কাওরানবাজার এলাকায় তিনিই সূর্যোদয় ঘটাইয়া থাকেন।
কর্মবীর পুরুষ তিনি। তাঁহার জাগরূক কাল সম্পূর্ণ ব্যয় হয় কামের চিন্তায়। তাই অতি প্রত্যূষে নগরীর অনিবার্য যানজট বাঁধিবার পূর্বেই তিনি আপিসে স্বীয় কক্ষে ও মহাজগতে স্বীয় কক্ষপথে অবস্থান গ্রহণ করেন। বেয়ারা আসিয়া একটি ঝকঝকে গেলাসে পানীয় জল ও তশতরিতে মিষ্টান্নাদি রাখিয়া দরজায় স্বয়ংক্রিয় ছিটকিনিটি টিপিয়া দুয়ার আঁটিয়া কাটিয়া পড়ে। কিয়ৎকাল পরই তাহার মন্দ্রস্বর ছড়াই পড়ে সমগ্র আপিসে। কাওরানবাজার এলাকায় ঊষাকালে সক্রিয় সকলেই শুনিতে পায় তাহার সেই প্রলম্বিত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মহানাদ, "ওঠ!"
"ওঠ!"
"ওঠ!"
সূর্য উঠিয়া পড়ে।
সারাটি দিন আপিসের নানা কর্মাদির যজ্ঞে ঘৃত ঢালিয়া, দূরালাপনীতে ইহজাগতিক নানা দুরুশ্চার্য আলাপ সারিয়া, বৈকালিক ধ্যানে বসিবার পূর্বে তিনি বেয়ারাকে গলা খাঁকরাইয়া পুনর্বার ডাকেন। বেয়ারা আসিয়া দরজায় ছিটকিনি টিপিয়া দুয়ার আঁটে।
কাওরানবাজারের ব্যস্ত সড়কে শকটাদির মুহুর্মুহু আর্তনাদ ছাপাইয়া আবারও শ্রুত হয় তাহার মহামন্ত্র, "ওঠ!"
"ওঠ!"
"ওঠ!"
চন্দ্র উঠিয়া পড়ে তাহার ভগ্নাংশ সম্বল করিয়া।
পর্বতারোহী মূষা ব্রহ্ম টিসু কাগজে আঁসু মুছিয়া কাগজে লিখিলেন, ভাই সাহেবের দোয়া মাঙিতে গিয়াছিলাম। গিয়া দেখি দরজা বন্ধ। এক ঘন্টা কাটিল, দুই ঘন্টা কাটিল, দরজা আর খোলে না। দরজায় করাঘাতের সাহস আমার হয় নাই। ভয়ে ভয়ে তাহার নিষ্প্রাণ কাষ্ঠের বুকে কান পাতিয়া শুনিলাম, ভাই সাহেব ভূলোক দ্যূলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন আরশ ছেদিয়া বলিতেছেন, "ওঠ! ওঠ!" হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত ধারে, কী যে এক ঢেউ উঠিল ভক্তির তুফানে! তৎক্ষণাৎ বাহির হইয়া পড়িলাম। আমাকে উঠিতে হইবে। ফকিরাপুলের জলাধার হৌক আর ইভাহৃষ্ট পর্বত, আমাকে উঠিতেই হইবে। ভাই কহিয়াছেন ওঠ। আমি উঠিবই। উঠিতে না পারিলে ফটোশপ ব্যবহার করিব।
কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, স্তম্ভলেখক, পর্বতারোহী সংগঠনের সভাপতি, বিজ্ঞাপক ও লুঙ্গিপরিধায়ক সাংবাদিকটি পার্শ্ববর্তী আগন্তুককে জড়াইয়া ধরিয়া হাপুস কাঁদিয়া কহিলেন, এখন আমার বেলা নাহি আর বহিব একাকী হৃদয়ের ভার। গিয়াছিলাম ক্রীড়াক্ষেত্রে, ক্রিকেটযুদ্ধ অবলোকনে। আমাদের তামিম, আমাদের সাকিব, গরিব মায়ের গরিব ছেলেগুলি, দুবেলা দুমুঠো ভক্ষণ করিতে পায় কি পায় না, কেমন করিয়া দখিনে বামে চতুষ্ঠী ষষ্ঠী হাঁকড়াইতেছে গো! আবেগে আমার কুক্ষিদেশ মোচড় মারিয়া উঠিল। আমি মুষ্ঠিফোন তুলিয়া ভাই সাহেবকে মারিলাম ফোন। ভাইসাহেব ফোন ধরিলেন না প্রথমে। পাঁচ মিনিট কাটিল, দশ মিনিট কাটিল, তারপর ফোন ধরিয়া শুধু কহিলেন, "ওঠ!" আমি নিজে তো উঠিলামই, গোটা গ্যালারি উঠিল, উঠিয়া নর্তন করিতে লাগিল। ওগো তোমরা আমায় মাধবদী হইতে একটি গামছা কিনিয়া দাও, এত জল ও কাজল চোখে পাষাণী আনলে বল কে?
