৭ই জুলাই
দ্বিতীয় নমুনাটি ওয়েট কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। প্রথম নমুনার বিশ্লেষণ সফল হয়েছিল। সেই বিশ্লেষণে মঙ্গলের মাটির নিচে পানি বরফের স্তর আবিষ্কৃত হয়।
১০ই জুলাই
প্রথমবারের মত ফিনিক্সের থার্মাল ও কন্ডাক্টিভিটি প্রোব মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করেছে। মাত্র ১.৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ কাঁটা মাটিতে ঢুকবে। এর মাধ্যমে মাটির এক স্পাইক থেকে আরেক স্পাইকে কত সহজে তাপ ও তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই মাটির উপরের স্তরে ঘনীভূত বা তরল পানির সূক্ষ্ণ স্তর আছে কি-না তা বোঝা যাবে।
১৬ই জুলাই
পানি বরফ তো ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। এখন এই পানি বরফের উপাদান বিশ্লেষণের জন্য সেরকম একটি নমুনা টেগা-তে পাঠাতে হবে। এরই রিহার্সেল হয়ে গেল। স্নো হোয়াইট গর্তের ভেতর ফুটো করে পানি বরফের স্তরে পৌঁছুল রোবটিক বাহুর র্যাস্প। রোবটিক বাহুর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার মাধ্যমে এই প্রাথমিক নমুনার গ্রহণযোগ্যতাও যাচাই করা হয়েছে।
১৭ই জুলাই
ফিনিক্সের সার্ফেস স্টেরিও ইমেজার মঙ্গলপৃষ্ঠের স্টেরিও তথা ত্রিমাত্রিক ছবি তুলেছে। বিজ্ঞানীরা এখন এগুলো নিয়েই গবেষণা করছেন। ইমেজারের ডান ও বাম চোখ থেকে তুলা পৃথক পৃথক ছবিগুলো সমন্বিত করার মাধ্যমেই এই ত্রিমাত্রিক ছবিগুলো তৈরী করা হয়েছে। মোট ১৪টি ছবি পৃথিবীতে পৌঁছেছে। এগুলো দেখার জন্য লাল ও নীল থ্রিডি চশমা লাগে।
২২শে জুলাই
ফিনিক্স সবচেয়ে বেশী সময়ে ধরে একটানা কাজ করল। দীর্ঘ ঘণ্টা একটানা পরীশ্রমের সমাপ্তি ঘটেছে। টেগায় কোন ধরণের নমুনা সরবরাহ করা হবে এবং সেগুলো কিভাবে আনা হবে তা নিয়েই দীর্ঘক্ষণ কাজ করেছে সে।
৩১শে জুলাই
নাসা ঘোষণা করেছে, ফিনিক্সের বর্তমান অভিযান সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত চলবে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ শেষ হলে বিজ্ঞানীরা সেগুলো বিশ্লেষণ শুরু করবেন। বিজ্ঞানীদের আদেশে মঙ্গলের পৃষ্ঠে বসেই ফিনিক্স সে কাজগুলো করে যাবে।
৫ই আগস্ট
মঙ্গলের মাটিতে পারক্লোরেট পাওয়া গেছে। অনেকে গুজব ছড়িয়েছে যে, পারক্লোরেট থাকলে সেখানে জীবনের বিস্তার অসম্ভব। কিন্তু নাসা বলছে, পারক্লোরেট থাকাটা জীবনের জন্য ভালও নয় আবার খারাপও নয়। কিন্তু পারক্লোরেট থাকা মানে মঙ্গলের জীবন নিয়ে আমাদের অন্যভাবে চিন্তা করতে হবে।
পারক্লোরেট একটি আয়ন। কেন্দ্রে একটি ক্লোরিন আয়ন এবং তার চারদিকে চারটি অক্সিজেন আয়ন নিয়ে এই আয়ন গঠিত। এটা জারক অর্থাৎ অক্সিজেন মুক্ত দান করতে পারে। পৃথিবীতে আতাকামার মত মরু অঞ্চলে এই আয়ন পাওয়া যায়। সাধারণ অবস্থায় তা অণুজীবের কোন ক্ষতি করে না। মাঝে মাঝে কিছু অণুজীবের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সহায়তাও করে। মঙ্গলে কি পরিমাণ পারক্লোরেট আছে তা-ই এখানে বিবেচ্য বিষয়।
