• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

ঘোরাঘুরি ব্লগ: উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ/ সমুদ্র যেখানে মা (৩য় পর্ব)

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: বুধ, ২৭/০২/২০০৮ - ১১:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার একটা অদ্ভুত অভ্যাস আছে, বিশেষ করে কোথাও গেলে সেটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে; সেটা হলো কাউকে দেখলে আন্দাজ করা যে সে কোন দেশের। জাপানে থাকার কারণেই সম্ভবতঃ আমার এ অভ্যাস হয়েছে, যদিও যে কেউ জাপানে থাকলেইযে তার এ অভ্যাস গড়ে উঠবে সে নিশ্চয়তা আমি দিতে পারছিনা। গত দশ-এগারো বছরই আমি কাটিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় পরিমন্ডলে, বিশেষ করে বিদেশী ছাত্রদের জন্য তৈরী ডর্মিটরীতে, যেখানে নানান দেশের লোকের সমাগম। সে কারণেই হয়ত নানান দেশের লোক দেখে নিজের সাথেই একটা গেম খেলার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এটা। যেমন, এখন আমি চীনা, জাপানি আর কোরিয়ান দেখে মোটামুটি বলতে পারি কে কোন দেশের, যদিও জাপান প্রবাসের শুরুর দিকে এটা খুব কঠিন একটা বিষয় ছিল। সাইপানে গিয়েও এই "গিফট"টা কিছুটা কাজে লাগালাম। দোকানপাট কিছু ঘুরেই ধারনা করতে পারলাম যে এখানকার সাধারণ কেনাকাটার (জামাকাপড়, কসমেটিকস, শো-পিস) দোকানে কাজ করা প্রায় সবাই ফিলিপিনো, রেস্টুরেন্টের ওয়েইটার-ওয়েইট্রেসরাও তাই। আবার সুপার মার্কেট বা কাঁচাখাবার/মুদি, এধরনের দোকানগুলো প্রায় সব চালায় কোরিয়ানরা। ডাউনটাউনে কিছু মাসাজের দোকান আছে, কিছু শুধু বেদনাদায়ক আর কিছু বিনোদোনমূলক ;), মাসাজের দোকানগুলো চালায় চীনের লোকজন, মালিক আর কর্মচারী সবাই। জাপানীরা মূলতঃ ট্যুরিস্ট কোম্পানী, ম্যারিন স্পোর্টস আর গল্ফ ক্লাবের ব্যাবসা করে। বউয়ের উইন্ডো শপিংয়ের নির্বিকার সঙ্গী হয়ে ঘুরতে ঘুরতে এজিনিসগুলোই খেয়াল করলাম, তবে খুব একটা মজা পাচ্ছিলাম কে কোনদেশের সেটা আন্দাজ করতে পেরে তা কিন্তু না। শুদুঃই অবসর কাটানোর একটা উপায়, বাসায় বসে থাকলে হয়ত মোবাইলে টেট্রিস খেলে কাটাতাম। হঠাৎ করেই চোখ পড়ল রাস্তার ওপারে দোকানের পাশেই ফুটপাথের ওপর একলোক বেতের চেয়ার টাইপের কিছু একটায় বসে আছে, এই ভর দুপুরে খুব রিলাক্সড ভঙ্গিতে। চেহারায় বাঙালী বাঙালী ভাব, খুব চালাক-চতুর চাহনী। মোনা যখন দোকানের ভেতরটায় দেখেই যাচ্ছে এটা সেটা, আমি বাইরে দাঁড়িয়ে লোকটাকে খেয়াল করছিলাম। এমনসময় এক ট্যাক্সি এসে থামল লোকটার সামনে, লোকটা রাজনৈতিক নেতাদের মতো হাত নেড়ে নেড়ে কি সব বোঝাচ্ছ ড্রাইভারকে। সম্ভবতঃ কোনদিকে গেলে যাত্রী পাওয়া যাবে সেটা নিয়েই কথাবার্তা। ট্যাক্সি ড্রাইভার গাড়ী ঘুরিয়ে রাস্তার এপারে চলে এল, আমি খেয়াল করলাম লোকটাকে। নিরীহ, মায়াময় এক সাধারন বাঙালী চেহারা, মুখটা শুকনো। আমার দিকে তাকিয়ে ততোধিক নিরীহ আর লাজুক একটা হাসি দিল। একবার ভাবলাম জিজ্ঞেস করি "ভাই কি বাঙালী?" আমি নিজেও লাজুক মানুষ, ভরদুপুরে রাস্তার ওপর চীৎকার করে অচেনা কাউকে কিছু বলতে বাঁধল। তবে পরক্ষণেই গাড়ীর দরজায় দেখলাম ত্যারাব্যাকা কিছু সাদা ইংরেজী অক্ষরে লেখা নাম, আবুল হোসেন, লাইসেন্স নং .......; আমি নিশ্চিত হলাম লোকটা আমার দেশী, এদের কথাই শুনেছিলাম, সাইপানে নাকি প্রচুর বাঙালী আছে। আমি তাড়াতাড়ি রাস্তার ওপারে যাবার জন্য সিগন্যালের কাছে গিয়ে রাস্তাপার হবার বাটন চাপলাম, ওপাশে বসা লোকটার সাথে চোখাচোখিও হলো। আর তখনই লোকটা আমাকে অবাক করে দিয়ে উঠে ওপাশের দোকানের ভেতরে চলে গেল! ঠিক কিজন্যে সে আমাকে এড়ালো সেটা আর জানা গেলনা। তবে বোঝা গেল এখানেও নানান পদের বাঙালী আছে।

