হেবো ছাগাজন

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: শনি, ০৯/০৯/২০০৬ - ৪:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অভিদেষ্টা কোম্পানির নাটের গুরু পর্বৎ মওলার কাছে ছাগাজন চাকরি করেছিলো কয়েক বছর। পর্বৎ মওলা বদমেজাজি লোক, জুতা পালিশ করে না রাখলে সে বুট পরে লাথি মারতো। কয়েকবার লাথি খেয়েই হেবো সাবধান হয়ে গিয়েছিলো। আক্কলমন্দের জন্য ইশারাই কাফি।তো, পর্বৎ মওলা একদিন এক আজব তেলেসমাতি শুরু করলো। ইন্টারনেট। কম্পিউটারে বসেই দুনিয়ার খবরাখবর পাওয়া যায়। শুধু মাউজ নামের ঐ বস্তুটা দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়, আর কীবোর্ডে কিছু টিপাটিপি।হেবো ছাগাজনের বড় শখ হয়, সেও ইন্টারনেট ঘাঁটবে।পর্বৎ মওলা চোখ রাঙায়, বলে যা ভাগ, জুতা কালি করে নিয়ে আয় দুই জোড়া। এক জোড়া আমি পরবো, আর আরেকজোড়া তুই মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি। শখ কতো! জানিস এটা অবৈধ?হেবোর চোখ ফেটে জল আসে। ওহ না, জল না, সে সামলে নেয়, তারপর চোখ ফাটিয়ে পানি নামায়। জল তো বলে যত ইন্দিরা গান্ধীর দালালেরা।পর্বৎ মওলা অফিসে চলে গেলে একদিন হেবো কম্পিউটারের সামনে বসে পড়ে। আনমনে মাউজ নাড়ে, কীবোর্ডে খুটখাট করে। অমনি কোত্থেকে একটা ন্যাংটা মেয়ের ছবি ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে থাকে। হেবোর তো অবস্থা কাহিল। ওফফ, কী দারুণ ব্যাপার!কিন্তু হেবো ধরা পড়ে যায় পর্বৎ মওলার কাছে। ব্যাপক চড়চাপড় খেতে হয় তাকে।এর কিছুদিন পর একদিন ছুটির দিনে পর্বৎ মওলার ইয়ারদোস্ত কয়েকজন কাচ্চু খেলতে বসে। হেবো শোনে, তারা ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক তুলা ধুনছে। পর্বৎ মওলা দাবি করে, সে-ই প্রথম দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। আরেক বন্ধু বলে, সে দ্্বিতীয়। বাকি দু'জনও তৃতীয় আর চতুর্থ স্থানের জন্য কামড়াকামড়ি করতে থাকে। চা দিতে গিয়ে হেবো মুচকি মুচকি হাসে। সে তবে পঞ্চম জন। মন্দ কী? প্রথম পাঁচজনের মধ্যে থাকতে পারাটাই কম কী?তবে হেবোর অধ্যবসায় ছিলো। সে কালক্রমে পর্বৎ মওলার মা-কে ভজিয়ে কমিউিনিটি স্যাটেলাইট ইশকুলে লেখাপড়া শেখে, আর মাঝে মাঝে পর্বৎ মওলার কাছে আইটির টুকিটাকি। যা সে শিখতো, তা আবার যত্ন করে শ্লেটে লিখে রাখতো। একদিন পর্বৎ মওলা ব্যাপার স্যাপার দেখে তাকে এক দিস্তা কাগজ আর একটা পেন্সিল কিনে দেয়।হেবো সেই কাগজে লিখতে থাকে, ভাইটি আমার আইটি শেখো।একদিন পর্বৎ মওলার এক সম্পাদক বন্ধু এসে ধর্ণা দেয়, দোস্ত, পত্রিকা বার করেছি, লেখা জমা দিতে হবে তোকে, না বলতে পারবি না।পর্বৎ মওলা হেসে খুন। তোর পত্রিকায় লেখা জমা দেবো আমি? পাগলে কামড়েছে তোকে? আমাকে সায়েন্স পত্রিকা থেকে সাধাসাধি করে, লেখি না, আর তুই তো কোথাকার জব্দফা মোস্তার! যা ফোট!বন্ধুটা ফোটে না, ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে। পর্বৎ মওলা ঠা ঠা করে হেসে বলে, যা হেবোর কাছে যা, ও দেখি ইদানীং কী সব লিখছে!হেবো দৌড়ে ট্রাঙ্ক খুলে তার লেখাগুলি নিয়ে আসে। জব্দফা মোস্তার একটু নাক কুঁচকালেও লেখাগুলির শিরোনাম পড়ে একটু আগ্রহী হয়। বলে, বাহ, খারাপ কী? ভোদাই পাবলিক এর চেয়ে ভালো কিছু হজম করতে পারবে না।হেবো জব্দফা মোস্তারের বাড়িয়ে দেয়া দশটাকার নোটটা নিয়ে বিড়ি ফুঁকতে বাইরে বেরিয়ে যায়।হেবো ছাগাজনের সেই ছিলো শুরু। আর সে থামেনি। পর্বৎ মওলা একদিন রেগেমেগে তাকে লাথি দিয়ে বার করে দেয়, হেবো একটা মেসবাড়িতে গিয়ে ওঠে, আর দুই হাতে আইটি নিয়ে লিখতে থাকে। ইন্টারনেটে ইংরেজি পড়তে গিয়ে একটু সমস্যা হতো তার, কিন্তু রুমমেট এক ইংরেজিতে মাস্টার্স পাবলিককে সে ভাড়া করে ইংরেজি বুঝিয়ে বলার জন্য।তারপর বাকিটা তো সোজা, চোথা মেরে লিখে ফেলা। সম্পাদকরাও খুশি মনে ছাপায়, পত্রিকার পাতা কত হাবিজাবি দিয়ে ভরাট করতে হয়, আর এতো আইটি! হট টপিক।শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হেবো ছাগাজন এখন একটা কোচিং সেন্টারে প্রাণপণে ইংরেজি শিখছে। তার বুকে অনেক আশা, চোখে অনেক আলো। দেশে প্রথম পাঁচজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একজন সে, হেলাফেলার ব্যাপার নয়।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।