আর্থার সি ক্লার্কের ভবিষ্যৎবাণী

শিক্ষানবিস এর ছবি
লিখেছেন শিক্ষানবিস (তারিখ: শনি, ২২/০৩/২০০৮ - ৫:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মূল প্রবন্ধ: একবিংশ শতাব্দীর ভবিষ্যৎবাণী - আর্থার সি ক্লার্ক

"অনেকে অনেক রকম দাবী করলেও ভবিষ্যৎবাণী আসলে কারও পক্ষেই করা সম্ভব না। এবং আমি সবসময়ই পয়গম্বর লেবেলটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি। পয়গম্বরের চেয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাদাতা লেবেলটি আমার অনেক বেশী পছন্দের।"
আমার লেখা নন-ফিকশনগুলোর মাধ্যমে কেবল সম্ভাব্য ভবিষ্যতের রূপরেখা প্রণয়নের চেষ্টা করেছি। তাছাড়া, অদূর ভবিষ্যতে এমন কোন উদ্ভাবনও ঘটে যেতে পারে যাকে এখন সম্পূর্ণ অমূলক মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা বলা তাই সহজ নয় মোটেই।
আগের কোন ভবিষ্যৎবাণী শুনলে কখনও ভীষণ হাস্যকর মনে হতে পারে, আবার কখনও মনে হতে পারে বিস্ময়কর। আইবিএম-এর চেয়ারম্যান ১৯৪৩ সালে বলেছিলেন, "বিশ্ব বাজারে খুব বেশী করে হলে পাঁচটি কম্পিউটারের চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে।"
অবশ্য টমাস ওয়াটসনের সমালোচনা করাটা আমার ঠিক হচ্ছে না। কারণ ১৯৭১ সালে প্রকাশিত "ট্রানজিট অফ আর্থ" বইয়ে আমি বলেছিলাম, ১৯৯৪ সালে মানুষ মঙ্গলে অবতরণ করবে। এখন তো মনে হচ্ছে ২০১০ সালেও তা সম্ভব না। আবার ১৯৫১ সালে প্রকাশিত "প্রিলিউড টু স্পেস" বইয়ে বলেছিলাম, ১৯৭৮ সালে মানুষ চাঁদে যাবে। নিল আর্মস্ট্রং আর বাজ অলড্রিন আরও ১০ বছর আগে চাঁদে গিয়ে আমাকে হারিয়ে দিয়েছিলেন।

তারপরও একটি কারণে গর্ব (অবশ্যই বিনয়ের সাথে) না করে পারি না। ১৯৪৫ সালে আমি যেখানে বলেছিলাম ঠিক সেখানেই বর্তমানে কৃত্রিম উপগ্রহগুলো ঘুরছে। অনেকে উপগ্রহের এই কক্ষপথকে "ক্লার্ক অর্বিট" বলেন, "জিওস্ট্যাটিক অর্বিট" বলাটা অপেক্ষাকৃত কঠিন বা এ ধরণের যে কারণেই হোক। আবার ১৯৯০ সালে আমার "দ্য ঘোস্ট ফ্রম দ্য গ্র্যান্ড ব্যাংক্‌স" উপন্যাসের "দ্য সেঞ্চুরি সিনড্রম" অধ্যায়ে মিলেনিয়াম বাগের কথা বলেছিলাম। বর্তমানে বহুল প্রচলিত মিলেনিয়াম বাগের ধারণা প্রযুক্তিগত লেখালেখির বাইরে সাধারণ সাহিত্যে প্রথম সেখানেই প্রকাশিত হয়েছিল। এই বাগের কারণ ও প্রতিকার উভয়টি নিয়েই সেখানে আলোচনা করেছিলাম।

এখানে আমি ঘটনার যে ধারাবাহিকতা বর্ণনা করবো তা নিয়ে আগেই কিছু বলে নেয়া দরকার। এখানে উল্লেখিত ঘটনার পরিকল্পনা ইতোমধ্যে করা হয়ে গেছে এবং সেগুলো যে তারিখে বাস্তবায়িত হবে সে তারিখটিই এখানে উল্লেখ করেছি। আবার বেশ কিছু ঘটনা আছে যেগুলো ঘটবে বলে মনে করছি, কিন্তু আমি কখনই চাই না সেগুলো ঘটুক। বেশ কিছু মজাদার ও অবশ্যম্ভাবী বিপর্যের কথা এড়িয়ে গেছি। কারণ ভবিষ্যৎ কথনটা আশাবাদী হলেই বেশী ভালো লাগে।

