তারার মত ভরবিশিষ্ট ছোট কৃষ্ণ বিবরগুলো আশপাশের গ্যাস নিজের মধ্যে টেনে নেওয়ার সময় এক্স-রশ্মি নিসৃত হয়।
কিন্তু ডারহাম ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, এখন তারা অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবর (সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল) থেকেও এ ধরণের এক্স-রশ্মির সন্ধান পেয়েছেন। ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত যে অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবরের ভর সূর্যের তুলনায় কয়েক মিলিয়ন গুণ বেশী, সম্প্রতি সেগুলোর কাছ থেকে আসা এক্স-রশ্মি সনাক্ত করা হয়েছে।
১৭ই সেপ্টেম্বর ডারহামের গবেষক দল নেচার পত্রিকায় এই সনাক্তকরণের ফল প্রকাশ করেছেন।
গবেষকরা বলছেন, এই রশ্মির মাধ্যমে অনেক দূরের অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবরগুলোর ভর পরিমাপ করা যাবে এবং তাদের সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানা যাবে।
তারা ইউরোপের "নিউটন-এক্সএমএম" (Newton-XMM) মহাকাশ দুরবিন ব্যবহার করে "REJ1034+396" নামক ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবর পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এমন সময়ই এই কৃষ্ণ বিবর থেকে আসা বিস্ময়কর এক্স-রশ্মির স্পন্দন (কুয়েসাই-পিরিয়ডিক স্পন্দন) ধরা পড়ে।
অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবর
কৃষ্ণ বিবর জন্মের ইতিহাসটা প্রায় সবারই জানা। তারার সব জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে, অভিকর্ষের প্রভাবে তা কেন্দ্রের দিকে ধ্বসে পড়তে থাকে। সংকোচনের কারণে তাপ বাড়তে থাকে। তাপ অনেক বেড়ে গেলে হিলিয়াম সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন ও কার্বন তৈরী শুরু করে। এর ফলে আবার ভারসাম্য ফিরে আসে। এ সময় যে বিক্রিয়া চলে তা বেশ অস্থিতিশীল। এ সময়ই বিক্রিয়ার পরিমাণ হঠাৎ খুব বেড়ে যাওয়া বা অন্যান্য কারণে তারার বহির্ভাগ আলগা হয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে গ্রহ নীহারিকা তৈরী হতে পারে, আবার তীব্র বিস্ফোরণ হলে অতিনবতারাও তৈরী হতে পারে।
বহির্ভাগ চলে যাওয়ার পর কেন্দ্রে যে অবশেষ থাকে তার ভরের উপরই নির্ভর করে তারার পরবর্তী দশা। এই অবশেষের ভরও যদি সূর্যের ভরের ৩-৪ গুণ হয় তাহলে তা আবার কেন্দ্রের দিকে ধ্বসে পড়তে থাকে। কেউই তার ধ্বস ঠেকাতে পারে না। ফলে তার অভিকর্ষ বল বাড়তেই থাকে। অভিকর্ষ বল বাড়তে থাকলে একসময় কোন কিছুই তার বন্ধন ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে না। অর্থাৎ তারার অভিকর্ষ বল কোন কিছুকেই পালাতে দেয় না, এমনকি আলোকেও না। অর্থাৎ তার মুক্তিবেগ হয় আলোর বেগের চেয়ে বেশী। আলোও আসতে পারে না বলে তাকে দেখা যায় না, এজন্যই বলে কৃষ্ণ বিবর।
