অরূপের চিত্রকর্ম নিয়ে গল্প

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: বুধ, ১০/০৫/২০০৬ - ৮:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

শিল্পী আলহাজ সালভাদর ঢালি মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন ছালতামিরা গুহার দেয়ালের দিকে। কী অপূর্ব সব ছবি! গুহার ভেতরে সূর্যের আলোর কড়া পরশ সেসব ছবির জেল্লা নষ্ট করতে পারেনি। শিল্পী ঢালি বিড়বিড় করে সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করেন। আহা, চিত্রকর্ম কতো যুগ ধরে মানুষের মনে বসত করে আসছে।

শিল্পী ঢালি হাঁটতে হাঁটতে গুহার আরো গভীরে এগিয়ে যান। এক জায়গায় আঁকা এক বিশাল বাইসনের ছবি, চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে তার দিকে বল্লম ছুঁড়ছে একদল মানুষ। শিকারের দৃশ্য। আদিম শিল্পীরা শিকার করতে ভালোবাসতো। তার পাশে আঁকা বিশাল এক অগি্নকুন্ডের ছবি, তার চারপাশে গোল হয়ে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করছে একদল নারীপুরুষ। নাচের দৃশ্য। আদিম শিল্পীরা নাচগান করতে ভালোবাসতো। তার পাশে আঁকা বিশালবক্ষা এক রমণীর ছবি, তাতে উপগত হচ্ছে এক উলঙ্গ পুরুষ। সঙ্গমের দৃশ্য। আদিম শিল্পীরা সঙ্গম করতে ভালোবাসতো।

শিল্পী ঢালি ঘনঘন আহা আহা করতে থাকেন। কী রং! কী রেখা! কী সব ছবি!

হঠাৎ একটি ছবির সামনে এসে থমকে পড়েন সালভাদর ঢালি। তাঁর মস্তকে যেন ঠাঠা পড়ে!

অদ্ভূত এক দৃশ্য আঁকা ছালতামিরার দেয়ালের এই অংশে। দাঁত কিড়মিড় করে একটি মুন্ডু, তার পেছনে তিনটি হাত নির্গত হয়েছে। প্রতিটি হাত থেকে বেরিয়েছে কয়েকটি আঙুল, সেই আঙুলগুলো প্রবিষ্ট হচ্ছে একই ভঙ্গিতে হাঁটুর ওপর চেয়ারম্যান সেজে বসা তিনটি মানবের পশ্চাদ্দেশে। তিনটি মানবই হাত উঁচিয়ে ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে কী যেন বলছে। এদের গায়ের রং কালো। আর মুন্ডুটির গায়ের রং নীল।

ঢালি আরো একটু কাছে গিয়ে দেখতে পান, তিনটি নয়, মুন্ডুটি থেকে চারটি হাত বেরিয়েছে। চতুর্থ হাতটি থেকে নির্গত আঙুল প্রবিষ্ট হয়েছে মূর্তিটির নিজের কানে।

ঢালি বিমল বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন দেয়ালচিত্রটির দিকে। এক শাশ্বত সত্য উদ্ভাসিত হয় তাঁর সামনে। আশ্চর্য! আদিমকাল থেকেই মানুষ তবে এমন! অন্যের পেছনে আর নিজের কানে আঙুল ঢুকিয়ে সুখ পায় বোধহয় কেবল মানুষই। বাইসন নয়, ম্যামথ নয়, কেবল মানুষই এ কাজ করে বেড়ায়।

সালভাদর ঢালি তাঁর ৩৭,০০০ ডলার দিয়ে কেনা হাসেলব্লাড ক্যামেরা তাগ করে ছবি তুলতে শুরু করেন এই অভূতপূর্ব চিত্রকর্মের।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।