২১০০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর সবাই মিলিয়ে দেখবেন কি মিললো আর কি মিললো না:

২০০১ - ক্যাসিনি নভো সন্ধানী যান শনি গ্রহের বলয় ও উপগ্রহগুলোতে অভিযান শুরু করে। ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে উৎক্ষিপ্ত হয়ে এই যানটি ২০০০ সালের জুলাই মাসে শনি গ্রহে পৌঁছেছিল।
গ্যালিলিও সন্ধানী যান বৃহস্পতি ও তার উপগ্রহগুলোতে জরিপ কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসে এটি পাঠানো হয়েছিল।
ইউরোপার বরফাচ্ছাদিত মহাসাগরগুলোতে প্রাণের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দেয়।
২০০২ - নিম্ন তাপমাত্রায় নিউক্লীয় বিক্রিয়া ঘটিয়ে তা থেকে প্রথম বারের মত সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয় এবং সাথে সাথেই তা বাজারে আসে। এর ফলে জীবাশ্ম জ্বালানি যুগের অবসান ঘটে। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পালাবদলের সূচনা হয়।

২০০৩ - সব মোটর কোম্পানিকে পাঁচ বছরের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এর মধ্যে সব মোটরযানের জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন ব্যবস্থাকে নতুনটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
নাসার রোবট নভোযান মার্স সার্ভেয়ার উৎক্ষেপণ করা হয়।
২০০৪ - সাধারণ জনগণ কর্তৃক গৃহীত প্রথম মানব ক্লোন উৎপাদন।
২০০৫ - মার্স সার্ভেয়ার মঙ্গল থেকে প্রথম নমুনাটি পৃথিবীর উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করে।
২০০৬ - শেষ কয়লা খনিটিও বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৭ - হাবল মহাকাশ দুরবিনের উত্তরসূরি হিসেবে নাসার পরবর্তী মাহাকাশ দুরবিন উৎক্ষেপণ করা হয়।
২০০৮ - ২৬শে জুলাই চলচ্চিত্র পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিকের (যিনি ২০০১: আ স্পেস অডিসি মুভিটি পরিচালনা করেছেন) ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টের জন্য মরণোত্তর বিশেষ অস্কার প্রদান করা হয়।

২০০৯ - তৃতীয় বিশ্বের একটি শহর নিজ দেশে প্রস্তুতকৃত পারমাণবিক বোমার দুর্ঘটনামূলক বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। জাতিসংঘে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর বিশ্বব্যাপী নিউক্লীয় অস্ত্র নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
২০১০ - মহাকাশ শক্তি সংগ্রহ করার মাধ্যমে প্রথম কোয়ান্টাম জেনারেটর নির্মীত হয়। বহনযোগ্য পর্যায়ে চলে আসায় গৃহস্থালি থেকে শুরু করে সর্বত্র এটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে। কয়েক কিলোওয়াট থেকে অসীম পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম এই জেনারেটর। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যায়; গ্রিড ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় পাইলন যুগের সমাপ্তি ঘটে। ইলেকট্রনিক মনিটরিংয়ের কারণে সাধারণ অর্থে পৃথিবী থেকে পেশাদার ক্রিমিনাল বিলুপ্ত হয়ে যায়।
২০১১ - বৃহত্তম জীব সনাক্ত করা হয়: মারিয়ানা টেঞ্চে পাওয়া এই অক্টোপাসের দৈর্ঘ্য ৭৫ মিটার।
বিস্ময়কর কাকতাল। এ বছরেরই শেষ দিকে রোবোট প্রোব ইউরোপার (শনির উপগ্রহ) পুরু বরফের আস্তর খনন করে নতুন ধরণের বায়োটার সন্ধান পায়। এর আকার হয় মারিয়ানা টেঞ্চের অক্টোপাসের থেকেও বড়।

