আদম নিজের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গলা খাকরায়।
"ভাইসব!" শুরু করে সে। "আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, ঘরে এখন জ্বালানি কাঠ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ আছে। জ্বালানি কাঠের কোন সঙ্কট ঘরে নাই। আরো দুই পূর্ণিমা পার করা যাবে এই মজুদ করা কাঠ দিয়ে। কিন্তু, একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করে এই কাঠের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে চাইছে! কাঠ নাই কাঠ নাই বলে তারা ঘরে অশান্তি সৃষ্টি করছে! কিন্তু এদের কথায় আপনারা কান দিবেন না!"
ঈভ ছাড়া আদমের সামনে আর কেউ নাই। ঈভ তড়পে ওঠে, "গত দুইদিন ধইরা আমি কষ্ট কইরা কইরা কাঠ টোকায় আনছি, তুমি বয়া বয়া প্যাপার পড়ছো!"
আদম আড়চোখে ঈভকে দ্যাখে আপাদমস্তক, তারপর আবার শুরু করে। "ভাইসব! ঘরে মৃৎপাত্রেরও কোন অভাব নাই। পিছনের বাগানের লাউয়ের মাচায় পানি দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মৃৎপাত্র ঘরে মজুদ আছে! কিন্তু একটি কুচক্রী মহল রটিয়ে দিয়েছে যে ঘরে মৃৎপাত্র নাই! এ নিয়ে বিপ্লব, বিদ্রোহ ও ভাঙচুর ঘটেছে! এ মোটেও কাম্য নয়। ঘরের উন্নতি চাইলে এ ধরনের নাশকতামূলক কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে!"
ঈভ চেঁচিয়ে ওঠে, "নারিকেলের মালসায় করে লাউয়ের মাচায় পানি দেই, কত কইরা কইলাম, হাবিলের বাপ, যাও বড় দেইখা একটা কলসি বানায় নিয়া আসো! গত পাঁচ বছর ধইরা চিল্লাই মিনসার কানে পানি ঢুকে না! নারিকেলের মালসায় কইরা গাছে পানি দ্যাওন যায়?"
আদম বিড়বিড় করে, "সদিচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব!"
ঈভ চেঁচায়, "কী? কী কইলা? গাইল দিলা নাকি?"
আদম আবার গলা খাকরায়, "ভাইসব! আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ঘরে গোবরেরও কোন সঙ্কট নাই! পর্যাপ্ত পরিমাণ গোবর ঘরে মজুদ আছে! বাগানের পাশে লালশাকের ক্ষেতে দেয়ার জন্য গোবরের কোন অভাব হবে না! ফলনও আগের বছরের তুলনায় বাম্পার হবে! ভাবতে ভালো লাগে যে ঘর এগিয়ে যাচ্ছে! আসুন আমরা উন্নয়নের কথা ভাবি!"
ঈভ উদ্বাহু নৃত্য করে ওঠে, "ঘরে গোবরের অভাব ক্যামনে হইবো, তুমি থাকতে? হালায় মাথা ভর্তি গোবর তোমার!"
আদম জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটে, বলে, "ঘরে মধুর একটু বাড়ন্ত, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে মধুর দাম একটু চড়া। মৌমাছিরা দিন দিন অলস হয়ে পড়েছে, তাদের মধ্যে পলিটিকস ঢুকে গেছে, রাণীর কথা শোনে না, যে যার ধান্ধায় ঘোরে। রাণীর কথা, রাজপুত্রের কথা না শুনলে এমন বিশৃঙ্খলা তো হবেই! তাই মৌমাছিদের চাকে আগের মতো মধু নাই! তাই মধু একটু কম আছে! কিন্তু মধু একটু কম খেলে কী হয়? আপনারা মধুর পরিবর্তে বেশি করে নুন খান আর গুণ গান!"
ঈভ ফুঁসে ওঠে, "চাক ভাইঙ্গা মধু পাইড়া তো নিজেই খাও গপগপ কইরা, ঘরের লাইগা কি আনো নাকি? আর যতটুকু আনো নিজেই তো পরে চাইট্টাপুইট্টা খাও। মধু থাকবো ক্যামতে?"
আদম অন্য পায়ে ভর বদলায়। "ভাইসব! ঘরে মাঝে মাঝে ছোট ছোট সমস্যা হয়ই! সবার ঘরেই হয়। এ নতুন কিছু নয়! কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে, এটা স্বর্গ! স্বর্গের শান্তি বজায় রাখা আমাদের কর্তব্য। এসব ছোটখাটো জিনিস নিয়ে আন্দোলন করে ঘরকে অস্থিতিশীল করে তোলার যে ষড়যন্ত্র তা রুখে দাঁড়ান!"
ঈভ নিস্ফল আক্রোশে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুঠি পাকায়! ঈশ্বর এ কেমন মরদ দিলো তার ঘরে?
মন্তব্য
পুরাতন লেখাগুলো পড়াশুরু করলাম। চ্রম লাগতাছে পড়তে।
রাজনীতির স্যাটায়ার নাকি!
ভালো লাগলো । মৌটুশি বাশার
নতুন মন্তব্য করুন