ইতিহাসের সেরা ছাত্র-শিক্ষক জুটি হলেন প্লেটো-সক্রেটিস, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ খুবই কম। সক্রেটিস মানুষকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছিলেন আর প্লেটো সক্রেটিসের শিক্ষাকে সংরক্ষণ করেছে সংলাপের মাধ্যমে। "প্লেটোর সংলাপ" নামে পরিচিত এই সাহিত্যভাণ্ডার মানবতার জন্য অনেক কিছু। পড়লেই বোঝা যায় কত সূক্ষ্ণভাবে চিন্তা করতেন সক্রেটিস আর কত সূক্ষ্ণভাবে তা অনুসরণ করতো প্লেটো।
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের। কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি দর্শনের প্রয়োজনীয়তা। জন্ম নিয়েছে বিজ্ঞানের দর্শন। দর্শন বলতে আসলে প্রজ্ঞার প্রতি ভালোবাসাকে বোঝায়। এই ভালোবাসা নিঃশর্ত, সেখানে আত্মপ্রত্যয় থাকলেও আত্মম্ভরিতা নেই। দর্শনানুরাগীরা শিশুর মত বিস্মিত হতে জানে, এ এমন এক বিস্ময় যা থেকে হাজারটা প্রশ্নের জন্ম হয়। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই প্রজ্ঞার সন্ধান পেয়ে যায় তারা।
বাস্তব জীবনেও দেখা যায়, যেকোন বিষয় প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরলে বোঝা যায় বেশী। বিজ্ঞানের জগতেও এই সূত্র খাটে। এজন্যই বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন সাইটে "ফ্রিকোয়েন্টলি আস্ক্ড কোয়েশ্চেন" (ফ্যাক) এর সমাহার দেখা যায়। বিজ্ঞানের মজার বিষয়গুলোকে আমি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই। তবে এগুলোকে ফ্যাক বলবো না। ফ্যাক বিষয়টা অনেক হালকা ও রসহীন।
আমি বরং প্লেটোর সংলাপের আদলে বিজ্ঞান সংলাপ শুরু করছি। এজন্য প্রাথমিকভাবে দু'টি চরিত্র ঠিক করেছি, একজন শিক্ষক আরেকজন ছাত্র। শিক্ষকের নাম দিয়েছি সক্রেটিস, আর ছাত্রের নাম প্লেটো। ভবিষ্যতে আরও চরিত্র আসতে পারে। তবে আপাতত এই দু'জনই কাজ চালিয়ে নেবে। আলোচনা দর্শনকেন্দ্রিক না হয়ে বিজ্ঞানকেন্দ্রিক হবে। সক্রেটিস একেবারে সঠিক উত্তর দেবেন, প্লেটো সবসময়ই চাইবে দর্শনকেন্দ্রিক হয়ে পড়তে। তাকে দর্শনমুখীনতা থেকে ফিরিয়ে বিজ্ঞানমুখী করে তোলার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
এটাকে কিন্তু নাটক বলা যাবে না। নাটক লেখার সাধ্যি আমার নাই। এটা দুই চরিত্রের সংলাপ কেবল। কোন কাহিনী বা অনুষঙ্গ নাই। উদ্দেশ্য শুধুই প্রকৃতির নিয়ম অনুসন্ধান।
আরেকটা বিষয়, সংলাপের প্রতিটি পর্বই স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, ধারাবাহিক কিছু না। তাই আগেরটা না পড়লেও পরেরটা পড়তে বাঁধা নেই।
আমাদের যুগের সক্রেটিস-প্লেটো মহাবিশ্ব সসীম নাকি অসীম, এই নিয়ে তাদের সংলাপ শুরু করছে।
সক্রেটিস: এখন পর্যন্ত দেখা মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী বস্তু হল "অ্যাবেল ১৮৩৫ আইআর১৯১৬" নামক ছায়াপথ। "ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি" থেকে এটা আবিষ্কার করা হয়েছে। অ্যাবেলের দূরত্ব ১৩.২৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। অর্থাৎ অ্যাবেলকে আমরা ১৩.২৩ বিলিয়ন বছর আগের অবস্থায় দেখছি। এতো দূর, তারপরেও যেন নগণ্য। কারণ এতো দূর দেখেও কোন সীমার সন্ধান পাইনি আমরা। পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের ভিত্তিতে বলতেই হয়, মহাবিশ্ব অসীম।
প্লেটো: কিন্তু পর্যবেক্ষণ আর পরীক্ষণের বাইরেও তো একটা বিজ্ঞান রয়ে গেছে। সে বিজ্ঞানের নাম গণিত। গণিত দিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্তে আসা কি সম্ভব হয়েছে?