২০১২ - অ্যারোস্পেস-বিমান চালু হয়।
২০১৩ - বাকিংহাম প্যালেসের বিশেষ উৎকণ্ঠা সত্ত্বেও প্রিন্স হ্যারি রয়েল পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে মহাকাশে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে।
২০১৪ - হিল্টন অর্বিটার হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিশাল আকারের নভোখেয়াযানের যে ট্যাংকগুলোকে আগে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার কথা উঠেছিল সেগুলো দিয়েই শুরু হয় এ নির্মাণকাজ।
২০১৫ - কোয়ান্টাম জেনারেটরের একটি অবশ্যম্ভাবী উপজাত হল পারমাণবিক স্তরে পদার্থের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। এর ফলে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আলকেমির প্রাচীন স্বপ্নের তাৎপর্য বোঝা যায়। এই জেনারেটর জনপ্রিয় হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে তামা ও সীসার দাম স্বর্ণের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
২০১৬ - বর্তমানে অস্তিত্বশীল সব মুদ্রা বিলুপ্ত হয়। মেগাওয়াট-ঘন্টা হয়ে উঠে বিনিময়ের একমাত্র একক।
২০১৭ - ১৬ই ডিসেম্বর আর্থার সি ক্লার্কের ১০০তম জন্মদিনে তিনি হিল্টন অর্বিটারের প্রথম অতিথিদের একজন হিসেবে মহাকাশে যান।
২০১৮ - উত্তর মেরুর হিমমুকুটে (আইসক্যাপ) একটি বড় আকারের উল্কা আঘাত হানে। কোন জীবনহানি না ঘটলেও সৃষ্ট সুনামিতে গ্রিনল্যান্ড ও কানাডার উপকূলরেখা বরাবর বেশ কিছু অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক দিন ধরে আলোচিত "স্পেসগার্ড প্রকল্প" চালু হয়। এর কাজ মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে আগত ক্ষতিকর উল্কা, গ্রহাণু বা ধূমকেতুকে কক্ষচ্যুত করে অন্যদিকে পাঠিয়ে দেয়া।

২০২০ - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের সমপর্যায়ে চলে আসে। এখন থেকে পৃথিবীতে দুটি বুদ্ধিমান প্রজাতি বসবাস করছে। জৈব প্রজাতির বিবর্তন অনেক ধীর, কিন্তু অনেক দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে অন্য প্রজাতিটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিকটবর্তী তারার উদ্দেশ্যে প্রেরিত হচ্ছে বিভিন্ন মহাকাশ অভিযান।
২০২১ - মানুষ মঙ্গলে অবতরণ করে এবং বেশ কিছু অস্বস্তিকর চমকের সন্ধান পায়।
২০২৩ - কম্পিউটারের মাধ্যমে উৎপাদিত ডিএনএ থেকে ডাউনোসরের প্রতিরূপ ক্লোন করা হয়। ফ্লোরিডাতে "ট্রায়াসিক জু" গড়ে তোলে ডিজনি। প্রথম দিকে কিছু দুর্ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও একসময় পোষা কুকুরের জায়গা করে নেয় ছোট আকারের র‌্যাপ্টর।
২০২৪ - ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে আসা অবলোহিত সংকেত সনাক্ত করা হয়। এগুলো প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে থাকা কোন সভ্যতা থেকে প্রেরিত। কিন্তু এই সংকেতগুলোর মর্মোদ্ধারের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
২০২৫ - স্নায়ুবিজ্ঞানের ক্রমান্বয়িক অগ্রগতির মাধ্যমে মানুষের সকল চেতনা ও বোধের জৈবিক প্রক্রিয়া বোঝা সম্ভব হয়। চোখ, কান ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে বাইরে থেকে ইনপুট দেয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়। ফলস্বরূপ নির্মীত হয় ধাতব "ব্রেইনক্যাপ"। বিংশ শতাব্দীর "ওয়াকম্যান" ছিল এই ব্রেইনক্যাপের প্রাথমিক পর্যায়ের পূর্বসূরি। খুলির সাথে দৃঢ়ভাবে আটকে থাকা এই হেলমেটটি পরে যে কেউ সম্পূর্ণ অভিনব এক অভিজ্ঞতার জগতে চলে যেতে পারবেন। সেটা বাস্তব না কাল্পনিক বোঝার উপায় থাকবে না। একই সাথে তিনি অন্যের মনের সাথে একাত্ম হয়ে যেতে পারবেন।