এতো গেল তারার মত ভরবিশিষ্ট কৃষ্ণ বিবরের কথা। এগুলোকে ছোট বিবর বলা যায়। কিন্তু অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবরের ভর সূর্যের ভরের কয়েক মিলিয়ন গুণ হয়ে থাকে। এই কৃষ্ণ বিবরগুলোর উৎপত্তি বিভিন্নভাবে হতে পারে:
- ছোট কৃষ্ণ বিবরের অভিকর্ষ বলের কারণে সবকিছু তার ভেতর ঢুকতে থাকে। এভাবে খেতে খেতে অনেক সময়ের ব্যবধানে একটি ছোট কৃষ্ণ বিবর অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবরে পরিণত হতে পারে।
- একটিমাত্র গ্যাসীয় মেঘ থেকে অনেক অনেক তারা তৈরী হয়। এমন কোন বিশাল গ্যাসীয় মেঘের ভেতর কিছু নির্দিষ্ট ভারসাম্যহীনতার কারণে পুরোটাই একবারে কৃষ্ণ বিবরে পরিণত হতে পারে।
- ঘন তারা স্তবকে অবস্থিত সবগুলো তারা একসাথে হয়ে কৃষ্ণ বিবরে পরিণত হতে পারে।
- মহা বিস্ফোরণের পরপর যে বিপুল চাপ ছিল তার কারণে কিছু আদিম অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবর তৈরী হতে পারে।
আমাদের লক্ষ্য এই অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবর যাদের সাথে ছোটগুলোর বেশ কিছু পার্থক্য আছে। তবে ডারহামের গবেষণার মাধ্যমে এরকমই একটি পার্থক্য দূরীভূত হয়েছে। অর্থাৎ আমরা জানতে পেরেছি, সব কৃষ্ণ বিবরের আশপাশ থেকেই এক্স-রশ্মি নিসৃত হয়। অবশ্য বড়গুলোর এক্স-রশ্মির স্পন্দনের সাথে ছোট গুলোর স্পন্দনের পার্থক্য আছে।
কুয়েসাই-পিরিয়ডিক স্পন্দন (কিউপিও)
শুধু কৃষ্ণ বিবর না যেকোন ঘন তারার আশপাশ থেকে এক্স-রশ্মি নিসৃত হয়। ঘন তারা বলতে এমন ধরণের তারাকে বোঝানো হয় যাদের আয়তন কম হলেও ভর অনেক বেশী। এর মধ্যে পড়ে, শ্বেত বামন, নিউট্রন তারা বা কৃষ্ণ বিবর। ঘন তারা থেকে আমরা সাধারণ এক্স-রশ্মি ছাড়াও এক বিশেষ ধরণের এক্স-রশ্মি পাই যার নাম "কুয়েসাই-পিরিয়ডিক স্পন্দন" (Quasi-periodic oscillation) বা "কিউপিও"। এটাই আমাদের আগ্রহের বিষয়। কারণ এর মাধ্যমেই ঘন তারার ভর নির্ণয় করা যায়। ছোট-বড় সব ধরণের কৃষ্ণ বিবরের আশপাশ থেকেই কিউপিও নিসৃত হয়, যদিও এদের মধ্যে পার্থক্য আছে। এই পার্থক্যে আসার আগে এক্স-রশ্মি ও কিউপিও নিয়ে কিছু বলে নেয়া প্রয়োজন।
ভিনের সরণ সূত্র অনুসারে আমরা জানি কোন বস্তু থেকে আসা সর্বোচ্চ বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য তার তাপমাত্রার ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ কোন বস্তুর তাপমাত্রা যত বাড়বে তা থেকে নিসৃত বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য তত কম হবে। এক্স-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য (১০-০.১ ন্যানোমিটার) যেহেতু অনেক কম সেহেতু তা সৃষ্টি করার জন্য বস্তুর তাপমাত্রা অনেক বেশী হতে হবে। এমনকি সূর্যের তাপমাত্রাও ততোটা বেশী না। কিন্তু ঘন তারার চারপাশে মাঝে মাঝে এমন তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়।
ঘন তারা আশাপাশের গ্যাস নিজের ভেতর টেনে নেয়। গ্যসপিণ্ডের নিজস্ব ঘূর্ণন বেগ থাকার কারণে তা ঘন তারার চারপাশে ঘুরতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ভেতরের দিকে যেতে থাকে। এই গ্যাসীয় পিণ্ডের সাথে ঘন তারার তলের ঘর্ষণের কারণে বিপুল তাপের সৃষ্টি হয়। এই উচ্চ তাপমাত্রায়ই এক্স-রশ্মি নিসৃত হয়।