উইন্ডো শপিং করে মোনা যখন মোটামুটি সন্তুষ্ট, তখন আমার পালা শুরু হলো। ম্যারিন স্পোর্টসের জন্য কিভাবে কি করা যায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খোঁজ নেয়া শুরু করলাম। হাতে একটা গাইডবই ছিল, দোকানের পাশের ফুটপাথে দাঁড়িয়েই শুরু করলাম খোঁজা। তখনই এক নুড়িপাথরের শোপিসের দোকানের বাইরে ছোট্ট একটা বোর্ডে লেখা চোখে পড়ল, ম্যারিনস্পোর্টসের নানান আইটেমের মূল্য ঝুলিয়ে রেখেছে। তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকলাম, কোথায় ফোন করে বুক করতে হবে, কি ধরনের স্পোর্টস, সাণনতার জানা লাগে কিনা, এসব হ্যানত্যান জিজ্ঞেস করতে। এসব জানলেই আমার চলত, কিন্তু দোকানের মহিলা অতি উৎসাহে যখন আমাকে বুঝাতে পারল যে এখানে দামাদামি বলে একটা জিনিস আছে, এবং তার ভাইয়ের কোম্পানীকে বুক করলে স্পেশাল কনসেশনের ব্যাবস্থা করে দিতে পারবে, তখনই বুকিং করার ইচ্ছেটা যেন বেলুনের মত চুপসে গেল। স্বভাবদোষে নতুন ঝামেলা হাতে নিলাম, বাজার যাচাই করতে হবে। বাজার যাচাই চলতে লাগল, জাপানীদের কিছু ছোটছোট অফিস (দোকাংহরকেই অফিস বানিয়ে বসে পড়েছে, বাংলাদেশের মতো) আর কোরিয়ান একটা দোকানে গেলাম। কিন্তু ঠিক করতে পারছিলামনা কি করব? খুব দামী মনে হতে লাগল সবকিছু।

