ছাতাটা জুতাটা মানুষ ভুল করে, বা অন্যের ইচ্ছায় হারিয়ে ফেলে। তৌহিদুল তো ছুটিয়াল, ওভাবে হারানোর মানুষ নন। দক্ষিণ মহাদেশের ক্রীড়াপল্লী থেকে হারালেন কিভাবে?
তৌহিদুল অনেক দৌড়েছেন। ছেলেবেলায়, আরেকটু বড় হয়ে, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের সময়, প্রশিক্ষণের পরে ... সারাটা জীবন ধরেই তো ছুটছেন বলতে গেলে। ছুটিয়াল তৌহিদুলকে আবার দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পাঠানো হয়েছে বিদেশবিভুঁইয়ে।
তৌহিদুল বিমান থেকে নেমে ক্রীড়াপল্লীতে পৌঁছানোর পথে যা দেখেন তাতেই বিস্মিত হন। কী লম্বা লম্বা লোকজন, মাছের পেটের মতো সাদা একেকজন, ব্যস্তসমস্ত মানুষ সবাই, কী এক তাড়ায় সবাই হুড়োহুড়ি করে চলছে এদিকওদিক। তৌহিদুল আপন মনে হাসেন। ছোটে রে, সবাই ছোটে।
ট্র্যাকে প্র্যাকটিসের আগের রাতে তৌহিদুলের ঘুম ভেঙে যায়, তিনি কিছুক্ষণ এপাশওপাশ করে উঠে বসেন বিছানায়। কালকে আবারও ছুটতে হবে, অচেনা মাঠে, অচেনা মাটিতে। অবসর পাইলাম না জীবনে, বিড়বিড় করেন তৌহিদুল। খালি ছুটি আর ছুটি।
কথাটা বলেই তৌহিদুলের মাথায় যেন বজ্রপাত হয়। ছুটি! একটু ছুটি দরকার। এই ছুটিয়ালের জীবনটা থেকে ছুটি। বছরে দুই একবার গ্রামের বাড়িতে যাওয়া, সারাবছরের জমানো সমস্যার সমাধান দেয়া, বৌটা ভুল বানানে চিঠি লিখে কত কিছু বলে, ছোট ছেলেটা বাপের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, আর আমি তৌহিদুল, দরিদ্র সৈনিক, খালি ছুটি আর ছুটি, কখনও বস্তা পিঠে বন্দুক হাতে, কখনও খালি গায়ে, তৌহিদুল হয়ে আমি ছুটি শুধু।
পরদিন ভোরবেলা ট্র্যাকে দেখা যায় না তৌহিদুলকে। খোঁজখবর পড়ে যায়< তৌহিদুলকে পাওয়া যায় না। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত চলে যায় সংবাদ মাধ্যমে, নিখোঁজ হয়েছেন তৌহিদুল। অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ তাকে তাড়া করে ফিরছে, সেনা সদরে রিপোর্ট চলে গেছে, সৈনিক তৌহিদুল পলাতক।
কিন্তু আমরা জানি, ঐ হাজার হাজার ব্যস্তসমস্ত স্বচ্ছল শ্বেতাঙ্গদের ভিড়ে, খোলা আকাশের নিচে আমাদের তামাটে তৌহিদুল হাসিমুখে হেঁটে বেড়াচ্ছেন, সরল বাঙালি হাঁ করে দেখছেন বিত্ত আর বৈভব, কোন পুলিশ, কোন সেনাবাহিনীর পরোয়া করেন না তিনি। দক্ষিণ গোলার্ধের পায়রার দল ঝটপট শব্দ করে তাসমান সাগরে অচেনা বাতাসে ঢেউ তোলে, তৌহিদুলের হাবিলদার ছাঁট শিরশির করতে থাকে, তিনি অলস পায়ে হেঁটে বেড়ান শহরে।
ছুটি। হাসেন তৌহিদুল।
[এই গল্প লেখার দায়ে মুখফোড় তৌহিদুলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।]
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন