ধোবিয়ানা শহরের প্রান্তে খরতোয়া নদী, তার ওপরে এক সেতু। সেই সেতুর চারকোণে চারটা ড্রাগন। সেই কিংবদন্তীর রাজা কুতুব সিংহের আমলে তৈরি। কিন্তু আশ্চর্য সে ড্রাগনের মূর্তিতে কোন মরচে পড়েনি আজো, কুতুব মিনারের মতোই তারা মজবুত।
ড্রাগনদের সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তী আছে। শোনা যায়, সেতুর ওপর দিয়ে কোন কুমারী মেয়ে পেরিয়ে গেলেই ড্রাগনদের লেজ নড়ে ওঠে। তাই সহজে কোন অবিবাহিতা মেয়ে এই সেতু পেরোতে চায় না, তারা আট আনা পয়সা খরচ করে নিচে খেয়া নৌকায় পার হয় খরতোয়া নদী। দু'একজন সাহসিনী অবশ্য এসব কিংবদন্তীর পরোয়া করে না, যেমন ধোবিয়ানার সরকারী স্কুলের হেডমাস্টার মহাশয়ের কন্যা গটগট করে হেঁটে সেতু পেরিয়ে স্কুলে যায়। ড্রাগনদের লোহার লেজ বাতাস লেগেও নড়ে না। বখা ছোঁড়ারা হাসে, হেডু স্যারের মেয়ে দেখি খুব খ্যালে! ওদিকে আবার শুল্ক কর্মকতর্ার স্ত্রী একদিন কী মনে করে সেতু পেরিয়েছিলেন, বখাদের দল খুবই চেঁচিয়েছিলো সেদিন, লইড়েছে রে লইড়েছে, দাগোনের ন্যাজ লইড়েছে!
তো, একদিন হঠাৎ ধোবিয়ানা শহরে সাড়া পড়ে গেলো। খরতোয়ার ওপারের এক গাঁ থেকে এক সম্মেলনে অংশ নিতে এসেছেন এক রূপসী বিদূষী নারী, ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে সেতু পেরোচ্ছেন, হঠাৎ যেন চার লোহার ড্রাগন একসাথে ক্ষেপে গেলো, বাঁই বাঁই করে তাদের লেজ ঘুরতে লাগলো বায়ুকলের ডানার মতো। উপস্থিত জনতা বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে অভিনন্দিত করলো হতচকিতা বিদূষীকে।
তো, সম্মেলন চললো কয়েকদিন। বিদূষী তো জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতায় অস্থির করে ফেললেন সবাইকে। শহরে জোর কানাঘুষা, কৌমার্যের জোর বোধহয় একেই বলে।
কিন্তু সম্মেলন শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঘটলো গন্ডগোল। ধোবিয়ানার ড্রাগনেরা অধোবদনে বসে, তাদের লোহার লাঙ্গুল নীরব, নিথর। শহরবাসী আঁৎকে উঠলো, য়্যাঁ, ছি ছি, সম্মেলন করতে এসে শেষে এই কান্ড? বিদূষী মুখে আঁচল চাপা দিয়ে জোরসে ঘোড়ার গাড়ি ছোটাতে বললেন।
ধোবিয়ানাবাসী চরম ক্ষেপে উঠলো, কে সেই পামর যে অমন একটা কাজ করতে পারলো, য়্যাঁ, ড্রাগনের লেজ নাড়ার ঐ চমকপ্রদ দৃশ্য থেকে বঞ্চিত করলো টিকেট কেটে আসা অসংখ্য দর্শকদের? শুরু হলো জোর তদন্ত!
তদন্তে ধোবিয়ানার বড়মন্দিরের হেডপুরোহিতকে প্রায় ফাঁসিয়ে আনা হয়েছে, এমন সময় একদিন স্থানীয় পত্রিকা ধোবিয়ানা সন্দেশে বড় বড় করে লাল হরফে হেডিং বেরুলোঃ
লন্ডননিবাসী গবেষক গাব্রিয়েল মগাদিশু চৌরাসিয়ার রহস্যজনক অন্তর্ধান!
তল্পিতল্পা ফেলেই সম্মেলন শেষে গা ঢাকা দিয়েছেন চৌরাসিয়া!
ধোবিয়ানার লোকজনের মধ্যে কানাঘুষা আর বাজি ধরা চলতে লাগলো, হেডপুরুত নাকি চৌরাসিয়া?
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন