প্রকৃতি আর আগের মত রহস্যময় নেই। কারণ, অধিকাংশ রহস্যই উন্মোচিত হয়ে গেছে। কেউ চাইলে "অধিকাংশ" শব্দটি গ্রহণ নাও করতে পারেন। কারণ যত দিন যাচ্ছে ততই নতুন নতুন রহস্যের উদ্ভব ঘটছে। উদ্ভবের দুই রকম অর্থ হতে পারে: এক, রহস্যের বিষয়টিই নতুন, আর দুই, রহস্য পুরাতন, কিন্তু রহস্য সমাধানের সম্ভাবনা নতুন করে জাগ্রত হয়েছে। সময়কে এ ধরণের একটি সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। কারণ সময় নিয়ে মানুষ অনেক আগে থেকেই চিন্তা করে আসছে। কিন্তু, বিজ্ঞানের সূত্রের মাধ্যমে যে সময়ের ব্যাখ্যা করা সম্ভব তা মানুষ এইমাত্র জেনেছে। আধুনিক বিজ্ঞানের জন্য সময় এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
সময় নিয়ে মূলত বিশ্বতত্ত্ববিদেরাই গবেষণা করেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অধ্যাপক শন ক্যারল। তিনি এনট্রপির মাধ্যমে সময়ের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছেন। তার মূল উদ্দেশ্য এনট্রপি ও সময়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করা। এ নিয়ে জুন মাসের "সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান" পত্রিকায় এক দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তার পর থেকে বিজ্ঞানী মহলে এ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনার সূত্র ধরেই "লস এঞ্জেলেস টাইম্স" সম্প্রতি শন ক্যারলের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন টাইম্সের স্টাফ রাইটার জন জনসন জুনিয়র। এই সাক্ষাৎকারের প্রধান দিক হল, সহজবোধ্যতা। সাংবাদিক মহোদয় ক্যারলকে খুব সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করেছেন। ক্যারলও সেগুলোর সরল উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছেন। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের বঙ্গানুবাদ তুলে দিচ্ছি:
*****
সময় নিয়ে মূল সমস্যাটা কি?
সময় অপ্রত্যাবর্তী, অর্থাৎ তাকে ফিরিয়ে আনা যায় না, গেল তো গেলই। এটা বিশ্বতত্ত্বের সর্বপ্রধান সমাধানহীন সমস্যাগুলোর একটি।
অনেক দিন ধরেই বিশ্বতত্ত্বে সময় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু, এখন আমাদের কাছে এমন কিছু তত্ত্ব আর যন্ত্র আছে যা আগে ছিল না।
সাধারণ আপেক্ষিকতা, স্ট্রিং তত্ত্ব, কণা পদার্থবিজ্ঞানের অভিনব আবিষ্কার এই সবই বিশ্বতত্ত্বের জন্য নতুন সম্ভাবনার দার খুলে দিয়েছে। এগুলোর সহায়তায় সঠিক উত্তরে পৌঁছানো খুবই সম্ভব।
এই সবকিছুর সাথে এনট্রপির সম্পর্কটা কোথায়?
মহাবিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এনট্রপির বৃদ্ধি। মহাবিশ্বের আদিতে এনট্রপির পরিমাণ ছিল খুবই কম, সে যতই শেষের দিকে যাচ্ছে এনট্রপি ততই বেড়ে চলেছে।
আমরা সবাই জানি, ডিমকে ওমলেটে পরিণত করা সম্ভব কিন্তু ওমলেটকে আস্ত ডিমে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। এই সহজ বিষয়টি আবিষ্কারের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে দুরবিন বানানোর প্রয়োজন পড়ে না।
আর এখানেই সম্পর্কটা নিহিত।
এনট্রপির খুব সহজ কোন উদাহরণ দিতে পারেন কি?
এনট্রপির ব্যাখ্যা অনেকটা এরকম: পরিবর্তন বুঝতে না দিয়ে, কোন ব্যবস্থার সকল উপাদানকে যতগুলো উপায়ে বিন্যস্ত করা যায় তাকেই এনট্রপি বলে। স্থূল পর্যবেক্ষনে এই পরিবর্তন কখনই ধরা পরবে না। অর্থাৎ বিভিন্ন এনট্রপি দিয়ে পরিবর্তন ঘটছে কিন্তু তা ধরা যাচ্ছে না।
উদাহরণ হিসেবে এক কাফ কফির মধ্যে দুধ মেশানোর কথা বলা যেতে পারে। যত বেশি মেশানো হবে, দুধের অণুগুলো ততই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে, আর ততই এনট্রপি গঠিত হবে। অর্থাৎ এনট্রপির পরিমাণ বাড়তে থাকবে।
কোনভাবে যদি দুধের সব অণুকে কফি থেকে আলাদা করা যায় তাহলে এনট্রপির পরিমাণ হবে সবচেয়ে কম।
তো, সমস্যাটা কোথায়?
আপনি যদি বিশ্বাস করে নেন যে, মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে এবং এর আগে কিছুই ছিল না, তাহলে সমস্যাটা ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।
পদার্থবিজ্ঞানে এমন কোন সূত্র নেই যাতে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বকে নিম্ন এনট্রপি থেকে শুরু হতে হবে এবং ধীরে ধীরে এনট্রপির পরিমাণ বাড়তে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে মহাবিশ্ব এমন আচরণই করেছে।
একেবারে সরাসরি চিন্তায় দেখা যায়, জিনিসপত্র ছোট থেকে শুরু হবে এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে, এটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। কিন্তু আপনি বলছেন, এই ধারণা ভুল।
আমার অনেক স্মার্ট কলিগ ঠিক এ কথাটাই বলেন। তারা বলেন, "তুমি কেন এটা নিয়ে চিন্তা করছ? আদি মহাবিশ্ব ছোট ছিল এবং তার এনট্রপিও ছিল খুব কম, এটাই তো সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত"।
কিন্তু আমি মনে করি, এটা এক ধরণের প্রেজুডিস। আমাদের মহাবিশ্বে বিষয়টা এরকম, এ কারণে আমরা মনে করি এটাই প্রাকৃতিক তথা স্বাভাবিক, অন্য কথায় এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
হ্যা, পদার্থবিজ্ঞানের বর্তমান সূত্রগুলো দিয়ে এর ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি, বিষয়টা ধ্রুব সত্য বলে মেনে নেয়াও উচিত না।
তার মানে আপনি মনে করেন, মহাবিশ্বের শুরুটা ছিল অপ্রাকৃতিক?
নিম্ন-এনট্রপির গড়ন বেশ বিরল।
এক প্যাকেট কার্ড নিয়ে প্যাকেট থেকে সেগুলো বের করলে হয়ত দেখা যাবে, সবগুলো ক্রমান্বয়ে সাজানো আছে। কিন্তু, এক প্যাকেট কার্ড থেকে দৈবভাবে কিছু কার্ড নিলে এটাই স্বাভাবিক যে, সেগুলো অগোছালো হবে।
নিম্ন-এনট্রপির সাথে উচ্চ-এনট্রপির সংঘর্ষটাও এখানে।
তার মানে, মহাবিশ্ব, আমরা যা দেখি তার চেয়েও বেশি কিছু?
কার্ডের প্যাকেটে খুললে সবগুলো কার্ড সাজানো অবস্থায় দেখা যায়। এটা দেখে আপনি আশ্চার্যান্বিত হন না। কারণ এটা নয় যে, সাজানো অবস্থায় থাকাই স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক। বরং মূল কারণ হচ্ছে, কার্ডের প্যাকেট কোন বদ্ধ ব্যবস্থা নয়। প্যাকেটটা এর থেকেও বড় কোন ব্যবস্থা থেকে এসেছে যে ব্যবস্থায় একটা কারখানা ছিল। আর সে কারখানাতেই কার্ডগুলো সাজানো হয়েছে। তাই আমি মনে করি, এর আগে আরেকটি মহাবিশ্ব ছিল যা আমাদের তৈরী করেছে। এক কথা, আমরা সেই বৃহৎ মহাবিশ্ব থেকে বেরিয়েছি।
আমরা অপেক্ষাকৃত বড় কোন ব্যবস্থার অংশ।
আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, আমাদের মহাবিশ্ব অন্য একটি মহাবিশ্ব থেকে এসেছে?