২০৪০ - ন্যানো-প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে "ইউনিভার্সাল রেপ্লিকেটর" নির্মাণ সম্ভব হয়। যেকোন বস্তু, তা সে যত জটিলই হোক কেন, পুনর্নিমাণ করা সম্ভব হবে এর মাধ্যমে। বস্তুটি তৈরীর সকল কাঁচামাল আর তথ্য ম্যাট্রিক্স থাকলেই হল। ধূলি থেকেও হীরা বা সুস্বাদু খাবার তৈরী করা সম্ভব। এর ফলে কৃষি ও শিল্প কারখানার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসে, সেই সাথে ফুরিয়ে যায় মানুষের কাজ করার প্রয়োজনীয়তা। এর ফলে শিল্পকলা, বিনোদন ও শিক্ষার বিস্ফোরণ ঘটে। ইচ্ছাকৃতভাবে পুনরায় হান্টার-গ্যাদারিং সমাজ সৃষ্টি করা হয়। পৃথিবীর বিশাল অঞ্চল (যেখানে আগে কৃষিকাজ হতো) পতিত হয়ে যায়। এই পতিত জমিকে প্রাচীন বুনো অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
২০৪৫ - সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়, পুনরুৎপাদনে সক্ষম ও বহনযোগ্য বাড়ি নির্মাণ করা হয়। প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে বাকমিনস্টার ফুলার এমন বাড়ির ধারণা দিয়েছিলেন। খাবার সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন পরিবেশের কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে সংগ্রহ করা হয়।
২০৫০ - "ইউটোপিয়া থেকে পলায়ন"। এই নিরস ও শান্তিপূর্ণ জগতে থেকে বিরক্ত হয়ে উঠে মানুষ। লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্রায়োনিক সাসপেনশনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে অভিযান চালায়, অ্যাডভেঞ্চারের আশায়। অ্যান্টার্কিটাকা এবং চান্দ্র মেরুর চিরকাল অন্ধকারে থাকা অঞ্চলগুলোতে "হাইবারন্যাকুলাম" প্রতিষ্ঠিত হয়।

২০৫৭ - ৪ঠা অক্টোবর, স্পুটনিক ১ এর ১০০ বছর পূর্তি। মহাকাশ যুগের সূচনা উদ্‌যাপিত হয়; শুধু পৃথিবী নয়, চাঁদ, মঙ্গল, ইউরোপা, গ্যানিমেড, টাইটানের পৃষ্ঠে এবং শুক্র, নেপচুন ও প্লুটোর কক্ষপথে থাকা সব মানুষ একসাথে উদ্‌যাপন করে এই অনন্যসাধারণ দিনটি।
২০৬১ - হ্যালির ধূমকেতু ফিরে আসে। প্রথমবারের মত ধূমকেতুর নিউক্লিয়াসে অবতরণ করে মানুষ। প্রভাবশালী ও সক্রিয় জীবনের অস্তিত্ব পাওয়ার পর প্রমাণিত হয় যে, মহাবিশ্বের সর্বত্র সমভাবে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে। হয়েলবিক্রমাসিংহে প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে এই তত্ত্বটি দাড়া করিয়েছিলেন।

২০৯০ - বায়ু থেকে উত্তোলিত কার্বন ডাই অক্সাইডকে প্রতিস্থাপিত করার জন্য আবার বিশাল পরিমাণে জীবাশ্ম-জ্বালানি পোড়ানো শুরু হল। ভৌগলিক উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে পরবর্তী বরফ যুগকে পিছিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা শুরু করলো মানুষ।
২০৯৫ - একটি সত্যিকারের "মহাকাশ ড্রাইভ" নির্মীত হয়। এর মাধ্যমে স্থান-কালের মৌলিক গঠনের বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম প্রচালন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে। এর ফলে রকেটের ব্যবহার কমে যায় এবং মানুষ আলোর কাছাকাছি বেগ অর্জন করতে সক্ষম হয়। নিকটবর্তী তারাগুলোতে রোবট অভিযান প্রেরণে সফলতা আসায় মানুষ সশরীরে সেই তারাগুলোতে যাত্রা শুরু করে।

২১০০ - ইতিহাস শুরু হয় ...