এরমাঝেই হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ফিয়েস্টা রিজোর্ট হোটেলের কাছে চলে এসেছি বলতে পারবনা। দেখলাম হোটেলের সামনে একলোক একটা পিকআপ করে বেশ কিছু শাকসব্জি নিয়ে এসেছে, মানুষ জড়ো হয়েছে কেনার জন্য। লোকটার চেহারায় ইন্দোনেশিয়ান ভাব আর শরীরের গড়ন মাইক্রোনেশিয়ান টাইপের, মোটাসোটা, বিশাল। এরাই চামোরো, সাইপানের আসল জনগন। তবে দেশটা এখন বিদেশীতেই ভরে গেছে, অর্ধেকের বেশী ফিলিপিনো, কিছু জাপানী/চীনা/কোরিয়ান আছে, কিছু বাঙালী (১%) আর আমেরিকান প্রভুরা। চামোরোরা খুবই ইন্টারেস্টিং মানুষ, কথা বলে খুব কম। চুপচাপ নির্জীবের মতো বসে থাকে, দেখলে মনে হবে এইমাত্র ছাইপাশ গিলে বুঁদ হয়ে বসে আছে। পরে অবশ্য জানতে পারি যে এরা আসলেই মদ গেলার ব্যাপারে ওস্তাদ, বিশেষ করে বিয়ার। যে লোকটা সবজি বিক্রী করছিল সেও কেমন যেন নিরাসক্তভাবে গাড়ীর স্টিয়ারিং ধরে বসে ছিল, লোকজন পিকআপ থেকে এটা সেটা তুলে সামনে আসে, সে দাম বললে পয়সা শোধ করে দেয়। এ দ্বীপে নাকি চুরিদারি নেই, মানুষ খুনের ঘটনা কালেভদ্রে শোনা যায়; পুলিশের কাউকে ধরার মূল কারণ রাস্তার নিয়ম ভাঙা, যেমন মপেডে ডাবলিং বা স্পিডওভার, এসব। যাইহোক, লোকটাকে দেখার পর যা উপলব্ধি করলাম সেটা আতঙ্কজনক --- আজ সারাদিনে এই প্রথম একজন চামোরোকে দেখলাম। তাহলে কি এরা দ্বীপ থেকে পুরোপুরি ওয়াশড আউট নাকি? প্রশ্নটা জাগলেও ম্যারিনস্পোর্টসের ইল্যুশনের কারণে তখন বিষয়টা মাথার ভেতরেই চাপা পড়ে গেল।

