(মনমাঝিকে ধন্যবাদ, তাঁর ভূতাণুগল্প আমাকে বেশ ভাবিয়েছে এবং একটু করিৎকর্মা করে তুলেছে। তবে ভাবতে গিয়ে আর লাইনে থাকতে পারলুম না। মনের ভেতরে যে মন-মাঝি আছে, সে ব্যাটা ঠপাস ঠপাস বৈঠা মেরে নৌকা অন্যদিকে নিয়ে গেল। লিখে ফেললাম কটা ভূতাণুরঙ্গল্প। মানে সিরিকাস ভূতের গল্পের প্ল্যাটফরম থেকে আলটপকা রসিকতায় এসে পড়া আর কি!
বিশিষ্ট ফটোগফুর রোয়েনা রাসনাতকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। তার সাথে লম্বা আড্ডার ফাঁকেই এই আইডিয়াটা ভূতের মতো গাছ থেকে লাফ দিয়ে এসে ঘাড়ে পড়েছিল!
দেখুন দেখি কেমন লাগে ভূতাণুরঙ্গল্প!)
১.
সারারাত অদ্ভুত সব আধিভৌতিক স্বপ্ন দেখেছে লোকটা, ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে আরো ভৌতিক ব্যাপার, গায়ের জামাকাপড় ভিজে জবজবে... এই শীতের ভোরে তার গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছে কে?
ঐ সময় খাণ্ডারনি বউয়ের গলা ভেসে এল, বদ ব্যাডা তুমি আইজকা আবারো বিছানায় মুতছো?
২.
গভীর রাতে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল, সারা ঘরে ফিসফিস করে কাদের কথা যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে, চাপা হাসির আওয়াজ কান পাতলে শোনা যায়। সাহস করে খাটের নিচে টর্চ মেরেই শিউরে উঠলাম, বললাম, ছিঃ আবদুল, বাড়িঅলির কাজের মেয়ের সাথে তুই আবারো...?
৩.
ক্রমশই এগিয়ে আসছিল বীভৎস মুখটা, চোখে ক্রুর দৃষ্টি, মুখে হায়েনার মতো হাসি, ঝকঝকে ধারালো দাঁতের ভেতর থেকে কুৎসিত জিভটা বেরিয়ে আসছে একটু পর পর।
আরো কাছে আসতেই একটা বোঁটকা গন্ধ পেলাম আমি, মুখ কুঁচকে একটা লাথি কষালাম ক্যাঁত করে, বললাম, যাঃ কুত্তা ভাগ...!
৪.
বন্ধুর বাড়িতে রাতে ঘুমিয়েছিলাম--যে কুখ্যাত বাড়িতে একাত্তরের সময় অনেকে মারা পড়েছিল, যেখানে আজও অনেকে দেখে বিচিত্র সব ভয়াল জিনিস।
ভোররাতে ঘুম ভাঙ্গতেই ভয়ে কাঁপতে লাগলাম, কারণ সারা ঘরে ভারী পা টেনে টেনে হাঁটার শব্দ... পাশ থেকে বন্ধু মুখ বিড়বিড় করে কী একটা গালি দিয়ে বলল, এই এক জ্বালা... বাড়িঅলার বাচ্চা, পায়ে গোদ নিয়া তোর ডেইলি ডেইলি ছাদে উইঠা মর্নিংওয়াকের দরকার কী?
৫. গভীর রাতে কুয়াশাঢাকা গ্রামের রাস্তায় হারিকেন জ্বালানো রিকশায় একা একা যাচ্ছি, সামনে টর্চ মেরে আপনা থেকেই একটা অস্ফূট চিৎকার করে উঠলাম--সার্টের বাইরে রিকশাঅলার দুই হাত পশুর মতো ঘন লোমে ঢাকা।
দৌড়ে পালাব ভাবছি, রিকশাঅলা উদাস গলায় বলল, গত মাসে এক ফরিনার সাব হাতমোজা দুইটা দিয়া গেছে, সুন্দর না সার?
৬.
গত আড়াইশো বছর ধরে এই বাড়িতে অনেক মানুষকে ভয় দেখিয়েছি আমি--কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলে, বদ্ধ ঘরে হঠাৎ বাতাসের ঝাপটা দিয়ে, রাতের অন্ধকারে লম্বা ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে... কিন্তু গত সপ্তাহে আসা নতুন ছেলেটাকে কিছুতেই ভয় দেখাতে পারলাম না--কিছুতেই না!
আজকেও অন্ধকারে তার কাঁধে অনেকক্ষণ হিমশীতল নিঃশ্বাস ফেলার পরও দেখি বিকার নেই, হারামজাদা ল্যাপটপে ফেসবুক ঘেঁটেই যাচ্ছে!
৭.
ডাকবাংলোতে মাঝরাতে দেখি বিছানার পাশে প্রায় আট ফুট লম্বা একটা মানুষ দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে! চেঁচিয়ে উঠতেই লাইট জ্বলে উঠল, টুলের ওপর থেকে নামতে নামতে কেয়ারটেকার বাচ্চু নির্বিকার গলায় বলল, মশারির দড়িটা ছুইটা গেছিল...
৮.