---------------------------------
সূত্রঃ Predictions for the 21st Century by Arthur C. Clarke, Astronomy Interest Group


মন্তব্য

শিক্ষানবিস এর ছবি

এই ১৯শে মার্চ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন আর্থার সি ক্লার্ক। তার করা ভবিষ্যৎবাণীগুলো মানবজাতির প্রত্যাশার প্রদীপ হয়ে বেঁচে রইল আমার, আপনার, আমাদের সবার মধ্যে। মনের আনন্দে স্বপ্ন দেখুন। আমরা হয়তো এই মহাযজ্ঞে কোন অবদান রাখতে পারবো না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে পারবো, আর ছড়িয়ে দিতে পারবো সেই স্বপ্নগুলো।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

লেখা বিষয়ক কথাঃ

অনুবাদটা এত ভালো হয়েছে যে... মনে হচ্ছিল... আর্থার সাহেব না তুই নিজেই বলতেছিস।

মনের কথাঃ

এবার আমি একটা ভবিষ্যৎবাণী করি...

২০১৩'র জানুয়ারী মাসঃ
খুব সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে।

২০১৩'র ডিসেম্বর মাসঃ
তোর ফুটফুটে একটা বাচ্চা হয়েছে... মনে হয় মেয়ে। মেয়েটার নাম রাখছিস শাওন/নাবিলা/কিংবা অন্যকিছু(!)

আরো গভীরের কথাঃ

এইবার দেখি তুই আমাকে নিয়ে একটা ভবিষ্যৎবাণী কর।
এইরকম... আগামী বছরই আমার বিয়ে হবে এবং আমার বউয়ের চেহারা দেখলে তোর মাথা খারাপ হয়ে যাবে... হিংসায়।

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

স্বপ্নাহত এর ছবি

তোর গভীরতা সম্পর্কিত ভবিষ্যতবানী আমি করে দেইঃ

দুই বছর পর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আমাদের সাথে দেখা করতে আসবি।গার্লফ্রেন্ড এর চেহারা দেখে সবার মাথা খারাপ।আর আমারে দেখে তোর গার্লফ্রেন্ড এর মাথা খারাপ।
-আরে জিহাদ,তুমি এইখানে??!!??

মুখটাতে অমাবস্যার অন্ধকার নামিয়ে শুকনো মুখে ওকে জিজ্ঞেস করবি-তুমি ওকে চেন ক্যাম্নে??

-"আরে ও তো আমার পিচ্চিবেলার ফ্রেন্ড।অনেকদিন যোগাযোগ নেই।তুমি জানোনা ওর সাথে আমার কত্ত স্মৃতি!!"

স্মৃতির ভারে তোর মুখটাতে আরো একটু আলকাতরার প্রলেপ লাগবে।পুরোটা সময় আমার পাশে বসে ও আগের দিনগুলোতে হারিয়ে যাবে।যাবার আগে হয়তো মোবাইল নাম্বারটাও দিয়ে যাবে জোর করে।এরপর...

থাক।কিছু ব্যাপার স্যাপার শুধু বন্ধুমহলের মাঝেই থাকা উচিত।কি বলিস??

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

তারপর মেয়েটা তোর সাথে কিছুক্ষণ কাটাল...
তোদের অনেক হাসির-কান্নার আওয়াজ আমি শুনতে পাচ্ছি কাছ থেকে।
হঠাৎ মেয়েটা ফিরে আসল...
আমি বললাম...
- কী ব্যাপার স্বপ্না? জিহাদকে তুমি আগে থেকে চিনতে।
- আরে বোকা দেখ না... আমার কারণেই তো তোমাদের সচলায়তনে ''স্বপ্নাহত'' নামটা নিছে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

স্বপ্নাহত এর ছবি

এতটুকু বলার পর স্বপ্না একটু ক্ষণের জন্য থামলো।ওর মুখটা থমথমে।তুই দেখে ঘাবড়ে গেলি।

স্বন্ত্রস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করলি- কি ব্যাপার অমন করছো কেন??শরীর খারাপ? কিছু হয়েছে??জিহাদ তোমাকে কিছু বলেছে?

