এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌স: বিজ্ঞান বনাম কল্পবিজ্ঞান

শিক্ষানবিস এর ছবি
লিখেছেন শিক্ষানবিস (তারিখ: বুধ, ১৭/০৯/২০০৮ - ২:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
ড্যান ব্রাউনের "এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌স" (Angels and Demons) পড়ে খুব ভাল লেগেছিল। থ্রিলারের সাথে তুখোড় গোয়েন্দা কাহিনী আর তার সাথে কল্পবিজ্ঞান, সব মিলিয়ে উৎকৃষ্ট বিনোদন। এর সাথে যোগ হয়েছে কিছু নতুন জ্ঞান। উপন্যাসটা পড়ে সার্ন, কণা ত্বরক, প্রতিপদার্থ, ভ্যাটিকান সিটি, পোপ নির্বাচন এসব সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, সেসব জানার মধ্যে কিছু গলদ ছিল। এতে অবশ্য উপন্যাসের মজা নষ্ট হয়নি। কারণ, লেখককে এতোটুকু স্বাধীনতা দেয়া যায়। কিন্তু, উপন্যাসের কথাগুলো কতটা প্রভাব ফেলছে ও কিভাবে ফেলছে তা দেখার বিষয়।

এঞ্জেল্‌ অ্যান্ড ডিমন্‌স পড়ার কারণেই, আমি এই সেদিন পর্যন্ত মনে করতাম প্রতিপদার্থের মাধ্যমে একসময় আমরা বিশুদ্ধ শক্তির সন্ধান পেয়ে যাব। তেল, নিউক্লীয় শক্তি, গ্যাস কিছুই লাগবে না। কিন্তু গত সপ্তাহে এলএইচসি'র উদ্বোধন নিয়ে কথা উঠায় নতুন অনেক কিছু জানলাম। নতুন জানা তথ্যগুলোই এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌সের ভ্রান্তিগুলো শুধরে দিল। তাই ভাবলাম সবাইকে জানানো দরকার। যারা বইটা পড়েছেন তারা আরও ভাল বুঝবেন। সার্নের ওয়েবসাইটেই এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌স বিষয়ক সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া আছে। সেখান থেকে হুবহু অনুবাদ করছি।

০১

ড্যান ব্রাউনের "এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌স" বইটি এক গোপন সংঘ নিয়ে রচিত গোয়েন্দা গল্প। এই সংঘ প্রতিপদার্থ বোমা ব্যবহার করে ভ্যাটিকান সিটি ধ্বংস করতে চায়। বইয়ে এই প্রতিপদার্থ সার্ন থেকে চুরি করা হয়।
পাঠকরা এ নিয়ে আমাদেরকে অনেক প্রশ্ন করেছেন। বইয়ে প্রযুক্তি ও তথ্যগুলো যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তার খুটিনাটি নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন এসেছে। এখানে সেরকম কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া হচ্ছে।

সার্ন কি আসলেই আছে?

হ্যা, সার্ন আসলেই আছে। Meyrin শহরের কেন্দ্রেই আমাদের দেখতে পাবেন।

এটা কি সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত?

একটা অংশ সুইজারল্যান্ডে। বাকি অংশ ফরাসি সীমান্তে। জেনে রাখা দরকার, সার্ন সুইজারল্যান্ডের সংস্থা না। এটা ইউরোপীয়দের আন্তর্জাতিক সংস্থা। জেনেভা বিমান বন্দর থেকে আমাদের সদর দফতরের দূরত্ব খুব বেশী না।

সার্ন (CERN) শব্দের পূর্ণরূপ কি?

সে এক বিরাট ইতিহাস। আপাতত মনে রাখুন, ফরাসি নাম "Conseil Européen pour la Recherche Nucléaire" থেকে সার্ন এসেছে। ইংরেজি নাম "European Organization for Nuclear Research"।

সার্নের ভবনগুলো কি লাল ইটের, আর উপন্যাসের বর্ণনামত সেখানে কি আসলেই সাদা পোশাক পরা বিজ্ঞানীরা ফাইল-পত্র নিয় ছুটোছুটি করেন?

না, বাস্তবতা একেবারে অন্যরকম। আমাদের ভবনগুলো প্রায় সবই সাদা এবং কনক্রিটের তৈরী। আর বিজ্ঞানীরা যার যার ইচ্ছামত পোশাক পরেন, কোন ইউনিফর্ম নেই। অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের হাতেই আপনি কোন ফাইল-পত্র দেখবেন না।

ওয়েব কি আসলেই সার্নে উদ্ভাবিত হয়েছিল?

হ্যা, এটা ঠিক। ১৯৮৯ সালে টিম বার্নার্স-লি এই সার্নেই প্রথম ওয়েব উদ্ভাবন করেছিলেন।

প্রতিপদার্থের (antimatter) অস্তিত্ব আছে?

আছে, সার্নে আমরা নিয়মিতই প্রতিপদার্থ তৈরী করি। ১৯২৮ সালে "পি এ এম ডিরাক" প্রতিপদার্থের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এর পরপরই কার্ল অ্যান্ডারসন তা আবিষ্কার করেন। সার্ন ছাড়া বিশ্বের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিপদার্থ তৈরী করে ও তা নিয়ে গবেষণা করে।

প্রতিপদার্থকে ধরে রাখা হয় কিভাবে?

এটা খুবই শক্ত কাজ। কারণ যেকোন পদার্থের সাথে তার প্রতিপদার্থের সংযোগ ঘটলে উভয়েরই পূর্ণবিলয় (annihilation) ঘটে। অর্থাৎ তারা উভয়েই ধ্বংস হয়ে যায়।
যেসব প্রতিপদার্থের আধান আছে তাদেরকে "তড়িচ্চুম্বকীয় ফাঁদ" দিয়ে ধরে রাখা যায়। এই ফাঁদের মাধ্যমে একই আধানবিশিষ্ট সর্বোচ্চ ১০১২টি প্রতিপদার্থকে ধরে রাখা যায়। কিন্তু, সমআধানতো পরষ্পরকে বিকর্ষণ করে, তাই অনেগুলো সমআধান একসাথে রাখা সম্ভব না। যেমন, অনেকগুলো প্রতিপ্রোটন একসাথে রাখা যাবে না। একসময় তাদের বিকর্ষণ বল এতো বেশী হয়ে যাবে যে তড়িচ্চুম্বকীয় বল আর তাদের ধরে রাখতে পারবে না।
আধান নিরপেক্ষ প্রতিকণা বা প্রতিপরমাণু ধরে রাখা আরও কষ্টকর। এক্ষেত্রে ধ্রুব মানের তড়িৎ বা চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োগের ব্যবহার আরও সম্ভব না, কারণ আধান নিরপেক্ষ প্রতিকণার উপর তাদের প্রভাব খাটানোর কোন উপায় নেই। এগুলো ধরে রাখার জন্য বিজ্ঞানীরা "চৌম্বক বোতল" (চৌম্বক ভ্রামকের উপর ক্রিয়ারত অসমসত্ত্ব চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে) এবং "আলোক ফাঁদ" (লেজারের মাধ্যমে) এর চিন্তাভাবনা করছেন। কিন্তু এগুলো এখনও নির্মাণাধীন পর্যায়ে আছে।

প্রতিপদার্থের ভবিষ্যৎ ব্যবহার কি?