কিউপিও এক ধরণের এক্স রশ্মি স্পন্দন। তবে এর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন:
- কম্পাঙ্ক বনাম শক্তি লেখ আঁকলে দেখা যায়, কিছু কম্পাঙ্কে শক্তি সর্বোচ্চ মানে পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ স্পন্দনে শক্তি যেমন একটিমাত্র কম্পাঙ্কে সর্বোচ্চ মানে পৌঁছায়, এখানে তেমনটি হয় না। এখানে অনেকগুলো কম্পাঙ্কের ব্যান্ডে একসাথে সর্বোচ্চ শক্তির দেখা মিলে।
- বিকিরণের তীব্রতা নির্দিষ্ট সময় পরপর বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ পর্যায়ক্রমিকভাবে তীব্রতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। শক্তির সর্বোচ্চ মানের অবস্থান পরিবর্তনের কারণেই তীব্রতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
- মোট স্পন্দনের পরিমাণ হঠাৎ করে শুরু হয় এবং এক্সপোনেনশিয়াল ভাবে কমতে থাকে।
দুর্বলভাবে চুম্বকায়িত নিউট্রন তারার মাধ্যমে কিউপিও'র এ ধরণের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা যায়। ধরি একটি গ্যাসীয় পিণ্ড নিউট্রন তারাটির চারদিকে ঘুরছে এবং ধীরে ধীরে ভেতরের দিকে প্রবেশ করছে। যখনই পিণ্ডটি চৌম্বক মেরুর কাছে আসবে তখনই তার কিছু অংশ তারার ভেতর ঢুকে যাবে এবং বিপুল পরিমাণ এক্স-রশ্মি উৎপন্ন হবে। নির্দিষ্ট সময় পরপর যেহেতু চৌম্বক মেরুর কাছে আসবে তাই বিকিরণের তীব্রতাও নির্দিষ্ট সময় পরপর সর্বোচ্চ মানে পৌঁছুবে। আর ঐ স্থানে পৌঁছানোর পর পিণ্ডের ভর যেহেতু কমে যাবে সেহেতু মোট স্পন্দনের পরিমাণও কমে যাবে।
কৃষ্ণ বিবরের কিউপিও
প্রথমে ছোট কৃষ্ণ বিবরের কিউপিও'র কথায় আসা যাক। কৃষ্ণ বিবর হল সর্বভুক। আশপাশের সবকিছুকে খেয়ে ফেলতে চায়। কিন্তু সবকিছুরই কৌণিক বেগ থাকার কারণে সেগুলো কৃষ্ণ বিবরের চারদিকে ঘুরপাক খেতে খেতে বিবরের ভেতর প্রবেশ করে। চারপাশের ঘূর্ণনশীল বস্তুগুলো যখন কৃষ্ণ বিবরের ঘটনা দিগন্তের সংস্পর্শে আসে তখনই তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এই তাপমাত্রায় বস্তুগুলো বিপুল পরিমাণ এক্স-রশ্মি নিঃসরণ করতে থাকে। এই বিকিরণের তীব্রতা একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর সর্বোচ্চ মানে পৌঁছে। এটাকেই কিউপিও'র পর্যায়কাল বলা যেতে পারে। ছোট কৃষ্ণ বিবরের জন্য এই পর্যায়কাল খুব ছোট, কয়েক সেকেন্ড হতে পারে।
কিন্তু অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবরের জন্য এই তীব্রতার পর্যায়কাল অনেক বড়, কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনও হতে পারে। এখানেই ছোটগুলোর সাথে তার পার্থক্য। এই পার্থক্যের কারণটা এরকম: ঘূর্ণায়মান বস্তু ঘটনা দিগন্ত স্পর্শ করা মাত্রই বিকিরণের তীব্রতা বেড়ে যায়। ছোট কৃষ্ণ বিবরের ঘটনা দিগন্ত বেশ ছোট ব্যাসার্ধ্যের, পাশাপাশি যে যে অঞ্চলে ঘূর্ণায়মান বস্তু বিবরের ভেতর ঢুকে সে অঞ্চলও ছোট বিবরের ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরপর আসে। কিন্তু বিবরের ভর যত বেশী হবে তার এ ধরণের প্রবেশমুখগুলো ততই দূরে দূরে থাকবে। এ কারণেই অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবর থেকে আসা কিউপিও'র তীব্রতার পর্যায়কাল অনেক বেশী।