এমনি করিয়া নগরের সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করিল, তিনিই আজকাল চন্দ্রসূর্য চালাইতেছেন, নিম্নকে উচ্চে উঠাইতেছেন। সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সময় কোন নালায়েক জোর করিয়া সিটে বসিয়া থাকিলে শোনা যায় তাহার দূরাগত হুহুঙ্কার, ওঠ! বসুন্ধরার বুক বসুন্ধরা কর্তৃক জবরদখলকৃত হইলে শোনা যায় তাহার পরিত্রাণমন্ত্র, ওঠ! ফুটপাথ জবরদখলকারী হকার, ঝোপের গহীন কন্দরে ঘনিষ্টতালোভী যুগল, ট্যাঙ্কের পাদানিতে দ্বিধাগ্রস্ত জেনারেল, সকলেই এক বাক্যে তাহার ধমকে উঠিয়া পড়ে।
ওঠে না শুধু তাহার বিরিঞ্চিবাবাটি। আর ল্যাপটপের পর্দায় পুনম পাণ্ডে মিটিমিটি দুষ্ট হাসি হাসে, বছরের পর বছর।
মন্তব্য
সচলে লগইন করেই এই লেখা একদম ওপরে ‘ওঠ’তে দেখলাম, পড়লাম। আপনার জবাব নেই!
ট্যাঙ্কের পাদানিতে দ্বিধাগ্রস্ত জেনারেল, সকলেই এক বাক্যে তাহার ধমকে উঠিয়া পড়ে।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
---------------------
আমার ফ্লিকার
গুরু পেন্নাম, আপনি মহান। এতদিন কোথায় ছিলেন ?
অসাধারণ !!!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কড়িকাঠুরে
আদমচরিত ৪৯ কবে আসবে??
খুব ভাল লাগলো। অনেকদিন পর লিখলেন। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
মুখা ইজ ব্যাক।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
জোশ!
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
দারুণ। অসাধারণ। মারভেলাস। ওয়াহ।
শেষ লাইনটা সবচেয়ে মোক্ষম। চমকপ্রদ। অভাবনীয়। কল্পনাতীত।
এত সুন্দর করিয়া কিভাবে পঁচান মুখফোড় বাইয়া ?
মতিকাকু এন্ড আপনে- কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। কুন জায়গাত কি লেখাইলে/ ছাপাইলে গণহিট/ গণহাত্তালি পাওয়া যাইবেক- উহা আপনাদের দুই যুগ্মের চেয়ে ভালো খুব বেশি লোক কিন্তুক দুনিয়াতে জানে না।
প্রিয় বিপ্রতীপ, এই লেখায় মতিকাকু পেলেন কোথায়, একটু বুঝিয়ে বলবেন কি স্যার?
এই লেখায় কাকে পাওয়ার কথা ছিল?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
বিপ্রতীপ নামে একজন সচল আছেন। এই মন্তব্যটি কি তার করা? যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে এই মন্তব্যটি মডারেশনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ করছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পুরাই ফাডায়ালাওন্তিস!!! । মুখা রক্স।
অনেকদিন পর চৌধুরি মশাই! একটু নিয়মিত লিখেন প্লীজ।
ডাকঘর | ছবিঘর
প্রিয় শর্মাজি,
উদ্দিষ্ট প্রবন্ধ/ গল্প/ 'যা-খুশি-তাই' ল্যাখার কোন অংশ কি প্রেক্ষিতে কি কনটেক্সটে আপনার কাছে ফাডাওলান্তিস লাগলো, একটু জানতে পারি স্যার ?
কাঠ বলদদের জন্য একটাই শব্দ,"ওঠ"!