সক্রেটিস: সসীম-অসীমের এ প্রশ্নে গণিত না এনে উপায় নেই। প্রশ্নটা চমৎকার। তবে গণিতকে কেউ প্রমাণ হিসেবে নেয় না। আইনস্টাইন আপেক্ষিকতা গণিত দিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন বলেই প্রথমটায় সাড়া পেয়েছেন কম। কিন্তু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সমীকরণের পক্ষে দলিল পাবার পর এর থেকে গুরুত্ববহ আর কিছু ছিল না।
প্লেটো: বর্তমানে বিজ্ঞান যেহেতু আমাদের পর্যবেক্ষণকে ছাড়িয়ে গেছে, সেহেতু গণিতের কাছে ফিরে আসতেই হয়। গণিত কি এতোদিনে সমস্যাটার সমাধান করে ফেলেনি?
সক্রেটিস: আবারও গণিতের কাছে ফিরে আসার জন্য সাধুবাদ। শুধু এই যুগ না, সব যুগেই বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণের থেকে এগিয়ে ছিল। গণিতের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, গণিত যায় আগে, তার পিছে পিছে যায় পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান। সসীম-অসীম প্রশ্নে গণিতের নির্দিষ্ট অবস্থান আছে। তবে সেটা বোঝার আগে মেনে নিতে হবে, ফ্রেড হয়েলের স্থিতিশীল মহাবিশ্বের তত্ত্ব ভুল। এটা মেনে নেয়ার অর্থই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। সম্প্রসারণের সাথে অসীমের সম্পর্ক নেই। কিন্তু সম্প্রসারণ মেনে নিলে অসীম বোঝাতে সুবিধা হয়। হ্যা, আপেক্ষিকতাভিত্তিক গণিত বলছে, মহাবিশ্ব অসীম।
প্লেটো: আপেক্ষিকতাভিত্তিক গণিতের এই বিষয়টা তো এখন জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে চলে গেছে। জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের গবেষক সম্প্রদায়ই কি দায়িত্বটা নিচ্ছেন?
সক্রেটিস: জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানকে আরও সরু করে বিশ্বতত্ত্বের উৎপত্তি ঘটেছে। এটা এখন বিশ্বতত্ত্বের অংশ। ধর্মীয় সৃষ্টিতত্ত্বের বিপরীতে কাজ করে এই বিশ্বতত্ত্ব। বিশ্বতত্ত্ব মহা বিস্ফোরণের ঠিক আগ মুহূর্তও অসীম দিয়ে ব্যাখ্যা করে।
প্লেটো: তাহলে, অসীম মহাবিশ্বের ধারণাটা ঠিক কেমন? বিশ্বতত্ত্ব মহা বিস্ফোরণ দিয়ে কিভাবে অসীমকে ব্যাখ্যা করে?
সক্রেটিস: তাহলে মহা বিস্ফোরণ থেকেই শুরু করতে হয়। একটা অসীম ঘনত্ব ও শূন্য আয়তনের বিন্দুর মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। বিস্ফোরণ ঘটার ঠিক ১০টু দ্য পাওয়ার-৪৫ সেকেন্ড পর স্থান-কালের সৃষ্টি হয়েছে।
প্লেটো: যে বিন্দুটা বিস্ফোরিত হয়েছে সেটা কোথায় ছিল?
সক্রেটিস: অসীম ঘনত্বের বিন্দুটা বিস্ফোরিত হয়েই কিন্তু অসীম মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে। আদি বিন্দুটাও অসীমের মধ্যে ছিল। বিস্ফোরণের বিষয়টা এমন না যে, একটি বিন্দু থেকে সবকিছু ছড়িয়ে পড়ছে। বিস্ফোরণের আগে পড়ে সবসময়ই অসীমতাকে দখল করে ছিল সে। এ কারণে মহাবিশ্ব সব দিক থেকে সমভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। এ কারণেই বর্তমান মহাবিশ্ব সমসত্ব। অর্থাৎ সকল বিন্দু থেকেই মহাবিশ্বকে দেখতে একরকম লাগে।
প্লেটো: কিন্তু, অসীম একটা জিনিস আরেকটা অসীমের মধ্যে থাকে কি করে?