১৪ই আগস্ট
ফিনিক্সের অণুবীক্ষণ যন্ত্র মঙ্গলের সর্বব্যাপী ধূলির কেবল একটি কণার সূক্ষ্ণ ছবি তুলেছে। এ ধরণের ছবি ইতিহাসে এটাই প্রথম। কলাটির ব্যাস মাত্র ১ মাইক্রোমিটার। অন্য কোন বিশ্ব থেকে তোলা মঙ্গলের সবচেয়ে সূক্ষ্ণ ছবি এটাই। উল্লেখ্য, এই ধূলিকণাই মঙ্গলকে তার অনন্য লাল রঙ প্রদান করে। এবার এই লাল নিয়ে গবেষণা চলবে।
২১শে আগস্ট
মাঝামাঝি গভীরতা থেকে একটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তা ফিনিক্সের গবেষণাগারে পাঠানোও হয়েছে। "বার্ন অ্যালাইভ ৩" নামক গর্ত থেকে সংগৃহীত এই নমুনার নাম "বার্নিং কোল্স"। মঙ্গল পৃষ্ঠের তিন সেন্টিমিটার নিচ এবং এরও নিচে অবস্থিত পানি বরফ স্তরের এক সেন্টিমিটার উপর থেকে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। টেগার ৭ নম্বর প্রকোষ্ঠে রাখা নমুনাকে তিন পর্যায়ে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। প্রথমে নিম্ন তাপমাত্রায় (৩৫° সে), পরে মধ্যম তাপমাত্রায় (১২৫° সে) এবং সবশেষে উচ্চ তাপমাত্রায় (১০০০° সে)।
নিম্ন তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে পানি বরফ আছে কি-না দেখা হবে, মধ্যম তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করার মাধ্যমে নমুনাটিকে সম্পূর্ণ শুষ্ক করে ফেলা হবে। আর উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করার পর প্রাপ্ত গ্যাসকে ভর বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রে প্রেরণের মাধ্যমে নমুনার উপাদান বিশ্লেষণ করা হবে।
২৫শে আগস্ট
অবতরণের পর ৯০ সল তথা মঙ্গলের ৯০টি দিন পেরিয়ে গেছে। নমুনা সংগ্রহের কাজ এখনও চলছে। বিজ্ঞানীদের মূল উদ্দেশ্য মঙ্গলের উত্তর মেরু অঞ্চল বসবাসযোগ্য হতে পারে কি-না তা খতিয়ে দেখা। ইতোমধ্যে মাটিতে পানি বরফ পাওয়া গেছে। জানা গেছে মঙ্গলের মাটি ক্ষারীয়, এতে ক্ষার ধাতুর আয়নও পাওয়া গেছে। আর পাওয়া গেছে পারক্লোরেট। আবহাওয়াবিজ্ঞান স্টেশন তার কাজে সফল হয়েছে। পানি বরফের মেঘের সন্ধান পাওয়া গেছে, তাপমাত্রা নিরীক্ষণের মাধ্যমে ঋতু পরিবর্তনের উপর নহর রাখা হয়েছে।
মেকাতে রাখা নমুনা বাষ্পীভূত করার পর সে গ্যাস ভর বর্ণালীবীক্ষন যন্ত্রে প্রেরণের সময় একটু সমস্যা হচ্ছে। গ্যাসের চলাচলের পথে কিছু একটা ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা একটু বিস্মিত। তবে অচিরেই সমস্যার সমাধান হবে।
১লা সেপ্টেম্বর
মঙ্গলে এ পর্যন্ত খননকৃত সবচেয়ে গভীর গর্তের নাম "স্টোন স্যুপ"। এই গর্ত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নমুনা মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কোন পানি বরফের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। একই সাথে ধারাবাহিকভাবে তোলা মঙ্গলের বাতাসের ১০টি ছবি সংযোজনের মাধ্যমে একটি মুভি তৈরী করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে আকাশে মেঘের চলাচল। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, এই মেঘের মধ্যে জলীয় বরফ আছে।