স্বপ্না তবুও নিশ্চুপ।আষাড়ের সব মেঘ ভুল করে যেন ওর মুখে নেমে এসেছে।

এরপরই রাগে ফেটে পড়লো ও।

-শয়তান,ইতর,বদমাইশ!!তুমি জেনে শুনে সব আমার কাছ থেকে গোপন করেছো।জিহাদ আমাকে সব বলেছে।তুমি সব জানতে যে ও আমাকে ভালবাসে।তারপরও তুমি আমাকে কিছু বলোনি,ওকেও বলোনি যে তুমি আমাকে চেন।ভাগ্যিস ওর সাথে আজ দেখা হয়ে গেল।

স্বপ্নার চোখে মুখে এবার একটু ইমোশনের ঘনঘটা।কাদো কাদো হয়ে আবার বলা শুরু করলো
-বেচারা আমার শোকে স্বপ্নাহত নাম পর্যন্ত নিয়েছে।আর তুমি কিনা ঐ ভালোবাসা পায়ে মাড়িয়ে নতুন করে আমাকে ভালবাসা শেখাতে চাও?

তুই কিছু বলার চেষ্টা করলি... ইয়ে মানে দেখো ব্যাপারটা আসলে হয়েছে কি...

বলা শেষ করতে পারলিনা। তার আগেই একটা আওয়াজ শোনা গেল...

ঠাস্‌!!

দুইদিন পরের কথাঃ আমার ইনবক্সে একটা নতুন মেইল পেলাম।
প্রেরকের ঠিকানায়ঃ
লেখা ছিলঃ প্রিয় সচল।আপনার 'স্বপ্নাহত'নিকটি পরিবর্তন করে
'স্বপ্নপূরণ' করা হয়েছে।

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রায়হান আবীর এর ছবি

অতঃপর স্বপ্নপূরণ ও সপ্না সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকল...
তারপর এক দুপুরে যখন স্বপ্নপূরণ যখন কামলা খাটছিল তখন আমি উপস্থিত হলাম ওর বাসায়। দরজা খুলেই আনন্দে চোখ চকচক করে উঠল ভাবীর...
আরে আপনি...
কতদিন পর আসলেন...সবসময় আসেন না কেন? কেমন আছেন...
এই তো ভাবি আছি। এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম আপনার হাতে চা খেয়ে যাই...
থাক আর কইলাম না...
এর পর আমি চা খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম... চোখ টিপি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ভবিষ্যতবাণী দেখি গড়াইতে গড়াইতে বাংলা সিনেমার প্লটে গিয়া হাজির হৈছে। দেঁতো হাসি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

শিক্ষানবিস এর ছবি

কি আর করার। পোলাপান সব বজ্জাত। তাও ভালো বাংলা সিনেমার এন্ডিংটা হয় নাই।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সবগুলারে ঝাকানাকা স্টাইলে প্যাদানো উচিৎ। বাঁশঝার থাইকা এট্টা মোটা দেইখা কঞ্চি নিয়া আসেন তো বস!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

স্বপ্নাহত এর ছবি

ক্যান গুরু,জর্মন দেশে কি হাইব্রীড কঞ্চির আবাদ হয়না নাকি??

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

শিক্ষানবিস এর ছবি

থাক বস। এই বারের মত মাফ কইরা দেন। এমনেই আজকে অনেক ধকল গেছে সবার উপর দিয়া। বোঝেনই তো!দেঁতো হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ধকল গেছে মাইনে?
আইইউটি কি আইজকা ধন্য ধান্যে পুষ্পে ভরে গেছিলো নাকি? চিন্তিত
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

