"দেশে যুদ্ধাপরাধী নেই, ৭১ এ কোন যু্দ্ধাপরাধ হয়নি" এইসব বলে যারা পিছলে যেতে চান, তাদের জন্য এই লেখা না; কেননা, তাদের জন্য কোন যুক্তি দেখানোর মতো সময় আমাদের নেই; এসব কথা বলতে আসলে চোপার উপর ঠাস ঠাস দুইটা চড় দিয়ে বাড়িতে অথবা হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেই হবে। এসব ভন্ডদের আদর করে যুক্তির কথা শোনানোর দিন শেষ । এখন নতুন দিন আসছে, যেখানে বাসভর্তি যাত্রীরা সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় (দ্রষ্টব্য: সামহোয়ার ব্লগার জুবেরীর পোস্ট), চিকন হয়ে অনেকটা সুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হয়ে যেতে চাওয়া সদ্য দাড়িগজানো শিবিরীয় যুবক যখন মিনমিনিয়ে 'এতদিন পর এসব করে কি হবে' বলতে চায়, তখন সে সকল বাসযাত্রীর রোষে পড়ে, লেজ তুলে পালায়।
মুক্তিযু্দ্ধের ব্যাপারে যাদের সবরকম অধিকার আছে, যাদেরকে কোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধব্যবসায়ী বলা যাবেনা, কেননা তারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য লড়েছেন, হাজার হাজার যুবককে পরিচালনা করেছেন, সেই সেক্টর কমান্ডাররা এখন এই দাবী নিয়ে এসেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী নিয়ে এসেছেন। কাজেই, রাজাকার আর আলবদর-শামসেরা, শুনে রাখো, তোমাদের দিন শেষ। তোমরা লম্বা গলায় কথা বলার সময় এখন হাতে গুনতে পারবা।
যাই হোক, তবে এইসব রাজাকারেরা আর তাদের ছানাপোনা, ধামাধরারা এত সহজে হাল ছাড়বেনা; যখনই তারা দেখবে তাদের অস্তিত্ব বিপর্যয়ের সম্মুখীন, তখনই তারা প্যাঁচ কষবে, যেমন এখনও কষার চেষ্টা করছে। সেগুলোর ব্যাপারে সবাইকে সাবধান থাকতে বলার জন্যই এই লেখা।
দেখা যাক, কি কি প্যাঁচ তারা কষছে:
১. সবচেয়ে সহজ যেই প্যাঁচটা, সেটা হলো দাবীটা ওঠার টাইমিং নিয়ে। তারা বলতে চায়, ভোটের সময় ঘনিয়ে এসেছে বলে আওয়ামী লীগ ও তার চ্যালারা এখন 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই' রব তুলে একটা রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে।
২. এই প্যাঁচটাও বেশ ঘোড়েল। তারা বলতে চায় জামাতের বিচার হলে বিএনপি/লীগের বিচার হবেনা কেন? রাজাকার তো সবদলেই আছে। জামাতের রাজনীতি বন্ধ হলে অন্যদের হবেনা কেন? অনেককেই বশ করে ফেলবে এই প্যাঁচ।
৩. তৃতীয় প্যাঁচটা সবচেয়ে চতুর, এবং এটার সুবিধা তারা সবসময় পেয়ে আসছে। তারা বলতে চায়, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষেধ হলে দেশ থেকে ইসলাম উঠে যাবে, ইনডাইরেক্ট ফ্রিকিক দিয়ে তারা 'রাজাকার / আলবদর / শান্তিকমিটি' এদের সবার বিচারকে 'ইসলামে'র অবমাননা / নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত করতে চায়।
উপরের তিনটি পয়েন্টই খুব ক্রিটিকাল। নরম সুরে, আদবের-লেহাজের সাথে আপনার কানে তারা যখন এই বিষ চিনি গুলে ঢালবে, মিষ্টি আপনার মুখ পর্যন্ত অনুভব করে ফেলতে পারেন। কাজেই সাবধান! একটু খেয়াল করুন, "তাদের প্যাঁচগুলো কোথায়?"।
আসুন ১ নং পয়েন্টটা নিয়ে একটু ঘেঁটে দেখি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে, সেটা ভোটের আগেই হোক বা পরেই হোক, আওয়ামী লীগের কি আসলেই কোন লাভ হবে? জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেই বা আওয়ামী লীগের কি লাভ হবে?