প্রতিইলেকট্রনের (পজিট্রন) ব্যবহার ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত পেট (Positron-Emission Tomography = PET) পজিট্রনের মাধ্যমে কাজ করে। ভবিষ্যতে টিউমার irradiation এর কাজে প্রতিপ্রোটনের ব্যবহার শুরু হতে পারে।
কিন্তু সার্নে কেবলমাত্র প্রকৃতির নিয়ম অধ্যয়নের কাজে প্রতিপদার্থ ব্যবহৃত হয়। আমরা পদার্থ ও প্রতিপদার্থের মধ্যকার প্রতিসাম্য বিষয়ক প্রশ্নের উপর গুরুত্ব আরোপ করি। সংক্ষেপে বলতে গেলে LHCb পরীক্ষা বি-কোয়ার্ক ও প্রতি-বি-কোয়ার্ক এর ক্ষয় তুলনা করবে। এর পাশাপাশি প্রতিহাইড্রোজেনের মাধ্যমে খুব সূক্ষ্ণ যন্ত্রপাতি তৈরীর ব্যাপারেও আমরা আশাবাদী।

প্রতিপদার্থ পরমাণুর অস্তিত্ব আছে?

PS210 পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানীরা ১৯৯৫ সালে Low Energy Antiproton Ring (LEAR) এর মাধ্যমে পৃথিবীর প্রথম প্রতি-হাইড্রোজেন পরমাণু তৈরী করেছিলেন। এরপর ২০০২ সালে ATHENA ও ATRAP নামক দুটি পরীক্ষার মাধ্যমে হাজার হাজার প্রতিহাইড্রোজেন পরমাণু তৈরী করেন। এরপর এমনকি এ ধরণের লক্ষ লক্ষ পরমাণু তৈরী করা হয়। এই লক্ষ লক্ষ সংখ্যাটা অনেক বেশী মনে হলেও আসলে তা বেশী না। একটা খেলনা বেলুন প্রতিহাইড্রোজেন দিয়ে ভরে ফেলার জন্য আপনার এর থেকেও ১০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ গুণ বেশী প্রতিহাইড্রোজেন লাগবে! আমরা যে হারে এই প্রতিপদার্থ পরমাণু তৈরী করি তাতে প্রতিদিনের উৎপাদন জমিয়ে রাখলেও একটা খেলনা বেলুন ভরতে আমাদের কয়েক বিলিয়ন বছর লেগে যাবে। বুঝতেই পারছেন, এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌সের কাহিনী কেবলই কাল্পনিক।

আমরা প্রতিপদার্থ থেকে শক্তি উৎপাদনের আশা করতে পারি? আপনারা কি মনে করেন ভবিষ্যতে প্রতিপদার্থ দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে বা বড় বড় শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিপদার্থ থেকে শক্তি নেবে?

প্রতিপদার্থকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহারের কোন সম্ভাবনাই নেই। সৌর শক্তি, তেল, কয়লা বা এ ধরণের শক্তির উৎসগুলোর মত প্রতিপদার্থ প্রকৃতিতে ঘটে না। এগুলো যেখানে প্রকৃতিতেই পাওযা যায় সেখানে এক্ষেত্রে আমাদের প্রতিটি প্রতিকণা তৈরী করতে হবে। বোঝাই যাচ্ছে, পূর্ণবিলয়ের সময় যে শক্তি আমরা পাব তার চেয়ে অনেক বেশী শক্তি বিনিয়োগ করতে হবে।
আপনি প্রতিপদার্থকে শক্তি সংরক্ষণের মাধ্যমের সাথে তুলনা করতে পারেন, অনেকটা রিচার্জেবল ব্যাটারির মত। ব্যাটারিকে চার্জের মাধ্যমে যতটা শক্তি দেয়া হয়, তার চেয়ে কম শক্তি আমরা ফেরত পাই।
প্রতিপদার্থ উৎপাদনের কর্মদক্ষতা ভয়ানক রকম কম। বিনিয়োগকৃত শক্তির "১০^১০" ভাগের মাত্র এক ভাগ ফেরত পাওয়া যায়। এতোদিনে আমরা সার্নে যত প্রতিপদার্থ বানিয়েছি তার সবগুলো একসাথে জড়ো করে পূর্ণবিলয় ঘটানো হলে যে শক্তি পাওয়া যাবে তা দিয়ে সর্বোচ্চ একটা বৈদ্যুতিক বাতি কয়েক মিনিটের জন্য জ্বালানো যেতে পারে।

আমি আশা করে ছিলাম, প্রতিপদার্থই ভবিষ্যতে আমাদের শক্তি সমস্যার সমাধান করবে। তার মানে এটা ঘটার জন্য আরও অনেক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।

না, যতই গবেষণা করি এই মৌলিক পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে না। প্রতিপদার্থ কখনই আমাদের শক্তি সমস্যার কোন সমাধান এনে দিতে পারবে না। প্রথমত E=mc^2 সূত্র অনুযায়ী প্রতিপদার্থ তৈরীর জন্য আপনার অনেক শক্তি লাগবে, এবং এর ছিঁটেফোটা শক্তিও আপনি ফেরত পাবেন না।
উপরন্তু, শক্তি থেকে পদার্থ ও প্রতিপদার্থ তৈরীর সময় এমন কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম কাজ করে যার কারণে উপজাত হিসেবে আরও অনেকগুলো ক্ষণস্থায়ী কণা ও প্রতিকণার জন্ম হয়। যেমন: মিউয়ন, পাইয়ন, নিউট্রিনো ইত্যাদি। এই কণাগুলো উৎপাদন প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, সেইসাথে তাদের শক্তিও হারিয়ে যায়।
প্রতিপদার্থ কেবল তখনই শক্তির উৎস হতে পারে যখন আপনি কোথাও প্রতিপদার্থের খনির সন্ধান পাবেন। হয়ত কোন ছায়াপথ বা মহাকাশের কোন অঞ্চলে প্রতিপদার্থের খনি পাওয়া গেল, যেমন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়াগায় তেলের খনি পাওয়া যায়। কিন্তু এবারেও আপনাকে হতাশ হতে হবে। কারণ আমরা যে কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্ব পর্যবেক্ষণ করেছি তাতে দেখা যাচ্ছে, মহাবিশ্ব সম্পূর্ণ স্বাভাবিক পদার্থে গঠিত, কোথাও কোন প্রতিপদার্থ নেই।
এ প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলে নেয়া যাক। এসব দেখে বোঝাই যাচ্ছে, অতি উচ্চ শক্তির অবস্থাতে পদার্থ-প্রতিপদার্থের প্রতিসাম্য থাকে না। মহা বিস্ফোরণের ঠিক পরপর যে অবস্থা ছিল তাকে আমরা উচ্চ শক্তির বলতে পারি। সে সময়ই প্রতিসাম্য লংঘিত হয়েছিল। ভবিষ্যতের গবেষণার মাধ্যমে জানা যাবে, কিভাবে এই অপ্রতিসাম্যের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিপদার্থ বোমা বানানো সম্ভব?

কক্ষনো না। বর্তমানে ভুরি ভুরি হাইড্রোজেন বোমা আছে। এই বোমার মত শক্তিশালী একটা প্রতিপদার্থ বোমা বানাতে হলেও আমাদের বিলিয়ন বিলিয়ন বছর লেগে যাবে।
সমাজবিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে বিষয়টাকে এভাবে বলা যায়। পারমাণবিক বোমা তৈরীর অনেক বছর আগেই বিজ্ঞানীরা এর সম্ভাব্যতার কথা স্বীকার করতেন। অবশেষে যখন তা উদ্ভাবিত হল, তখন জনগণ তা দেখে বিস্মিত হল। আর এখন জনগণ কোন না কোনভাবে ধারণা করছে যে, প্রতিপদার্থ বোমা তৈরী করা সম্ভব। অথচ, বিজ্ঞানীরা বলছেন তা সম্ভব না।

প্রতিপদার্থ নিয়ে মিডিয়াতে কোন প্রচারণা হয়নি কেন?

প্রতিপদার্থ নিয়ে মিডিয়াতে অনেক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু সেই আলোচনাগুলো ছিল বৈজ্ঞানিক মিডিয়াতে। আর প্রতিপদার্থ বিষয়টা "নতুন" না। ৭৫ বছর ধরে প্রতিপদার্থের অস্তিত্ব জানা আছে ও তা নিয়ে গবেষণা চলছে। নতুন যেটা তা হল, এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌সের কথামত প্রতিহাইড্রোজেন বোমা তৈরীর সম্ভাবনা।

প্রতিপদার্থের কর্মদক্ষতা কি আসলেই ১০০%?