৪ঠা সেপ্টেম্বর
ফিনিক্সের পরিবাহিতা প্রোবটা কাঁটার মত। এই প্রোব দিয়ে ল্যান্ডারের আশেপাশের আর্দ্রতা কম-বেশী হতে দেখা যায়। কিন্তু মাটিতে গেঁথে রাখা প্রোবের হিসাবে দেখা যায়, মঙ্গলের মাটি সম্পূর্ণ শুষ্ক। নাসা এমিস রিসার্চ সেন্টারের গবেষক অ্যারন জেন্ট এর ব্যাখ্যা দেন এভাবে: যে বাতাসে জলীয় বাষ্প আছে সে বাতাসের সংস্পর্শে থাকা সকল তলের সাথেই কিছু চলমান পানির অণু সেঁটে থাকে। এমনকি ০° সেলসিয়াসের চেয়ে কম তাপমাত্রায়ও এই অণুগুলো থাকতে পারে।
পৃথিবীতে পার্মাফ্রস্ট বিশিষ্ট অঞ্চলে এই সেঁটে থাকা পানির অণুগুলো একটি স্তর সৃষ্টি করে যা জীবন বিস্তারের জন্যও সহায়ক হতে পারে। মঙ্গলেও এ ধরণের স্তর আছে কি-না তা পরীক্ষা করা দেখা শুরু হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়ে বাতাসে যথেষ্ট আর্দ্রতা থাকা সত্ত্বেও মাটির উপর কোনরকম আর্দ্র স্তরের সাক্ষাৎ মিলছে না। গবেষণা চলছেই।
৮ই সেপ্টেম্বর
ফিনিক্সের ক্যামেরায় ধূলি দানব ধরা পড়ে। ইংরেজিতে এদের নাম ডাস্ট ডেভিল। এগুলো প্রায় ২ মিটার থেকে ৫ মিটার ব্যাসের ঘূর্ণিবায়ু। সেকেন্ডে ৫ মিটার বেগে চলাচল করে। পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা অনেক দিন থেকেই ধূলি দানবের আশায় বসেছিল। এই সংবাদ পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় পরদিন। অবশ্য এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ফিনিক্সের কারিগরি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন স্পেস সিস্টেম্স বলেছে, ধূলি দানবের কথা মাথায় রেখেই ফিনিক্সকে তৈরী করা হয়েছে।
ধূলি দানব তৈরী হওয়ার কারণ দিন ও রাতের তাপমাত্রার বিশাল পার্থক্য। ফিনিক্স যেখানে আছে সেখানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা "- ৩০°" সেলসিয়াস আর রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা "- ৯০°" সেলসিয়াস।
৯ই সেপ্টেম্বর
রোবটিক বাহুর খনন করা একটা গর্তের নাম "স্নো হোয়াইট"। এই গর্ত থেকে সংগৃহীত নমুনা ওয়েট কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরির চারটি প্রকোষ্ঠের শেষটিতে পাঠানো হয়েছে। জুলাই মাসে এই গর্ত থেকে পাওয়া নমুনাতেই টেগা পানি বরফ সনাক্ত করেছিল।
টেগাতে মোট আটটি ওভেন আছে যার মধ্যে চারটিতে নমুনা পুরে দেয়া হয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীরা ভাবছেন বাকি চারটি ওভেনে একই সাথে নমুনা দিয়ে দেবেন। আগে একটি নমুনা বিশ্লেষণ শেষ হওয়ার পরই কেবল অন্য ওভেনে নমুনা দেয়া হতো। এটা করা হচ্ছে খনন করার মত শক্তি থাকতে থাকতেই নমুনা সংগ্রহের কাজ শেষ করে ফেলার জন্য। সূর্য ইদানিং সবসময় দিগন্তে থাকে না। এ কারণেই মে মাসের তুলনায় ফিনিক্সে শক্তি উৎপাদনের মাত্রা কমে গেছে।
--- ছবিসহ বিস্তারিত জানতে হলে সোজা এই সাইটে চলে যান
*****
পরিশেষে বলা যায়, এ পর্যন্ত ফিনিক্সের অভিযান সফল। প্রধান লক্ষ্য ছিল মঙ্গলের উত্তর মেরুতে মাটির সামান্য নিচে পানি বরফের স্তর আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা। সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। পারক্লোরেট আবিষ্কার একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। মঙ্গলের ধূলিকণার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে। মাটি কি উপাদান দিয়ে গঠিত এবং মাটির নিচের স্তরে যে পানি বরফ আছে তার মধ্যে কি কি আছে সেগুলোও আবিষ্কার করা হয়েছে। ওয়েট মেকা আর টেগা যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই অভিযান এতো সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পেরেছে। আর বেশিদিন নেই। সব ঠিক থাকলে এ মাসের ৩০ তারিখ সব কাজ শেষ করে কক্ষপথে মূল নভোযানের সাথে মিলিত হবে ফিনিক্স। তারপর নতুন কোন অভিযান নিয়ে আবার মঙ্গলের মাটিতে ফিরে আসবে হয়ত।
মঙ্গলের মাটিকে এখন আর ততটা রহস্যময় মনে হচ্ছে না। অনেক আগে আমরা মঙ্গল নিয়ে কল্পবিজ্ঞান রচনা করতাম। অনেকে মঙ্গলবাসীর কল্পনা করতেন। মঙ্গলের রূপ দেখে যারপরনাই হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু সেই পাথফাইন্ডার থেকে শুরু করে আজকের ফিনিক্স পর্যন্ত, প্রতিটি অভিযানই জনমনে ছাপ ফেলতে পেরেছে। পাথফাইন্ডারের জনপ্রিয়তা অবশ্যই সবচেয়ে বেশী ছিল, ফার্স্ট অফ আ কাইন্ড বলে কথা। এখন আমরা সবাই আশা করতে পারি, ভবিষ্যতের মঙ্গল অভিযান আরও অনেক সমৃদ্ধ হবে, তাতে মঙ্গলকে বাসযোগ্য করে তোলার পরিকল্পনাও থাকবে।
আমি সেদিনের কথা ভাবছি, যেদিন মঙ্গলে একটি বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান মামন্দির স্থাপন করা হবে। সেই মানমন্দিরের মাধ্যমে একযোগে পৃথিবী, চাঁদ ও মঙ্গল থেকে বহির্জাগতিক প্রাণের সন্ধান পরিচালিত হবে। এটা হতেই হবে। কারণ বিশাল বিরান এই মহাবিশ্বে বড্ড একা একা লাগছে। নিঃসঙ্গতাকে ছাপিয়ে উঠছে যুক্তি। বারবার মনে হচ্ছে, বহির্জাগতিক প্রাণ না থেকে পারেই না। যদি আদৌ না থাকে, তাহলে তাকে বলতে হবে স্থানের ভয়ানক অপব্যবহার।
মন্তব্য
-৯০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাতে কাজ করার মতো লুব্রিক্যান্ট যদি পাওয়া যায়, মঙ্গলের এই বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
লুব সম্পর্কে আমার জ্ঞান শূন্যের কোঠায়, যদি নিতান্তই সেরকম লুব পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক প্রবাহের মাধ্যমে বিয়ারিংকে উষ্ণ ও সচল রাখতে হবে।