সক্রেটিস: এখানেই বিজ্ঞানকে ছাড়িয়ে প্যারাডক্স তথা হেঁয়ালির সূচনা। তবে এই হেঁয়ালির পেছনেও যুক্তি আছে। হিলবার্টের অসীম কক্ষবিশিষ্ট হোটেলের হেঁয়ালি দিয়ে অসীমতাকে ব্যাখ্যা করা যায়। এটা অসীম হেঁয়ালি নামেও পরিচিত।
প্লেটো: অসীম হেঁয়ালি কি অসীমের মধ্যে সবকিছুকে গ্রহণ করে নেয়ার মত কোন গোঁড়া কিছু?
সক্রেটিস: গোঁড়াই বলতে হবে। কিন্তু একটা সাধারণ বাখ্যা আছে এর পেছনে: দুটি হোটেল কল্পনা কর যার একটিতে কক্ষ সংখ্যা সসীম এবং অন্যটিতে অসীম। ধরা যাক, দুটি হোটেলের সব রুমই বুক হয়ে গেছে। সসীম কক্ষের হোটেলে নতুন কেউ আসলে ম্যানেজার তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবেন। কিন্তু অসীম কক্ষের হোটেলে কেউ আসলে সানন্দে জায়গা করে দেবেন ম্যানেজার।
প্লেটো: এটা কিন্তু সাধারণ ব্যাখ্যা হল না। অসীম সবকিছু নিতে পারে অনেকটা তেমনই।
সক্রেটিস: সাধারণ ব্যাখ্যাটা প্রক্রিয়া নিয়ে। কিভাবে অন্যদেরকে জায়গা করে দিবেন অসীম কক্ষের হোটেলের ম্যানেজার? প্রক্রিয়াটা হল তিনি ১ম কক্ষের জনকে দ্বিতীয় কক্ষে পাঠিয়ে দেবেন, দ্বিতীয় কক্ষের জনকে তৃতীয়টিতে, তৃতীয়র জনকে চতুর্থটিতে এবং এভাবে সবগুলো। এভাবে প্রথম কক্ষটি খালি হয়ে যাবে।
প্লেটো: অসীম কক্ষবিশিষ্ট কোন হোটেলে যদি অসীম সংখ্যাক নতুন পর্যটক এসে উপস্থিত হয়, তখন কি করবেন?
সক্রেটিস: ম্যানেজার প্রথম কক্ষের লোককে তৃতীয় কক্ষে পাঠিয়ে দেবেন, দ্বিতীয় কক্ষের লোককে চতুর্থ কক্ষে, তৃতীয় কক্ষের লোককে ষষ্ঠ কক্ষে এবং এভাবে পাঠাতে থাকবেন। স্পষ্টতই বিজোড় কক্ষগুলো খালি হয়ে যাবে। অসীম স্থানান্তরের কারণে অসীম সংখ্যাক বিজোড় কক্ষ খালি হবে, সেখানে অসীম সংখ্যক নতুন পর্যটক জায়গা পেয়ে যাবেন।
প্লেটো: হিলবার্টের হেঁয়ালিটা আসলেই বিভ্রান্তিকর। কিন্তু যুক্তির খাতিরে উত্তীর্ণ হয়ে যায়। তবে আমার মনে হচ্ছে, অসীম নিয়ে আলোচনায় সমাধানের থেকে প্রশ্ন উঠে আসে বেশী।
সক্রেটিস: এর কারণ আমাদের অজ্ঞতা। এক সময় মানুষ কিছু না বুঝলে সেখানে ঈশ্বরকে স্থাপন করতো। এখন বিজ্ঞজনেরা তা করতে চাচ্ছে না। অসীম তাই অনেক কিছুর সমাধান দিচ্ছে। যদিও সেটা এখনও হেঁয়ালির পর্যায়ে।
প্লেটো: অনেকে বলেন একটি অসংজ্ঞায়িত বিন্দু থেকে সম্পূর্ণ নতুন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়নি। বরং আগের মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে হতে শূন্যে বিলীন হয়ে যাবার আগে এমন কিছু ঘটেছিল যার কারণে শূন্যে বিলীন না হয়ে নতুন আরেকটি মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এই তত্ত্বের সাথে কি বিশ্বতত্ত্বের সাযুজ্য আছে?
