বিদায়, জন হুইলার

শিক্ষানবিস এর ছবি
লিখেছেন শিক্ষানবিস (তারিখ: বুধ, ১৬/০৪/২০০৮ - ৩:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জন হুইলারজন হুইলার
১৯০১ আর ২০০১ সালের মধ্যে একটু তুলনায় করলেই বোঝা যায়, ১০০ বছরে কত এগিয়ে গেছি আমরা। এই অবিস্মরণীয় প্রগতির মূলে ছিলেন অলৌকিক রকম মেধাবী এক বিজ্ঞানী সমাজ। অনেকে বলছেন জন আর্কিবাল্ড হুইলারের জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে সেই সমাজের শেষ প্রদীপটিও নিভে গেল। ১৩ই এপ্রিল আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা এই পদার্থবিজ্ঞানী। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।

আমাদের স্থান-কালে ব্যক্তি জন হুইলারের আর কোন অস্তিত্ব নেই। কিন্তু মানবতার জন্য তিনি যা করেছেন তার সবগুলোই রয়ে গেছে এবং টিকে থাকবে সবসময়। বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা হল এদেশে গুণীর সমাদর নেই। এজন্যই হয়তো হুইলারের সাথে সাধারণ মানুষের কোন পরিচয় নেই। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞান, বিশ্বতত্ত্ব বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্বন্ধে যারা সামান্য পড়াশোনাও করেছেন তারাই জানেন হুইলারের নাম। তিনি সবচেয়ে বেশী পরিচিত "ব্ল্যাক হোল" নামটি প্রণয়নের জন্য। ব্ল্যাক হোল তথা কৃষ্ণ বিবর নামটি প্রায় সবারই জানা, কিন্তু নামকরণ যিনি করেছেন তার কথা প্রায় সবারই অজানা। ব্ল্যাক হোল শুধু নয়, অধুনা বহুল প্রচলিত "ওয়ার্মহোল" নামটিও তার দেয়া।

হুইলার ১৯৩৩ সালে জন্‌স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। তার অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল হিলিয়ামের শোষণ এবং বিকিরণ তত্ত্ব। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা শুরু করলেন এবং তখন থেকেই কণা পদার্থবিজ্ঞানে আত্মনিয়োগ করলেন। হুইলারকে যে বিজ্ঞানী সমাজের শেষ প্রদীপ বলা হয়েছে সে সমাজের সবাই ষাটের দশকের আগেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সে সমাজের পুরোধা নিল্‌স বোর এবং আলবার্ট আইনস্টাইনের সাথে কাজ করেছেন হুইলার। ১৯৩৯ সালে বোর আমেরিকায় এসে খবর দেন, জার্মানরা নাকি ইউরেনিয়াম পরমাণু ভাঙতে সক্ষম হয়েছে। এই সময়ই নিউক্লীয় শক্তি নিয়ে সতর্ক হয়ে উঠতে দেখা যায় মার্কিন কর্তৃপক্ষকে। বোর আর হুইলার মিলে নিউক্লীয় বিভাজনের একটি তাত্ত্বিক মডেল দাড় করান। বোর মূলত আমেরিকায় গিয়েছিলেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে আইনস্টাইনের সাথে বোঝাপড়া করতে। স্বভাবতই আইনস্টাইনের সাথে তার মতের মিল ছিল না। কিন্তু, বোঝাপড়া বাদ দিয়ে হুইলারের সাথে গবেষণা করেই সময় কাটিয়ে দিলেন বোর। দুজনে মিলে নিউক্লীয় বিভাজনের যে তত্ত্বটা বের করলেন তা "লিকুইড ড্রপ মডেল" নামে পরিচিত। এই তত্ত্বে তারা বলেছিলেন, পরমাণুর নিউক্লিয়াস হল একটা পানির ফোটার মত। পানির ফোটাকে দুই ভাগ যেভাবে করতে হয় এবং সেই বিভাজন যেভাবে হয়, নিউট্রন দিয়ে নিউক্লিয়াসকে আঘাত করলেও বিভাজনটা সেরকম হবে।
কোয়ান্টাম তত্ত্ব বিষয়ে বোরপন্থী হলেও আইনস্টাইনের একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরীশ্রম করেছেন হুইলার। আইনস্টাইন জীবনের শেষ বছরগুলোতে প্রকৃতিতে উপস্থিত চারটি মৌলিক বলের একীকরণের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি বলতেন, এই একক বল বের করতে পারলে নাকি ঈশ্বরের মন বোঝা যাবে। সেই "একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্ব" নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন হুইলার।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম ৫০ বছরের বাঘা বাঘা এই বিজ্ঞানীদের ভীড়েও স্বকীয় হয়ে ছিলেন হুইলার। বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত সেই বিজ্ঞানীদের মধ্য কেবল একজনই টিকে থাকলেন। এজন্যই এমআইটি'র বিশ্বতত্ত্ববিদ ম্যাক্স টেগমার্ক বলেন,

