ঈশ্বর তাকিয়ায় হেলান দিয়ে পান চিবাইতেছিলেন। আজরিল তাহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া আনমনে ক্ষুরধার ভোজালিতে শান দিতেছে।
ঈশ্বর গলা খাঁকরাইয়া চিলুমচিতে পিক ফেলিয়া বলিলেন, "ভোজালিতে শান দিতেছ কেন?"
আজরিল শীতল কণ্ঠে কহিল, "কখন কী কাটিয়া আনিতে হয়, বলা তো যায় না। তাই ধার দিয়া রাখি।"
ঈশ্বর খুব একটা উচ্চবাচ্য করিলেন না। জুলিয়াস সিজারের ঘটনার পর হইতেই তিনি বুঝিয়াছেন, বিশ্বস্ত কেউ যদি নিকটে ধারালো অস্ত্র লইয়া অবস্থান করে, তাহাকে না চটানোই ভালো। এই কারণেই তিনি নাপিত জিলেটাইলের সহিত কখনও দুর্ব্যবহার করেন না।
ঈশ্বর গলা খাঁকরাইয়া কহিলেন, "ধার দিবার চর্চাটি মন্দ নহে। তবে দেখিও, সুদ আদায়ের ব্যবসায় অবলম্বন করিও না। অযথা আমার বদনাম হইবে। ইউনুসের ন্যায় কোনো কারবারও ফাঁদিয়া বসিও না যেন।"
আজরিল নিরুত্তর থাকিয়া ভোজালিতে শান দিতে লাগিল।
ঈশ্বর পুনরায় এক খিলি পান মুখে পুরিয়া চুনদানি হইতে এক আঙুল চুন তুলিয়া মুখে পুরিয়া কহিলেন, "তোমাকে ডাকিয়াছি বিশেষ একটি কাজে।"
আজরিল কহিল, "বলুন খোদাবন্দ, কাহার প্রাণ হরণ করিয়া আপনার কদমপদ্মে পেশ করিব?"
ঈশ্বর বিরক্ত স্বরে কহিলেন, "আ মোলো যা, ক বলিলেই ক্যাটাস্ট্রফি বুঝিয়া ফেল! প্রাণ হরণ করিতে হইবে কেন বাপু? ভোজালিখানা কোষবদ্ধ রাখিয়া গালে দুই চারটা চড় মারিতে পারিবে?"
আজরিল কহিল, "আলবাৎ হুজুর! কাহার গাল?"
ঈশ্বর দক্ষিণে-বামে চুপিচুপি চাহিয়া গলা নিচু করিয়া কহিলেন, "আদমের গাল!"
আজরিল দন্তে দন্তে প্রবল ঘর্ষণ করিয়া কহিল, "এখনই গিয়া পাজিটার গাল থাবড়াইয়া লোহিত করিতেছি জাঁহাপন!"
ঈশ্বর কহিলেন, "আরে শোনো না বাপু! বিস্তারিত শ্রবণ কর আগে। শুধু আদমকে চটকনা মারিলেই চলিবে না। তাহার বেয়াড়া ভার্যাটিকেও কেশের গ্রন্থি ধরিয়া ঘরছাড়া করিতে হইবে। পারিবে স্ত্রীলোকের দেহে হস্তক্ষেপ করিতে?"
আজরিল কহিল, "আমার কোনো জেণ্ডার বায়াস নাই সদাপ্রভু। অ্যাকশনে নামিয়া স্ত্রী-পুরুষ বৈষম্য করিব না। আদমের গণ্ডদেশে গণিয়া গণিয়া এক হালি থাপ্পড় কষাইব, আর তাহার মুখরা স্ত্রীটির কেশ মুষ্টিতে লইয়া ঘর হইতে বহিষ্কার করিব।"
ঈশ্বর কহিলেন, "উঁহু, ঘর হইতে উভয়কেই নিষ্ক্রান্ত করিতে হইবে। সম্ভব হইলে উহাদের ধরিয়া পৃথিবীতে ছাড়িয়া দিয়া আইস।"
আজরিল মুখ গোমড়া করিয়া কহিল, "পৃথিবীতে যাইতে হইবে?"
ঈশ্বর কহিলেন, "হাঁ। ঘুরিয়া আইস। টাকাপয়সা লাগিলে খাজাঞ্চিকে বলিও, কিংবা ফিরিয়া আসিয়া বিল করিয়া টিএডিএ তুলিয়া লইও।"
আজরিল কহিল, "জো হুকুম জাঁহাপন! পৃথিবীতে কারো প্রাণ হরণ করিতে হইবে?"