ঠিক। এটা বৃহত্তর কোন স্থান-কাল থেকে এসেছে যাকে আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি না। উচ্চ-এনট্রপির কোন বৃহত্তর স্থানের অতি সামান্য এক অংশ থেকে আমাদের মহাবিশ্ব এসেছে।
আমি বলছি না, এটা সত্য। আমি কেবল বলছি, এটা এমন এক বিষয় যা নিয়ে চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
আপনি বলছেন, অন্য কোন মহাবিশ্বে আপনার মতই কোন ব্যক্তি থাকতে পারে যে যে আপনার মতই এখন কফি পান করছে; কিন্তু আপনার মত লাল কাপ থেকে না, হয়তোবা নীল কাপ থেকে।
আমাদের স্থানীয় পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব যদি বৃহত্তর কোন কাঠামো তথা বহুবিশ্বের মধ্যে গেঁথে থাকে, তাহলে এই বৃহত্তর কাঠামোতে আরও অনেক স্থান আছে যেগুলোর প্রতিটিতে আবার এমন জাতক স্থান আছে যারা তাদের স্থানীয় প্রতিবেশকে মহাবিশ্ব বলে। সেই অন্যান্য স্থানগুলোর সূত্র একেবারে ভিন্ন হতে পারে, আবার আমাদের মতও হতে পারে।
এরকম অন্যান্য স্থান কতগুলো থাকতে পারে? সত্য বলতে অসীম সংখ্যক থাকতে পারে। সতুরাং এটা খুবই সম্ভব যে বহুবিশ্ব নামের এই বৃহত্তর কাঠামোর অন্য কোন স্থানে আমাদের মতই মানুষ আছে, তারা হয়তো আমাদের মতই এলএ টাইম্সের জন্য রিপোর্ট লিখছে বা একই ধরণের প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে।
তো, সময়ের তীর এই ধারণার সাথে কিভাবে খাপ খায়?
সময় সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা এনট্রপি বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে। আপনি কাউকে বলতে শুনবেন না যে, সময় ভুল দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। কারণ সময় সম্পর্কে আমাদের চেতনাটাই এনট্রপি বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে। সময়ের স্রোতে আমরা ভেসে বেড়াচ্ছি, এই চেতনার সাথে এনট্রপি খেয়ে আমরা বেঁচে আছি, এই চেতনার বেশ মিল আছে। এনট্রপি ছাড়াও সময়ের অস্তিত্ব থাকে। কিন্তু এনট্রপিই সময়কে তার বিশেষ চরিত্র প্রদান করে।
এনট্রপি সময়কে সামনের দিকে চলার স্বভাব প্রদান করে?
হ্যা, তার দিক প্রদান করে, অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। আপনি যদি বহির্বিশ্বে স্পেসস্যুট পরে ভাসতে থাকেন, তাহলে আপনার কাছে এক দিকের সাথে অন্য দিকের কোন পার্থক্য থাকবে না। কিন্তু, মহাবিশ্বের সকল স্থানেই গতকাল এবং আজকের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। এর মূল কারণ এনট্রপি এবং এটাই সময়ের তীর।
বহুবিশ্বে কি ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে?