আমার মতে তিনি ছিলেন শেষ টাইটান, এখন পর্যন্ত জীবিত পদার্থবিজ্ঞানের একমাত্র অতিমানব।

বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের অনেকেই শিক্ষকতাকে অতটা গুরুত্বের সাথে দেখতেন না। এখানেই ব্যতিক্রম ছিলেন হুইলার। প্রথম সারির বিজ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকতার কাজে গাফলতি করেননি কখনও। নিজের মৌলিক আবিষ্কার দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন, আবার ভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্রদেরও পড়াচ্ছেন, এমন বিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া আসলেই কষ্টকর। পড়ানোর ক্ষেত্রে তার মূলনীতি ছিল, শুধু কাঠখোট্টা গণিত আর যুক্তির পথে না গিয়ে ছাত্রদেরকে কল্পনা করতে শেখানো, তাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করা। তার অন্যতম ছাত্র, বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর গবেষক ডেনিয়েল হোল্‌জ "কসমিক ভ্যারিয়েন্স" ব্লগে যে শোকবার্তাটি লিখেছেন, তা-ই তার শিক্ষক হিসেবে তার সফলতাকে নির্দেশ করে।
সাধারণ আপেক্ষিকতা আর বিশ্বতত্ত্বে আগ্রহী হোল্‌জ গবেষণা নিয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলেন। অধ্যাপক হুইলার তাকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে গবেষণার একটি বিষয় ধরিয়ে দেন। কতটা প্রেরণাদায়ক ছিলেন হুইলার- হোল্‌জের ভাষায়:

প্রতিদিন সকালে দৌড়াতে দৌড়াতে তার অফিসে গিয়ে প্রথমেই যে প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে হতো তা হল: নতুন কি পেলে? আমি গভীর রাত পর্যন্ত চিন্তা করে এমন কিছু বের করার চেষ্টা করতাম যা দিয়ে তার সে প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায়।

হোল্‌জ দুই বছর হুইলারের অধীনে গবেষণা করেছেন। ৭৯ বছর বয়সী হুইলারকে নিজের থেকে বেশী কর্মচঞ্চল এবং পরিশ্রমী মনে হয়েছে তার। বিজ্ঞানের পাশাপাশি দর্শন, কবিতা আর জীবন নিয়ে মন খুলে আলোচনা করতেন হুইলার। মৃত্যুর সময় হুইলারের বিছানার পাশে ছিলেন হোল্‌জ। তার ভাষায়:

গতকাল হুইলারের বিছানার পাশে কয়েক ঘণ্টা বসে ছিলাম। আমি বারবার চেষ্টা করছিলাম শেষবারের মত তাকে ধন্যবাদ জানাতে। কিন্তু তার প্রতি আমি কতটা কৃতজ্ঞ তা প্রকাশের কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। যেদিন প্রথম তার অফিসের চৌকাঠ পেরিয়েছিলাম, সেদিনই জীবন চলার একটি নতুন পথের সন্ধান পেয়েছিলাম। সেই পথেই হাটছি সবসময় এবং প্রতিদিন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এমন একটি পথ বাতলে দেয়ার জন্য।

এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মেধাবী সব ছাত্র গড়ে তুলেছেন হুইলার। এই মেধার প্রকৃষ্ট উদাহরণ: রিচার্ড ফাইনম্যান, কিপ থর্ন এবং হিউ এভারেট। হিউ এভারেটই সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারণা দিয়েছিলেন। হুইলার একে বলতেন "অনেক বিশ্বের" ধারণা। হুইলার তার ছাত্রদের সাথে মিলে এভাবেই কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের মাধ্যমে বাস্তবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছিলেন। হুইলারের সুদক্ষ চালনায় প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি পৃথিবীর সেরা আইনস্টাইনীয় মহাকর্ষ গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। প্রিন্সটনের বিজ্ঞানী ফ্রিম্যান ডাইসন বলেন,

তিনি সাধারণ আপেক্ষিকতার সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন; তিনি গণিতবিদদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে এটিকে পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানে পরিণত করেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওপেনহাইমারের নেতৃত্বে ম্যানহাটন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, নিউক্লীয় বোমা নির্মাণের উদ্দেশ্যে। অধ্যাপনা বাদ দিয়ে হুইলার এই প্রকল্পে কাজ শুরু করেন। অনেকের মত তিনিও বিশ্বাস করতেন, এই বোমা তৈরীর মাধ্যমেই যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব, কয়েক হাজার জীবনের বিনিময়ে কয়েক লাখ জীবন রক্ষা সম্ভব। কিন্তু নিউক্লীয় বোমার ভয়বহতা যে এতোটা বিস্তৃত হবে তা অনেকের মত তিনিও ভাবতে পারেননি। যুদ্ধ শেষ হয়ে আসছে এমন একটা সময়ে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে বোমা নিক্ষেপ করা হবে তাও তাদের কল্পনাতে ছিল না। তারা ভাবছিলেন ১৯৪৪ সালের মধ্যেই বোমার কাজ শেষ করা সম্ভব। যাহোক, যুদ্ধের পর নিউক্লীয় বোমার বিরুদ্ধে ম্যানহাটন প্রকল্পের বিজ্ঞানীরাই যে অবদান রেখেছেন তাতে তিনি সক্রিয় ছিলেন।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিষয়ে তার চিন্তাধারা ভুল ছিল। হাইড্রোজেন বোমা নির্মাণে সাহায্য করার মাধ্যমে তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধকে সহায়তা করেছিলেন, তার অনেক সহকর্মীই যেখানে এই যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন। তথাপি এই একটি ভুলের জন্য অভিমান করে থাকা যায় না। সার্বিকভাবে মানব সভ্যতা বিনির্মাণে তার অবদান ধ্বংসের থেকে অনেক বেশী ছিল। সার্বিকভাবে তিনি শান্তিকামী ছিলেন। বিজ্ঞান সাংবাদিক প্যাট্রিসিয়া রাইফ বলেন,

জনি, আমরা সবাই তোমাকে ভালোবাসতাম, শ্রদ্ধা করতাম। যুদ্ধের ঠিক আগের সময়টিতে তুমিই ছিলে কোপেনহেগেন সার্কেলের সাথে আমাদের একমাত্র লিংক। তোমার কারণেই আমরা বিশ্ব শান্তির জন্য এতো পরীশ্রম করতে পেরেছিলাম।

এভাবেই সর্বস্তরের মানুষের জীবন রাঙিয়ে গেছেন হুইলার। ছাত্রদেরকে কেবল শিক্ষা প্রদান নয়, তাদের মধ্যকার প্রচ্ছন্ন প্রত্যয়কে জাগিয়ে তুলেছেন। বিজ্ঞানী সমাজে কাব্যিক দূরদৃষ্টির প্রবর্তন করেছেন। বাস্তবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আধুনিক সভ্যতা তার কাছে বিশেষভাবে ঋণী। ঋণের দায়েই এই সভ্যতা হুইলারের অবদান মনে রাখবে, চিরকাল।

*****
# কসমিক ভ্যারিয়েন্স ব্লগে শোকবার্তা
# নিউ ইয়র্ক টাইম্‌সের শোকবার্তা


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

বিশ্বখ্যাত মানুষদের পরিচিত করায় আপনি সিদ্ধহস্ত। ধন্যবাদ!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শিক্ষানবিস এর ছবি

প্রত্যয় বাড়লো। তার মানে বিশ্বখ্যাতদেরকে বাঙালির কাছে পরিচিত করে তোলার দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালন করতে পারছি। বিশ্বস্ততার সাথে এ দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।

দ্রোহী এর ছবি

কৃষ্ণগহবরের পিতা জন এ. হুইলারের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী।


কি মাঝি? ডরাইলা?

শিক্ষানবিস এর ছবি

‌‌হুইলারের কৃষ্ণ বিবরের নামকরণের বিষয় নিয়ে একটা লেখা পড়লাম। এই ফাঁকে সবাইকে বলে দেই:
ফ্রেড হয়েল যেমন ব্যাঙ্গ করেই মহা বিস্ফোরণের ধারণাকে "বিগ ব্যাঙ" বলেছিলেন তেমনিভাবে, হুইলারও তাচ্ছিল্যের সাথে কৃষ্ণ বিবরের ধারণাকে "ব্ল্যাক হোল" বলেছিলেন। ১৯৩৯ সালে ওপেনহাইমার প্রথম কৃষ্ণ বিবরের তাত্ত্বিক ধারণা দেন। তিনি বলেছিলেন কৃষ্ণ বিবর এমন স্থান যেখান থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। এ কারণে সেখানে স্থান-কালের বক্রতা অসীম এবং সে পরিস্থিতিতে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো ভেঙে পড়ে।
হুইলারসহ অনেকেই তখন বলেছিলেন, পদার্থবিজ্ঞান নিশ্চয়ই আমাদেরকে এমন কোন ফলাফলের দিকে চালিত করবে না যাতে পদার্থবিজ্ঞানেরই অস্তিত্ব থাকে। কিন্তু আসলে সেটাই হল। কৃষ্ণ বিবর আর তার মধ্যকার অদ্বৈত বিন্দু (সিঙ্গুলারিটি) আবিষ্কৃত হল। হুইলার এটিকে সানন্দে গ্রহণ করলেন। এবং প্রথম দিকে তার দেয়া নামটিই টিকে গেল। উল্লেখ্য এ ধরণের অদ্বৈত বিন্দুতে সাধারণ আপেক্ষিকতার ক্ষেত্র সমীকরণসমমূহের অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা তিনিই করেছিলেন। এ কারণেই তাকে অলৌকিকের বিজ্ঞানী বলা চলে।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

বিদায়!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ! খুবই ভালো লাগল পড়ে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে এমন মহতী একজন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। একটা জিনিস মাথায় আসল, "এ বিউটিফুল মাইন্ড" সিনেমাতে যে হুইলার ল্যাবের কথা বলা হয়েছিল, এখন বুঝলাম এই সেই হুইলার! জন ন্যাশ (রাসেল ক্রো) তো প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতেই ছিলেন।
এরকম আরো লেখা চাই। পড়তে ভাল লাগে।

অতন্দ্র প্রহরী

শিক্ষানবিস এর ছবি

আ বিউটিফুল মাইন্ড ছবিটা যখন দেখেছিলাম তখন জানতামই না জন ন্যাশ নামে বাস্তবে কেউ আছেন। পরে জেনেছি জন ন্যাশের সত্য কাহিনীর উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে এটি। অনেক আগে দেখেছি, তার উপর মনোযোগও খুব একটা ছিল না। তাই হুইলারের ল্যাবের বিষয়টা মনে নেই। ধন্যবাদ এই তথ্যটি জানানোর জন্য।

বজলুর রহমান এর ছবি

"কিন্তু মানবতার জন্য তিনি যা করেছেন ..."

