টেকনোরাটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ব্লগ সার্চ ইঞ্জিন। ব্লগ সন্ধানের ব্যাপারে গুগলের সাথে অনায়াসে প্রতিযোগিতা করতে পারে এটি। নিজেদের তালিকায় থাকা ৪ কোটি ৬৭ লাখ ব্লগের মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সেরা ৩,৫০০ ব্লগের নাম পদক্রম সহ প্রকাশ করেছে তারা। এই বিশাল তালিকায় বিজ্ঞানীরা লিখেন এমন ব্লগের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫টি। আর এই পাঁচটি ব্লগের একটি হল কসমিক ভ্যারিয়েন্স ব্লগ। ব্লগটিতে গেলে যে কেউ বুঝতে পারবেন সেখানকার সবচেয়ে নিয়মিত লেখক হলেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ভৌত বিশ্বতত্ত্বের অধ্যাপক শন ক্যারল। প্রতিদিনই ক্যারলের ব্লগ পাওয়া যায় সেখানে, আর কোন কোন দিন একাধিক ব্লগও পোস্ট করেন। আসলে শন ক্যারল কসমিক ভ্যারিয়েন্সের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা। আর হুট করেই জন্ম হয়নি এর। ২০০৪ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি শন ক্যারল ব্লগ লেখা শুরু করেন, ব্লগস্পটে একটি সাধারণ ব্লগ তৈরীর মাধ্যমে। সেই ব্লগটার নাম ছিল প্রিপোস্টারাস ইউনিভার্স অর্থাৎ উদ্ভট মহাবিশ্ব। তাই ২০০৮ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি ছিল প্রিপোস্টারাসের চার বছর পূর্তি এবং একই সাথে প্রথম জয়ন্তী। কারণ লিপ ইয়ারগত বৈজ্ঞানিক জটিলতার কারণে এর আগে কখনও দিবসটি পালনের সুযোগ পান নি ক্যারল। এবার বেশ ঘটা করেই এই বিশেষ দিনটি নিয়ে লিখেছেন কসমিক ভ্যারিয়েন্সে। এটাই এখন তার মুখ্য ব্লগ।
২৯শে ফেব্রুয়ারিতে শন ক্যারল তার জীবনের দুইটি বিশেষ কথা জানালেন আমাদেরকে। দুটি কথাই ব্লগ জগতে তার পদার্পণের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। চার বছর আগের সেই দিনে ফিরে গেলে উদ্ভট ব্লগটিতে কেবল একটি লেখাই চোখে পড়তো। লেখাটি ছিল প্রিপোস্টারাস ইউনিভার্সের আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধনের স্বাগতম বার্তা। সেই বার্তা আমাদেরকে জানিয়ে দেয় গভীর সম্পর্কটির অনেক কিছুই। বিজ্ঞান কেবল বিজ্ঞানের জন্য নয়। বিজ্ঞান সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগটাই এমন যে, বিজ্ঞানের অগ্রগতি দিয়ে সামাজিক প্রগতিকে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু, বিজ্ঞানের জন্য যে বিজ্ঞান তাকে দিয়ে কি প্রগতিটা মাপা ঠিক হবে, না কখনও ঠিক হবে না। কারণ যে বিজ্ঞান মানুষকে বিবর্তনের ফসল এক মহাজাগতিক বস্তু ছাড়া অন্য কিছু মনে করে না সেই বিজ্ঞান যদি তার মূল্যবোধ আর আবেগকে আবিষ্কার করতে না পারে তবে প্রগতিটা মানব সমাজের হবে না, হবে স্থান-কালের। তাই বিজ্ঞানের সাথে সমাজ ও রাজনীতির সম্পর্কের কথা চিন্তা করেই ব্লগিং শুরু করেন ক্যারল। ২০০৪ সালে একবার মহাকাশ দুরবিন মেরামতের কাজ বন্ধ করে দেয়ার কথা উঠেছিল রাজনৈতিক কারণে। তখনই নিজের মতামত প্রকাশে সোচ্চার হয়ে উঠেন তিনি। এভাবেই উদ্ভট মহাবিশ্বে এক উদ্ভট মহাজাগতিক বস্তুর উদ্ভট আলাপের সূচনা।