আমি কাউকে তার ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে উপদেশ দিতে চাই না। কিন্তু আমি মনে করি, প্রাকৃতিক বিশ্বকে বোঝার জন্য বিজ্ঞানের শক্তির বিরুদ্ধে যাওয়া উচিত না। আজ থেকে হাজার বছর আগে হয়তো চাঁদ কেন আকাশের এক দিক থেকে অন্য দিকে যাচ্ছে তা বোঝার জন্য ঈশ্বরের অবতরণা করতে হতো। কিন্তু, এখন অবস্থা সেরকম নেই।
গ্যালিলিও এবং নিউটন এসে বললেন, শক্তির নিত্যতা সূত্র বলে একটা কিছু আছে যা বস্তুগুলো ঘুরতে বাধ্য করে।
এ যুগে অনেকে বলে থাকেন, "আপনি অবশ্যই ঈশ্বরের অবতারণা ছাড়া মহাবিশ্বের সৃষ্টি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না।" এবং এক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, "এর বিরুদ্ধে বাজি ধরে বসবেন না"।
*****
- মূল সাক্ষাৎকার: লস এঞ্জেলেস টাইম্স
*****
পুরো সাক্ষাৎকারের একেবারে শেষে এসে শন ক্যারলকে ঈশ্বর নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ক্যারল বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। তিনি বলেছেন ঈশ্বর ছাড়া মহাবিশ্বের সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করা যায় না, এই কথার পক্ষে বা বিপক্ষে বাজি ধরাটা ঠিক হবে না। কোন পক্ষেরই বাজি ধরা উচিত হবে না। এভাবে ঈশ্বরের প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়ার কারণ তিনি নিজের ব্লগে বলেছেন। এই সাক্ষাৎকার নিয়ে কসমিক ভ্যারিয়েন্স ব্লগে তিনি অনেকটা এরকম কথা বলেছেন-
ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। তারপরও বিশ্বতত্ত্বের সাথে ধর্মতত্ত্ব জড়িয়ে পড়ে। শন্য ক্যারল নিজে সম্পূর্ণ নাস্তিক, প্রায় সব বিশ্বতত্ত্ববিদেরাই নাস্তিক। ক্যারল বলেছেন, সাক্ষাৎকারটি ছিল বিজ্ঞান নিয়ে। তাই বিজ্ঞানের আলোচনায় তিনি ঈশ্বর আনতে চাননি। কারণ, ঈশ্বর নিয়ে আসলে বিজ্ঞানীরা যেভাবে চিন্তা করেন তাকেই অবজ্ঞা করা হয়। এ কারণেই নাস্তিকতা নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। তার মানে এই নয় যে, তিনি অন্যদেরকে নাস্তিক হওয়ার পরামর্শ দেন না। তিনি অবশ্যই ধর্ম বিষয়ক যেকোন আলোচনায় নিজেকে নাস্তিক হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং এর পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। কিন্তু, বিজ্ঞান বিষয়ক কোন আলোচনায় কখনই এর উল্লেখ করেন না। তিনি সবসময় বলেন, "বিশ্বতত্ত্ববিদের দৈনন্দিন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ঈশ্বরের কোন স্থানই নেই"।
মন্তব্য
অনেক কিছু শিখলাম। আবার অনেক কিছু অ্যান্টেনার উপর দিয়ে গেল। অনেক বিতর্কেরও জন্ম দিল কিছু কিছু বিষয়। সব মিলিয়ে অসাধারণ অনুবাদের জন্য অনেক ধন্যবাদ
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
ওই মিয়া, টাইপ করতে কষ্ট লাগে? উদ্ধৃতি মাইরা, নিজে খালি এক খান হাসি দিয়াই খাল্লাছ! খুব খারাপ!
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আবার! আমি হতাশ!