সক্রেটিস: বর্তমান মহাবিশ্বের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এটা আদৌ সংকুচিত হবে না। প্রসারিত হতে হতে একসময় সব শক্তির উৎস নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাহলে সংকোচনের ব্যাপারটা আসে না। অবশ্য গণিতে একটি ধ্রুবক আছে যার মান পরিবর্তন করে মহাবিশ্বকে সংকুচিত করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে সংকোচন হতেও পারে। আর সংকোচন হলে শূন্যে আসার আগে আবার প্রসারণও শুরু হতে পারে। এভাবে স্পন্দনশীল মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়। তাতেও কোন সমস্যা নেই। অসীমের মধ্যেই স্পন্দনশীল অসীম মহাবিশ্বের বিবর্তন ঘটবে।
প্লেটো: আর বহুবিশ্বের ধারণার কি হবে?
সক্রেটিস: হ্যা, অনেকে বলছেন মহা বিস্ফোরণ হল কৃষ্ণ বিবরের উল্টো। কৃষ্ণ বিবর সবকিছু নিজের মধ্যে নিয়ে নেয়। আর মহা বিস্ফোরণ সবকিছুকে নিজের ভেতর থেকে বের করে দেয়। তাহলে অসীম সংখ্যক মহা বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে, যেমন অনেক অনেক কৃষ্ণ বিবর আছে। এক্ষেত্রেও সমস্যা নাই। হিলবার্ট বলেন, অসীমের মধ্যে অসীম সংখ্যক অসীম মহাবিশ্ব থাকতেই পারে।
প্লেটো: তাহলে অসীমকেই মেনে নিলাম। কারণ বিশ্বতাত্ত্বিক গবেষণার মূলধারা অসীমকে ঘিরেই। কেউ প্রথাবিরোধী হতে চাইলে সসীম নিয়েও নতুন মাত্রায় কাজ শুরু করতে পারে। বিজ্ঞান আমাদেরকে সে সুযোগ করে দিয়েছে।
মন্তব্য
যদিও বিজ্ঞান নিয়ে আমার ধারণা নেই পর্যায়ের- তবুও আপনার লেখাগুলো আমি খুব আগ্রহ নিয়েই পড়ি। সহজ ভাষায় চমৎকারভাবে উপস্থাপিত আপনার লেখাগুলো খুব ভালো লাগে। যদিও পুরোপুরি বুঝি না।.।.।.এটা অবশ্য সম্পূর্ণ আমারই অজ্ঞতা। চলুক।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
না ভাই। অজ্ঞতা আপনের না, আমার। যতটুকু বুচ্ছেন ততটুকুই আমার সার্থকতা। তাই বোঝাতে না পারার ব্যর্থটাটুকুও আমিই নিলাম।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
চমৎকার! কেবল মাত্র এই লিখাটাকে উৎসাহ দিতেই মন্তব্য করছি,যদিও জ্ঞানের অভাবের দরুন মন্তব্যের খাতিরে মন্তব্য করা। এ মন্তব্যে লাভ-লোকসান কিছুই হবে না, তবুও করলাম আর কি!
লেখাটা চমৎকার হয়েছে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
সংলাপের আইডিয়াটা চরম...কিন্তু বিজ্ঞান এক্কেরে বুঝিনা...ভাইজান, একদিন প্রাইভেটে এই ব্লগের কাহিনীটা বুঝাই দিয়েন...
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।
ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।
তার মানে পুরা গ্যারায়া দিছি। ব্লগের কাহিনীটাই বুঝাইতে পারি নাই।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
"সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর"
--- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সচলপ্যান্থার
হুম!