ঈশ্বর বিড়বিড় করিয়া কহিলেন, "এমন ট্রিগারহ্যাপি অনুচর লইয়া কী বাটে পড়িলাম!" তারপর গলা খাঁকরাইয়া কহিলেন, "আচ্ছা, মোটাতাজা ডাইনোসর যাতায়াতের পথে পড়িলে প্রাণখানি হরণ করিয়া আনিও। আমার কাছে আনিয়া দিবার দরকার নাই, ডানোর কৌটায় ভরিয়া স্টোররুমে রাখিয়া দিলেই চলিবে। এখন কাজে যাও।"
আজরিল কুর্ণিশ করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল।
ঈশ্বর কহিলেন, "তা একবারও কি মনে প্রশ্ন জাগিল না, আদম আর ঈভকে কেন বিতাড়ন করিতেছি?"
আজরিল কহিল, "কেন হুজুর?"
ঈশ্বরের চোখ চকচক করিয়া উঠিল। তিনি ফিসফিস করিয়া কহিলেন, "কয়লা! কয়লা পাওয়া গিয়াছে উহাদের বাসগৃহের নিচে!"
আজরিল বলিল, "আচ্ছা।"
ঈশ্বর বিরক্ত হইলেন। নির্বোধ কতগুলি দূত নির্মাণ করিয়াছেন তিনি। কিছু কূট আলাপ করিবার যোগ্যতা নাই। রশ্মির অপচয় আর কাহাকে বলে?
তিনি গলা খাঁকরাইয়া কহিলেন, "আচ্ছা, তুমি কাজে লাগিয়া পড়ো বরং। আর দেখ গেস্ট রুমে এশিয়া এনার্জি হইতে কে যেন আসিয়া অপেক্ষা করিতেছে, তাহাকে আমার কক্ষে পাঠাইয়া দিও।"
মন্তব্য
কয়লা বেচাকেনা করে ঈশ্বরের লাভ কি? শুনেছিলাম তো শুধু ধর্মের ব্যবসা হয়...
যজ্ঞে কাজে লাগে।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বাঃ, নিজের যজ্ঞের জন্য নিজেই বিক্রি করবেন? 'নাফা হি 'নাফা! অবশ্য এত বুদ্ধি না থাকলে কি আর স্বর্গের সিইও হওয়া যায়?
ধরেন আদমরে কয়লা ওঠানোর পর ঈশ্বর বলবে ৯৪% আমার ৬% আদমের। লেনদেন আরো পোক্ত ও নিরপেক্ষ করতে পার্সেন্টেজের এই হিসাব নিকাশটা অডিটর স্বর্গদূত ড. এ্যাকাউন্টাইল করে দিতে পারবে।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আর রিলোকেশন প্যাকেজে কিছু থাকছে নাকি?
থাকছে তো।
কাকস্য পরিবেদনা
এঃ, বড়োই নীরস প্যাকেজ। আমি ভাবছিলাম আদমের বাঁহাতের কিছু সুবিধা করে দিতে একখানি সচিত্র প্লে'হুর ম্যাগাজিন অন্ততঃ থাকবে...
আর এক বোতল মবিল অথবা নিদেনপক্ষে এক প্যাকেট অল-পারপাস-গ্রিজ
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আগের মন্তব্যটা এডিট করতে গিয়ে দেখলাম হাসিব্বাই প্রতিমন্তব্য করে দিয়েছেন, তাই এখানেই বলছি, খুব সঙ্কোচের সঙ্গেই, যে গতবারের মত এটাও যেন তত জমাটি লাগল না। মুখফোড়ের থেকে আমাদের প্রত্যাশা সবসময়েই খুব বেশি।
সংযোগঃ আমার উইন্ডোতে লেখার মাঝখানের অংশটা পড়ার সময় শেষ লাইনটা ছিল কয়লা পাওয়ার কথাটা। আর ওটা এতই ক্লাইম্যাক্সোপযোগী লাইন মনে হয়েছিল আমার কাছে, যে লেখাটা ওখানেই শেষ মনে করে খুশী খুশী মনে কমেন্ট করতে যাচ্ছিলাম। তারপর দেখলাম তলায় আরো কিছু আছে, আর শেষ হচ্ছে এশিয়া এনার্জির কথা দিয়ে। আমার মতে মুখফোড়ের স্যাটায়ারে রেফারেন্স থাকে তো বটেই, কিন্তু একটু সূক্ষ্ম অথচ তীব্রভাবে থাকে। সেখানে এটা এমন সরাসরি এসে যাওয়ায় রসটা পেলাম না জানি। যা হোক, আমি আর রসবিচারে কতই বা পণ্ডিত।
আগেরটার তুলনায় এটা ভালো লাগছে।
ওরে এই ছিল তাহলে ঈশ্বরের মনে! কয়লা?!