স্বপ্নাহতের সাথে আপনার মনের মিল আছে। এই জন্যই তো কপি মারছে। এই বারের মত মাফ কইরা দেন।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
দুর্দান্ত ! চমৎকার একটা লেখা পড়লাম অনেক দিন পর।
সময়কে এনট্রপি দিয়ে ব্যাখ্যা করার এই আইডিয়াটা আমার আগে জানা ছিলো না, আজই জানতে পারলাম। এ ধরণের সহজবোধ্য সাক্ষাৎকার মনে হয় মাঝে মাঝে সচলেই দেওয়া যেতে পারে। শিক্ষানবিসকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত কষ্ট করে অনুবাদের জন্য।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ধন্যবাদের সাথে ধন্যবাদ গৃহীত হল। ভবিষ্যতেও এরকম কিছু অনুবাদ দেয়ার চেষ্টা করব।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
এ যুগে অনেকে বলে থাকেন, "আপনি অবশ্যই ঈশ্বরের অবতারণা ছাড়া মহাবিশ্বের সৃষ্টি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না।" এবং এক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, "এর বিরুদ্ধে বাজি ধরে বসবেন না"।
বক্তব্যটা আস্তিকতাবাদের দিকে যাচ্ছে কি?
আমার এন্টেনায় টান লাগছে।
................................................................
জেতা মৎস্য গিলে বকে মনুষ্য খায় বাঘ-ভালুকে
রহস্য বোঝে না লোকে কেবল বলে জয়।
(দীন দ্বিজদাস)
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
ঠিকই ধরেছেন। ব্যাপারটা আস্তিকতাবাদের দিকেই যাচ্ছে। শন ক্যারলের কথাগুলো ছিল এরকম:
Nowadays people say, "Well, you certainly can't explain the creation of the universe without invoking God," and I want to say, "Don't bet against it."
সম্পূর্ণ নাস্তিক হয়েও শন্য ক্যারল কেন এভাবে বললেন তা নিয়েই নানা কথা উঠতে পারে। এ কারণেই ক্যারল তার ব্লগে বিষয়টা ভেঙে বলেছেন। তিনি বুঝিয়েছেন, তার উদ্দেশ্যে ছিল বিজ্ঞানের মধ্যে সৃষ্টিকর্তাকে টেনে না আনা। এ কারণে তিনি সংক্ষেপে এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু একটু ভেঙে বলার পরই আমরা তার কথার অর্থ বুঝেছি। অর্থ হল:
যারা বলে, ঈশ্বর ছাড়া মহাবিশ্বের সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না, তাদের এই কথার বিরুদ্ধের বাজি ধরবেন না। কারণ, বাজি ধরা মানেই ঈশ্বরতত্ত্ব তথা ধর্মের সাথে বিজ্ঞানকে মিলিয়ে ফেলা। বিজ্ঞান কখনই ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি এবং এখনও করছে না। কারণ ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা "gods in gaps" এর মাধ্যমেই দেখা দিয়েছিল। আমরা যা জানি না তাকেই ঈশ্বর দিয়ে ব্যাখ্যার চেষ্টা যখন থেকে বন্ধ হয়েছে, তখন থেকেই বিজ্ঞান বিকশিত হতে শুরু করেছে।
বিজ্ঞান তার মত করেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং চৌদ্দ গুষ্টির ব্যাখ্যা করবে। ঈশ্বরের কথা সে মাথায়ও আনবে না। এ কারণেই আমাদের বাজি ধরা চলবে না। এখনও বিশ্বতত্ত্বে (cosmology) অনেক ফাঁক আছে। তা বিশ্বতত্ত্বই পূরণ করবে, ঈশ্বর নয়।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
অতি ভাল্লাগছে সহজ ভাষায় বলা এই সাক্ষাৎকার। তোকেও অনুবাদের জন্য ধন্যবাদ।
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
চমতকার ঝরঝরে অনুবাদ।