এই কিউপিও থেকেই বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণ বিবরের ভর নির্ণয় করেন। সম্পর্কটা তাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন, কিউপিও'র কম্পাঙ্ক কৃষ্ণ বিবরের ভরের উপর নির্ভর করে। এই সম্পর্ক থেকে ভর বের করাটা খুব কঠিন না।
গুরুত্ব বিচার
এবার ডারহামের বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কারের গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে। তারা মহাবিশ্বের একটা বড়সড় রহস্য সমাধানের চাবিকাঠি পেয়ে গেছেন। সেটা হল অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবর। আমাদের আকাশগঙ্গার মত ছায়াপথের প্রায় সবগুলোর কেন্দ্রেই অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবর আছে। আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রেও আছে। এই বিবর এতোদিন কেবল রহস্য বাড়িয়েই গেছে। এবার তার ধরা দেবার পালা। শুধুমাত্র এই কিউপিও পর্যবেক্ষণ করে তার সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনে নেয়া সম্ভব।
বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারকে ছোট ও অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবরের মধ্যে একটি "মিসিং লিংক" হিসেবে বর্ণনা করছেন। এবার আরও বিস্তারিতভাবে জানা যাবে, অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবরেরা কেনো এতো পৃথক?
কৃষ্ণ বিবর মহাবিশ্বের রহস্য উন্মচনেও বিশাল ভূমিকা রাখে। এর ভেতরে কি ঘটে তা বিজ্ঞানীরা এখনও জানতে পারেননি। সে জায়গাটা যেন অজ্ঞানতার প্রতিনিধিত্ব করে। সেখান থেকে আলো আসে না, আলো ছাড়া আমরা জানতেও পারি না। আলোই এখন পর্যন্ত আমাদের জ্ঞানার্জনের প্রধান বাহন হয়ে আছে। তবে এক্স-রশ্মি আর বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে সে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে হয়ত আর আলোর মুখাপেক্ষী হতে হবে না। আলো দিয়ে আর কত দেখব? এবার আলো দিয়ে অন্ধকার জয়ের পরিবর্তে অন্ধকার দিয়ে অন্ধকার জয়ের পালা।
*****
ব্যবহৃত পরিভাষা
Black hole - কৃষ্ণ বিবর
Event horizon - ঘটনা দিগন্ত
Neutron star - নিউট্রন তারা
Quasi-periodic oscillations - কুয়েসাই-পিরিয়ডিক স্পন্দন
Supermassive black hole - অতিবৃহৎ কৃষ্ণ বিবর
Supernova - অতিনবতারা
White dwarf - শ্বেত বামন
তথ্যসূত্র:
# Scientists Find Black Hole 'Missing Link' - সায়েন্স ডেইলি
# X-ray pulse seen in biggest holes - বিবিসি
# Super-massive and Small Black Holes Both Suck - ইউনিভার্স টুডে
মন্তব্য
সাধু, সাধু!