আমার আরেকটা সমস্যা হলো পেট ভরে খাই, আর প্রকৃতি মাকে একদমই অগ্রাহ্য করতে পারিনা। তো, দয়াময়ী ডাক দিলেন, আমিও তাড়াতাড়ি ফিয়েস্টা রিজর্টে ঢুকে পড়লাম; এখানেও আমাদের ভাবসাব এমন যে আমরা এখানেই উঠেছি, গটগট করে সোজা জায়গামত চলে যাই। বের হয়ে এসে হোটেলের বিশাল লবীতে হাঁটছি, হঠাৎকরেই বামদিক থেকে শোনা গেল, "ভাই কি বাংলাদেশের?"
আমি চমকে তাকালাম, দেখি শ্যামলামতো বিশালদেহী এক লোক। পরনে সাদা আর গোলাপী হাওয়াইয়ান শার্ট, সেরকমই ফুলটুল আঁকা। আমি তাকাতেই বিনয়ের হাসি হেসে বলল, "আমার নাম স্বপন।" একটু আগেই বাঙালী আবিষ্কার করে ফেলেছি, এবং তারও আগেই আমি জেনে গেছি যে এখানে অনেক বাঙালী থাকে, তাই যতটা বিস্ময় স্বপন আশা করেছিল ততটা আমি দেখাতে পারলামনা। বরং দেখা গেল আমাদের সাথে পরিচিত হয়েই তিনি বিস্মিত, কারণ জানালেন এই প্রথম তিনি বাঙালী ট্যুরিস্ট ফ্যামিলি দেখলেন সাইপানে। (সাইপান বাঙালীদের কাছে ঘোরার জন্য অত জনপ্রিয় না, আমার কথাই তো বলা যায়, পাঁচবছর আগে নামই শুনিনি)
স্বপন ভাই (বাঙালীর ভাই ডাকতে দুমিনিট সময়ও লাগেনা, কিভাবে যেন আপন হয়ে যায়, সম্ভবতঃ ভাষাটার কারণেই) লোকটা বেশ আন্তরিক। খুব দ্রুত কথা বলে, কথার মাঝেই দুচারটা অক্ষর হাপিস হয়ে যায়। ফিয়েস্টা রিজোর্টে এক জাপানী ট্যুরিস্ট কোম্পানীতে চাকরী করেন, ম্যারিন স্পোর্টসসহ আরো অনেককিছুর আয়োজন করে তারা। এসব শোনার পর আমি আশ্চর্য হলাম, কি আজব যোগসূত্র! ঠিক যা খুঁজছিলাম বিধাতা তাই এনে দিলেন, তাও আবার বাঙালী করে! আমি স্বপন ভাইকে খুলে বললাম আমাদের প্ল্যানের কথা। সবশুনে উনি আমাদের নিয়েগেলেন ফিয়েস্টা রিজোর্টের সৈকতে, মোবাইল ফোন দিয়েই কাকে যেন ওয়াকিটকি করলেন। এই প্রথম খেয়াল করলাম সাইপানে মোবাইল ফোনের বিবিধ ব্যবহার, সম্ভবতঃ ছোটদ্বীপ বলেই ওয়াকিটকি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। স্বপন ভাই বলল যে তার জাপানী কোম্পানী অযথাই বেশী পয়সা নেবে, এরচেয়ে বাঙালীদের একটা কোম্পানী আছে, এরা কম পয়সা নেবে প্লাস আমরা যেহেতু বাঙালী, তাই আমাদের একটু বেশী খাতির করবে। যেমন, ২০ মিনিটের জেটস্কী যদি ভাল লাগে তাহলে আধঘন্টা করলেও অসুবিধা নেই, এরকম ব্যাপার স্যাপার। আমার মূল ভয়টা ছিল নিরাপত্তা নিয়ে, কারণ আমি সাঁতার জানিনা। ইনারা সবাই বাঙালী, অন্ততঃ আমরা ডুবতে টুবতে বসলে জাপানীদের চেয়ে এরাই বেশী আগ্রহ নিয়ে বাঁচাবে, তারওপর দাম কম (আমি আবার সস্তার প্রতি বেশ দূর্বল :)), তাই আর সাতপাঁচ না ভেবে রাজী হয়ে গেলাম।

সন্ধ্যার সমুদ্রকিছুক্ষণ পর এক ভদ্রলোককে ভুড়ি দুলিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আসতে দেখা গেল, দেখেই বোঝা যায় সারাদিন তার সমুদ্রেই কাটে। কুচকুচে কালো বর্ণ মুখের। এই ভদ্রলোকের নাম সুকেশ, ভীষন সদালাপী। পরিচয় হবার পরই এমনভাবে কথা বলতে লাগল যেন সে অনেক আগে থেকেই জানত আমরা আসব। তারপরই যেটা টের পেলাম সেটা দেখে আমি আসলেই তাজ্জব। পুরো সৈকতে অন্ততঃ তখন জনাত্রিশেক লোক ছিল, এরা সবাই সম্ভবতঃ ফিয়েস্টা রিজোর্টে উঠেছে। দেখলাম সবাই সুকেশকে চেনে, যার পাশ দিয়ে যাচ্ছে তাকেই কিছু না কিছু বলছে সুকেশদ। জাপানী হলে জাপানী ভাষায়, ইংরেজী হলে ইংরেজীতে। কতক্ষণ হাঁটার পর আমাদের নিয়ে বসাল এক বাঁশে ছাউনিতে, ঠান্ডা পানি নিলাম। দেখলাম সুকেশদা এক জাপানী মহিলার সাথে জাপানী ভাষায় রঙ্গতামাশা করছে, ঘাড়ও মাসাজ করে দিচ্ছে; আমি ভাবলাম, বাহ্, ভালোইতো। সুকেশদা বলল, "ভাই আমার আছে একটা মুখ, ঐ মুখ বেইচাই খাই।" আমি হাসিমুখে মাথা নাড়াই।

গোধূলীতে সমুদ্র আর সৈকতএকটু পর সৈকতের বালির উপরই যেন ভাসাতে ভাসাতে এক ফোরহুইল ড্রাইভ টয়োটা ড়্যাভফোর নিয়ে হাজির আরেকজন বাঙালী। হেভী মুডি, নামও সেরম, বঙ্গ। সুকেশ আস্তে আস্তে বলল, জগন্নাথ কলেজের ছাত্র ছিল বঙ্গভাই, আমার কেন জানি মনে হলো ক্যাডার, যদিও আকার আয়তনে ছোটখাট, হাল্কাপাতলা, কিন্তু মুখের ভাবসাবই আলাদা, ডিজ্যুসীরা যাকে বলে,"কূল"। যাই হোক, ক্যাডারসুলভ মিষ্টি ধীরস্থির হাসি দিয়ে পরিচিত হলো বঙ্গভাই। বঙ্গভাই প্যারাসেইলিং এক্সপার্ট, প্রতিদিন তার অন্ততঃ দশজন ক্লায়েন্ট থাকে। প্যারাসেইলিং হলো মাঝসাগরে বোট নিয়ে গিয়ে বোটের সাথে আটকানো বিরাট লম্বা এক দড়ি ছেড়ে দিয়ে আস্তেআস্তে দড়ির সাথে বাঁধা প্যারাস্যুটকে আকাশে ভাসিয়ে দেবে, প্যারাস্যুটের গোড়ায় বাঁধা থাকবে মানুষ, সর্বোচ্চ দুজন। সমুদ্রের উপর আকাশে ওড়া হবে আপনার। শুনে তো আমরা মহা আনন্দিত! তারপর বঙ্গদা রেকমেন্ড করলেন জেটস্কী, সেটা হলো সমুদ্রের বুকে বিশাল সাইজের মোটরবাইক চালানো, এক্সাইটিং এন্ড গ্র্যান্টেড। সাইপানের পশ্চিম দিকে আরেকটি ছোট্ট দ্বীপ আছে, নাম মানাগাহা, সেখানেও নিয়ে যাবেন বললেন। আর সবশেষে আমার বিশেষ রিকোয়েস্ট স্কুবা ডাইভিং। তবে এটা বেশ রিস্কি, বাঙালীরা করেনা। কিন্তু সমস্যা নেই, বঙ্গদার বউ জাপানী, সাইপানেই থাকে। তাদের কোম্পানী স্কুবা ডাইভিং করায়, সো নো প্রবলেম। চারটা কোর্স, প্রায় সারাদিন লেগে যাবে, মাথাপিছু একশ ডলার, অন্যদের তুলনায় বেশ সস্তা। আমরা আনন্দে বগল বাজাতে বাজাতে ফিরে আসলাম।