এটা নির্ভর করে কর্মদক্ষতা বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন তার উপর। আপনি যদি m/2 গ্রাম পদার্থ ও m/2 গ্রাম প্রতিপদার্থের মধ্যে পূর্ণবিলয় ঘটান তাহলে E=mc^2 সূত্র অনুযায়ী শক্তি উৎপন্ন হবে। ভর সত্যিই ১০০% কর্মদক্ষতার সাথে শক্তিতে পরিণত হবে।
কিন্তু আসল কথা সেটা না। কথা হচ্ছে, এই m/2 গ্রাম প্রতিপদার্থ তৈরীর জন্য আপনার কি পরিমাণ কষ্ট করতে হবে। এই প্রতিপদার্থ তৈরীর প্রক্রিয়াটা অতি মাত্রায় অলাভজনক। এর কর্মদক্ষতা শূন্যের কাছাকাছি। শক্তিকে যখন ভরসম্পন্ন কণায় পরিণত করা হয় তখন অনেকগুলো ক্ষণস্থায়ী কণা ও প্রতিকণা তৈরী হয়। এরা ক্ষয় হয়, সেই সাথে শক্তি হারাতে থাকে। শক্তির অধিকাংশই অপচয় হয়, স্থিতিশীল প্রতিকণা (যেমন, পজিট্রন ও প্রতিপ্রোটন) ধরে রাখতে না পারার কারণে।
সবকিছু আলোর গতিতে ঘটে যায়। উৎপন্ন কণাগুলো সম্ভাব্য সব দিকে ছুটে যায়। অনেকটা ক্যাম্পফায়ারে রান্না করার মত। তাপের খুব কম অংশই খাবারের উপর পড়ে, অধিকাংশই অন্যদিকে অপচয় হয়ে যায়।

বইয়ে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে আপনারা কি সেভাবেই প্রতিপদার্থ তৈরী করেন?

না। সার্নে প্রতিপদার্থ তৈরী ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া মোটেও বইটির মত না। আপনি লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে প্রতিপদার্থ তৈরীর প্রক্রিয়া দেখতে পারবেন না, আর এলএইচসি-তো এখনও পুরোদমে কাজই শুরু করেনি।
প্রতিপ্রোটন তৈরীর জন্য আমরা একটা ধাতব ব্লকের (তামা বা টাংস্টেন) মাধ্যমে আলোর বেগে পরষ্পরের দিকে ধেয়ে আসা প্রোটনের সংঘর্ষ ঘটাই। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, ২৫ গিগা ইলেকট্রন ভোল্টে এই সংঘর্ষ ঘটানো হয়। এই সংঘর্ষ অনেক কণা তৈরী করে যার মধ্যে কোন কোনটি হয় প্রতিপ্রোটন। কেবল এই প্রতিপ্রোটনগুলোই দরকারী, তাও সব না, যেগুলো সঠিক দিকে ছুটে যায় কেবল সেগুলোই।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আমাদের শক্তির অপচায়টা কোথায় হয়। এ যেন, বাগানের কেবল একটি ফুলগাছে পানি দেয়ার জন্য এমন স্প্রিংকলার ব্যবহার করা যার পানি পুরো বাগানে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা অবশ্যই যথাসাধ্য কর্মদক্ষ হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু মৌলিক কণার স্কেলে এই কাজটা করা বেশ কঠিন।

তবে আপনারা কেন এলএইচসি তৈরী করেছেন?

এলএইচসি তৈরীর উদ্দেশ্য প্রতিপদার্থ উৎপাদন না। এর উদ্দেশ্য এমন এক উচ্চ শক্তি ঘনত্ব তৈরী করা যে ঘনত্বের ক্রিয়াকর্মগুলো আমাদেরকে পদার্থবিজ্ঞানের কিছু মৌলিক রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করবে। এখানে ঘনত্বের কথা বলছি কারণ আমরা এর মাধ্যমে অনেক শক্তি উৎপন্ন করবো না, বরং এমন এক অবস্থা তৈরী করবো যেখানে শক্তির ঘনত্ব খুব বেশী। এলএইচসি'র ভেতরে চলমান প্রতিটি কণার শক্তি একটা উড়ন্ত মশার চেয়ে বেশী না। সবগুলোকে কণাকে একসাথে করলেও শক্তি খুব বেশী হবে না। কিন্তু এই শক্তিকে এতো কম স্থানে একত্রিত করা হবে যে ঘনত্ব অনেক বেড়ে যাবে। এই অবস্থা মহা বিস্ফোরণের ঠিক পরের অবস্থাকে নির্দেশ করে। সেটা পর্যবেক্ষণই আমাদের উদ্দেশ্য।
একটা স্থূল উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন, একটা মসৃণ মেঝের উপর দিয়ে এক লোক বুট জুতো পরে হেটে যাচ্ছেন যার ভর অনেক বেশী, আর একজন স্লিম মহিলা হিল জুতো পরে হেটে যাচ্ছেন। এখন মেঝেতে, বুট জোতার প্রভাব বেশী পড়বে না যদিও লোকটির ভর বেশী। বরং হিল জুতোর অগ্র প্রান্তের প্রভাব বেশী পড়বে। কারণ মহিলার ভরটা ঐ এক বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। সুতরাং মহিলার হিল জুতোর ছাপ মেঝেতে বেশী পাওয়া যাবে।
এলএইচসি'র কাজও এটা: অতি স্বল্প জায়গায় মোটামুটি বৃহৎ পরিমাণ শক্তি জড়ো করা। এতে যে উচ্চ শক্তি ঘনত্বের সৃষ্টি হবে তার মাধ্যমে মহা বিস্ফোরণের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা।

সার্নে কি আসলেই একটা ২৭ কিলোমিটার লম্বা কণা ত্বরক আছে?

এলএইচসি ত্বরক বৃত্তাকার যার পরিধি ২৭ কিলোমিটার। মাটির প্রায় ১০০ মিটার নিচে অবস্থিত একটা সুড়ঙ্গের মধ্যে এটা স্থাপিত। ঐ অঞ্চলের মানচিত্রে গোল চিহ্নটা দেখলেই আপনি এর অবস্থান টের পাবেন।

আসলে আপনারা সার্নে কেন প্রতিপদার্থ তৈরী করেন?

মূল কারণ প্রকৃতির কারণ অধ্যয়ন করা। পদার্থবিজ্ঞানের বর্তমান তত্ত্বগুলো প্রতিপদার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু মৌলিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। পরীক্ষার মাধ্যমে যদি এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পর্যবেক্ষণ না করা যায় তাহলে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। পুনরায় গবেষণায় নামতে হবে। বিজ্ঞান এভাবেই এগিয়ে চলে।
আরেকটা কারণ উচ্চ শক্তি ঘনত্ব তৈরী করা। পদার্থ ও প্রতিপদার্থের সংঘর্ষের মাধ্যমে এটা সম্ভব কারণ তারা যেখানেই মিলিত হয় সেখানেই তৎক্ষণাৎ পূর্ণবিলয় বাধিয়ে বসে। এই পূর্ণবিলয়ের সময় আরও কিছু মজাদার কণা তৈরী হয়। এই প্রক্রিয়াতেই কিন্তু ২০০০ সাল পর্যন্ত সার্নে Large Electron Positron (LEP) কলাইডার কাজ করেছে। শিকাগোর নিকটে অবস্থিত ফার্মিল্যাবেও এই প্রক্রিয়াতে টেভাট্রন চালানো হচ্ছে।

প্রতিপদার্থ থেকে কিভাবে শক্তি আহরণ করা যায়?