কোয়াজিপিরিয়ডিক অসিলেশনকে কি প্রায়পর্যায়বৃত্ত স্পন্দন বলা যায়?
হাঁটুপানির জলদস্যু
অবশ্যই বলা যায়। পরিভাষা মেলাতে পারছিলাম না। তবে জানতাম একটা না একটা বেরিয়ে যাবেই। আপনাকে সাধুবাদ।
তবে একটা কথা আছে, "প্রায়" কে কি উপসর্গ হিসেবে এভাবে ব্যবহার করা যাবে? মাঝখানে কোন হাইফেন লাগবে না তো আবার?
এমনিতে পরিভাষা পছন্দ হয়েছে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
বেশ ভালো লেগেছে, অনেক অজানা কিছু জানলাম। ধন্যবাদ শিক্ষানবিস
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
আপনাকেও ধন্যবাদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
কত অজানা রে !
হুম.. যেদিকেই যাই সেদিকেই অজানা
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
যথারীতি অনেক শ্রমসাধ্য প্রাঞ্জল রচনা। ধন্যবাদ, কিউপিও সম্বন্ধে আমার আগে ভালো জানা ছিল না।
কোয়াসি =' উপ' -উপসর্গ হতে পারে হয়তো।
এক্রিশন ডিস্ক মেরুর কাছে যায় কিনা আমি নিশ্চিত নই। আমার জানা ছিল এটা মূলত বিষুবীয় অঞ্চল ঘিরে, এবং এর নীচের প্রান্তসীমায় চুম্বকীয় ক্ষেত্র বেশী বলে সেখানে আকর্ষণ বেশি। তবে এটা ঠিক যে, মেরুর কাছে গেলেও ক্ষেত্র অনেক বেড়ে যাবে।
আপনার মন্তব্যের অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু!
আমি লেখাটা মূলত, ঐ তিনটা লিংক আর উইকিপিডিয়া ঘেটে লিখেছি। এক্রিশন ডিস্কের একটা পরিভাষা আছে: বিবৃদ্ধি চাকতি। শুনতে একটু খটমটে লাগে অবশ্য। তারপরও এটাই ব্যবহার করি।
বুঝতেই পারছেন, বিবৃদ্ধি চাকত গলঃধকরণের এই বিষয়টা সম্পর্ক আমার দৌড় উইকি পর্যন্ত। উইকির নিবন্ধে দেখলাম চৌম্বক মেরুই লেখা। সাধারণভাবে তো বিবৃদ্ধি চাকতি বিষুব ঘিরেই থাকে। সেক্ষেত্রে তার ভৌগলিক মেরু অঞ্চলে যাবার প্রশ্নই উঠে না। তার মানে কি নিউট্রন তারার চৌম্বক মেরু বিষুবের কাছাকাছি থাকে? আমি নিশ্চিত না।
পরিভাষার ব্যাপারে আপনার প্রস্তাবটা দেখলাম। -উপ উপসর্গ হিসেবে একেবারে সঠিক। কিন্তু প্রায় টা উপসর্গ হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। উপ ব্যবহার করাটাই বোধহয় ঠিক হবে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
মন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করছেন দেখে একটা মন্তব্য করলাম...
মাগার বিশ্বাস করেন, লেখাটা এহনো ঠিক কইরা বুঝবার পারি নাই... আরো কয়বার পইড়া আরো দুইচাইরটা জিনিস ঘাইটা তারপর আবার আলাপ করতে আসব... এখন মুখ খুললেই আমার বিদ্যার দৌড় সম্পর্কে সবাই অবগত হয়ে পড়বেন...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
এইটা লেখার আগে আমার এ বিষয়ক জ্ঞানও কিন্তু আপনার থেকে বেশী ছিল না। ঘাটলেই বুঝে যাবেন। তবে আপনি চাইলে, যে জায়গাগুলোতে খটকা লেগেছে সেগুলো উল্লেখ করতে পারেন। তাহলে আরও আরও আলোচনা করার সুযোগ তৈরী হবে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
পড়লাম,খুব ভালো লাগলো। প্রশ্ন হলো ঘটনাদিগন্তের কাছে
এলে কেন পতনশীল বস্তুদের তাপমাত্রা বাড়ে?