সৈকতের ছাউনীর ভেতর থেকে শৈল্পিক ছবি তোলার প্রয়াসকথাপ্রসঙ্গে সুকেশদা বললেন তাদের জীবনের কথা। এখন অনেক ভালো আছে দুজনেই, একেকটা প্যারাসেইলিংয়ের ট্রিপে সত্তর ডলার পায় তারা। সারাদিন শেষে তাদের দুজনের হাতে দেড়শ থেকে দুইশ ডলার থাকে। বঙ্গদা প্যারাসেইলিং করায়, জেটস্কী করায় একজন চামোরো, আর সুকেশদা কাস্টমার যোগাড় করে। সুকেশদা বলল, যখন প্রথম এসেছিল তারা সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে। মিনিমাম ওয়েজ ছিল আড়াই ডলার, সারাদিন খেটেখুটে বিশপঁচিশ ডলার জুটত। সেটা দিয়ে আবার বাড়িভাড়া, বিলটিলও দিতে হত। এই ফেজটা দুবছরের মতো কাটিয়ে তারপর বাঙালীরা হয় ট্যাক্সিড্রাইভার। এদেশে ট্যুরিস্টরা ছাড়া কেউ ট্যাক্সিতে চড়েনা, তাও এত ছোট দ্বীপ যে অনেকে এখানে আসেই হেঁটে বেড়াতে। তাই ব্যাবসা ভালনা। তো, সুকেশদা আর বঙ্গদা সেসব দিন পিছনে ফেলে এখন নিজেরাই ব্যাবসা শুরু করেছে। বাঙালী ছেলেরা পারেনা কে বলল, আমার মনে হলো বাঙালীর মতো এত ভাল করে কয়জন পারবে?

সৈকত, গোধূলী আর সাগরের সাথে আমিসৈকতে সুর্যাস্ত দেখলাম, অসাধারণ দৃশ্য। এত সুন্দর যে বর্ণনা করতে পারবনা, তাই কিছু ছবি দিয়ে দিচ্ছি। হোটেলগুলো সৈকত সাজায়ও তেমন করে, দেখলে মনে হয় ফিরে না গেলে কেমন হয়! তাও একসময় সৈকত ছাড়তে হয়, হোটেলের মাঝখান জুড়ে রয়েছে বিশাল সুইমিংপুল আর মাঠ। মাঠের ঘাস বাংলাদেশের ঘাসের মতো, মোটা ঘাস। জাপানে শুধু সরুঘাসই দেখেছি, সেই ধারালো ঘাসে হেঁটে দেশের আরামটা পাওয়া যায়না। আমরা সাইপানের মোটাঘাসের মাঠে খালিপায়ে হাঁটলাম, সন্ধ্যার শিশিরে ঘাস খানিকটা ভিজে আছে, মাটির সোঁদা গন্ধটাও কি পাচ্ছি? অনেকদিনপর বুকের গভীরে জমা থাকা খুব প্রিয় কিছু স্মৃতি মনে পরে গেল, সেটা মাটির ঘ্রাণের স্মৃতি, বাতাসের আবরণের স্মৃতি।

ফিয়েস্টা রিজোর্ট থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা সাতটা। দুপুরের খাবার খেয়েছি চারটায়, তাও আবার বিশাল খাবার। রেস্টুরেন্টে বসে খাব সে খিদে নেই। গিন্নী আবার কিছুক্ষণ উইন্ডো শপিং করলেন, দুএকটা ছোটখাট গিফট কিনে ফেললেন। আমিও এবার আনন্দেই যোগ দিলাম। ঘুরতে ঘুরতে ডিএফএস গ্যালেরিয়াতে ফিরে আসি, কারণ এখান থেকেই বাসে উঠতে হবে। ফ্রি বাস, হোটেল পর্যন্ত। ঘন্টায় একটা হলেও খারাপ কি? হোটেল থেকে বাস এসে থামে গ্যালেরিয়ার উত্তর গেটে, গ্যালেরিয়া থেকে হোটের দিকে বাস ছাড়ে দক্ষিণ গেট থেকে। শেষ বাস রাত সাড়ে দশটায়, হাতে অনেক সময়, আমরা সাড়ে আটটার বাস টার্গেট করে গ্যালেরিয়াতে গেলাম। গিয়ে দেখি আটটা বেজেছে কি বাজেনি, এমন। কি আর করা, শুকনো মুখে গ্যালেরিয়াতে ঘুরলাম আধঘন্টা। গ্যালেরিয়ার মূল দোকান পেরিয়ে আরো দক্ষিণে এগিয়ে গেলে ব্র্যান্দের দোকানের সমাহার। বিশাল করিডোর আর তার দুপাশে শ্যানল, প্রাডা, গুচ্চি, আরো কত কত নাম! দামগুলোও তেমন। আমি চিকন হয়ে তাড়াতাড়ি পেরুতে চাইলাম জায়গাটা, কিন্তু সেটা কি সম্ভব? তবে ডিজাইনগুলো দেখে ভালো লাগল, সাধারণ ডিজাইন কিন্তু দেখতে খুবই খানদানী। তবে সেটা কি সাথে ঝুলতে থাকা প্রাইসট্যাগের কারণে,নাকি আসলেই খানদানী, সেটা বলতে পারছিনা। তো, বিলাসিতার কথা চিন্তা করে তো আর জীবন চলেনা, বাস্তবে ফিরতে হয়। আমরা গ্যালেরিয়ার পাশের দোকান থেকে রুটি/মাখন/ফলমূল কিনে আমরা বাসস্টপের পথে পা বাড়াই। মনে মনে একটাই প্রার্থনা, কালকের দিনটা যাতে বৃষ্টি ঝামেলা না করে। কারণ, কালই ম্যারিন স্পোর্টসে যাচ্ছি।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরো পড়িনি তবে যতদুর পড়েছি ভাল লাগল।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ ,,, বেশী বড়?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

দারূণ :)
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

প্রাঞ্জল বর্ণনা। গভীর আগ্রহের সাথে পুরোটাই পড়লাম এবং আপনার ঘুরাঘুরির পুরোটা সময়ই সাথে থাকলাম। শুধু একটা জিনিসই মিস করেছি। সমুদ্রের ছবি দিলেন; অথচ সৈকতের ললনাদের ছবি পেলাম না। ভাবী খুব কড়া শাসনে রেখেছিলেন, সেটাই চেপে গেছেন। ;)

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

বলাইদা, ধন্যবাদ ,,,
সে আর বলতে ,,, শাসন মানে, এক্কেবারে টাইট শাসন ,,,ভুলতে চাইছিলাম কষ্টটা, আপনে আবার মনে করাইয়া দিলেন ;)
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

জ্বীন ভাই, আবারো পুরাটাই পড়লাম-- দুই ধাপে। বড় কিনা বলতে পারছিনা- জনে জনে পার্থক্য হবে। তবে মনে হয় যা দিয়েছেন তার ৭৫-৮০% দৈর্ঘ হলে ভালো হতো। তবে লেখা ছোট করলে কিন্তু হবেনা।

ছবির বিষয়ে: ফুলসাইজ ছবি কিন্ত আসলে দেখতে ভাললাগেনা। কারণ স্ক্রল করতে হয়। আপনি সাইজ এমনভাবে দিন যাতে স্ক্রল করতে না হয়।

পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ প্রকৃতিদা ,,,,বিশেষ করে লেখার সাইজ/ছবির সাইজ সম্পর্কিত মতামতের জন্য ,,,

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভাই পড়ছি আর হা হুতাশ করছি। দেখতে না পারার হা হুতাশ। ভ্রমণ আনন্দদায়ক হওয়ায় ভাল লাগছে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ বস্ ...
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সাথে ছিলাম।

আচ্ছা ১ম পর্বে কোন ছোটো ভাই যাইতে চাইছিল? আপনার এক ছোটোভাই (বাঙালী, আপনার আশেপাশে থাকে, পিঁয়াজ খায় বেশি)এর সাথে আমি মাঝে মাঝে হালাল পর্ক নিয়ে আলাপ করি ;)

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

না ভ্রাতঃ, সেই ছোটভাই না ,,, তিনি এখন পুঁজিবাদী ব্যাপারস্যাপারে ব্যস্ত ,,, রোমান্টিক মোডে নাই ;)
দেখেননা, লোকে শালীর খবর জানতে চাইলে তিনিও গলা না মিলাইয়া বরং মুরুব্বীসুলভ বাঁধা দেন ;)
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।