মঙ্গলের বাতাসের আর্দ্র কণা যদি টারবাইন ব্লেডের গায়ে ঘনীভূত হয়ে বরফে পরিণত না হয়, বায়ুপ্রবাহই মঙ্গলে শক্তির একটি প্রধান উৎস হতে পারে। মঙ্গলে বায়ু যতদূর জানি কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ, কাজেই এর ঘনত্ব খুব একটা কম নয়, দিনে ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্যের কারণে বেশ কিছু সময় ধরে বিপুল পরিমাণ শক্তিপ্রবাহ বাতাসে থাকার কথা। সমস্যা হবে একটাই, ছোট ছোট ধূলিকণা গিয়ে ব্লেডের গায়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গর্ত সৃষ্টি করবে প্রতিনিয়ত, ফলে ব্লেডের সার্ভিস লাইফ অনেক কম হবে, কিংবা ঘন ঘন ব্লেডের ওপর রেজিন পেস্ট করতে হবে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
নাসাও এ নিয়ে চিন্তা করছে। তারা নিজেদের মঙ্গল অভিযানের কথা ভাবছে। যারা মঙ্গলে যাবে তাদেরকে আবার ফিরে আসার আগে অন্তত ৬ মাস মঙ্গলে থাকতে হবে। কারণ, এর মধ্যে পৃথিবী ও মঙ্গল সূর্যের একই দিকে আসবে না। মঙ্গলে আলোক স্বল্পতার কারণে সৌর শক্তিও কাজে লাগানো যাবে না। তাই সহজের মধ্যে বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই।
নাসার "Cold Weather Wind Turbine Program" আছে। আলাস্কায় তাদের একটা পরীক্ষা কেন্দ্রও আছে। এখানে মঙ্গলের তাপমাত্রায় উইন্ড টার্বাইনের কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করা হয়। মঙ্গলের বায়ু পৃথিবীর থেকে বেশ হালকা। তাই পৃথিবীতে টার্বাইন চালাতে হলে যেখানে বাতাসের বেগ ১০ মি/সে হলেই চলে, সেখানে মঙ্গলে বাতাসের বেগ হতে হবে ৩০ মি/সে। স্বাভাবিক অবস্থায় তাই মঙ্গলের বাতাস দিয়ে কাজ হবে না। কিন্তু সেখানে ঘূর্ণিবায়ু বেশ ঘন ঘন হয়। এ ধরণের ধূলি ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
এক্ষেত্রে টার্বাইনের ব্লেড ঠিক রাখাটা আসলেই ঝামেলা। আপনি যে সমস্যাগুলো বললেন সেগুলো নিয়েই এখন নাসা ভাবছে। শুধু ব্লেড না, ভিতরের কিছু যন্ত্রপাতিও ধূলা ও বরফকণার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। লুব্রিকেন্ট নিয়ে আমারও ধারণা নেই। তবে আশাকরি, কোন না কোন সমাধান বেরিয়ে যাবে।
দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের যেখানে ৬ মাস অন্ধকার থাকে সেখানকার অবস্থার সাথে মঙ্গলের বেশ মিল আছে। নাসা এই সুযোগটাও কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
হ্যাঁ। নেটে গুঁতা দিয়ে দেখলাম মঙ্গলে বাতাসের ঘনত্ব মোটে ০.০২ কেজি/ঘনমিটার, যেখানে পৃথিবীতে বাতাসের ঘনত্ব ১.২৩ কেজি/ঘনমিটার। এর অর্থ হচ্ছে, মঙ্গলের বাতাস প্রায় ৬২ গুণ হালকা, অর্থাৎ পৃথিবীতে যে টারবাইনের জন্যে রেটেড স্পিড সেকেন্ডপ্রতি ১০ মিটার, সেটার জন্যে মঙ্গলে প্রায় সেকেন্ড প্রতি ৪০ মিটার দ্রুতির বাতাস লাগবে।
তবে আমার মনে হয় যেহেতু মঙ্গলে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান অনেক কম (৩.৮ মিটার/বর্গসেকেন্ড, পৃথিবীতে ৯.৮ মিটার/বর্গসেকেন্ড), তাই টারবাইন স্থাপনে কিছুটা সুবিধা অন্তত মিলবে, ন্যাসেলের ওজন যেহেতু ষাট শতাংশ কমবে (ধরে নিচ্ছি মঙ্গলের মাটির বিয়ারিং ক্যাপাসিটি পৃথিবীর মতোই)।
হাইড্রলিক অয়েল ব্যবহার করে জেনারেটরকে মাটিতে রেখেই ঘোরানোর চিন্তাভাবনা চলছে। মঙ্গলে যেতে যেতে হয়তো সেটাই বাস্তবে পরিণত হবে। কে জানে?