একটা পদার্থ ও প্রতিপদার্থ যখন একে অপরকে আঘাত করে তখন উভয়ের পূর্ণবিলয় ঘটে এবং খুব স্বল্প ঘনত্বের বিশুদ্ধ শক্তির সৃষ্টি হয়। এই শক্তির কারণেই পরবর্তীতে নতুন নতুন কণা ও প্রতিকণা তৈরী হয়। পূর্ণবিলয়ের কারণে সৃষ্ট এই নতুন কণা-প্রতিকণাগুলোর সংখ্যা ও ভর প্রাপ্ত শক্তির উপর নির্ভর করে।
নিম্ন শক্তিতে ইলেকট্রন ও পজিট্রনের পূর্ণবিলয়ের মাধ্যমে কেবল দুটি অতি উচ্চ শক্তির ফোটন তৈরী হয়। কিন্তু একই পূর্ণবিলয় অতি উচ্চ শক্তিতে ঘটলে শয়ে শয়ে নতুন কণা-প্রতিকণা তৈরী হতে পারে। এই কণাগুলোর ক্ষয়ের মাধ্যমে অন্যান্যের মধ্যে কিছু নিউট্রিনো তৈরী হয় যা পরিবেশের সাথে কোনরকম মিথস্ক্রিয়া করে না। তাই প্রতিপদার্থ শক্তি আহরণের জন্য খুব একটা উপযোগী না।

প্রতিপদার্থ কতটা নিরাপদ?

সম্পূর্ণ নিরাপদ। অবশ্য তা কত ক্ষুদ্র আয়তনে শক্তি জড়ো করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। আমরা যদি কয়েক গ্রাম প্রতিপদার্থ তৈরী করে ফেলি তাহলে ভয়ের কারণ আছে। কিন্তু সেটা করতে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর লেগে যাবে।

সেক্ষেত্রে, সার্নের কি জননিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কোন প্রোটোকল আছে?

প্রতিপদার্থ নিয়ে কোন ভয় নেই। সার্নের অন্যান্য অনেক কিছুর ক্ষেত্রেই নিরাপত্তার ব্যাপার-স্যাপার আছে, যেমনটা সব গবেষণাগারেই থাকে। যেমন, কিছু কিছু স্থানে উচ্চ ভোল্টেজ। এ ধরণের ঝুঁকির জন্য কারখানা সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই আছে। নিউক্লীয় শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের পাশে যেমন শক্তি লিকের কারণে তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি থাকে আমাদের এখানে তেমনটিও নেই।

এক গ্রাম প্রতিপদার্থে কি আসলেই ২০ কিলোটন নিউক্লীয় বোমার শক্তি আছে?

যে পারমাণবিক বোমা হিরোশিমা ধ্বংস করেছিল তার শক্তি ২০ কিলোটন টিএনটি'র সমান। এক কিলোটন টিএনটি থেকে সৃষ্টি হওয়া শক্তির পরিমাণ ৪.২ x ১০^১২ (১০ টু দ্য পাওয়ার ১২) জুল। একটা ৬০ ওয়াটের বাল্ব সেকেন্ডে ৬০ জুল শক্তি খরচ করে।
এবার প্রশ্নে আসা যাক। আপনি বোধহয়, এক গ্রাম প্রতিপদার্থের সাথে এক গ্রাম প্রতিপদার্থের হঠাৎ মিলন ঘটলে কতটুকু শক্তি উৎপন্ন হবে তা বলতে চাচ্ছেন। হিসাব করে দেখা যাক কি হয়।
১ গ্রাম পদার্থ আর ১ গ্রাম প্রতিপদার্থ মিলে মোট ২ গ্রাম বা .০০২ কেজি হয়। শক্তি পরিমাপের জন্য E=mc^2 সূত্র ব্যবহার করতে হবে যেখানে c হল আলোর বেগ তথা ৩০০,০০০,০০০ মি/সে। হিসাব করলে দাড়ায়:
E = .০০২ x (৩০০,০০০,০০০)^২ কেজি মি^2/সে^2 = ১.৮ x ১০^১৪ জুল = ১৮০ x ১০^১২ জুল
৪.২ x ১০^১২ জুল যেহেতু এক কিলোটন টিএনটি'র শক্তিকে নির্দেশ করে সেহেতু ২ গ্রাম পদার্থ-প্রতিপদার্থ পূর্ণবিলয়ের শক্তি ১৮০/৪.২ = ৪২.৮ কিলোটন টিএনটি'র শক্তির সমান। এটা ২০ কিলোটনের প্রায় দ্বিগুণ।
এর অর্থ, হিরোশিমা ধ্বংসকারী বোমার মত একটা নিউক্লীয় বোমা বানাতে হলে আপনার মাত্র আধা গ্রাম প্রতিপদার্থই যথেষ্ট। কারণ বাকি আধা গ্রাম প্রতিপদার্থ তো হাতের কাছেই আছে।
সার্নে আমরা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০^৭ এর মত প্রতিপ্রোটন তৈরী করি। মাত্র ১ গ্রাম প্রতিহাইড্রোজেনে এরকম প্রায় ৬ x ১০^২৩ টি প্রতিপ্রোটন আছে। সুতরাং ১ গ্রাম বানাতে কতদিন লাগবে তা বুঝতেই পারছেন। তাও হিসাব করা যাক। বছরে মোট সেকেন্ডের সংখ্যা ৩ x ১০^৭। সুতরাং আমাদের প্রায় (৬ x ১০^২৩)/(৩ x ১০^৭) = ২ বিলিয়ন বছর লেগে যাবে। এখন কারও যদি এতোটা সময় অপেক্ষা করার ধৈর্য্য থাকে তবে তো কথাই নেই।

সার্নের বিজ্ঞানীরাই কি ইন্টারনেট উদ্ভাবন করেছিলেন?

না। ইন্টারনেট বিষয়ক মূল গবেষণা হয় ফ্রান্সে Louis Pouzin এর মাধ্যমে। পরবর্তীতে ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের Vint Cerf ও Bob Kahn সে দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু ওয়েব এখানেই উদ্ভাবিত হয়েছিল। বার্নার্স-লি তার ছোট্ট দল নিয়ে ১৯৮৯-৯৪ সালের মধ্যে এখানে ওয়েবের উদ্ভাবন ঘটান। ইন্টারনেট ও ওয়েবের কাহিনী "How the Web was born" নিবন্ধে পাওয়া যাবে। এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌সের মত সেক্সি না হলেও এই নিবন্ধের সবকিছু সত্য ও প্রত্যক্ষ প্রমাণভিত্তিক।

সার্ন কি আসলেই একটা "এক্স-৩৩ স্পেসপ্লেন" এর মালিক?

দুর্ভাগ্যবশত, না।

----- অক্টোবর ২০০৪ (রিভিশন: জানুয়ারি ২০০৮)

০২

লেখাটা এখনই অনেক বড় হয়ে গেছে। কিন্তু আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। পাঠকদের অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। কারণ এগুলো প্রশ্নোত্তর। দরকার হলে যার যে প্রশ্ন পছন্দ হয় সে প্রশ্নের উত্তরটা পড়ে নেবেন। ধারাবাহিকভাবে পড়ারও কোন দরকার নেই। তাই এগিয়ে যাওয়ার সাহস করছি।
auto
এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌সে "লিওনার্দো ভেট্রা" নামে একটা চরিত্র ছিল। সার্নের সেই বিজ্ঞানী যে প্রতিপদার্থ তৈরী করে। উপন্যাসের প্রথম পাতাতেই এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। অনেকটা ভিঞ্চি কোডের মত। অনেকে বলেন ড্যান ব্রাউন এই চরিত্র তৈরী করতে গিয়ে সার্নের একজন বিজ্ঞানী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। অর্থাৎ কিনা, ভেট্রা একজন বাস্তব বিজ্ঞানীরই সাহিত্যিক রূপায়ন। সেই বিজ্ঞানীর নাম "Rolf Landua"। তিনি ছিলেন সার্নের ATHENA পরীক্ষার মুখপাত্র। উল্লেখ্য, এই পরীক্ষার মাধ্যমেই সার্নে হাজার হাজার প্রতিপরমাণু তৈরী করা হয়।

উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর যথারীতি মিডিয়াতে তোলপাড় শুরু হয়। এই ইতালীয় বিজ্ঞানীরও সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। ইতালীয় পত্রিকা ‘Newton’ এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে। এবার সেই সাক্ষাৎকারের অনুবাদ তুলে দিচ্ছি:

---------------------------------

"এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌‌স" উপন্যাসটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

হ্যা, খুবই ভাল লেগেছে। সার্নের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক কিছু সাহিত্যিক স্বাধীনতার সুযোগ নিয়েছেন, কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই এতে বাস্তবতার সঠিক রূপায়ন ঘটেনি। তবে আমি কিন্তু অনেকটা বইয়ের মতই স্বপ্ন দেখি যে, একদিন সার্নের বিশাল বিশাল ভবন থাকবে, প্রাইভেট ফান্ডিং এর কোন অভাব হবে না, ব্যক্তিগত স্ক্র্যাম জেট থাকবে- কেবল নাসারই এ ধরণের একটা স্ক্র্যাম জেটের পরীক্ষামূলক সংস্করণ আছে। এলএইচসি-তো ২০০৭ সালে কাজ করা শুরু করবে, বর্তমানে আমাদের প্রতিপদার্থ কারখানার নাম "এন্টিপ্রোটন ডিসিলারেটর" (AD) যা বইয়ের বর্ণনার তুলনায় বেশ ছোট। কিন্তু সবকিছু সত্ত্বেও, এই "গুপ্তধন সন্ধান"-টা আমার খুব ভাল লেগেছে। এই "বিশ্ব পদার্থবিজ্ঞান বছর"-এ (২০০৫) সাধারণ্যে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারের কাজে কিছু মজার ধারণা নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।

লিওনার্দো ভেট্রা সম্বন্ধে আপনার কি ধারণা, বইয়ের যে চরিত্রটা আপনার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে?

বইয়ে দেখা যায়, লিওনার্দো ভেট্রা সার্নের বিজ্ঞানী যিনি প্রতিপদার্থকে ফাঁদে ফেলার কাজ করছেন, আমিও এ নিয়ে গবেষণা করি। কিন্তু লিওনার্দো একই সাথে ধর্মপ্রচারক, ঠিক এখানটাতেই আমার সাথে তার সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। লিওনার্দো একজন ব্যক্তি সর্বস্ব ঈশ্বরের ধারণায় বিশ্বাস করে, সে মনে করে পৃথিবী নিয়ে ঈশ্বরের বিশেষ উৎসাহ আছে, যেখানে পৃথিবী মহাবিশ্বের খুবই সাধারণ এক স্থানে অবস্থিত খুব নগণ্য একটি গ্রহ। আমি এভাবে চিন্তা করি না। আমি মনে করি, যে ভৌত সূত্রগুলো প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্থান-কালের প্রতিটি অংশকে "মহাজাগতিক ডিএনএ" এর মত চালনা করে, সেই সূত্রগুলোকেই ঈশ্বর হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়, যদি কেউ একান্তই ঈশ্বর শব্দটি ব্যবহার করতে চান।

এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌সে মূখ্য চরিত্র রবার্ট ল্যাংডন একটা পদার্থ-প্রতিপদার্থ পূর্ণবিলয় প্রত্যক্ষ করেন: তিনি দেখেন, একটা প্রতিপদার্থের নমুনাকে ছেড়ে দেয়ার পর তা পদার্থের সাথে মিলিত হওয়া মাত্র পূর্ণবিলয় ঘটছে এবং বিপুল শক্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এটা কি সম্ভব?

প্রতিপদার্থ পদার্থ সম্বন্ধে আমাদের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। কল্পনা করুন, একটা মুদ্রাকে সমপরিমাণ একটা প্রতি-মুদ্রার সাথে মিলিত করা হল। তারা সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং তীব্র শক্তির ঝলক দেখা যাবে। ভাবতে অবিশ্বাস্য লাগে যে, এ ধরণের কঠিন বস্তু চোখের নিমিষে বিকিরণে পরিণত হতে পারে। কিন্তু, বাস্তবে ঠিক এমনটিই ঘটে।

ড্যান ব্রাউনের বর্ণনামতে, "প্রতিপদার্থ চূড়ান্ত শক্তি উৎস। এটা ১০০% কর্মদক্ষতার সাথে শক্তি উৎপাদন করে (নিউক্লীয় বিয়োজনের কর্মদক্ষতা ১.৫%)। প্রতিপদার্থ রকেটের জ্বালানির তুলনায় ১০০,০০০ গুণ শক্তিশালী। কেবল ১ গ্রামে ২০ কিলোটন পারমাণবিক বোমার শক্তি থাকে, যে পারমাণবিক বোমা হিরোশিমার উপর আঘাত হেনেছিল।" কিন্তু নিউক্লীয় বিক্রিয়ার মত এর কোন ক্ষতিকর বা দূষণ সৃষ্টিকারী অবশেষ নেই। এই কথাগুলো কি সত্য?

আমি বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর ভক্ত। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাকে বলতেই হচ্ছে, এগুলো ভুল। এই কথা সত্যি যে, এক গ্রাম পদার্থের সাথে এক গ্রাম প্রতিপদার্থের সংযোগ ঘটলে ২০ কিলোটন পারমাণবিক বোমার মত বা এর চেয়েও বেশী শক্তি উৎপন্ন হতে পারে। কিন্তু এখানে একটা বড় সমস্যা আছে: একটা প্রতিপ্রোটন ও একটা পজিট্রন দিয়ে গঠিত প্রতিহাইড্রোজেন কোন শক্তি উৎস না। প্রতিপদার্থ তৈরী করা অতি মাত্রায় অলাভজনক কাজ, কারণ কোথাও কোন প্রতিপদার্থ খনি নেই যেখান থেকে প্রতিপদার্থ নিয়ে শক্তি উৎপাদন করা যাবে। অতীতে যদিও আমাদের মহাবিশ্বে প্রতিপদার্থ থেকে থাকে, তারপরও তারা অনেক আগেই সাধারণ পদার্থের সাথে পূর্ণবিলয়ের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।
সার্নে আমরা প্রচণ্ড বেগে গতিশীল কণার সংঘর্ষের মাধ্যমে প্রতিপদার্থ তৈরী করি, এতে মূলত গতিশক্তি ভরে পরিণত হয়। এখন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে যতই উন্নততর করা হোক না কেন, প্রকৃতির ধ্রুব সংরক্ষণ নীতিকে এড়ানোর কোন উপায় নেই। অর্থাৎ যে শক্তি দেয়া হবে তার চেয়ে বেশী শক্তি আউটপুট হিসেবে পাওয়া কখনই সম্ভব না। তাই বাস্তবে প্রতিপদার্থ তৈরী খুবই অলাভজনক, প্রথমে যে শক্তি বিনিয়োগ করা হয় তার বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ কেবল প্রতিপদার্থ হিসেবে পাওয়া যায়।

প্রতিপদার্থের মাধ্যমে কি বোমা বানানো সম্ভব?

না, অসম্ভব। এজন্য অবশ্য প্রতিপদার্থ তৈরীর অতি অলাভজনক প্রক্রিয়াকে ধন্যবাদ দিতে হবে। সামরিক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে তাই আমাদের মাথা ঘামানোর কোন প্রয়োজন নেই। উদাহরণ হিসেবে, ড্যান ব্রাউনের বর্ণনা অনুযায়ী ১ গ্রাম প্রতিপদার্থের কথাই ধরা যাক। সার্নের বর্তমান প্রযুক্তিতে ১০-২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে বছরে ১০ ন্যানোগ্রাম প্রতিপদার্থ তৈরী করা যায়। তার উপর এদের ধরে রাখার ঝামেলা তো আছেই। সব মিলিয়ে ১ গ্রাম তৈরীর জন্য ১০০ মিলিয়ন বছর ও ১০০০ ট্রিলিয়ন ডলার লাগবে। মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর জন্যও বোধহয় এটা ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। আর তাছাড়া ভুরি ভুরি হাইড্রোজেন বোমা থাকতে মানুষ কেন এতো কষ্ট করে ২০ কিলোটন প্রতিহাইড্রোজেন বোমা বানাতে যাবে? আর হাইড্রোজেন বোমার চেয়ে শক্তিশালী বোমাও তো এখন আছে। সুতরাং প্রতিপদার্থ আমাদের কোন ঝামেলায় ফেলে দেবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না।

উপন্যাসে ড্যান ব্রাউন প্রতিপদার্থকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, "চূড়ান্ত অস্থিতিশীল, এর পাশাপাশি অতি মাত্রায় বিস্ফোরণ্মুখ, আর যেকোন কিছুর সংস্পর্শে এলেই তা জ্বলে উঠে.. এমনকি বাতাসেরও।" বাস্তবে প্রতিপদার্থ সংরক্ষণ কি এতোটাই কঠিন?

বাস্তবেও এতোটাই কঠিন। ড্যান ব্রাউনের এই বর্ণনা সম্পূর্ণ সঠিক। প্রতিপদার্থ গবেষকদের সবচেয়ে বড় শত্রু বাতাস, এবং অবশ্যই অন্যান্য সব পদার্থ। প্রতিপদার্থকে যে পাত্রে রাখা হচ্ছে তার দেয়ালেরও সংস্পর্শে আসতে দেয়া যায় না, রাখতে হয় পুরো শূন্য স্থানে, অনেকটা বহুদূরের মহাকাশের মত স্থানে। আমরা খুবই স্পর্শকাতর প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, তাপমাত্রা প্রায় পরম শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে এনেছি। প্রতিনিয়ত লক্ষ্য রাখছি, যেন প্রতিপদার্থ চলার পথে কোন পরমাণুর সাথে দেখা করতে না পারে। দেখা হলেই শেষ, তৎক্ষণাৎ বিলয়।

উপন্যাসে লিওনার্দো ভেট্রা প্রতিপদার্থকে ধারকের দেয়ালেরও নাগালের বাইরে শূন্য স্থানে ঝুলিয়ে রাখার জন্য তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করেন। আপনারা গবেষণাগারেও কি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেন?

অনেকটা এরকমই। প্রতিপদার্থের উপাদান যেমন প্রতিপ্রোটন বা পজিট্রনের আধান আছে, তাই তড়িৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে এদের প্রভাবিত করা যায়।প্রতিহাইড্রোজেন পরমাণু তৈরী হয়ে যাওয়ার পর তা আধান নিরপেক্ষ হয়ে যায়, তাই একে ধরে রাখা আরও কষ্টকর হয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত কেউ প্রতিহাইড্রোজেন পরমাণু ধরে রাখার কৌশল বের করতে পারেনি, কিন্তু আমাদের পরবর্তী উদ্দেশ্য এটাই। আমার বর্তমান গবেষণার বিষয় প্রতিহাইড্রোজেন ধরে রখার উপযোগী ফাঁদ তৈরী করা, ড্যান ব্রাউন যেভাবে বলেছেন ঠিক সেভাবেই। সুতরাং, তিনি আমাদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছেন। বিজ্ঞান সবসময়ই কল্পকাহিনী ধরে ফেলার চেষ্টা করছে।

বর্তমানে কি প্রতিপদার্থের কোন ব্যবহারিক প্রয়োগ আছে?

প্রতিপদার্থ ইতোমধ্যেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগনিরুপণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর নাম 'Positron Emission Tomography'। এটা পজিট্রন নিঃসরণকারী পরমাণু ব্যবহার করে, এই পরমাণুগুলো দেহের ভেতর চালনা করা হয় এবং পূর্ণবিলয় থেকে আসা বিকিরণের মাধ্যমে দেহের কিছু কিছু অংশ সূক্ষ্ণভাবে দেখা যায়। ভবিষ্যতে এর সম্ভাব্য ব্যবহারের মধ্যে প্রথমেই আসে ক্যান্সার নিরাময়ে মেডিকেল থেরাপি। প্রতিপদার্থের মাধ্যমে হয়ত ক্যান্সার কোষ আরও সূক্ষ্ণভাবে ধ্বংস করা যাবে। এই ব্যাপারে আমরা এখনও নিশ্চিত না। এজন্য সার্নে বর্তমানে প্রতিপদার্থ পূর্ণবিলয়ের জৈবিক প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা হচ্ছে।
এছাড়া ভবিষ্যতের নিউক্লীয় বিয়োজন বিক্রিয়া চালিত মহাকাশ ভেসেলে ম্যাচের কাঠি হিসেবে প্রতিপদার্থ ব্যবহৃত হতে পারে, এটা অবশ্যই এখনও কল্পবিজ্ঞানের স্তরে আছে। কিন্তু, স্বভাবতই এ নিয়ে আমি বেশী কিছু বলে বোকা বনে যেতে চাই না। কারণ ইতিহাস বলে, ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা প্রচুর ভুল করেন। ১৯৬০-এর দশকে লেজার বা কম্পিউটার নিয়ে কি বলা হতো বুক ফাটিয়ে হাসতে চাইলে তা একবার দেখে নিন।

----- আগস্ট ২০০৫

পরিশিষ্ট

ব্যবহৃত পরিভাষা

Annihilation - পূর্ণবিলয়
Antiatom - প্রতিপরমাণু
Antimatter - প্রতিপদার্থ
Antiparticle - প্রতিকণা
Atomic bomb - পারমাণবিক বোমা
Charge - আধান
Conservation principle - সংরক্ষণ নীতি
Efficiency - কর্মদক্ষতা
Electromagnetic - তড়িচ্চুম্বকীয়
Nuclear bomb - নিউক্লীয় বোমা
Nuclear fission - নিউক্লীয় বিয়োজন
Nuclear fusion - নিউক্লীয় সংযোজন
Nuclear reaction - নিউক্লীয় বিক্রিয়া
Particle accelerator - কণা ত্বরক

সূত্রঃ

- Spotlight: Angels and Demons
- Interview with Rolf Landua


মন্তব্য

খেকশিয়াল এর ছবি

এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌স এখনো পড়ি নাই, তবে প্রতিপদার্থ নিয়ে এটা খুবই ভাল পোস্ট । ধন্যবাদ শিক্ষানবিস কে ।

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

শিক্ষানবিস এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।
এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌সে থ্রিল ভিঞ্চি কোডের চেয়েও বেশী। এটা নিয়ে তো আগামী বছর সিনেমাও হচ্ছে। পরিচালক রন হাওয়ার্ডই। অভিনয়েও টম হ্যাংকস থাকছে। ভিঞ্চি কোডের মত না পচলেই হয়। আমার মন বলছে, এটা ভাল হবে। কারণ এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌সের কাহিনীটা সিনেমার জন্য ভিঞ্চি কোডের চেয়ে উপযোগী।
দেখা যাক কি হয়।

খেকশিয়াল এর ছবি

ভিঞ্চি কোড মুভি করাটা মনে হয় অনেক কষ্টের ব্যাপার হয়েছিল, যেখানে একেকটা চাপ্টার একেকটা মুভি হয়ে যায়, সেখানে গল্পটাকে কেটেকুটে রান্না করতে হাওয়ার্ড মশাইকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে । হ্যা, এটাও মুভি হবে জানতাম, দেখা যাক, ভাল হলেই ভাল ।

