মোগলাই গল্প ০১

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: রবি, ১৯/০৩/২০০৬ - ৯:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সম্রাট জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর একদিন কাবুলের এক বাগিচায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, হঠাৎ তাঁর চোখে পড়লো, বাগানের এক কোণে বুড়োমতো এক লোক শুয়ে ঘুমুচ্ছে। বাবরের কৌতূহল হলো। বাগানের ভেতর শুয়ে নিদ্রা যাওয়া অপরাধ নয়, কিন্তু লাই দেবার মতো কোন ব্যাপারও নয়। তিনি বুড়োর পাঁজরে তলোয়ারের খাপের ডগা দিয়ে আলতো গুঁতো দিলেন।

বুড়ো ঘুম ভেঙে উঠে চোখ ডলতে ডলতে বললো, "কে রে বেয়াদব, মুরুবি্বকে খোঁচাস?"

বাবর বললেন, "হে বৃদ্ধ, এই অপরূপ পৃথিবীর অপরূপ শহরের অপরূপ বাগিচায় শুয়ে তুমি নিদ্রামগ্ন কেন? কেন তুমি এর সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত নও?"

বাবর সাধারণ জামাকাপড় পরতেন বলে তাকে চিনতে না পেরে বৃদ্ধ মাড়ি খিঁচিয়ে বললো, "তাতে তোর কী রে অলপেপয়ে বদমায়েশ? ঘুমের সময় দিষ্টোরাপ করিস!"

বাবর বললেন, "যুগের আনন্দ [দ্রষ্টব্য 1] যা পারো লুটে নাও বৃদ্ধ। আর ক'টা দিন পরেই তো তোমাকে চলে যেতে হবে মাটির অন্দরে! যুগের আনন্দ লুটে নাও বৃদ্ধ, লুটে নাও!"

বৃদ্ধ ময়লা হাতায় লোল মুছে বললো, "এই খানে এই বাগিচায় অপরূপ ফুল ফলের ঘ্রাণের আদরে, গাছের মধুর ছায়ায়, ঘাসের নরম চাদরে শুয়ে আমি এক অপূর্ব স্বপ্ন দেখছিলাম। দেখছিলাম যে আমি সমগ্র হিন্দুস্তান জয় করেছি! বড় বড় রাজাগজার অপূর্ব সুন্দরী সব তনয়া যেচে পড়ে আমার স্ত্রী হবার জন্য চিলুবিলু শুরু করে দিয়েছে। আমার বিশাল প্রাসাদে গড়াগড়ি খাচ্ছে পারস্যের সেরা সব মদের পিপে, নর্তকীরা ঘুরে ঘুরে নাচছে, দুনিয়ার সেরা তুর্কমান ঘোড়া সাজিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে, ওতে চড়ে আমি হাতিশালায় যাবো বলে, আর হাতিশালায় দুনিয়ার সেরা কামরূদী হাতির পিঠে চড়ে আমি মণিমানিক্য খচিত হাগনকোঠিতে পাইখানা করতে যাবো বলে। আর তুমি শালা বাঞ্চৎ আমার স্বপ্নটি মাটি করলে, যুগের আনন্দ লুট করানোর জন্যে ... এই বুড়ো বয়সে, গায়ে জোর নেই, পয়সা কড়ি সম্বল নেই, যুগের আনন্দ লুট করবো কী করে র্যা? দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা। বল তোর নাম কী?"

বাবর মৃদু হেসে বললেন, "বাবর!"

বৃদ্ধ গর্জে উঠলো, "এহ, বাঘের নামে নাম! বেশ। যুগের আনন্দ যুগের আনন্দ বলে কানের পোটকা পঁচিয়ে তুই লাখো আশরফি দামের স্বপ্নটা আমার মাটি করলি, ব্যাটা বাবর, শুনে রাখ, তোর নাম লোকে মনে রাখবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিষ্কর্মাকে তোর নামের সাথে যুগের আনন্দকে স্মরণ করে ডেকে! যে কি না শুধু নাক ডেকে ঘুমুবে আর লম্বাচওড়া বুলি ছাড়বে। ব্যাটা উজবুক কাঁহিকা!"

বাবর পাংশু মুখে বাগিচা ছেড়ে প্রাসাদে ফিরে গেলেন।

দ্রষ্টব্য:
1. বাবরের সাথে বৃদ্ধের আলাপ চলছিলো ফার্সিতে। মোগলাই ফার্সিতে যুগকে বলা হয় জামান, আর আনন্দকে বলা হয় লুৎফ।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা যত পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। মুখফোড় রকস!!

আলসে দুপুর এর ছবি

@মুখফোড়ঃ হঠাৎ করে আপনার একটি লেখা পড়ে আমি হাসতে হাসতে এই ব্লগে আটকে গেলাম। আমি সচলায়তন এ আসিনা খুব একটা... কিন্তু এখন থেকে আসব বালে মনস্থির করলাম...

ধন্যবাদ.. দারুন সব লেখা উপহার দেবার জন্য।

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

অলস!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।