গাব্রিয়েল মগাদিশু চৌরাসিয়া দরজায় প্রবল করাঘাতের শব্দ শুনিয়া বিরক্ত হইয়া কম্বলের কন্দর ছাড়িয়া বাহির হইলেন। আপদ। এই শীতের প্রত্যুষে কোন পেঙ্কির পো আসিল জ্বালাতন করিতে? গবেষণা ছাড়িয়া গোয়েন্দাগিরির লাইনঘাট ধরিয়া এক মুসিবতেই পড়িয়াছেন তিনি। দিন নাই রাত নাই পাড়া পড়শীরা নানা পাতিরহস্য লইয়া ধর্ণা দ্যায় তাঁহার দুয়ারে।
দরজা খুলিতেই পাশের বাড়ির মালিক জনাব হলুদ কুন্ডু একেবারে হাহাকার করিয়া জাপটাইয়া ধরিলেন তাঁহাকে, "সর্বনাশ হয়ে গ্যাছে মিস্টার চৌরাসিয়া, আমার সর্বনাশ হয়ে গ্যাছে!"
চৌরাসিয়া নির্মম হাতে কেশ আকর্ষণপূর্বক কুন্ডু মশাইকে আলিঙ্গন হইতে ছাড়াইয়া আনেন। "কী হয়েছে? পালিয়ে গ্যাছে আপনার সুন্দরী বউ কাজের ছোকরার সাথে?"
হলুদ কুন্ডু ডুকরাইয়া কহিয়া ওঠেন, "না, এখনো না!"
চৌরাসিয়া একখানা রোমশ ভুরু উত্তোলন করেন, "তাহলে?"
হলুদ কুন্ডু কাঁদিতে কাঁদিতে কহেন, "খুন হয়েছে খুন! কে বা কাহারা আমার সাধের বিড়াল সাইমুমকে!"
চৌরাসিয়ার চোয়াল শক্ত হইয়া ওঠে। "সাইমুম? আপনার সেই কেলে হুলোটা? রোজ যেটা আমার বাড়িতে খাবার চুরি করতে ঢুকতো সেটা? সেই বজ্জাত ডিপথেরিয়ার ধারকবাহকরক্ষক বিড়াল সাইমুম?"
হলুদ কুন্ডু মাথা নাড়েন।
চৌরাসিয়া বলেন, "আপনি বলবেন না, আমাকে আন্দাজ করতে দিন। কে বা কাহারা সাইমুমের মুন্ডুটা এক কোপে ধড় থেকে আলাদা করে ফেলে রেখে গ্যাছে?"
হলুদ কুন্ডুর চোখ বিস্ফারিত হয় বিস্ময়ে। "আপনি ... আপনি কীভাবে জানলেন?"
চৌরাসিয়া চিন্তিত মুখে বলিলেন, "আমি অনেক ভালো গোয়েন্দা তাই। আপনার চেহারা দেখেই বুঝে ফেলেছি সাইমুমের কপালে কী ঘটেছে। ঠিক আছে, আপনি যান, লাশের চারপাশে চক দিয়ে দাগ কেটে রাখেন, কোন কিছু পরিষ্কার করতে যাবেন না, আমি সকালে উঠে দেখছি কী করা যায়!"
