তন্ত্রালাপ

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: বুধ, ১২/০৪/২০০৬ - ২:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গণতন্ত্র এই পোড়ার দেশে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিলো, যেমন করিয়া বহু কাঠ খড় পোড়াইয়া মন্দিরে দেবমূর্তি অধিষ্ঠিত হয়। তবে ডামাডোলে কেহ খায়াল করে নাই, মন্দিরের ছাদখানাই উযু্যগ করিয়া কেহ নিমর্াণে আগাইয়া আসে নাই, তাই বিরূপ প্রকৃতি দেবমূর্তির ন্যায় অচলা গণতন্ত্রের উপর আঘাত হানিয়া চলিলো। উন্মুক্ত দেবতার মস্তকে পক্ষীকূল মলত্যাগ করিয়া পলেস্তারা গড়ে, আমাদের গণতন্ত্রেও নানাবিধ মল জমিতে লাগিলো। আক্রান্ত হইতে হইতে বিকৃতি ও বিবর্তন নামক দুই অমোঘ নিয়তিঅপ্সরার হাত ধরিয়া আমাদের গণতন্ত্র বা ডেমোক্রেসি পর্যবসিত হইলো পুতুলতন্ত্র বা আইডলোক্রেসিতে।

পুতুলতন্ত্রে একজন পুতুল প্রয়োজন হয় (আক্ষরিক অর্থে নিবেন না কেহ, পুতুলের নাম যে পুতুলই হইতে হইবে এমন কোন দিব্য নাই)। পুতুলটিকে জনসমক্ষে রাখিয়া, স্থানে স্থানে তাহার পোস্টার ছাপাইয়া ও ছোপাইয়া, দেশবাসীর মনে তাহার কান্তিকে ধ্রুব করিয়া তুলিয়া, জনগণকে সেই পুতুলের পূজায় উদ্্বুদ্ধ করিয়া, আড়ালে ফায়দা লোটেন পুরোহিতগণ। পুতুল যেমনি নাচানো হয় তেমনি নাচে, আড়ালে শিখানো বুলি আওড়াইতে থাকে, তাহাকে যাহা লিখিয়া দেয়া হয় তা-ই সে পাঠ করিতে থাকে। দেশবাসী পুতুলের কথায় মজিয়া রহে, পুরোহিতগণ বিভিন্ন দ্্বীপরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়াইতে থাকেন।

বিবর্তিত হইবার পর আদিরূপের প্রতি নবরূপের আক্রোশ জন্মাইতে পারে। অনেকেই বানর হইতে উৎপন্ন হইতে চান না, আদমসন্তানোচিত গৌরবে অপরকে বানরের বাচ্চা বলিয়া গালাগালি করেন, তেমনি গণতন্ত্রের প্রতিও পুতুলতন্ত্রের আক্রোশ লক্ষণীয়। গণতন্ত্রকে তাচ্ছিল্য করিয়া তাই আইডলোক্র্যাটিক পুরোহিতগণ মবোক্রেসি/অক্লোক্রেসি বা মফিজতন্ত্র বলিয়া আখ্যায়িত করেন।

ইহা লইয়া জনৈক পান্ডিত্যাভিমানী বান্ধবের সহিত গুজুর গুজুর করিতেছিলাম। তিনি আমাকে বলিলেন, শাস্ত্রে যেসব সম্ভাব্য শাসনব্যবস্থার কথা তিনি পড়িয়াছেন, তাহার বেশিরভাগই এখন এই পোড়ারদেশের জন্য খাটে। তিনি ইংরাজি বর্ণানুক্রমে কহিতে লাগিলেন।

আমেরিকানোক্রেসি বা আমেরিকাতন্ত্র এখন এই দেশে রগে রগে শিকড় গাড়িয়াছে। আমাদের খাওয়া পরা এখন আমেরিকানদের করবন্দী। তাহারাই সময়ে সময়ে মাঝারি মাপের দূতকর্তা পাঠাইয়া আমাদিগের পুতুল-পুরোহিতবৃন্দকে শাসাইয়া যান।

অ্যারিদমোক্রেসি বা সংখ্যাগুরুতন্ত্র ও এখন মাথা চাড়া দিয়া উঠিয়াছে। যাহারা সংখ্যায় ভারি, তাহারাই বলিয়া দিতেছে সংখ্যায় হালকাদের কীরূপে চলিতে হইবে।

হালকা একটা অটোক্রেসি/মনোক্রেসি বা একব্যক্তিতন্ত্রও যে দেশে ছড়ায় নাই, তাহা নহে। একটি মাত্র ব্যক্তির অঙ্গুলিহেলনে বহু কিছু ঘটিয়া যাইতেছে।

তবে বিদগ্ধজন রসিকতা করিয়া বর্তমান শাসনব্যবস্থাকে ফুলোক্রেসি বা ভোদাইতন্ত্র বলিয়া ডাকেন মাঝে মাঝে। তাঁহাদের কেউ কেউ কাকিস্টোক্রেসি বা দুর্জনতন্ত্র চলিতেছে বলিয়া ফোঁসফোঁসও করেন।

যেহেতু আজ শাসনব্যবস্থা বিত্তবানের পকেটবন্দী ক্রীড়নক, তাই প্লুটোকেসি বা মহাজনতন্ত্রও চলমান, বলিয়াছেন জ্ঞানী বান্ধবটি। তবে তিনি এ-ও বলিয়াছেন, একে প্লুটোডেমোক্রেসি বা মহাজনগণতন্ত্রও বলা যায়। বলিতে না বলিতেই তিনি বিড়বিড় করিয়া পর্নোক্রেসি বা বেশ্যাতন্ত্র না কী জানি একটা বলিলেন, আমি জিজ্ঞাসা করিতে অন্য প্রসঙ্গে চলিয়া গেলেন।

আমি কী আর করিবো, মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে আসিয়া ভাবিলাম ব্লগে একখানা পোস্ট তুলি।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।