পৃথিবী ও চাঁদঃ মঙ্গল থেকে দেখা

শিক্ষানবিস এর ছবি
লিখেছেন শিক্ষানবিস (তারিখ: সোম, ১০/০৩/২০০৮ - ১১:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মঙ্গল থেকে দেখা পৃথিবী ও চাঁদমঙ্গল থেকে দেখা পৃথিবী ও চাঁদ
সম্পূর্ণ নীল এবং অপেক্ষাকৃত বড় গোলকটিই যে পৃথিবী তা বোধ করি কাউকে বলে দেয়ার দরকার নেই। পৃথিবীর সব থেকে কাছের জ্যোতিষ্কের নাম চাঁদ। সুতরাং ছোট্ট গোলকের মত সাদা সাদা বস্তুটি যে চাঁদ তাও বোঝা যাচ্ছে। অদ্ভুত সুন্দর এই সমাবেশটা সুদূর মঙ্গল থেকেও দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীটা যে অদ্বিতীয়, তার প্রমাণ যেকোন মহাজাগতিক ছবি থেকেই পাওয়া যায়। এরকম নীল রঙে মোড়ানো গোলক, দেখলেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়, কিছু একটা আছে সেখানে, হতবাক করে দেয়ার মত কিছু। পৃথিবীর এ ধরণের প্রথম বিস্ময়কর ছবিটি তুলেছিল ভয়েজার নভোযান, সৌর জগতের প্রান্তসীমায় দাড়িয়ে।

আর এবারের ছবিটা তোলা হয়েছে মঙ্গলের কক্ষপথ থেকে। Mars Reconnaissance Orbiter তথা এমআরও নামের নভোযানটি ২০০৬ সালের ১০ই মার্চ থেকে মঙ্গলকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই কৃত্রিম উপগ্রহটিতেই বসানো আছে অতি শক্তিশালী একটি ক্যামেরা, যার নাম হাইরাইজ (High Resolution Imaging Science Experiment - HiRISE)। হাইরাইজের মূল কাজ মঙ্গল পৃষ্ঠের ছবি তুলে বিজ্ঞানীদের গবেষণা কাজে সহায়তা করা। কিন্তু, মানুষ দূরদেশে গেলে সব সময়ই স্বদেশের কথা বেশী মনে করে। মানুষের সৃষ্টিও তাই মানুষের মাধ্যমে মনে রেখেছে স্বদেশের কথা। হাইরাইজ মঙ্গল থেকে পৃথিবীর ছবি তুলেছে। এই ছবিটি তোলা হয়েছে ২০০৭ সালের ৩রা অক্টোবরে। তখন মঙ্গল থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ছিল ১৪ কোটি ২০ লক্ষ কিলোমিটার। বুঝতেই পারছেন, মানুষের পক্ষে সেখান থেকে এভাবে পৃথিবী দেখা সম্ভব না। সেজন্য প্রয়োজন পড়বে মানুষের চোখের চেয়ে অনেকগুণ শক্তিশালী কোন চোখের। যেকোন ক্যামেরার ক্ষমতাই মানব চক্ষুর চেয়ে বেশী। আর হাইরাইজের ক্ষমতা যে কত তা তো এই ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

গ্যালিলিও নিজের বানানো দুরবিন দিয়ে প্রথম জ্যোতিষ্করাজি দেখা শুরু করেছিলেন। তারপর মাত্র ৫০০ বছরে মানুষের অগ্রগতি এতোটাই হল যে, মঙ্গল থেকে পৃথিবী দেখতে পাচ্ছে তারা। ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন, দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলরেখা দেখা যাচ্ছে এই ছবিতে। অবশ্য মেঘের আধিক্যের কারণে স্পষ্ট নয়।

ছবিটি দেখে কয়েকটি প্রশ্ন মনে আসতে পারে:

- পৃথিবী আর চাঁদের অর্ধেক করে দেখা যাচ্ছে কেন?
উঃ ছবিটা যখন তোলা হয়েছে তখন পৃথিবী চাঁদ উভয়েরই অর্ধেকের কম অংশ সূর্য থেকে সরাসরি আলো পাচ্ছিলো। মঙ্গল থেকে পৃথিবী যখন সূর্যের উল্টোদিকে থাকবে তখন পুরো পৃথিবীর ছবি তোলা সম্ভব হবে। কিন্তু দূরত্ব বাড়ার কারণে ছবির স্পষ্টতা তখন কমে আসবে।

- আকাশে কোন তারা দেখা যাচ্ছে না কেন?
উঃ ইউনিভার্স টুডে ব্লগে তিনটি সম্ভাব্য উত্তর দেয়া হয়েছে।
প্রথমত, এক্সপোজিউর। পৃথিবীকে স্পষ্ট করে আনার জন্য এক্সপোজিউর ঠিক করা হয়েছে। এ কারণে তারাগুলো উজ্জ্বলতায় হেরে গেছে পৃথিবীর কাছে।
দ্বিতীয়ত, ছবি তোলার সময় ক্যামেরার ভিউ পয়েন্ট ছিল মাত্র ১.১৪° × ০.১৮°, এতো কময় ক্ষেত্রের মাঝে কোন তারা না-ই থাকতে পারে।
তৃতীয়ত, নাসা তাদের অনেক ছবিতেই এডিটিং করে। যেমন, এই ছবিতে চাঁদকে উজ্জ্বলতর করা হয়েছে। স্পষ্ট দেখানোর জন্য তারাকে বাদ দেয়া হয়েছে হয়তো।

- পৃথিবী আসলেই এতো নীল দেখায়?
উঃ এক্ষেত্র কিছু বলার নাই। পৃথিবী আসলেই এতো নীল দেখায়। এডিটিং করে এক্ষেত্রে কিছু করা হয়নি। ভয়েজার যে ছবিটি তুলেছিল তা ছিল আরও সুন্দর।

একবার ভেবে দেখুন, ছবিতে দেখা এই পৃথিবীর বুকে আমরা দাপড়ে বেড়াচ্ছি; এই কাছের মঙ্গলে গেলেই যা এতোটা নগণ্য হয়ে পড়ে। টলেমির সেই কথার সত্যতা এখন হয়তো বুঝতে পারবেন। তিনি বলতেন:
জ্যোতির্বিজ্ঞান হল দেবতাদের বিজ্ঞান।

মানুষের এসব অভাবনীয় সাফল্য দেখে আবার অনেক মানুষই বিস্মিত হন না। এরাই হল, ঘড়যন্ত্রমূলক তত্ত্বের নির্মাতা। নিল আর্মস্ট্রং চাঁদে যায় নি, এটা যদি আপনি কখনও মনে আনেন, তাহলে আপনিও সে দলভুক্ত। সেসব কল্পকথার তত্ত্বের জন্ম দিতে যদি আপনি আগ্রহী হন তাহলে আপনার জন্য একটা টিপ্‌স দিয়ে দেই:
কালো পর্দার মধ্যে দুইটা গোলক আটকিয়ে ছবি তুলছে। তারপর একটু এডিটিং করছে আর কি। দেখতাছেন না, কালো পর্দাটা কেমন বাতাসে উড়তাছে।


মন্তব্য

আরণ্যক সৌরভ এর ছবি

কালো পর্দার মধ্যে দুইটা গোলক আটকিয়ে ছবি তুলছে। তারপর একটু এডিটিং করছে আর কি। দেখতাছেন না, কালো পর্দাটা কেমন বাতাসে উড়তাছে।

হাহ হা।
আমরা এখনো তেমন কিছুই জেনে উঠতে পারিনি এইসব দেবতাদের ব্যাপারস্যাপার।
ভাল্লাগলো।
চলুক।

রাতুল এর ছবি

চাদের ইস্যুটা কিন্তু একটু বিতর্কিতই। দেখুন এখানে

শিক্ষানবিস এর ছবি

চাঁদে যে মানুষ গিয়েছিলো এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহেরও অবকাশ নেই। চাঁদে মানুষ যাওয়ার বিপক্ষে কোন বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞানী সমাজ বা স্পেস এজেন্সি আজ পর্যন্ত যুক্তি দেয়নি। যত যুক্তি দিয়েছে সব ষড়যন্ত্রমূলক তাত্ত্বিকেরা যাদেরকে ইংরেজিতে কন্সপাইরেসি থিওরিস্ট বলা হয়। এদের কাজই কোন বিশাল ঘটনা ঘটলে তাকে কন্সপাইরেসি হিসেবে আখ্যায়িত করার ফন্দি বের করা।
পৃথিবীতে এমন কোন ঘটনা বোধহয় পাওয়া যাবে না যার পিছনে কোন ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব নেই। এই বেকার তাত্ত্বিকদের ব্যঙ্গ করার জন্যই আমি এই লেখাটির শেষ লাইনগুলো লিখেছি।

চাঁদের মাটিতে ছয়টি চান্দ্র মডিউল নেমেছে এবং চাঁদের মাটিতে হেটেছেন মোট ১২ জন নভোচারী।

---------------------------------
মুহাম্মদ

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইটাও দেখেন



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মহাবিশ্ব নিয়া কিছু চিন্তা করতে গেলেই নিজের ক্ষুদ্রতার অনুভূতি তৈরি হয়। এই ক্ষুদ্রতার অনুভূতিই নাকি মহাপুরুষের লক্ষণ। আমি মহাপুরুষ নই। তাই ক্ষুদ্রতার অনুভূতি নিয়ে বেশিক্ষণ বাঁচতে পারি না। ফিরে আসি নয় ফুট বাই নয় ফুট বদ্ধ ঘরে। এখানে আমাকে অনেক বড় মনে হয়।

ভালো লিখতেছেন। চলুক।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

শিক্ষানবিস এর ছবি

আপনার কথাগুলো খুব ভালো লাগলো। আমার অবশ্য নয় ফুট বাই নয় ফুট ঘরে নিজেকে আরও ছোট মনে হয়।

---------------------------------
মুহাম্মদ

রায়হান আবীর এর ছবি

চল চল চল
মুহাম্মদ বাই বস...
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

শিক্ষানবিস এর ছবি

আমি কিন্তু বস হওয়ার জন্য লেখতাছি না।

---------------------------------
মুহাম্মদ

পরিবর্তনশীল এর ছবি

যে বস তাকে সবখানে বস হয়ে যেতে হয়।
সচলায়তনেও সে বস হয়ে যায়।
চাঁদে গেলেও বস হয়ে যায়।
তাই...
ঊর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল
মুহাম্মদ বাই বেশি বস...
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।