হলুদ কুন্ডু ফোঁপাইতে ফোঁপাইতে নিষ্ক্রান্ত হন। চৌরাসিয়া দরজায় আগল দিয়া ভাবিতে বসেন।
বিড়াল খুনের ঘটনা ইহাই প্রথম নহে। ইহা লইয়া তৃতীয় মার্জারহত্যার কেস তাঁহার করতলগত হইল। প্রথম খুন হয় তাঁহার বিপরীতদিকের বাড়ির মিসেস অর্ধকুমারীর বাসায়। খুনটা হয় রাত্রিকালে, ভোরে টয়লেট সারিতে গিয়া অর্ধকুমারী আবিষ্কার করেন, কে বা কাহারা তাঁর প্রিয় কাবুলি বেড়াল মুন্তাকাকে গলায় ধারালো অস্ত্র চালাইয়া খুন করিয়াছে। তিনি ভোরবেলায় নাইটি পরা অবস্থায় ছুটিয়া আসেন চৌরাসিয়ার দুয়ারে। পরদিন সকালে তদন্ত মারিয়া চৌরাসিয়া কিছু তথ্য টুকিয়া লন নোটবইতে, আর পুলিশকে জানাইয়া ঘোল পাকাইতে বারণ করেন।
দ্বিতীয় খুনের শিকার হয় পাশের গলির জনাব ছাগেব বুদবুদের প্রিয় শ্যামদেশী বিড়াল খোশবু। ভোরবেলা ছাগেব বুদবুদ আসিয়া কিল মারেন চৌরাসিয়ার দরজায়। চৌরাসিয়া পরদিন সকালে গিয়া দ্যাখেন, মুন্তাকার মতো জবাই করিয়া নহে, বেশ গভীর কোপ দেওয়া হইয়াছে খোশবুর গলায়, মুণ্ড প্রায় ধড় হইতে বিচ্ছিন্ন।
আর এখন খুন হইল হলুদ কুন্ডুর বজ্জাত বিড়াল সাইমুম। হতভাগ্য মার্জারটির মস্তক দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন।
চৌরাসিয়া পায়চারি শুরু করেন ঘরের মধ্যে।
পরদিন সকালে বাজারের কামারের দোকানে গিয়া হানা দ্যান চৌরাসিয়া। রমাকান্ত কামার বসিয়া বসিয়া হাঁপরে হাত বুলাইতেছিলো, চৌরাসিয়াকে দেখিয়া তাহার ভুরু কুঞ্চিত হইয়া ওঠে।
"আচ্ছা রমা, কেউ তোমার কাছ থেকে তলোয়ার বানিয়ে নিয়েছে গত কয়েকদিনের মধ্যে?" চৌরাসিয়া ফ্লাস্ক থেকে এক চুমুক ভোগান্তি চালান করেন পেটে। দর্শনায় তৈরি ভদকা, অত্যন্ত চমৎকার দ্রব্য, নামে ভোগান্তি হইলেও কামে তেমন নহে, চৌরাসিয়া নিয়মিত সেবন করেন।
রমাকান্ত কিছুক্ষণ ভাবিয়া একটি হালখাতা খুঁজিয়া বাহির করে। তাহাতে কিছুক্ষণ আঁতিপাতি সন্ধান করিয়া সে বলে, "হাঁ! এই তো এই পাড়ার কার্বন মাঝি সাহেব দশদিন আগে একটা বানিয়ে নিয়ে গেলেন।"
চৌরাসিয়া হাসেন। "হুমমম। তো, তলোয়ার বানানোর ফরমাশ পেয়ে তোমার অবাক লাগেনি?"
রমাকান্ত গুম্ফের প্রান্তদেশে দুটি অঙ্গুলি চালনা করিতে থাকে। "না। খুশি লেগেছে। পয়সা পেয়েছি অনেক। আমি তো কামার, তলোয়ার বললে তলোয়ার বানিয়ে দেই, বন্দুকের নল বললে বন্দুকের নল, ট্যাঙ্কের চাক্কা বললে ট্যাঙ্কের চাক্কা ...।"
চৌরাসিয়ার মুখ শুকাইয়া যায়। তিনি আরেক বড় ঢোঁক ভোগান্তি গিলিয়া বলেন, "আচ্ছা, তলোয়ারটা কি কার্বন মাঝি সাহেব ধার করাতে এনেছিলেন পরে?"
রমাকান্ত মাথা নাড়ে। "হাঁ! এই নিয়ে তিনবার হলো ধার করাতে আনলেন।"
চৌরাসিয়া সন্তুষ্ট হইয়া হাসেন। "হুমমম। তুমি জিজ্ঞেস করোনি এতো ধার করাতে হয় কেন তলোয়ার?"
রমাকান্ত মাথা নাড়ে। "হয়তো কচুগাছ কচুকাটা করেন, তাই ঘনঘন ধার করাতে হয়।"
চৌরাসিয়া হাসেন। হুমমম।
.
.
.
বাড়ি ফিরিয়া চৌরাসিয়া দ্যাখেন, দরজার গায়ে পিন মারিয়া একখানি খাম সাঁটানো। খুলিয়া দ্যাখেন, বিবাহের নিমন্ত্রণ। প্রতিবেশী জনাব কার্বন মাঝির সহিত জনৈকা চুনিয়া আর্কেডিয়ার শুভবিবাহ আগামী রবিবার।
চৌরাসিয়া হাসেন। ভালোই। রহস্যের সমাধান হলো, আর ধরে নেয়া যেতে পারে আর একটি মাত্র বিড়ালের হত্যাকাণ্ড ঘটিলেই এই সিরিজ খুনের ফ্যাসাদ সমাপ্ত হইবে। তবে এই অভাগা বিড়ালের স্বত্বাধিকারিণী অন্তত গোয়েন্দার কাছে নালিশ ঠুকিতে আসবেন না। বাসর রাতে নিহত মার্জার লইয়া কে কবে হাউকাউ করিয়াছে?
মন্তব্য
অত্যন্ত মধ্যমানের এই "গল্পে" নাম নিয়ে নিরর্থক নাড়াঘাঁটার কারণ জানার ইচ্ছে রইলো।
----------------------------------
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
সমসাময়িক ঘটনাবলি না জানলে মুখফোড়ের গল্পের উদ্দেশ্য বোঝাটা একটু মুস্কিল!
অনবধানবসত ভুলের জন্য আমি দুঃখিত। লেখকের কাছে অনুরোধ রইলো সমসাময়িক ঘটনাবলির একটা লিংক দেওয়ার। ধন্যবাদ।
-----------------------------------
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
উঁহু। এক লিংকে সেটা সম্ভব হবে না। গল্পটা বেশ প্রাচীন। তবে মুখফোড় জাতিকে একটা মেসেজ দিতে চাইছে। আপাতত সেটাই তার উদ্দেশ্য।
জনৈক কার্বন মাঝি শীঘ্রই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছে।
কার্বন মাঝি কি সত্যিই বিয়ের পিঁড়িতে বসছে যাচ্ছে নাকি???? কবে????
[ভাবছিলাম নতুন রহস্যগল্প বুঝি!]
হেহেহেহেহে...
_________________________________________
সেরিওজা
ইন্নানিল্লাহ্...
কার্বন মাঝির বিবাহ? দাওয়াতকার্ড তো এখনো পাই নাই।
আমি যা দেখছি, আপ্নিও কি তাইই দেখছেন্নি?
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
- পুরান গপ্প দিয়া কী কৈবার চাও হে মামুর বিটা!
কার্বন মাঝির শুভ বিবাহের শুভক্ষণে শুভেচ্ছা থাকলো... হেহ হেহ হেহ
কী মাঝি, ডরাইলা?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কার্বন মাঝি কে?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
কার্বন মাঝি, তুমি যেই হও না কেন... তোমারে শুভেচ্ছা!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
রহস্য কোথায়? এতো মার্জার নিধন গপ্পো...!
---থাবা বাবা!
বুঝলুম, যতটুকু ইনটেলেক্সুয়াল হলে এই গপ্পো বুঝবে ততটুকু আমি নই।
শাফি।
কিছু একটা মনে হয় মিস করেছি, তাই গল্পটা বুঝতে পারলাম না।
কেউ ধরিয়ে দেবেন?
কামরুল হাসান রাঙা
নতুন মন্তব্য করুন