আমার ধারণা ছিল শুধু আমার দিলেই ময়লা!!
কুটুমবাড়ি
আমাদের বাড়িতে সব ছিল রেড কাউয়ের কৌটা, আর আমি খালি অন্যের বাড়ির ডানোর কৌটার দিকে তাকায়ে আফসোস করতাম।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ইউনুসের বেহেশতি নাম ইউনুসাইল না?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ইউনূস তো স্বর্গদূত না। নামের শেষে 'আইল' লাগানো তাই জায়েজ না।
তাই বলে আবার 'মিসাইল'কে যেনো স্বর্গদূত ভেবে বসবেন না! বিরাট ধামাকা পড়ে যাবে তাইলে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মামুর বিটা মুখা।
লেখাটা পানিতে ভেজানো ডায়নামাইটের মত মনে হল।
কাকস্য পরিবেদনা
মুখা পাথ্রায়।
_________________________________________
সেরিওজা
মুখা দ্যা বস ফাডায়লাইসে, তয় একটু চোখে লাগল ব্যাপারটা। সেইদিন দেখলাম এক অতিথি কয়লা তুলনের নামে ৪০,০০০ মানুষের লুঙ্গি গামছা দিয়া বাইন্ধা টানাটানি করনের ফর্মূলার কথা কইল। তার ৩ দিন পরে মুখা বসের লেখা। যাউক গিয়া, লেখা আগুনের গোলা হইছে, ৫ তারা
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
'নাপিত জিলেটাইল'! নামকরণগুলো দুর্দান্ত!
সেটাই বলতে লগ ইন করছিলাম, জিলেটাইল!
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
কালকে এক জিলেটাইল আমার মাথার চুল প্রায় নাই করে দিছে। আজকে এই জিলেটাইল নাম দেখে তাই দুঃখেও হাসি পাইল।
সজল
হ, 'জিলেটাইল' এইটা ব্যাপক পছন্দ হইসে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
৪০,০০০ মাইনষ্যের মান্বিক প্রশ্নওয়ালা আতিথাইল'রে মিস্ করতাছি
লিখা বরাবরের লাহান উত্তম হইছে
"আমার কোনো জেণ্ডার বায়াস নাই সদাপ্রভু"
অসাধারন...জোস্...সেইরকম...
কি আর কমু।
নামকরণগুলা ফাটাফাটি হইছে।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
’’আমার কোনো জেণ্ডার বায়াস নাই সদাপ্রভু’’ সেরা ডায়ালগ, আচ্ছা আজরিল কি পূং বাচক শব্দ? সদা প্রভুর কি কোন মহিলা দূত নেই? থাকলে জানান প্লিজ।
মুখফোড়ের কোনো লেখা যদি মারদাঙ্গা নাও হয়, তবু সেটা পড়ে বিপুল মনখুশ হয়। হবে না কেন!কারণ তাঁর গল্পে সব সময় থাকে অসাধারণ সব চিত্রকল্প, মোক্ষম নাম, প্রাণ জুড়ানো বাক্য...
এই লেখাতেই দেখুন না:
"ঈশ্বর গলা খাঁকরাইয়া চিলুমচিতে পিক ফেলিয়া বলিলেন"
"নাপিত জিলেটাইল"
"ক বলিলেই ক্যাটাস্ট্রফি বুঝিয়া ফেল"
"আমার কোনো জেণ্ডার বায়াস নাই সদাপ্রভু"
"ফিরিয়া আসিয়া বিল করিয়া টিএডিএ তুলিয়া লইও"
"ডানোর কৌটায় ভরিয়া স্টোররুমে রাখিয়া দিলেই চলিবে"
"রশ্মির অপচয় আর কাহাকে বলে?"
'আ মোলো যা, ক বলিলেই ক্যাটাস্ট্রফি বুঝিয়া ফেল!'
-------------------------------------
কেউ যাহা জানে নাই- কোনো এক বাণী-
আমি বহে আনি;
নতুন মন্তব্য করুন