আরো আসতে থাকুক।
এখানে একটু দ্বিমত দিব। জীব/চিকিৎসা বিজ্ঞানের অসংখ্য সমস্যা আছে। গণিতেও আছে। আমি টেলিকমিউনিকেশনের ছাত্র- এখানেও আছে।
অনুবাদ দুর্দান্ত হয়েছে।
আরেকটা কথা:
আমি জানতাম সময়ের প্রেক্ষিতে এনট্রপি কমে। কারণ, সিস্টেম স্ট্যাবল দিকে যায়। থার্মোডিনামিক্সও মনে হয় তাই পড়েছিলাম। ক্যারল দেখছি ভিন্ন কথা বলছেন।
শুধু ক্যারল না, সব বিশ্বতত্ত্ববিদরাই বলেন, মহাবিশ্বের এনট্রপি দিন দিন বাড়ছে। মহাবিশ্ব এক সময় সুষম তথা সমসত্ত্ব ছিল, দিন দিন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছে। মহা বিস্ফোরণের একটা সময় পর মহাবিশ্বের আইসোট্রপি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে এবং তা ত্বরণের সাথে সম্প্রসারিত হতে শুরু করে। সেই শেষ সুষম সময়ের বিকিরণ এখনও টিকে আছে যাকে আমরা মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ বলি। এটাই প্রমাণ। কারণ এই বিকিরণের তাপমাত্রা সম্পূর্ণ কৃষ্ণবস্তুকে নির্দেশ করে। কিন্তু বাস্তব মহাবিশ্বে কোন আদর্শ কৃষ্ণবস্তু নেই। তার মানে এটা এমন এক সময়ের বিকিরণ যখন আদর্শ কৃষ্ণবস্তু ছিল। সুষম মহাবিশ্বই সে আদর্শ কৃষ্ণবস্তু। মহাবিশ্বের এনট্রপি এর পর থেকে বেড়েই চলেছে, মূলত এনট্রপি বিশৃঙ্খলারই পরিমাপ।
আর আপনি যে এনট্রপি কমার কথা বললেন তাও হতে পারে। সাক্ষাৎকারের এক স্থানে ক্যারল বলেছেন, পদার্থবিজ্ঞানের এমন কোন সূত্র নেই যাতে বলা হয়েছে, এনট্রপি মব সময় কম থেকে শুরু হয়ে বাড়তে থাকবে। কিন্তু, মহাবিশ্ব এমন আচরণ করে কেন? এটাই কিন্তু সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই তিনি বহুবিশ্বকে সমর্থন করেছেন।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আমাদের মহাবিশ্ব বাবাজী যদি আরেক বৃহত্তর মহাবিশ্ব থেকে এসে থাকে......তাহলে সেই বৃহত্তর মহাবিশ্ব খানা কোত্থেকে এলো?
-টিকটিকির ল্যাজ
আপনার এই প্রশ্নের উত্তর সাক্ষাৎকারের মধ্যেই দেয়া আছে। ক্যারল বলেছেন, এরকম মহাবিশ্বের সংখ্যা অসীম হতে পারে। আমাদের বর্তমান জ্ঞানে একে অসীম ধরা ছাড়া উপায় নেই। এবার বুঝলেন তো, যেখানেই যান অসীম। অণু-পরমাণু ভেদ করে গভীরে যেতে থাকলেও অসীম, আবার মহাবিশ্ব ছাড়িয়ে বাইরের দিকে যেতে থাকলেও অসীম। তিনি এই বহুবিশ্বের ধারণা এজন্য প্রযোগ করেছেন যে, এভাবে অন্য কোন মহাবিশ্বকে এনট্রপির উল্টো স্রোতে ফেলা যায়। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে এমন মহাবিশ্বও থাকতে পারে যেখানে এনট্রপি কমে, অর্থাৎ ওমলেট থেকে ডিম হয়। সময় যায় উল্টো দিকে। মনে রাখবেন, অসীম সংখ্যক মহাবিশ্বের তত্ত্বই বহুবিশ্ব। আপনার যেকোন প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্যই অসীমের উদ্ভব।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আমার তো মনে হয়, কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেই ঈশ্বরের কোনও স্থান নেই (theology-কে বিজ্ঞান জ্ঞান করলে ভিন্ন কথা )।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
in thermodynamics, we know that entropy is the ability of heat transfer of a system. but by sawn caroll, it means dissimilarities of a system, what is the fault???
নতুন মন্তব্য করুন