বেশ জটিল প্রশ্ন করেছেন। উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি:
এক্ষেত্রে নিউট্রন তারার কথা স্মরণ করুন। নিউট্রন তারার পৃষ্ঠতলের সাথে গ্যাসীয় পিণ্ডের ঘর্ষণের কারণেই কিন্তু সেখানকার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। অর্থাৎ নিউট্রন তারা পিণ্ডটাকে খেয়ে ফেলার ঠিক আগে এই বৃদ্ধি ঘটে।
এবার কৃষ্ণ বিবরের ঘটনা দিগন্তকে নিউট্রন তারার পৃষ্ঠতলের সাথে তুলনা করে দেখুন। ঘটনা দিগন্তের ভেতরে চলে গেলেই আমরা বলতে পারি, বস্তুটিকে কৃষ্ণ বিবর খেয়ে ফেলেছে। ঘটনা দিগন্তের ভেতরে গিয়েই সবকিছু অদৃশ্য হয়ে যায়। তাই ঘটনা দিগন্তের সংস্পর্শে আসলেই ঘর্ষণ চূড়ান্তে পৌঁছে। যথারীতি তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
ঘটনা দিগন্তের সাথে আশপাশের বস্তুর মিথস্ক্রিয়া দেখেই কিন্তু আমরা কৃষ্ণ বিবর সনাক্ত করি।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
তোদের লেখা পইড়া হা কইরা তাকায়া থাকি। কী মন্তব্য করব বুঝতে পারি না। শুধ ভালা লাগছে- খুব ভালো এগুলা কইতে লজ্জা লাগে।
কী করুম ক তো। ঝামেলার মইধ্যে আছি।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ঝামেলার কিছু নাই। কিছু করারও দরকার নাই। এই যে এখন কমেন্ট দিলি। এইরকম কমেন্ট দিলেই চলব।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
১.০
কৃষ্ণবিবর যে সর্বভুক তা তো আগে পিছে সবাই জেনে গেছি তা। কিন্তু ভয়ের বিষয় হলো
আমরাও কি তাহলে সময় সাপেক্ষে ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত কৃষ্ণ বিবরটির খাদ্য হয়ে যাচ্ছি ?
২.০
সম্ভবত পুরো বিষয়টা আমার কাছে এখনো অস্পষ্ট। তাই প্রশ্ন, কৃষ্ণ বিবর সবকিছুকেই গিলে ফেলে বলেই কৃষ্ণবিবর। তাহলে এক্স-রশ্মিকে গিলতে পারছে না কেন ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
১.০
ছোটখাট ছায়াপথের ক্ষেত্রে এমন হতেই পারে। কিন্তু আমাদের ছায়াপথে প্রায় ৩০০-৪০০ বিলিয়ন তারা আছে। সবাইকে সে খেতে পারবে না, এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন। আর আমরা ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে আছি। কৃষ্ণ বিবরের খেয়ে ফেলারও তো একটা সীমা আছে।
২.০
মাফ। আপনার মন্তব্যে আমার একটা ভুল ধরা পড়ল। কৃষ্ণ বিবর কখনই এক্স-রশ্মি নিঃসরণ করে না। আমি আসলে বলতে চাইছিলাম, যে বস্তুগুলো বিবরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে সেগুলোর সাথে ঘটনা দিগন্তে ঘর্ষণের কারণে যে তাপমাত্রা তৈরী হয় তাতে এক্স রশ্মি নিসৃত হয়। এই এক্স রশ্মি কিন্তু বস্তুটা নিঃসরণ করে। কৃষ্ণ বিবর না। ঘটনা দিগন্তে ঢুকে যাওয়ার ঠিক আগে সে এই রশ্মি ছাড়ে।
