বাঘের বড় উপদ্রব। মানুষ অস্থির হইয়া উঠিল। গরু বাছুর, শেষে মানুষ পর্যন্ত বাঘের কবলে মারা পড়িতে লাগিলো। সকলে তখন লাঠি সড়কি বর্শা বাহির করিয়া বাঘটাকে মারিল। একটা বাঘ গেল- কিন্তু আরেকটা আসিল। শেষে মানুষ বিধাতার নিকট আবেদন করিল- "ভগবান, বাঘের হাত হইতে আমাদের বাঁচাও।"
বিধাতা কহিলেন- আচ্ছা।
কিছু পরেই বাঘরা আসিয়া বিধাতার দরবারে নালিশ জানাইলো- " আমরা মানুষের জ্বালায় অস্থির হইয়াছি। বন হইতে বনান্তরে পলাইয়া ফিরিতেছি। কিন্তু শিকারী কিছুতেই আমাদের শান্তিতে থাকিতে দেয় না। ইহার একটা ব্যবস্থা করুন। "
বিধাতা কহিলেন, - " আচ্ছা।"
সুশীল পরীক্ষা দিবে। সে রোজ বিধাতাকে বলে, "ঠাকুর, পাশ করিয়ে দাও।" আজ সে বলিল, "ঠাকুর, যদি স্কলারশিপ পাইয়ে দিতে পার, পাঁচ টাকা খরচ করে হরির লুট দেব।"
বিধাতা কহিলেন, - "আচ্ছা।"
হরেন পুরকায়স্থ ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান হইতে চায়। কালী পুরোহিতের মারফত সে বিধাতাকে ধরিয়া বসিল- এগারোটা ভোট আমার চাই। কালী পুরোহিত মোটা রকম দক্ষিণা খাইয়া ভুল সংস্কৃত মন্ত্রের চোটে বিধাতাকে অস্থির করিয়া তুলিল। ভোটং দেহি-- ভোটং দেহি--।
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা, আচ্ছা--।
কৃষক দুই হাত তুলিয়া কহিল, "দেবতা, জল দাও --।"
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।
দার্শনিক কহিলেন- "হে বিধাতা, তোমাকে বুঝিতে চাই।"
বিধাতা কহিলেন, - "আচ্ছা"
চীন দেশ হইতে চীৎকার আসিল, "জাপানীদের হাত হইতে বাঁচাও প্রভু!"
বিধাতা কহিলেন, - "আচ্ছা।"
একটু ফাঁক পড়িতেই বিধাতা পার্শ্বোপবিষ্ট ব্রহ্মাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, " আপনার বাসায় খাঁটি ফার্নেস অয়েল আছে?"
ব্রহ্মা কহিলেন, "আছে, কেন বলুনতো?"
বিধাতা কহিলেন, "আমার একটু দরকার। দেবেন কি?"
ব্রহ্মা (পঞ্চমুখে), "অবশ্য, অবশ্য।"
ব্রহ্মার বাসা হইতে ভাল ফার্নেস অয়েল আসিল। বিধাতা তৎক্ষণাৎ তাহা সারা গায়ে মাখিতে মাখিতে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে বিনয়ের সঙ্গে কহিলেন, "ওহে শাজাহান, তুমি যে বলিয়াছিলে, ফার্নেস অয়েলে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হইবে না, তোমার ভরসাতেই ফার্নেস অয়েল অঙ্গে মাখিয়া ডুব দিতেছি। ভক্তদের জ্বালায় আর পারা যাইতেছে না। একটু খেয়াল রাখিও।"
শাজাহান কহিল, "আচ্ছা।"
...
[বনফুলের বিখ্যাত 'বিধাতা' গল্পটিতে সামান্য সংযোজনপূর্বক]
মন্তব্য
এইডা কিছু হইলো? এম্নে হান্দায়া দ্যালেন????
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
তুমুল!
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
হায়! বিধাতাও শাজাহান সাহেবকে এতটা বিশ্বাস করিতে পারিলেন আর আমরা কতিপয় সাধারণস্য সাধারণ মানুষ পারিতেছি না! ক্ষমা কর, ক্ষমা কর, ঠাকুর!!!!!
দেবদ্যুতি রায়
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
এই না হলে মুখফোড়।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে চোখে ছানি পরে যায় , বস্। আমাদের দিকে তাকিয়ে হলেও একটু নিয়মিত লিখেন।
গোঁসাইবাবু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
বুলস আই
ইসরাত
আচ্ছা আমি কি খোয়াব দেখিতেছি। সত্যিই মুখফোড় লিখিলেন অবশেষে!!!!!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
বহুদিন পর!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
জব্বর। ওয়েল্কাম ব্যাক!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ফার্নেস মাখিয়া বিধাতা বিগত হইলেন- আর রাখিয়া গেলেন শাহজাহান- যে নামের ত্যাজে নিজেকে দিল্লিশ্বর ভাবিয়ািই ক্ষান্ত না- সকলের গায়েই ফার্নেস মাখিতে চায়---
মুখফোড়ের জবাব নাই।
স্বয়ম
বহুদিন পর! তুমুল আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলাম এবং বরাবরের মতই। নিয়মিত লিখলে ভাল লাগে!
বাহ্
===
অপর্ণা মিতু
মুখফোড় কি আর কোন কিছু লেখার উৎসাহ পান না?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন