ভূগর্ভস্থ তাপবিদ্যুত: আনকোরা ভাবনা

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: সোম, ০৬/০৭/২০০৯ - ৪:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছুদিন আগে প্রথম আলোতে নিউক্লিয়ার শক্তি দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের উপর মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি সতর্কতামূলক লেখা পড়ার পর থেকে ভাবছিলাম আমাদের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আর কি কি উপায় আছে তা নিয়ে। এরমধ্যেই একদিন টিভিতে দেখলাম ভূগর্ভস্থ তাপ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর একটি অনুষ্ঠান। মনে হলো বাংলাদেশে এটা করা সম্ভব কিনা! তখনই ভেবেছিলাম সচলে এ নিয়ে একটা আলোচনা চলতে পারে, আগেও দেখেছি উইন্ডমিল নিয়ে হিমুর পোস্ট। তার ওপর আজ হিমুর পোস্টে দেখলাম আমাদের পান্ডবদাও জিওথার্মাল এনার্জি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বললেন, শুধু তাইনা, তিনি জিওথার্মাল এনার্জির সম্ভাবনাওয়ালা জায়গাগুলোর ম্যাপের একটি উইকিপিডিয়া লিংকও দিয়ে দিলেন। তখনই মনে হলো, ব্লগে লিখে রাখতে হবে। বৈদ্যুতিক শক্তি সম্পর্কে আমার ধারনা স্কুলছাত্রের চেয়ে বেশী না, তাও লিখে রাখছি, যাতে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা শোনা যায়। হয়তো যথেষ্ট সম্ভাবনাময় মনে হলে সচলদেরই কেউ এ নিয়ে পত্রপত্রিকায়ও লিখতে পারবেন।

আনাড়ির চোখে পৃথিবী নামক গোলকটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। ভূ-পৃষ্ঠকে খুঁড়ে খুঁড়ে ভেতরে যেতে থাকলে মোটামুটু কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত মাটি, পাথর এসব পাওয়া যাবে। একে সবচেয়ে উপরের স্তর ধরি, এটিকে আর্থ ক্রাস্ট বা পৃথিবীর মুচমুচে অংশ বলা যায়। এই মুচমুচে অংশটি পার হলেই পরের যে স্তরটি সেটি হলো সাক্ষাৎ হাবিয়া দোজখ, ম্যান্টল বলা হয়। এই অংশটি প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার গভীর এবং এখানকার তাপমাত্রাও কয়েক হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হয়। এর পরের স্তরটি নিউক্লিয়াস, সেটা হাবিয়া দোজখের বাপ!

পৃথিবীর মুচমুচে অংশটি শেষ হবার পরই যেখানে ম্যান্টলের শুরু সে জায়গাতেও তাপমাত্রা কয়েকশ ডিগ্রী থেকে হাজার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। বিশেষ করে যেসব এলাকায় আগ্নেয়গিরি আছে সেসব এলাকায় দেখা যায় যে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে কয়েক কিলোমিটার গেলেই এক হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের তাপে গলে গলে চকলেটের মতো গড়িয়ে যাচ্ছে অসংখ্য ভূগর্ভস্থ শিলা। তো, পৃথিবী পৃষ্ঠে যখন বৃষ্টি পড়ে তখন তার একটি অংশ পৃথিবীপৃষ্ঠের ফাটল (মুচমুচে ক্রিম পাইয়ের কথা ভাবুন) ভেদ করে ভূগর্ভে চলে যায়, শিলাদের মাঝে আটকা পড়ে। তখন যদি কোনক্রমে এই পানি গিয়ে ঐ চকলেটের মতো গলতে থাকা শিলাদের ধারেকাছে জমে তখন বেচারার অবস্থা কাহিল। অর্থাৎ, সেই পানি তখন বাষ্প তো বাষ্পই, পারলে বাষ্পের বড় ভাইয়ে পরিণত হয়। উপরদিকে যথাযথ পথের অভাবে এই বাষ্প মাটির নীচেই আটকা পড়ে। এভাবেই ভূগর্ভের এখানে সেখানে প্রচুর জায়গায় কয়েক কিলোমিটার ভেতরে গেলেই পাওয়া যায় শুধু বাষ্প আর বাষ্প।

জিওথার্মাল এনার্জিজিওথার্মাল এনার্জি

এই বাষ্পকে ব্যবহার করেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তা করেছে মানুষ। তাও আজ থেকে একশ বছরের বেশী আগে। পদ্ধতিটা খুব সহজে ব্যাখ্যা করার জন্য নিজের বুঝমতোই একটি ছবি এঁকে ফেললাম। ধরুন আপনি জানলেন যে আপনার বাসার পাশে যে খোলা মাঠটি আছে তার নীচে দু কিলোমিটার খুঁড়লে এরকম বাষ্পের খনি পাওয়া যাবে। তখন ছবির মতো করে একটি মোটা দুই কিমি লম্বা পাইপকে মাঠ খুঁড়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। পাইপের অন্য মাথা যোগ করুন একটি টার্বাইনওয়ালা ঘরের মুখে। পাইপের তৈরী পথ পেলে বাষ্প এমনিতেই পই পই করে উপরে উঠে আসবে, সেজন্য তাকে বাড়তি কিছু দিতে হচ্ছেনা।

এখন, ঠিক যেভাবে জ্বালানী (কয়লা, তেল) থেকে তাপ তৈরী করে সেই তাপ দিয়ে টার্বাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুত তৈরী করা হয়, সেভাবেই এখানেও আপনি সহজেই মাটির নীচ থেকে উঠে আসা উচ্চতামপাত্রার বাষ্পকে ব্যবহার করে টার্বাইন ঘুরিয়ে পেতে পারেন একেবারে টাটকা, ফ্রেশ বিদ্যুৎ। চাইলে ছবির মতো করে তাপ খরচ করা ঠান্ডা পানিকে আবার ভূগর্ভে প্রেরণ করে মূলধনের পূনর্বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ধরনের প্ল্যান্টের কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী নানারকম প্রকারভেদ আছে, অত ডিটেইলসে যাবার মতো জ্ঞান আমার নেই। শুধু বলা যায় যে, টার্বাইন ঘোরানোর পর বাষ্প থেকে পাওয়া গরম পানিকে শহরের তাপ সরবরাহের কাজেও ব্যবহার করা যায়। আবার মাটির নিচ থেকে জলীয় বাষ্পের সাথে সাথে নানান গ্যাস, কেমিক্যাল উঠে আসে -- এদেরকেও যথাযথভাবে সংগ্রহ করে কাজে লাগানোর কথা ভাবা যায়। এসব নানান দিক বিবেচনা করে নানাভাবে এই প্ল্যান্ট বানানো যায়।

এই হলো ভূগর্ভস্থ তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাহিনী। এরকম একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট বানাতে সাধারণ কয়লা বা জ্বালানী তেল পুড়িয়ে যে তাপবিদ্যুৎ তৈরী করা হয় তার কাছাকাছি একটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার লাগবে, তবে জ্বালানী পোড়ানোর বার্নার ছাড়া। এর বদলে লাগবে ভূগর্ভ থেকে বাষ্প উঠিয়ে আনার জন্য লম্বা পাইপ। যেহেতু মাটির উপরে এই পাইপের তেমন কাজ নেই, কাজেই মাটির উপরে এরকম একটি প্ল্যান্ট জায়গা নেবে কম। তাছাড়া এধরনের প্ল্যান্টে জীবাশ্ম জ্বালানী লাগবেনা মোটেও, এই ইকোকালচারের যুগে এর চেয়ে ভালো খবর আর কি হতে পারে! জীবাশ্ম জ্বালানী না লাগায় আরব শেখদের পেছনেও আমাদের হাড়ভাঙা শ্রমে অর্জিত কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালার কাজটা কিছুটা হলেও কমবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো প্রকৃতিদেবীর মুডের উপর যেমন বায়ু বা সৌরবিদ্যুৎপ্ল্যান্টকে নির্ভর করতে হয়, সে ঝামেলা নেই। সারাদিনের যেকোন সময় সমান হারে এই প্ল্যান্টের বিদ্যূৎ সরবরাহ সম্ভব। যেজন্য এটিকে বেজ প্রোভাইডার ধরে সাথে অন্যান্য প্রকৃতির মুড নির্ভর প্ল্যান্টের সিনার্জি কল্পনা করা যায়। এরকম আরো অনেক সুবিধা জিওথার্মাল এনার্জি প্ল্যান্ট থেকে পাওয়া সম্ভব, সেসব নেট ঘাঁটলেও পাওয়া যাবে।

এখন আসা যাক এর উৎপাদন ক্ষমতা আর সেট আপ খরচ কিরকম।
বোঝাই যাচ্ছে উৎপাদনক্ষমতা নির্ভর করবে একটা এলাকার ভূগর্ভস্থ বাষ্পের ওপর। এখানে বলে রাখা ভালো যে পৃথিবীর মুচমুচে ক্রাস্টের গভীরতা স্থানভেদে বিভিন্ন, ৫ থেকে ৪০ মিটার পর্যন্ত এই ব্যপ্তি। সূতরাং বোঝাই যাচ্ছে, যেখানে ক্রাস্টের গভীরতা ৫ কিলোমিটার সেখানে ম্যান্টলের খুব কাছে হওয়ায় ভূগর্ভের বাষ্প পাবার সম্ভাবনাও বেশী। সাধারণতঃ আগ্নেয়গিরিসমৃদ্ধ জায়গা, উপকূলের কাছে এই সম্ভাবনা বেশী থাকে। জাপানের একটি বড় প্ল্যান্টে মোটামুটি এক মিটার ব্যাসার্ধের পাইপকে ২ কিলোমিটার নিচে ঢুকিয়ে প্রায় ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