এক্স-রশ্মি যদি ঘটনা দিগন্তের ভেতর ঢুকে যায় তবে কখনই বের হতে পারবে না। তবে কৃষ্ণ বিবরও এক ধরণের বিকিরণ ছাড়ে যার নাম "হকিং বিকিরণ"। কোয়ান্টাম ক্রিয়ার কারণে তৈরী বিশেষ ধরণের তাপীয় বিকিরণ এটা।
এইটুকু পরিবর্তন করে এমন করে দিচ্ছি:
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ব্যাক হোল যে বাংলায় কৃষ্ণ বিবর এটা জানতাম না। HSC তে ফিজিক্সে আমাদের ইলেকটিভ ছিল এস্ট্রনোমি। আমার প্রচন্ড প্রিয় ছিল এটা। ছোটবেলায় জাফর ইকবালের একটা সায়েন্স ফিকশন পরে ঠিক করেছিলাম বড় হয়ে আমি এস্ট্রনোমার হব, হায় লাইফে কিছুই হলনা। আপনার লেখাটা পড়ে অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
হুম. . এইচএসসি-তে আমাদেরও জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে একটা অধ্যায় ছিল। সেটা অবশ্য বাধ্যতামূলক ছিল। অধ্যায়ের নাম ছিল, আপেক্ষিক তত্ত্ব ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা। আমার ন্যতম প্রিয় অধ্যায়গুলোর একটা।
আমিও মোটামুটি সে সময় থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানী হওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছি। এখনও মন স্থির আছে।
আপনে তো হইলেন না। আশীর্বাদ করেন, যেন বড় হইয়া রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানী হইবার পারি।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আপনার লেখা পড়ে বিণয় মজুমদারের একটা কবিতা মনে পড়লো...
''বিদেশী ভাষায় কথা বলার মতো অতি সাবধানে তোমার প্রসঙ্গে আসি''
এই লেখা পড়ার যোগ্যতা আমার নাই। ভাগি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বড়ই মধুরভাবে ভাগলেন। কাব্যিক প্রস্থান।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ভাই, তুমি এইসব জিনিস কেমনে লেখ বল তো!
বুকমার্ক দিয়ে রাখলাম। পরে পড়ব। যদি কিছু বুঝি, তাহলে হয়ত মন্তব্যে কিছু বলব, না হয় "ভাল্লাগসে" বইলা ভাগব
___________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
ভাই, সত্যি কথা কই। নেটে একটু ঘাটাঘাটি করলে এইরকম লেখা যে কেউ লিখতে পারে। ঐ ঘাটাঘাটিটাই বোধহয় সবাই করে না।
পড়লে আশাকরি বুঝবেন। তবে তুলি যে বিষয়টা উত্থাপন করলেন সেখানে আপনারও খটকা লাগতে পারে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
শিক্ষানবিশ,
ঘটনাদিগন্ত মনে হয় পৃষ্ঠতল নয়। এটা পালিয়ে যেতে চাওয়া ফোটনদের তৈরী sphere,এরা পালাতে পারে নি, black hole ঘিরে ঘুরে চলেছে চিরকাল।
কথা হলো এখানে কিসে ঘষা লেগে এত গরম হয় পতনশীল বস্তুরা?