আলি,
আমি যে আপনার 'প্রিয়' তা জেনে যারপরনাই বিমোহিত হইলাম। ইহা যে প্রবন্ধ নহে, একটা স্যাটায়ার এবং সেটা আপনার ভাষায় 'যা-খুশি-তাই' ( হে হে স্পেস সম্পৃক্ত ) তাহা জানিতে গেলে আপনাকে অনেক নীচে নামিয়া আসিতে হইবে। আপনি বলদসম্পদবিকাশ দপ্তরের শীর্ষে অবস্থান করিতেছেন। তাই এই লেখা আপনার মস্তকের অনেক নীচে দিয়া চলিয়া গিয়াছে।
আর বাকি রইলো আমার ফাডায়ালাওন্তিস কেন লেগেছে ( 'ফাডাওলান্তিস নয়' )। হে হে ইহার জন্য এই লেখায় উল্লেখিত একটা বাজার এর দালালি বন্ধ করিয়া দেখিতে হইবে লেখার মূল উদ্দেশ্য। আর আমার ভালো লাগিল কি ক্যামন লাগিল ইহার জন্য আপনার ইয়েতে এত ব্যাথা হইতেছে কেন মহাশয়?
ডাকঘর | ছবিঘর
থাক, চেইতেন না। সবকিছুর জবাব দেয়া লাগে না
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আপনি পুরাই একটা অমানুষ।
নিয়মিত লিখেন না কেন? আপনার লিখা মিস করি খুব।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
গর্ধভ!
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
বহুদিন পর বসরে পাইলাম.........
হৈছে!!!
_____________________
Give Her Freedom!
আত্মজীবনী ভালো লাগল।
জয় বাবা বিরিঞ্চিবাবা! বিরিঞ্চিবাবার জয় !!
ইভাহৃষ্ট পর্বতে উঠতে চাই!!!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ইভাহৃষ্ট পর্বত!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
শেষের লাইটই সবচেয়ে জোশ।
অনেক অনেক দিন পরে লিখলেন। একটু নিয়মিত লিখেন না কেন?
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
ইভাহৃষ্ট পর্বতে উঠতে চাই :-D
সাফি ভাই গাঞ্জানেন তো!
ডাকঘর | ছবিঘর
আপ্নে কী কইলেন? গান জানোনের কতা? নাকি গাঞ্জা নেওনের কতা? যদি পেত্থমটা হয় তাইলে কুনু কতা নাই, আর যই দুইনাম্বারটা হয় তাইলে দুইখান কতা আছে!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
গাঞ্জাননের কতাই কইছি দিদি। ২য় ভাবে কি কইরা গাঞ্জা নেওয়ন যায় । গাঞ্জাননের লাইগ্যা তো তালিম নেওয়ন লাগে। যদিও আমি অনেক গাঞ্জানি।
আইচ্ছা দুই নাম্বারটা মনে কইরা যে দুইখান কতা কইবেন তা শুনতে মঞ্চায়। তাছাড়া ইদানিং আপ্নে যে ড্রাকুলা মুডে আছেন......
ডাকঘর | ছবিঘর
আমি কিছু কমু না, আমি কুনুডাই যানি না
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
মুখা একটি চরম ফাউল লোক!
ইভাহৃষ্ট পর্বত!
"গরিব মায়ের গরিব ছেলেগুলি" লেখাটা এরকম হলে ভালো হত গরিব "মা" য়ের গরিব ছেলেগুলি।
আজকের প্র আলোতে প্রকাশিত স্তম্ভটি তেও "মা" এর জয়ধবনি দেখলাম।
হা হা হা হা আপনার একজন ভক্ত আমি। মূলত আপনার লেখায় কমেন্ট করার জন্যই সচলে আসা!!
ফডোশপ কইরা আজকাল পর্বতে ওঠা যাচ্ছে নাকি তয়লে আমি এত কষ্ট করি যে!
facebook
হ মিয়া, আপনে পুরাই ফাউল একটা লোক। আপনে যে বাসায় ব্যাকড্রপ ফালায় ছবি তুইলা আর ট্রাভেল গাইড ঘাঁইটা ইনফো দিয়া লোকের মনে হিংসাজাগানিয়া পোস্ট করেন, সেইটা পাব্লিক জানে না মনে করসেন?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
আপনাগো মাউণ্টেনিয়ারিং কোর্স গুলায় সবার প্রথমে ফটোশপের তালিম শুরু করা উচিৎ। আগে ফটোশপ শিখ্যা লইবেন তার পরেই না পাহাড়ে উঠার ট্রেইনিং শুরু হইব। নাইলে ক্যাম্নে কি?
অণুদা তাইলে এতোদিন আপ্নে পাহাড়ে সত্যি সত্যি উঠতেন। আমি তো ভাবছিলাম ফটুশপ। বুল অয়ে গেচে।
ওঠার সাথে সাথে ফডোশপ কইরা আরো নানান জায়গায় নানা কিছু ওঠানোও যাচ্ছে
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
অসাধারন ।
পুনম পান্ডে আর কদ্দিন, ইদানিং তেনারা সানি লিওনেরে নিয়া ব্যাস্ত আছে
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
উঠো!!!.......................................
নতুন মন্তব্য করুন