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

শিক্ষানবিস এর ছবি

একটা ফোরামে দেখলাম চিত্রনাট্য লেখার কাজ সেই Akiva Goldsman কেই দেয়া হয়েছে যিনি রন হাওয়ার্ডের আগের অনেকগুলো ছবির চিত্রনাট্যও লিখেছেন। "আ বিউটিফুল মাইন্ড" এর জন্য অস্কারও পেয়েছেন।
তবে এবার নাকি গোল্ড্‌সম্যানকে সবচেয়ে বেশী অর্থ দেয়া হচ্ছে। এক চিত্রনাট্যের জন্য এতো অর্থ তার আগে কখনও মেলেনি। ৪ মিলিয়ন ডলার।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

সাক্ষাৎকার পড়ে যা বুঝলাম- ড্যান ব্রাউন অতিরিক্ত কল্পনা করে ফেলছেন। সার্ন বলছে একটা শক্তিশালি বোমা বানানোর জন্য এন্টিম্যাটার যোগাড় করতে দুই বিলিয়ন বছর লাগবে- সেখানে ড্যান ব্রাউন একটু বেশি বেশি করে ফেললেন না?

যাই হোক এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস বইটা আমার দ্বিতয় ফেবারিট ড্যান ব্রাউনের চাইরটা বইয়ের মধ্যে। এক নাম্বার ডিসেপশন পয়েন্ট। আর ডিজিটাল ফোর্ট্রেস থার্ড ক্লাস মনে হইছে।

প্রথম যিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি বেশ অমায়িক। মনে হচ্ছিল প্রেমিকার সাথে ঠাণ্ডা মাথায় সমস্যা নিয়ে আলাপ করছেন।

আর বিজ্ঞানী সাহেবের একটা কথা খুব পছন্দ হইছে।

বিজ্ঞান সবসময়ই কল্পকাহিনী ধরে ফেলার চেষ্টা করছে।

ড্যান ব্রাউন কী বলে?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

শিক্ষানবিস এর ছবি

ব্রাউন আসলেই একটু বেশী চিন্তা করে ফেলছেন।
চারটা বইয়ের মধ্যে পছন্দের দিক দিয়ে ভিঞ্চি কোডই সবচেয়ে ভাল লেগেছে। তবে ডিসেপশন পয়েন্টও খুব কাছাকাছি।
আসলেই, সাক্ষাৎকার পড়লে বোঝা যায়, বিজ্ঞানী ড্যান ব্রাউনের ভক্ত। এজন্যই সার্ন যতটা কাটকাট উত্তর দিয়েছে তিনি ততটা কাটকাট উত্তর দেননি। একটু সমীহ করেছেন।
তার এই উক্তিটা আমারও ভাল লাগছে।

ড্যান ব্রাউন বই লেখার পর কি বলেছেন সেটাও জানা দরকার। বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।
তার সাইটে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, বইয়ের ভুলটা তিনি পরেও করেছেন। প্রতিপদার্থ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি একে শক্তির উৎস হিসেবেই বর্ণনা করেছেন। সেই এঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডিমন্‌সের কথাগুলোই:

Antimatter is the ultimate energy source. It releases energy with 100% efficiency (nuclear fission is 1.5% efficient.) Antimatter is 100,000 times more powerful than rocket fuel. A single gram contains the energy of a 20 kiloton atomic bomb--the size of the bomb dropped on Hiroshima. In addition to being highly explosive, antimatter is extremely unstable and ignites when it comes in contact with anything...even air. It can only be stored by suspending it in an electromagnetic field inside a vacuum canister. If the field fails and the antimatter falls, the result is a "perfect" matter/antimatter conversion, which physicists aptly call "annihilation." CERN is now regularly producing small quantities of antimatter in their research for future energy sources. Antimatter holds tremendous promise; it creates no pollution or radiation, and a single droplet could power New York City for a full day. With fossils fuels dwindling, the promise of harnessing antimatter could be an enormous leap for the future of this planet. Of course, mastering antimatter technology brings with it a chilling dilemma. Will this powerful new technology save the world, or will it be used to create the most deadly weapon ever made?

ব্রাউনের মূল সমস্যাটা হল, উনি বলছেন সার্ন শক্তি উৎস তৈরী করার জন্যই প্রতিপদার্থ বানাচ্ছে। কিন্তু সার্ন তো বলেই দিল, তাদের সে ধরণের কোন ইচ্ছা নেই এবং সেটা সম্ভবও না।

অভিজিৎ এর ছবি

খুবই মজা পেলাম লেখাটা পড়ে। এন্টিম্যাটার বা প্রতিপদার্থ নিয়ে আমার আগ্রহ অনেকদিনের। শিক্ষানবিসের লেখাটা আমার আগ্রহের আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিলো! আমি আমার নগন্য জ্ঞান থেকে কিছু তথ্য পাঠকদের জন্য শেয়ার করি।

আসলে এটা ঠিক যে প্রতিপদার্থ বোমা বানানো হয়ত এখনো 'ফ্যান্টাসির' বা 'ড্যান ব্রাউনীয় কল্পনার' পর্যায়ে আছে বলে মনে হতে পারে, তবে 'ভবিষ্যতের টেকনলজি' হিসবে এর ব্যাবহার কিন্তু একেবারে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এর একটা বড় কারণ হল এই টেকনলজির 'এফিশিয়েন্সি'। যে এটোমিক বমার কথা আমরা হরহামেশা শুনি, এফিশিয়েন্সির দিক থেকে সেগুলো কিন্তু একেবারেই 'নগন্য' - মাত্র ১% এফিশিয়েন্ট। আমরা ইউরেনিয়ামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশকেই শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি। কিন্তু একটা এন্টিম্যাটার বোমা হবে ১০০% এফিশিয়েন্ট - তার পুরো ভরটুকুকে শক্তিতে রূপান্তরিত করবে।

তবে আমার এন্টিম্যাটার নিয়ে আগ্রহ 'বোমা বানানোর' জায়গায় নয় একটু ভিন্ন জায়গায়। এন্টি ম্যাটার জিনিসটাই আমার কাছে এক ধরনের নৈর্বৈক্তিক আবেদন তৈরি করে। আমরা যে সমস্ত কণা দেখি সেগুলোর সব গুলারই একটা কইরা 'এন্টি' রূপ থাকতে পারে - বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই ভাবছিলেন। কাজেই তারা যখন ইলেক্ট্রনের প্রতিরূপ হিসেবে 'পজিট্রনের' সন্ধান পেলেন তারা খুব একটা অবাক হননি। পজিট্রনগুলা ইলেক্ট্রনের মতই, কেবল এদের চার্জ ঋণাত্মক হওয়ার বদলে হয় ধণাত্মক। এর পর ১৯৫৫ সালে খোঁজ পাওয়া গেল এন্টি-প্রোটনের। একই রকম ভাবে, এন্টিপ্রটোনের স্বভাব চরিত্র প্রটোনের মতই কেবল এদের চার্জ নেগেটিভ।
এর পরের ধাপের টাস্কিটা লাগাইলো সার্ণ। ১৯৯৫ সালে তারা এণ্টি হাইড্রোজেন বানায়া দেখাইলো। (নরমাল হাইড্রজেন এটম তৈরি হয় প্রটোন আর ইলেক্ট্রন দিয়া - তা তো আমরা জানি। এইবার এই এন্টিহাইড্রোজেনের গঠনটা নিশ্চয় কল্পনা করতে পারছেন। হ্যা - এতে এন্টি প্রটোনের চারিদিকে এন্টি ইলেক্ট্রনেরা ঘুরে! সার্ণের পাশাপাশি ফার্মি ল্যাবও এই প্রতি-অনু বানিয়ে দেখালো অচীরেই।