আচ্ছা ধরুন, আগামী নির্বাচনের আগেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো, গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান এদেরকে শাস্তি দেয়া হলো। তাতে আওয়ামী লীগের ভোটে কি লাভ? জামাতের যে অর্ধকোটিরও বেশী ভোট এই দেশে ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের মতো জমা আছে সেটা কার ভাগে যাবে? আওয়ামী লীগের, নাকি বিএনপি'র? অবশ্যই বিএনপির। বিএনপি-জামাত জোটের যেই ভোটব্যাংক নিশ্চিত সেখান থেকে তারা কয়টা ভোট কম পাবে? যতগুলা ওয়ার ক্রিমিনালকে ঝুলানো হবে ততগুলাই। আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক কি আকৃতিতে বাড়বে? কোথা থেকে? যা আছে তাই থাকবে। বরং, জামাতের সাথে একত্রে ভোট করার জন্য বিএনপির নিন্দা করে যে 'ভাসমান ভোট'গুলি আওয়ামী লীগ নিজের দিকে টানার চেষ্টা করতে পারত, সেটাও তারা হারাবে।
মূল কথা হলো, কয়েকশ বা হাজার যুদ্ধাপরাধীর বিচার/ফাঁসীতে ভোটের তো বড় কোন চেঞ্জ হবেনা। বরং, আওয়ামী লীগ ধরা খেতে পারে, কারণ, জামাতীরা নাকি কান্না করে মানুষের মন গলিয়ে বেশ কিছু ভোট নিয়ে নিবে।
তাহলে যে কাজটা করে, অর্থাৎ, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে' আওয়ামী লীগ ভোটে তেমন কোন বাড়তি ফায়দা পাবেনা তা তারা করতে যাবে কেন? এই ভোটের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে আওয়ামী লীগের লাভ তো হবেইনা, বরং ক্ষতি হবে।
এই প্রশ্নটাকেই উল্টে বলি, তাহলে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইছে তাদেরকে আওয়ামী লীগের দালাল এইসব বলা হবে কেন?
এসব বলার তো কোন যুক্তিই নেই।
তবে এসব সস্তা যুক্তি দেয়া হয় মানুষকে ভুলিভালি দেখাতে, বারবার মহান হুজুরে আলারা এসব দেখিয়েছেন। এবার যাতে আমরা তাদের এসব মধুর বাক্যে না গলে যাই। সাধু সাবধান!
(চলবে ...)
মন্তব্য
ধন্যবাদ @সুশান্ত
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
সাধু! সাধু!
একমত।।
(ছোট্ট সংশোধনী: 'রাজাকার / আলবদর / শান্তিবাহিনী' এর বদলে 'রাজাকার/ আলবদর/ শান্তিকমিটি' হবে।)
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
স্যরি! ভয়াবহ ভুল
ধন্যবাদ বিপ্লব ভাই, শুধরে দেবার জন্য।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
প্রথম বিশ্লেষনটা ভালো লাগলো । যুদ্ধাপরাধী জামাতের বিচার হলে আওয়ামী লীগের ভোট বাড়ার কোন সুযোগ নেই ।
বিচারের দাবিকে ভোটের রাজনীতির সাথে মিশিয়ে ফেলা জামাতী ইতরামী ছাড়া আর কিছু নয় ।
কথা সহজ-যুদ্ধ যদি হয়ে থাকে,সেই যুদ্ধে যদি হত্যা-ধর্ষনের মতো অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে অপরাধী ও আছে । রাষ্ট্রকে,রাষ্ট্রের সরকারকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে । হয় বিচার করতে হবে নয় বলতে হবে-হত্যা ধর্ষন কিছু হয়নি । তত্বাবধায়ক বলে দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই । তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কি আদালতে অন্য সব কখুনের মামলা স্থগিত আছে নাকি?