আমার এক বান্ধবীর জামাই ভীষণ ভয় পেয়েছিল একবার, অফিস থেকে আগে আগে ফিরে ড্রিংক করবে বলে ফ্রিজ খুলতেই ভেতর থেকে মৃত্যু হিমশীতল ধবধবে সাদা দুটো হাত তাকে চেপে ধরে!
হাত দুটোর পিছনেই ছিলাম আমি, চিঁচিঁ করে বললাম, ভাই মাফ করে দ্যান, আপনার আক্কেলমন্দ বউয়ের সাথে আর প্রেম করতে আসব না... ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিয়ে একটা ঘণ্টা কোনো পাত্তা নেই!
৯.
গতরাতে তিনতলার জানলা দিয়ে তাকিয়ে ভয়ে বুক কেঁপে উঠল... গাছের ডালে বসে জুলজুল করে আমার তাকিয়ে আছে একটা মানুষের মূর্তি, চিৎকার করে ওঠার আগেই মূর্তিটা কথা বলে উঠল, দেখেন ভাই বান্দর পোলাটার কাণ্ড, দামি সেলফোনটা জানলা দিয়ে ফালায়া দিছে--আল্লা বাঁচাইছে যে গাছের ডালে আটকায়া আছে!
তাকিয়ে দেখি পাঁচতলার শাফকাত সাহেব!
১০.
ধুপ... ধুপ... ধুপ... শব্দটা হয়েই চলছে আর রোমকণ্টকিত শরীরে আমার মনে পড়ছে এই বাড়ি লাশকাটা ঘর ছিল, কোনো এক ম্যানিয়াক ডোম নাকি চাপাতি দিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করত মানুষের দেহ... ধুপ... ধুপ... ধুপ... ঠিক এরকমই আওয়াজ হত কি?
ভাবতে ভাবতেই শব্দটা আচমকা থেমে গেল, একসাথে দুটো নারী ও পুরুষকণ্ঠের চাপা আর্তনাদ ও তারপর হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম আর তখন মনে পড়ল পাশের রুমে স্প্যানিশ ছেলেটা কালকেই বিয়ে করেছে!
আপাতত এই দশটাই। মন-মাঝি তোর বৈঠা নে রে। আমি আর বাইতে পারলাম না... সবার ভালো লাগলে পরে আবার লিখব!
মন্তব্য
চমৎকার লাগলো!
এই ভুতাণুগল্পগুলো দিয়ে যে রসিকতাও করা যায়, আপনার এগুলো না পড়লে জানতে পারতাম না।
ডিসেমম্বরের শুরু থেকে ভুতের উপদ্রব অনেক বেড়েছে সচলে।
শুভেচ্ছা
হা হা! কী করবেন বলেন! মানুষের মন তো ভালো রাখতে হবে! তাই ভূতের গল্প নিয়ে পড়েছে সবাই! মানুষের অত্যাচারে এখন ভূতই একমাত্র ভরসা!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
মুভেম্বরের মতো ভূতেম্বর শুরু করে দিলেন দেখি।
ভূল ভূষ্কানিটা তো আপনিই দিছিলেন! এখন সর্ষে থেকে বের হয়ে নিজে একটা 'ভূতাণুমাঞ্চ' বা ' ভূতাণুমান্টিক' লিখে ফেলেন দেখি।
****************************************
ভাগ্যিস ভূত হয়ে ঘাড়ে চেপে ছিলাম। নাইলে এমন ভয়ংকর ভূতের গল্প পড়ার সুযোগই হতো না, আতঙ্কে হাত-পা
- শ্রাবস্তী
৭ নাম্বারটা ক্লাসিক!
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
দারুণ উস্তাদ, এই মাল চলতেই হপে! তবে অডিও ব্লগ ও জমবে এ বিষয়ে।
১। ২। ৩। ৪। ৬। ৭। ৮। এই গল্পের কাছাকাছি একটা কৌতুক আছে শুনা।তাই আর ভালোলাগেনি। ৯। ১০।
মাসুদ সজীব
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
চলুক ভূতের অনুগল্প!!
ভাল লাগলো। এইরকম আরো লেখেন দাদা। আমরা পড়ি। তবে আপনার ছড়া গুলো লাজওয়াব।
দারুন হয়েছে।
****************************************
দারুণ।
চলুক।
শুভেচ্ছা, মৃদুল আহমেদ।
-------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
আপনার গল্পগুলির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এরা বাস্তব (৬ বাদে)। কাজেই পড়তে গিয়ে ভ্রূ কুঁচকাতে হয় না। চমৎকার লেগেছে
ভাল্লাগছে
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সবাইকে ধন্যবাদ। এরকম আরো কিছু দেয়ার চেষ্টা করব অচিরেই। একটা সময়োপযোগী পোস্ট দিচ্ছি। তাই আপাতত এই পোস্টটাকে নীড়পাতা থেকে সরিয়ে আমার ব্লগেই শুধু রাখছি।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
আমারে ভূত ভয় পায়।।
আপনার কাছে অচিরের সংজ্ঞা জানতে চাই মৃদুল আহমেদ।
----মোখলেস হোসেন
দাদুর ওজুর বদনাটা লাফাতে শুরু করলো। ভয়ে স্তব্ধ। বদনা গড়িয়ে পড়লো। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা কোলা ব্যাঙ।
চেষ্টা করলাম। বাতাসের প্রভাবে-
নতুন মন্তব্য করুন