হাঁটুপানির জলদস্যু
অভিকর্ষজ ত্বরণটা আসলেই সুবিধা দিবে। আমরা মানিয়ে নিতে পারলেই হল। তবে দুটি বিষয় জানি না। এজন্য বুঝতে পারছি না। বিষয় দুইটা জানান:
- টার্বাইনের ন্যাসেল কোনটা?
- হাইড্রলিক অয়েলের সাথে মাটিতে রেখে জেনারেটর চালানোর সম্পর্ক কি?
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ন্যাসেল হচ্ছে টারবাইনের যেখানে গিয়ারবক্স, জেনারেটর থাকে, ওপরের চেম্বারটা।
বর্তমান প্রযুক্তিতে শ্যাফট গিয়ারবক্স হয়ে জেনারেটরের সাথে কাপলড। ফলে যেখানে শ্যাফট, সেখানেই জেনারেটর রাখতে হচ্ছে। প্রস্তাব পর্যায়ে আছে হাইড্রলিক অয়েল দিয়ে এই বল সঞ্চালনের। তখন ওপরে শুধু একটা তুলনামূলকভাবে হালকা কম্প্রেসর থাকবে, সেটা হাইড্রলিক অয়েল ঠেলে পাঠাবে নিচে, যেখানে আরেকটা ক্র্যাঙ্ক মেকানিজম থাকবে জেনারেটর ঘোরানোর জন্যে। তবে এটা এখনো হাতে কলমে করা হয়নি, যতদূর জানি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ধন্যবাদ। বুঝে গেছি।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
তবে একটা ভ্যাজাল আছে। মঙ্গলের নিজস্ব কোন চৌম্বকক্ষেত্র নেই। ফলে সৌরঝড়ের কারণে মাঝে মাঝেই চৌম্বক ঝাপটার মুখে পড়তে হবে সেখানকার সব যন্ত্রপাতিকে। আমার যেমন পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের কারণে এই ঝড়ের হাত থেকে কমবেশি রক্ষা পাই, মঙ্গলে সেই সুযোগটা নেই।
হাঁটুপানির জলদস্যু
এইটা আসলেই জটিল সমস্যা। অততে নাকি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল আরও ভারী ছিল। চুম্বক-মণ্ডল না থাকায় সৌরঝড় সে বায়ুমণ্ডলকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির জন্য তাহলে সৌরঝড়ের প্রভাব থেকে রক্ষার উপযোগী ব্যবস্থাও তৈরী করতে হবে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
কে জানে, ভবিষ্যতে হয়তো মঙ্গলের ম্যাগনেটিক কোরকে বড়সড় শক দিয়ে আবার চালু করা হবে ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
জটিলস্য! জটিলস্য!! লেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
পুরোটা পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
সব চেয়ে ভাল লাগেছে আপনার অনুবাদ কৌশল! এত জটিল সব বিষয় অনেক সহজ করে লিখতে পারেন আপনি। বৈজ্ঞানিক টার্মগুলোও অনেক নতুন বাংলা শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন।
আচ্ছা ফিনিক্সের পৃথিবী থেকে মঙ্গলে যেতে কত সময়ে কত দূরত্ব অতিক্রম করতে হল?
