎসিত, নোংরা হবে এ ধারণাটা শৈশব থেকে আমাদের মাথায় গেঁথে যায় ভয়ালদর্শন সব রাক্ষস-খোক্কসের গল্প পড়ে। অথচ আমাদের চারপাশে মুখোশ পরা দানবের সংখ্যাই কিন্তু বেশি।


সবুজ সাদা ডোরাকাটা লুঙ্গি কখনো দেখি নি। যদিও এটা প্রতীকী তবুও একটু মোটা দাগে আঁকা মনে হয়েছে। মহিউদ্দিন পাটোয়ারীরা তো আজকাল পারলে লাল-সবুজ লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়ায়।


লেখাটা আগেই মুদ্রিত মাধ্যমে প্রকাশিত। একটা আনকোরা নতুন গল্প চাই।

▀ ▄

b

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আরে সব্বোনাশ! কী নিখাঁদ সমালোচক রে বাবা!
১.
ঠিক বলেছেন, শিশুদের কখনোই পয়সা দিয়ে কেনা যায় না, তবে ১২ টাকা দিয়ে এ প্যাকেট চিপস কিনে দিলে কিন্তু অনেক সময় ব্যাপক পরিমাণ সমর্থন পাওয়া যায়।
রসিকতা করলাম। তবে এটা সত্য, আমাদের দেশে টোকাইরা দশ টাকার বিনিময়ে অথবা মাগনা মিছিলের পেছনে মানবশক্তি যোগ করে। তবে তারা বিক্রি হয় না। মাথা বেচে না নেতার কাছে। যেটা করে মিছিলে আসা আমাদের মতো বড় মানুষেরা।
২.
মুখোশপরা শয়তানেরা নতুন এডিশন। আজহার হোসেনের সময়কার রাজাকারেরা সবকয়টা কুৎসিত। বিশ্বাস না হলে মিলিয়ে দেখতে পারেন।
৩.
হা হা হা। আমি আসলে কোনো প্রতীকি লুঙ্গি দেই নি এখানে। রঙটা না ভেবেই একটানে লিখেছি। কিন্তু সবুজ সাদা ডোরাকাটা লুঙ্গি কখনো দেখি নি কথাটা দেখে মজা লাগল। আচ্ছা দেখি, এরকম কোনো চেক কোথাও দেখতে পেলে জানাব।
৪.
আচ্ছা।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

গল্পটা ভাল লাগল।

হরফ এর ছবি

বাঃ। ইচ্ছা পূরনের গল্প আমার বেশ লাগে। এমন কেন সত্যি হয় না আহা!! না জেনেই কমেন্ট করলাম, এই গল্পটা কি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা?
---------------------------------------------
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"

ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- রোহিতপুরী লুঙ্গি, গুণে ও মানে সেরা। ভূতদেরও পছন্দ! লজ্জা ঢাকতে রাজাকারদেরও। :)
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মূলত পাঠক এর ছবি

আরেব্বাস, দারুণ তো!অফিসে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে ফেললাম, ভারি চমৎকার!

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

আরো আসুক এ ধরণের লেখা বেশি বেশি ঐশী বা তার বন্ধুদের জন্য (Y)

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

ওঃ! সচলের একদম নতুন নীতিমালা অনুযায়ী মুদ্রিত মাধ্যমে ছাপা হওয়া লেখা দেয়া যাবে না সচলে। এটা জানলাম লেখাটা পোস্ট করার পরে। লেখাটা ঘ্যাচাং করে দিতাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখা, তাই করলাম না। আরেকটা কারণ হচ্ছে, শামুকের চেয়েও হ্রস্বগতির নেট কানেকশনে অনেক কষ্টে লেখাটা পোস্ট করেছি। হা হা।
নীতিমালা লঙ্ঘনের জন্য দুঃখিত।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সাফি এর ছবি

দারুন লাগলো মৃদুল ভাই। হাসতে হাসতে শেষ

হিমু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

মৃদুল ভাই,

ছোটরা বোধ করি এ ধরণের গল্পগুলো থেকেই বেশী শেখে।

শুধু ব্লগ না, সব মাধ্যমেই তাই এ ধাঁচের লেখা ছড়িয়ে দেয়া খুব জরুরী।

লিখতে থাকুন ঐশীকে নিয়ে।

মর্ম

নৈষাদ এর ছবি

বাহ্‌। চমৎকার লাগল।

মনামী এর ছবি

ঐশিরা এভাবেই রাজাকারদের কাছা খুলে দিক আর আমরা আমাদের শীতঘুম থেকে অবশেষে জেগে উঠে চাক্ষুষ করি প্রতিদিন কিভাবে ধর্ষিত হচ্ছে আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব এবং হাতে তুলে নেই প্রতিবাদের ঢিল । আমিন।

বাউলিয়ানা এর ছবি

ভূতেরা সাধারণত মাছ চেয়ে থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রমী এই লুঙ্গিভূত জনমনে ব্যাপক ভীতি ও আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে।

হা হা হা...জটিল গল্প!

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বাহ, চমৎকার একটা বাবুতোষ গল্প পড়ে বাচ্চাদের মতই মজা পেলাম।

_________________________________________

সেরিওজা

বইখাতা এর ছবি

মজার গল্প। ভালো লেগেছে। ছোটদের জন্য এরকম মজার আবার সাথে সাথে সচেতনতা তৈরী করে এমন গল্প খুব দরকার। আরো লিখুন এমন গল্প, শুধু ব্লগে না, প্রিন্ট মিডিয়াতেও।

বোহেমিয়ান এর ছবি

চমৎকার গল্প । ভালু পাইলাম ।

_________________________________________
বোহেমিয়ান কথকতা

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

শরতশিশির এর ছবি

এই গল্পটা ছাপানো হয়ে গেছে তো, না? এরকম রূপক ব্যবহার করে আরও গল্প লেখে সমানে পত্রিকায় ছাপাতে থাকুন। দরকার আছে অনেক। সাথে ইংরেজিতে হলে ভাল হতো, তাহলে যারা শুধু 'দ্য ডেইলি স্টার' বা এরকম পত্রিকা পরে, তারাও অনুভব করতে পারতো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।