এখন তাহলে ব্যাপার হইলো, পজিট্রন, এন্টিপ্রটোন, এন্টি হাইড্রোজেন যদি হইবার পারে, তাহলে সব কিছুরই তো 'এন্টি'রূপ থাকবার পারে - এন্টি-এলিমেন্ট, এন্টি-কেমেস্ট্রি, এন্টি-পিপল, এন্টি-আর্থ....এমনকি এন্টি-ইউনিভার্সও। অন্ততঃ তাত্ত্বিক দিক দিয়ে যে অসম্ভব না, তা প্রায় সব বিজ্ঞানীই আইজ একমত।

এখন এন্টিইউনিভার্সের ব্যাপার স্যাপার কেমন হইব? সেই ইউনিভার্সের অধিবাসীরাই বা কেমনতর 'চীজ' হইবো? এই নিয়া বিজ্ঞানীরা নানা রকম স্পেকুলেশন করেছেন। আমার মত গোয়াল ঘরের গরুরা না - পল ডিরাক, রিচার্ড ফেইনম্যানের মত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা দেই লইয়া গবেষণা করছেন, মজার মজার থিওরী কপচাইছেন - হেইগুলান লইয়া কন্দিন পারলে লিখার চেষ্টা করমু। সেই সমস্ত ইউনিভার্সে সব কিছুই হইবো উলটা - মানুষ মরা থেইক্যা জ্যাতা হইবো, ডিম ভাজা থেইকা কাঁচা হইবো, বয়স বাড়নের বদলে কমবো - মানুষ বুড়া থেইক্যা ছোড়া হইব। কন দেখি কি তাজ্জিব ব্যাপার! ফেইনম্যান কয়, এন্টিইউনিভার্সের অধিবাসীদের আমরা ডান-বাম বুঝাইতে পারুম না... আমগো জন্য যেটা ডাইন...তাগো জন্য মনে হয় বাম, আরো ব্যাপার স্যাপার আছে... ওই ইউনিভার্সের এলিয়েনদের সাথে আমরা হ্যান্ডশেক করলে বিস্ফোরণ ঘইটা সব ধ্বংস হইবা যাইবো। কি তামসা। তামসার এখানেই শেষ না- ফেইনম্যানের স্পেকুলেশনের ভুল ধইরা - প্যারিটি রিভার্স আর চার্জ-রিভার্স ইউনিভার্স থাকন যে সম্ভব না তা দেখাইয়া নোবেল পুরস্কার পাইছে য়্যাং আর লি (১৯৫৭), জেমস ক্রনিন আর ভ্যাল ফিচ (১৯৬৪)।

এখন এন্টি ইউনিভার্স বাদ দেই, এন্টিবোমাবাজিও বাদ দেই না হয় - প্রাক্টিক্যালি প্রতিপদার্থ ব্যবহারের সম্ভাবনা কতটুকু? গাড়িতে রকেটে কি জ্বালানী হিসেবে প্রতিপদার্থ ব্যবহার করা যাবে? এ নিয়াও গবেষণা হইতাছে। পেন্সিলবেনিয়া ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ গার্ল্যান্ড স্মিথ দেই লইয়া অনেক গবেষণা করেছেন। হেই লইয়াও লেখনের ইচ্ছা আছে আমার...কখনো।

আরেকটা ব্যাপার... এন্টিম্যাটার যে পৃথিবীর সব চাইতে দামী পদার্থ জানেন তো? জিনিসএর দামের কথা মনে হইলেই আমগো মনে সোনাদানার কথা মনে আসে, আসে ডায়মন্ডের কথা, না? এই সমস্ত সোনা দানার দাম এন্টিম্যাটারের দামের তুলনায় নস্যি। একগ্রাম এন্টিম্যাটারের দাম - ৬২.২ ট্রিলিয়ন ডলার! নাসা নাকি চেষ্টা করতাছে মাইক্রোগ্রাম এন্টিম্যাটার ৫০০০ ডলারে নামাইতে - তার আগে জ্বালানি-মালানীর চিন্তা বাদ দাও বাপ!



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

শিক্ষানবিস এর ছবি

অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ।
তার মানে আশা এখনও আছে। প্রতিপদার্থের কর্মদক্ষতাটা আসলেই বিস্ময়কর। কাজে লাগাতে পারলে তো কথাই নেই। গার্ল্যান্ড স্মিথের গবেষণা নিয়ে আপনার লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
এই কথাটা ভেবে দেখিনি। আসলেই তো। বিশ্বের সবচেয়ে দামী জিনিস প্রতিপদার্থ।

স্বপ্নাহত এর ছবি

সত্যি কথা কই। লেখা পুরাটা পড়িনাই। মনিটরে টানা তাকায় থাকলে ইদানীং কেমন কেমন জানি করে। তবে এন্জেলস এন্ড ডেমনস বইটা আমার প্রিয় একটা বই।

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

শিক্ষানবিস এর ছবি

সত্যি কথা কই, এই লেখা পুরাটা পড়ার দরকার নাই। প্রশ্নগুলার উপর চোখ বুলিয়ে যেতে যেতে যেটা ভাল্লাগলো সেটার উত্তর পড়াই যথেষ্ট। আমার অন্তত তাই মনে হয়।
এইটা আমারও একটা প্রিয় বই।

রেজওয়ান এর ছবি
শিক্ষানবিস এর ছবি
মুশফিকা মুমু এর ছবি

বইটা পুরোটা পরা হয়নি, মাত্র ২০ পেজ পড়েছিলাম তারপর কেনজানি আর পড়া হয়নি, শেষ করে আপনার লেখাটা আবার পড়ব হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

শিক্ষানবিস এর ছবি

আবার পড়া শুরু দেন। থ্রিল একবার শুরু হলে আর থামতে পারবেন না।

সবজান্তা এর ছবি

চলুক লেখাটা ভালো লেগেছে। বেশ ঝরঝরে অনুবাদ, আর যারা উত্তর দিয়েছেন তাঁরাও বেশ ব্যাখ্যা করেই দিয়েছেন।

একটা প্রশ্ন মাথায় আসলো হঠাৎ করে। প্রতিপদার্থ আর পদার্থের বিলয়ের মধ্যে কোন বিশেষত্ব কাজ করে যে, কর্মদক্ষতা শতভাগ হয় ? শক্তিপ্রাপ্তির কোন প্রক্রিয়াতেই এত উচ্চ কর্মদক্ষতার কথা আগে শুনেছি বলে মনে পড়ে না...


অলমিতি বিস্তারেণ

শিক্ষানবিস এর ছবি

আমি খুব বেশী কিছু জানি না। তবে মনে হয় ব্যাপারটা এরকম:
প্রতিপদার্থ মানেই পদার্থের পুরো বিপরীত এবং সে পদার্থের সাথে এলে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এখন এক গ্রাম প্রতিপদার্থের সাথে হুবহু এক গ্রাম পদার্থের সংস্পর্শ ঘটলে দুজন দুজনকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দেবে। কোন ভরই অবশিষ্ট থাকবে না। কারণ দুজনের প্রতিটি মৌল কণা একে অপরের সাথে ঠোক্কর লাগাবে। আর এই পুরো ভরটাই শক্তিতে পরিণত হবে। সুতরাং কর্মদক্ষতা ১০০% হবে। কিন্তু এই পুরোটা শক্তি আমরা আহরণ করতে পারব বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে পূর্ণবিলয় ঘটনাটির কর্মদক্ষতা ১০০% হলেও বাস্তবে তা কম হতে পারে। তা নির্ভর করবে সৃষ্ট শক্তি আহরণের জন্য নির্মীত যন্ত্রের কর্মদক্ষতার উপর।

নীল [অতিথি] এর ছবি
...অসমাপ্ত [অতিথি] এর ছবি

প্রশ্নোত্তরগুলো খুবই চমৎকার! অনুবাদ খাসা হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।