এই প্রজেক্টের বাজেট কেমন ছিল?
আপনি হয়তো কোথাও উল্লেখ করে থাকবেন কিন্তু এখন আর মনে পড়ছে না। পারলে জানাবেন।
ব্যতিক্রমী লেখার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আসলে আমি এই দুটো প্রশ্নের উত্তর কোথাও দেইনি। মনে ছিল না। বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন উত্তর দিচ্ছি।
উৎক্ষেপণ থেকে অবতরণ, এই সময়ের মধ্যে ফিনিক্স মোট ৪২৩ মিলিয়ন মাইল দূরত্ব অতিক্রম করেছে।
অনেকগুলো সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রচেষ্টা বিধায় বাজেটের ঠিক সংখ্যাটি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। অন্য একটা তথ্য দেই। ফিনিক্স মিশনের নেতৃত্বে আছে ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা। নাসা এই প্রকল্পের জন্য অ্যারিজোনাকে ৩২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল। অ্যারিজোনার অন্য যেকোন প্রজেক্ট বাজেটের চেয়ে এটা ৬ গুণ বেশী।
এই ফাঁকে গতিবেগের কথাটাও বলে দেই। ফিনিক্সের বেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৪,০০০ মাইল। কিন্তু মঙ্গল নিজেই ঘণ্টায় ৬০,০০০ মাইল বেগে চলছিল। তাই মঙ্গলের সাপেক্ষে ফিনিক্সের বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪,০০০ মাইল।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
দারুন! অনেক কিছু জানলাম।
আচ্ছা,তুমি কি চাঁদে অভিযান সম্পর্কে কিছু লিখসো? মানুষ চাঁদে আদৌ গেসে নাকি এইটা নিয়া তো পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা শোনা যায়। আমি একটা তথ্যচিত্র দেখসিলাম যেটাতে দেখানোর চেষ্টা করসে যে চাঁদে যাওয়ার ব্যাপারটা পুরাটাই হোক্স। তথ্যচিত্রটা কিন্তু আসলেই অনেক কনভিন্সিং ছিল। না লিখে থাকলে এইটা নিয়ে লিখে ফেল।
______________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
মানুষ চাঁদে গিয়েছিল এই বিষয়ে বিজ্ঞানী মহলে কোন সংশয় নেই। আসলে কিছু "কন্সপাইরেসি থিওরিস্ট"-রা চাঁদে মানুষ যায়নি বলছে। পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ যেকোন ঘটনায় নিয়েই দেখবেন এ ধরণের বিকল্প তত্ত্ব আছে। এগুলো তৈরীর একটা কারণ মনের খায়েস মেটানো। অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে, মিডিয়া ও বইয়ে এইসব লিখে ব্যবসায়িক লাভ আদায় করা, প্রতিপক্ষকে হেনস্থ করা ইত্যাদি। তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের সব যুক্তি খণ্ডন করেছে। এগুলো নিয়ে বাংলায় লেখাও আছে। আমি নিচে দুটো লিংক দিচ্ছি। অনেক কিছু পাবেন:
- একটি কন্সপিরেসী থিওরীর বিনীত জবাব - অভিজিৎ রায়
- চান্দুকথা - সুমন চৌধুরী
চন্দ্রাবতরণের ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আমিও একটা লেখা লিখেছিলাম। দেখতে পারেন:
http://www.sachalayatan.com/muhammad/13683
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
শুরু করলাম পড়া। ঠেংক্যু
______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
good job, boss
নতুন মন্তব্য করুন