এখানে আমারও কনফিউশন আছে। ঘটনাটা ঘটে এটা নিশ্চিত। কিন্তু কিভাবে ঘটে তা আমি পরিষ্কারভাবে বলতে পারছি না। তাপমাত্রাটা কি আসলে নিউট্রন তারার মত ঘর্ষণের কারণে হয় নাকি অন্য কোন প্রক্রিয়া আছে তা জানতে পারলে জানাবো।
আপনিও চেষ্টা করে দেখেন। জানতে পারলে আশাকরি জানাবেন।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আমিও খুঁজছি।
বিবৃদ্ধি চাকতিতে গ্যাসের কণাগুলো কৌনিক ভরবেগের কারণে স্পাইরাল আকারে ঘুরতে ঘুরতে নীচে বিবরের দিগন্তসীমার দিকে ক্রমবর্ধমান বেগে ধাবিত হয়। যেহেতু গ্যাস প্লাজমা অবস্থায় থাকে এই প্রবাহের সঠিক বর্ণনার জন্য ম্যাগ্নেটো-হাইড্রডায়নামিক্স ব্যবহার করা দরকার, কিন্তু এ তত্ত্ব এক্ষেত্রে এখনও পূর্ণতা পায় নি।
পড়ার সময়ে টারবিউলেন্স সৃষ্টি হয় কারণ ওপরের প্লাজমা তুলনামূলকভাবে ধীর হওয়াতে নীচের লেয়ারের সাথে সঙ্ঘর্ষ হয়, ফলে সাধারণ সান্দ্রতার অনুরূপ বিপরীতমুখী বলের জন্ম হয়। এই ঘর্ষণের ফলে তাপের উৎপত্তি।
ধন্যবাদ।
আর একটা ব্যাপার জিগানোর ছিলো- Xray হোক কি visible light হোক সবি তো ফোটন, তো এই ফোটন কেন
গর্তে পড়ছে না? কিকরে black hole এর মহা আকর্ষণ থেকে পার পেয়ে বেরিয়ে আসছে?
দিগন্তের প্রান্তসীমার বাইরে থেকে যেসব বিপরীতমুখী ফোটন বেরুবে, সেগুলো ভেতরে যাবে না, এদিকে চলে আসবে । বিবরমুখী বা ধার দিয়ে যাওয়া ফোটন বিবরের কেন্দ্রের দিকে বাঁক নিয়ে দিগন্তসীমা অতিক্রম করা মাত্র অদৃশ্য হয়ে যাবে।
বজলুর সাহেব,
অনেক ধন্যবাদ।
দিগন্তসীমা নিয়ে একটু ধন্ধে আছি। এটা ঠিক কি জিনিস?এটা কি গাণিতিক ভাবে মানে general relativity এর field equation solve করে পাওয়া কোনো বিমূর্ত সীমা নাকি সত্যিকার physical boundary?
নিঃসন্দেহে শিক্ষানবিশ এর সবচেয়ে সহজবোধ্য আকর্ষণীয় বিস্তারিত উত্তর দিতে পারবেন।
খট্মটে উত্তরঃ
আইন্সটাইনের সমীকরণের (সমতা চিহ্নের একপাশে জ্যামিতি মানে বক্রতা টেন্সর আরেকপাশে পদার্থ অর্থাৎ ভর জনিত চাপের টেন্সর) সমাধানে দেখা যায় বিবরের কেন্দ্রের কয়েক কিমি দূরে এই সীমা, যার ভেতরে স্থান আরে কালের পার্থক্য অন্য রূপ নেয়; ফলে ভেতরের আলো বা পদার্থ সরল রেখায় না গিয়ে এত বক্র পথে (জিওডেসিকে) যায় যে যেকোন বিন্দু থেকেই তার পথ শেষ হয় বিবরের কেন্দ্রে গিয়ে। বাইরের আলো বা পদার্থ অবশ্য পালাবার একটা সুযোগ পায় গতিবেগ ঠিক থাকলে।
সুতরাং এই দিগন্ত গাণিতিকভাবে পাওয়া গেলেও খুবই ভৌত।
নাহ্, আমি এর সহজবোধ্য আর আকর্ষণীয় বিস্তারিত উত্তর দিতে পারব কি-না এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার অনেক জটিল জিনিসই এখনও বুঝি না। আপনাদের কাছ থেকেই শিখছি। শিক্ষানবিস বলে কথা।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
নতুন মন্তব্য করুন