যুদ্ধাপরাধ কোন রাজনীতি নয়-এ স্রেফ জঘন্য অপরাধ ।
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ধন্যবাদ মোরশেদ ভাই ....লিখতে গিয়ে পারফেক্ট শব্দটা পাচ্ছিলামনা ,,,মন্তব্যে পেলাম ,,,'ইতরামি' ...সরকারও এই ইতরামীতে সায় দিয়ে দিল আজ ...
তত্বাবধায়ক দেখেই তো তাদের করতে হবে ...এতদিন দূর্নীতির বিচার করতে পারল, আর এখন ওয়ার ক্রিমিনালদের বিচারের সময়ই উনারা উনাদের মূল কাজটা টের পেলেন ... হতাশ!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
অনেক ক্ষেত্রেই নিজের পরিমিতিবোধ কাজে লাগাতে পারি, কিন্তু জামাত-রাজাকারের বেলা তা একেবারেই কাজ করে না।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
এদেরকে পরিমিতি দেখাতে গেলে দুইদিন পর আমাদেরই পরিমিতি প্রার্থনা করতে হবে ... দেখছেনতো কিভাবে স্পর্ধা বেড়েই চলছে ...
তবে কাল সামহোয়ারে জুবেরীর পোস্টে বাসের কাহিনী শুনে আশা ফিরে পাই ... বাসে কথা উঠেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ...সবাই এর পক্ষে ,,,এরমধ্যে শিবির-লুকড একছেলে বলল 'পুরান জিনিস টেনে এনে লাভ কি?',,আর যায় কই? ,,,পুরা বাস গর্জে উঠল ,,,এক বয়স্ক ভদ্রলোক নাকি তেড়ে গেলেন ছেলেটার দিকে,,,পরে কন্ডাক্টর তাড়াতাড়ি সেই ছেলেকে নামিয়ে দিয়েছে বাস থেকে ,,,দৌড়াইয়া পালাইয়া বাঁচছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
সুশীলদের নিয়েই যতো ভয়!
বেশি প্যাঁচঘোচের দরকার নেই।
১। আওয়ামী লীগ খারাপ না ভালো সেটা রাজাকারের মুখে শুনতে চাই না।
২। একই। স্বাধীনতা বিরোধিদের সাথে অন্যদের তুলনা অমূলক।
৩। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি তাদের পাকি বাপেরাও করেছিলো। এবং তারা ধর্মের নামেই লাখ লাখ মা-বোনকে রেইপ করেছে। একাত্তরে রাজাকারের আল্লাহু আকবর শুনে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এক ধর্মের অধীনে অন্য ধর্মের ওপর জুলুম হবেই (ধর্ম ভালো হলেও ধর্মের 'তথাকথিত' ধারক-বাহকেরা অধিকাংশ সময়ই ইতর) এবং সেজন্যই আধুনিক বিশ্বের কোনো সভ্য রাষ্ট্র কোনো ধর্মের লোকেরা চালায় না। আর যে ভন্ড-মিথ্যুকরা ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করে, আল্লাহর ইসলামে কোথায় রাজনীতি করতে বলেছে, সেটা কেউই দেখাতে পারবে না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাইদা, এই লেখাটা আসলে সচলদের জন্য না একসেন্সে ...কারণ সবাই ব্যাপারটা ভালই বোঝে ...
যাস্ট আরেকবার হিসাবটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যে কাউকে ভোটে জেতানোর জন্য না এই গনদাবী ,,, সত্যি বলতে কি, কাল প্রথম আলোতে আবুল মকসুদের (যদিও উনি আমার খুবই পছন্দের একজন কলামিস্ট) লেখাটা পড়ে এত হতাশ হলাম যে অনেকটা সেটার প্রতিক্রিয়াতে লেখা
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
নতুন মন্তব্য করুন