আণবিক বোমা তৈরীর ম্যানহাটান প্রজেক্টের তিনি ছিলেন অন্যতম হোতা। পরে ছিলেন হাইড্রোজেন বোমা তৈরীর ম্যাটারহর্ন দলে। তারও পরে তিনি আমেরিকান সরকারের যুদ্ধবাজ 'জেসন' নামের গোপন থিঙ্ক ট্যাংকের সক্রিয় পান্ডা হন। আমি নিজের চোখে দেখেছি ইঊরোপের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে এসে তাঁকে শান্তিবাদী ছাত্রদের প্রতিবাদের সময় অশালীন বেপরোয়া ব্যবহার করতে।

'ব্ল্যাক হোল' নাম তিনি দিতে পারেন, কিন্তু এর ধারণা তাঁর নয়। আইন্সটাইন তাঁর জ্যামিতি ও পদার্থের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা বিখ্যাত সমীকরণ প্রকাশ করার কিছুদিনের মধ্যেই শোয়ারৎশিল্ড তার সমাধান বার করে ফেলেন এবং সেখানেই কৃষ্ণ বিবরের জন্ম।
হুইলারের কোন কাজই তাঁর একক অবদান নয়, সমান্তরাল বিশ্বের চটকদার শিশুসুলভ ধারণাটিও নয়। বিখ্যাত 'গ্র্যাভিটেশন' বইটির অন্যতম লেখক হিসাবে তাঁকে দেখানো হলেও অনেকের বিশ্বাস তার সিংহ ভাগ লিখেছেন অন্য দুজন সহ লেখক।

শিক্ষানবিস এর ছবি

জন হুইলার সম্বন্ধে এই ব্লগে যা লিখেছি তার চেয়ে খুব বেশী জানি না আমি। বাংলা উইকিপিডিয়াতে জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে গিয়েই হুইলারের নাম জেনেছি। দৌড় খুব বেশী দূর ছিল না। মৃত্যুর পর কসমিক ভ্যারিয়েন্সের ব্লগটি পড়েই এ ধরণের একটি শোকবার্তা লিখতে অণুপ্রাণিত হয়েছি। কারণ আমার মনে হয়েছে জীবদ্দশায় কম হলেও তিনি যা করেছেন তার কারণে এই শোকবার্তাটি তার প্রাপ্য হতে পারে।

ম্যানহাটন প্রকল্পে কাজ করেননি এমন বিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই বিজ্ঞানীদেরকে অতটা দোষ দেয়া যায় না। কারণ আমার দেশ কোন যুদ্ধ জড়িয়ে পড়লে আমাকে যদি বলা হয়, জীবন দিয়ে এই অস্ত্রটি বানাও যার মাধ্যমে যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত হবে, তাহলে আমিও করতাম। কিন্তু নিঃসন্দেহে, নিউক্লীয় বোমা যে অবস্থায় যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা ঘৃণ্য। এ কারণে ম্যানহাটন প্রকল্পের বিজ্ঞানীরাও স্তম্ভিত হয়েছেন এবং শান্তির জন্য সংগ্রাম শুরু করেছেন। নিউক্লীয় অস্ত্র যুগের অবসানের জন্য এখনও সংগ্রাম চলছে।

তবে ম্যাটারহর্ন এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিষয়ে হুইলারের অবস্থান অবশ্যই খারাপ ছিল। জেসন সম্বন্ধে কিছু জানি না। এটাও খুব খারাপ বুঝতেই পারছি, শান্তিকামী ছাত্রদের প্রতি তার ব্যবহারও বেঠিক হয়েছে।

তার পরও তিনি যা করেছেন তা কি এমন একটি শোকবার্তার জন্ম দিতে পারে না? ভেবে দেখুন, হুইলারের জন্ম না হলে কি বিজ্ঞান কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হতো না? আমি দেখলাম, আমরা এমন অনেককে মনে রাখছি যাদেরক মনে রাখার প্রয়োজন নেই। অনেকের চেয়ে হুইলারকে মনে রাখাটা আমাদের বেশী দরকার।

আপনার মন্তব্যের মাধ্যশে হুইলারের খারাপ দিকটাও আমরা মনে রাখতে পারবো। আমাদের মনে রাখতে হবে, হুইলার অনেক কিছু করলেও বেশ কিছু কারণে দোষী ছিলেন। দোষ-গুণ মিলিয়ে পরিপূর্ণ হুইলারই বেঁচে থাকুক।

দিগন্ত এর ছবি

বস্তুত, যে আগুন মানুষের আয়ত্তে এনে দিয়েছে সেও তো মানুষের অনেক ক্ষতি করেছে .... আগুনে পুড়িয়ে কত মানুষকে মারা হয়েছে। হুইলার সম্পর্কে সঠিক জানা দরকার ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।