প্রাথমিক খরচের ব্যাপারেই মূলতঃ মার খায় এধরনের প্ল্যান্টের পরিকল্পণা। মূলতঃ একারণেই এটির প্রসার তেমন ঘটেনি দুনিয়া জুড়ে। তবে সেটা যতটা না প্ল্যান্ট তৈরীর জন্য তার চেয়ে বেশী হলো জরিপের জন্য, নানান জায়গায় খুঁড়ে খুঁড়ে মূলতঃ তাপমাত্রা, মাটির নিচের তরল পদার্থের প্রকৃতি, গতি এসব দেখে বুঝতে হয় সম্ভাবনা কতটুকু -- বেশ খরচসাপেক্ষ ব্যাপার। আমেরিকা বা জাপানে যে খরচ তা মেগাওয়াট প্রতি বাংলাদেশী টাকায় গড়ে ২০ কোটির মতো পড়বে। তবে বাংলাদেশে শ্রমের খরচ, জমির দাম, নির্মাণ খরচ এসব কম হওয়ায় এই খরচ কিছুটা কমে যেতে পারে।

ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎনিয়ে আরো কিছু সমস্যা যে নেই তা নয়। যেমন যে পাইপ দিয়ে জলীয়বাষ্প উপরে উঠে আসবে তার মেইনটিন্যান্স দরকার; ভূগর্ভস্থ গ্যাস যাতে লিক করে বায়ুদূষণ না করে সেটা দেখাও জরূরী। তবে নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্ল্যান্টের মেইনটিন্যান্সের তুলনায় এসব নস্যি।

যাই হোক, মোটামুটি তো রচনা লিখে ফেললাম, মোটকথা হলো, মেইনটিন্যান্সে অদক্ষ আমাদের দেহসের জন্য এটি ভেবে দেখার মতো প্রযুক্তি। ফিলিপিন এই প্রযুক্তির সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করছে, তাদের মোট বিদ্যুতের চারভাগের একভাগই জিওথার্মাল। ইন্দোনেশিয়াও ভালোভাবে ব্যবহার করছে। ভারতের হিমাচল প্রদেশে বিশাল প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। আমেরিকা, জাপান, জার্মানী এসব দেশে এই প্রযুক্তির গ্রহনযোগ্যতা দিন দইন বাড়িয়ে তোলার উপর কাজ চলছে। মেগাওয়াট প্রতি বিশ কোটিতে রাজী করানো গেলে আমার মনে হয়না এটা খারাপ ব্যাপার হবে। অন্ততঃ পান্ডবদার দেয়া ম্যাপের লিংক (http://en.wikipedia.org/wiki/File:Geothermal_hotspots.JPG) বলছে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ভালোই।


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

হিমুর পোস্টে করা মন্তব্যটা কপি করে দিচ্ছি।
auto
ছবিতে ক্লিক করলে বড় করে দেখাবে।











এই হচ্ছে বাংলাদেশের জিওথার্মাল গ্র্যাডিয়েন্টের অবস্থা। ছবিটা আমার বর্তমান থিসিস থেকে কপি করে দিয়েছি। [ডেটা সোর্স বাপেক্স থেকে সংগ্রহকৃত ড্রিলিং লগ]

ঠাকুরগাঁ শহরের বেশ কাছেই একটা নলকূপ আছে T-278 (88.496631° E, 26.058339° N)। এই নলকূপটির গভীরতা ৮৭ মিটার। এই নলকূপের ৮৭ মিটার গভীরতায় তাপমাত্রা ৩৭° সেলসিয়াস আর ওয়েল হেড তাপমাত্রা ৩৪° সেলসিয়াস। সেই হিসাবে এই জায়গার গড় জিওথার্মাল গ্র্যাডিয়েন্ট হবার কথা ১৪০° সেলসিয়াস/কিলোমিটার। কী অসাধারণ সম্ভাবনাময় একটা জায়গা!!!!!!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীণ সময়ে ইন্সটিটিউ অব ওয়াটার মডেলিংয়ের একটা প্রজেক্টের কাজে আমরা কয়েকজন ছাত্র ও আমার তৎকালীণ সুপারভাইজার এই জায়গাটিতে ফিল্ডওয়ার্ক করেছিলাম। পরবর্তীতে যতদূর জানি এই অমিত সম্ভাবনাময় জায়গাটিতে "জিওথার্মাল রিসার্চ গ্রুপ অব বাংলাদেশ"-র কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ঘুরে এসেছেন। ঘুরে আসার পর তাঁরা একটি রিপোর্ট ও দিয়েছিলেন। সেই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে কোন উদ্যোগ আদৌ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। আমাদের প্রজেক্ট রিপোর্টের ভিত্তিতে আই.ডাব্লিউ.এম কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলো কিনা সে সম্পর্কেও বলতে পারবো না।

সিরাত এর ছবি

দারুন পোস্ট!