অসীমের কথা উঠলে সাহিত্য আর বিজ্ঞান অনেকটাই এক হয়ে যেতে চায়।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আজকের সক্রেটিসকে জগতগুরু হিসেবে সৃষ্টি করেছিলেন প্লেটো
আর সংলাপে পূর্ণ বয়সের প্লেটোর কথাগুলো দিয়েছিলেন সক্রেটিসের মুখে এবং নিজে নিয়েছিলেন আম জনতার সংলাপগুলো
সেই সংলাপ ভিন্নরূপে ফিরে এলো শিক্ষানবিসের মগজে
অভিনন্দন
০২
তবে নামের ব্যাপারে আমার একটু আপত্তি আর একটা প্রস্তাব আছে
সক্রেটিস এবং প্লেটো খুবই আইকনিক চরিত্র
এদেরকে বাদ দিয়ে এখানে গুরুর নাম হতে পারে আরজ আলী মাতুব্বর
এবং শিষ্যের নাম আমদ ছফা
০৩
বাঙালিকে দিয়ে বিজ্ঞান চর্চা করানো যায় না ভাইজান?
বাঙালিকে দিয়েই তো বিজ্ঞান চর্চা করানো দরকার। আরজ আলী মাতুব্বর আর আহমদ ছফার বিষয়টা মাথায় থাকলো।
কিন্তু এক্ষেত্রে একটা সমস্যা আছে।
আরজ আলী, আহমদ ছফা এ যুগের হয়েও বিজ্ঞান চর্চা করেননি। বিশুদ্ধ দর্শন তথা মুক্তচিন্তার চর্চাই করেছেন। তাই সংলাপে তাদের নিয়ে আসতে চাচ্ছি না।
কিন্তু প্লেটো-সক্রেটিস এ যুগে থাকলে নিশ্চয়ই বিশুদ্ধ বিজ্ঞান চর্চা করতেন। কারণ প্লেটোর ছাত্র এরিস্টটলই কিন্তু প্রথম দর্শন থেকে বিজ্ঞানের দিকে মোড় নেয়ার অপচেষ্টা করেছিলেন। প্লেটো-সক্রেটিসের প্রাকৃতিক বাস্তবতা সংশ্লিষ্ট চিন্তার কারণেই সেটা সম্ভব হয়েছে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আমি অনেকের ভেতরে সেই গুণাবলি দেখি না যা আপনার লেখাতে আছে। বিষয়গুলো খুব আকর্ষণীয় যখন কেউ এভাবে বলে। নাহলে খুব কঠিন অসার হয়ে পরে।
বিষয়গুলো ভালো নির্বাচন করেন বরাবর। আর নতুন আইডিয়া সম্পর্কে কি বলবো। ব্রেভো। এই না হলে বিজ্ঞান শিক্ষা!
চালিয়ে যান।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
এখানে মহাবিশ্বের অসীম সসীমের ব্যাপারে একটু দ্বিমত আছে। যখন বিগ ব্যাং হয়েছিলো তখন সমগ্র বস্তু বা ভর এক বিন্দুতেই ছিলো, যখন এর বিস্ফোরন ঘটে তখন এর প্রসারন ঘটে আর সে অনুসারে যেকোনো একটা পয়েন্টে এর সসীম আয়তন পাওয়া যাবে। এখন আমরা মহাবিশ্বের পরিনতি নিয়ে দুটো কথা আছে সেটা হলো এর অনন্ত প্রসারন আরেকটা হলো সংকোচন। যদি অনন্ত প্রসারনই ঘটে তাহলে কন্ট্যুরে এর আয়তনটা হিসেব করা যেতে পারে যদিও এর ফলাফল হবে অসীমের মতোই, আর যদিবা এর সংকাচনই কাম্য তাহলে এর আয়তন অবশ্যই সসীম।অবশ্য হকিং বোধ হয় বিশ্ব প্রসারনশীলতার দিকেই মত দিয়েছেন! এখানে দেখা যাচ্ছে আমাদের সে পর্যায়ে যেতে হলে বিশাল এক ইউনিটের প্রয়োজন হবে যেমনটা করেছিলো গোপাল ভাড়ের সেই উদ্ভট কৌতুকের মতো। আর ম্যাথমেটিক্সে যদিবা আগি অসীমের হিসাব করতে থাকি তাহলে মাল্টি অর্ডার ইকোয়েশনে প্রাগমনিক স্কেলে চিন্তা করলে সবকিছুই ম্যাথমেটিক মডেলে আনা সম্ভব! তবে ইমাজিনারী কেসের কথা বলা হবে না নিশ্চয়ই। তাই কিছু কিছু ব্যাপারে সনাতনি চিন্তা গুলো এখন নিতান্তই অচল।
নতুন মন্তব্য করুন