এবার সেই বিশেষ কথা দুটি ফাঁস করা যাক। প্রথমেই বললেন, ব্লগ আমার জীবনের দশ পার্সেন্ট। উদ্ভট মহাবিশ্বের প্রথম ব্লগিভার্সারিতে লেখা তার ব্লগের শিরোনামটাই ছিল "টেন পার্সেন্ট অফ মাই লাইফ"। আমার কথাটাই আমি বলতে পারি। সারা দিন আমার কোন কাজ নেই। এক সময় বুঝতে শুরু করলাম, এভাবে থাকলে জীবনে কিছুই হবে না। এমনিতেও তো কিছু করতে পারব না, তাই কিছু ছাপ রেখে যাই পৃথিবীতে। আমি বিশ্বাস করি, স্থান-কালের জটিল বুনট থেকে কোন দিনই হারিয়ে যাবো না আমি। তবুও বাস্তব জগতের তাগিদে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে ভীত থাকি। তাই অপরিপক্ক হাতে লিখি ফালতু সব লেখা। ক্যারলের জীবনটা নিশ্চয়ই সেরকম নয়। বিজ্ঞান তাকে মেনে নিতে হয় না, তাকেই মেনে নেয় বিজ্ঞান। তিনি আবিষ্কৃত হন না, করেন আবিষ্কার। মানব সমাজ তার জীবন থেকে দশ পার্সেন্টের বেশী আশাও করতে পারে না। একবার শুধু মহাজগতের সাথে মানব সভ্যতার তুলনা করে দেখুন। এখন পর্যন্ত মানব সভ্যতার গুরুত্ব হয়তো দশ পার্সেন্ট আছে, কিন্তু সম্ভাব্যতার কথা তুললে মহাজগতের তুলনায় মানব সভ্যতার আপেক্ষিক গুরুত্ব কিন্তু শূন্যের কাছাকাছি চলে যাবে। বিজ্ঞান কি কোন বিজ্ঞানীকে এর থেকে বেশি সময় দিতে পারে? আমার মনে হয় না। সাধারণ আপেক্ষিকতা আর কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানকে একত্রিত করার যুগান্তকারী গবেষণায় যে কয়জন তরুণ বিজ্ঞানী কাজ করছেন তার মধ্যে ক্যারল একজন। আশা করা যায়, কয়েকজন বিজ্ঞানী মানবতাকে এটুকু সময় দিলে বিজ্ঞান শুধু স্থান-কালের নয়, বিশুদ্ধ মানবতারও চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে।
দ্বিতীয় কথাটা ছিল ক্যারলের চার বছরে লেখা প্রিয় ৭টি ব্লগ নিয়ে। ব্লগগুলো নিয়ে তিনি আসলে কিছু লিখেন নি। সেগুলো নিজেরাই নিজেদের কথা বলতে সক্ষম বলেই হয়তো। "হাউ ডিড দ্য ইউনিভার্স স্টার্ট" ব্লগটিও বোধহয় সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সেই সাথে "গড কনানড্রাম" আর "হ্যালুসিনেটরি নিউরোফিজিক্স" এর নাম করা যায়। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে "দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট ম্যাজিক" নামের ব্লগটি। আসলেই আমাদের ভেবে দেখা উচিত, কোন জাদু মন্ত্রের মাধ্যমে মহাবিশ্ব চালিত হচ্ছে না। বরং সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী কিছু নিয়ম মেনেই চলছে সবকিছু। একসময় যা বুঝতাম না তাকেই আমরা জাদু বা অলৌকিকতা দিয়ে ব্যাখ্যা করতাম। কিন্তু, সেই সব প্রশ্নের অধিকাংশেরই সমাধান হয়ে গেছে এখন। এই পরিপ্রেক্ষিতে শন ক্যারল বলেছেন, এমনটি ভাবার কোন যুক্তি নেই যে, নতুন নতুন প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা পাবো না। বরং ইতিহাসের আলোকে বলা যাবে, মানুষের জানার পরিধি বাড়তেই থাকবে। অপরদিকে, মহাবিশ্ব কিভাবে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে বলতে গিয়ে বারবারই শিশু মহাবিশ্ব আর স্ফীতিশীল মহাবিশ্বের কথায় ফিরে এসেছেন ক্যারল। স্পষ্টই বলেছেন, চিরায়ত সাধারণ আপেক্ষিকতা দিয়ে এর সমাধান সম্ভব না। কারণ মহা বিস্ফোরণ যে বিন্দু থেকে হয়েছিল তাকে এই তত্ত্ব অদ্বৈত বিন্দু তথা ব্যাখ্যাতীত অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করে। কোন তত্ত্বে অদ্বৈত বিন্দুর উপস্থিতি থাকা মানেই, তত্ত্বটি ভেঙে পড়ছে। তাই আধুনিক যুগে কোয়ান্টাম মহাকর্ষ এবং কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের উন্নতির উপর নির্ভর করছে চূড়ান্ত প্রশ্নগুলো। ক্যারলের গবেষণাও তা নিয়েই।