স্বপ্নাহত এর ছবি

ধকল যায়নাই আবার।কাল্কে গাও গেরামের সব কঞ্চি বাঁশ আমাগো অডিটোরিয়াম নিয়া হাজির করা হইসিল।
গণহারে সব ইউজ করা হইসে।ভাবতেসি সেমিঃফাইনালের মেকানিক্স এক্সাম টা না দিয়া একবারে রেফার্ড এক্সাম এর জন্য প্রস্তুতি নিমু মন খারাপ

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

স্বপ্নাহত এর ছবি

লেখা ভাল লাগসে।আর্থার সি ক্লার্ক আসলেই একখান জিনিস ছিল।

আর এত স্বপ্ন না দেখাই ভাল।তাতে স্বপ্নাহত হবার চান্স থাকে চোখ টিপি

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

তারেক এর ছবি

দারুন হইছে অনুবাদ।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

দ্রোহী এর ছবি

অনুবাদটা ভালো লেগেছে। আর্থার সি. ক্লার্কের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী।


কি মাঝি? ডরাইলা?

অতিথি লেখক এর ছবি

আর্থার সাহেবের এই ভবিষ্যত বানীর লেখাটা কয়েক বছর আগে একবার জনকন্ঠ প্রত্রিকায় আসছিল কিন্তু সংগ্রহে নেওয়ার আগেই কেউ একজন উক্ত প্রত্রিকাটি নিজ সম্পত্তি হিসাবে মারিং করিয়া দিছিলো। এরপর আমি জনকন্ঠে গিয়া পরোনো প্রত্রিকার পাওয়ার সমস্ত তরিকা খতম কইরা যখন উহা হাতে পাইলাম দেখি ভুল তারিখের প্রত্রিকা পাইছি মানি আমি তারিখটা ঠিক ভাবে কইতে পারি নাই.... মন খারাপ

এরপর খেকে খালি ভাবতাম কই পাই, কই পাই......

আজ যখন পোষ্টটা দেখলাম কি যে পাইলাম ....বোঝানো যাবেনা!!!! অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য .... হাসি

কল্পনা আক্তার
kalponaakter@hotmail.com

........................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

শিক্ষানবিস এর ছবি

লেখাটি কারও এতোটা উপকারে এসেছে জেনে ভালো লাগলো।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
হিমু এর ছবি

বিনিময়ের মুদ্রা হিসেবে মেগাওয়াট-ঘন্টার প্রচলনটা খুবই বাস্তব হয়ে পড়বে কয়েক বছরের মধ্যেই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় শিক্ষানবিস,
খুবই ভালো অনুবাদ করেছ। লেখা যতটা ভালো লেগেছে, তার চেয়েও ভালো লেগেছে লেখার পরের মন্তব্যগুলো, মিঠে খুনসুটি বলা যেতে পারে। হাহাহা। মাঝে মাঝে নস্টালজিক হয়ে যাই, ফিরে যাই আই.ইউ.টি-র জীবনে, বন্ধুদের মাঝে। ধন্যবাদ তোমাদের, সেই সুযোগ টা করে দেবার জন্য। হাসি

শুভকামনায়,
অতন্দ্র প্রহরী

শিক্ষানবিস এর ছবি

আপনাকে পেয়ে আমাদেরও খুব ভালো লাগছে। লিখতে থাকেন।

দিগন্ত এর ছবি

আজ আনন্দবাজারেও লেখা বেরিয়েছে আর্থার সি ক্লার্ক-কে নিয়ে। ওটাও বেশ ভাল লেখা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শিক্ষানবিস এর ছবি

বাংলাদেশের মত পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকাগুলোর ওয়েবসাইটও এখন পর্যন্ত ইউনিকোড করা হয়নি। খুবই দুঃখজনক। উভয় বঙ্গের প্রতিটি পত্রিকার ইউনিকোড সংস্করণ বের করা উচিত। আর আনন্দবাজারের বাংলা সেটআপ ইনস্ট্রাকশন বেশ জটিল মনে হচ্ছে। কেউ কি সহজ কোন উপায় জানেন সেখানে বাংলা দেখার?

উদ্দেশ্যহীন এর ছবি

অনুবাদ টা খুবই ঝরঝরে। পড়তে ভাল লাগলো হাসি
আর সাথে উপরি পাওয়া মন্তব্য সম্পর্কে কোন মন্তব্য নিস্প্রয়োজন খাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।