মহাবিশ্বের উদ্ভট জগতটাকে দেখতে হলে বর্তমানে হিস্টরি চ্যানেলের "দ্য ইউনিভার্স" সিরিজটা দেখার বিকল্প নেই। একমাস আগেই এই সিরিজের একটি পর্ব হয়েছে যার নাম ছিল "ডার্ক ম্যাটার"। গুপ্ত পদার্থ নিয়ে একটা চমৎকার প্রামাণ্য চিত্র। সিরিজটির প্রতিটি পর্বেই বেশ কিছু বিজ্ঞানী আলোচনা করেন এবং তাদের গবেষণার কথা বলেন। ডার্ক ম্যাটার পর্বটিতে অন্যান্যের মধ্যে শন ক্যারলও আলোচনা করেছেন। একটা খুব সুন্দর উদাহরণ এই পর্বটিতে দিয়েছেন তিনি, অন্ধকারে দূর থেকে ক্রিসমাস ট্রি দেখলে কেবল আলোগুলোই দেখতে পাওয়া যায়, যে কাঠামোর উপর আলোগুলো জ্বলছে তা কিন্তু দেখা যায় না। এই আলোগুলোই হল আমাদের দৃশ্যমান জগৎ, আর কাঠামোটা হল গুপ্ত পদার্থ ও শক্তি। কাঠামোটাই কিন্তু প্রধান। তাই কাঠামোটা দেখার মত যোগ্যতা অর্জন করা আমাদের জন্য আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। মানব সমাজকে এতটুকু যোগান দেয়ার জন্য শন ক্যারলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, সেই সাথে ব্লগিভার্সারিতে শুভ কামনা করতে পারি সবাই।
মন্তব্য
পাঠক পেয়ে যে যারপরনাই আনন্দিত হয়েছি, সন্দেহ নাই। কিন্তু, এখনও সন্দেহ আছে। কারণ, এই "রাপুখাপাং" শব্দের অর্থটা বুঝি নাই। অর্থটা নিশ্চয়ই বলবেন এবার!?
---------------------------------
মুহাম্মদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আমার মত মূর্খ লোক কী আর মন্তব্য করব?
শুধু পাঁচে পাঁচ দিলাম
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
কসমিক ভ্যারিয়েন্সের একটি বংলা করতে পেরেছি অবশেষে। আগামীকাল আমাদের "র্যান্ডম সিগনাল অ্যান্ড প্রসেসেস" কুইজ। সেখানকার সম্ভাব্যতা অংশটি পড়তে গিয়ে "ভ্যারিয়েন্স" শব্দটি পেলাম। ইন্টারমিডিয়েটের পরিসংখ্যান বই থেকে জানা গেলো এর বাংলা ভেদাংক।
তাই কসমিক ভ্যারিয়েন্সের বাংলা পরিভাষা করলাম: "মহাজাগতিক ভেদাংক"। কেমন লাগছে?
---------------------------------
মুহাম্মদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ভুদাই টাইপের লাগছে! কোনো সাজেশন চাইয়েন না, জানতে চাইলেন তাই বললাম। রাপু খাপাং হইছি আপনের লেখা পইড়া, মানে হইলো, পুরা পাংখা। এখন জোরে ঘুরুম?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভেদাংক শব্দটাই আসলেই কেমন কেমন জানি। তবে আপাতত তো আর কিছু করার নাই। দেখা যাক কি হয়।
রাপুখাপাং, এই অ্যানাগ্রামটা চরম হইছে কিন্তু।
অ্যানাগ্রামের একটা বাংলা বের করার চেষ্টা শুরু করেন।
---------------------------------
মুহাম্মদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ভেদাংক ছেড়ে আপনি সোজা ভ্যারিয়েন্স লেখেন, সেটাই ভাল হবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ভেদাংক টা খুবই বাজে হইসে। খালি ও কার সর্বস্ব একটা ওয়ার্ডই আগে মাথায় আসে
=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
নতুন মন্তব্য করুন