ফাহিম এর ছবি

অনেক খরচ-সাপেক্ষ ব্যাপার। আমাদের দেশের জন্য কি বাস্তব-সম্মত?

=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

হিমু এর ছবি

ইরেকশন কস্ট দিয়ে আসলে পুরোটা বিচার করা একটু মুশকিল। যেমন ধরুন কয়লা থেকে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, বেশ সস্তা। কিন্তু তাকান আমাদের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে, ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটিতে ভুগছে। একটা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইরেকশন কস্ট কম, কিন্তু তার অপারেশনাল ওভারহেড তো অনেক। আর অপারেশনাল ওভারহেড সময়ের সাথে বাড়বে। নবায়নযোগ্য শক্তিপ্রকল্পগুলির খরচ শুরুর দিকে প্রচুর, পরে কম (ব্যবস্থাপনা যথাযথ হলে), কিছু কিছু ক্ষেত্রে শূন্যের কোঠায়, যেমন ফোটোভোল্টায়িক প্ল্যান্ট।

একটা এক মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বছরে আট হাজার ঘন্টা চালালে ৮০ লক্ষ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এখন সেই প্ল্যান্টের এফিশিয়েন্সি ধরে হিসাব করুন, তাতে কতটুকু গ্যাস, তেল বা কয়লা খরচ হবে। শুধু ফুয়েলের খরচই অনেক অনেক বেশি।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ফাহিম এর ছবি

নবায়নযোগ্য শক্তিপ্রকল্পগুলির খরচ শুরুর দিকে প্রচুর, পরে কম

এইটাই ঘটনা। আমাদের দেশে মনে হয় না এতো এস্টাবলিশমেন্ট কস্ট দিয়ে এই ধরণের প্রজেক্ট করা সম্ভব। তবে আশা করতে দোষ নাই।

জার্মানীতেও তো বোধহয় একেবারে রিসার্চ আকারে কিছু প্রজেক্ট হচ্ছে, তবে কমার্শিয়ালি ভায়াবল করতে অনেক সময় লাগবে। স্টুটগার্ট রেলস্টেশনের একটা এলাকায় এই রকম একটা রিসার্চ প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশন দেখেছিলাম।

=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

হিমু এর ছবি

ফাহিম ভাই, করলেই করা হয়। খাম্বার পিছনে পয়সা খরচ করতে পারে কয়েক হাজার কোটি, আর ২০-৩০ কোটি টাকা দিয়ে একটা পাইলট প্রজেক্ট করতে পারবে না?

নিজেরা করলে যে খরচ হবে, তা তো বৃথা যাবে না। এতে আমাদের বিশেষজ্ঞরা নতুন প্রযুক্তিতে শামিল হতে পারবেন, নতুন প্রকৌশলীরা শিখতে পারবে অনেক কিছু। না হলে দেখা যাবে বিশ বছর পর কোন বদমাইশ চীনা কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এবং টঙ্গী-রাউজান-কুতুবদিয়া-বড়পুকুরিয়ার মতো ঐ প্রজেক্টেরও পাছার কাপড় মাথায় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আমরা কিছু করবো না, কিছু শিখবো না, আর খালি বাইরের বিশেষজ্ঞদের ডেকে এনে রুকুতে দাঁড়াবো, এমন আর কতো চলবে? ৩৮ বছরে কি বাংলাদেশ মাটিতে এক কিলোমিটার গর্ত করার মতো এক্সপার্ট তৈরি করতে পারেনি?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ফাহিম এর ছবি

নিজেদের লোকজন দিয়ে করলে তো আর আমলা আর রাজনীতিবিদদের পেট ভরবে না, তাই হবেও না। বদমাইশ চীনা কোম্পানীকে কাজ দিয়ে যেই ঘুষ পকেটস্থ করা যায়, বুয়েটকে বা অন্য কোন ইউনির কোন রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে দিলে তো সেটা হবে না...

=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

ফারুক হাসান এর ছবি

যেহেতু কোনো কোনো অপশনের ইনভেষ্টমেন্ট কস্ট বেশি, আবার কোনো কোনোটার অপারেটিং কস্ট, সেহেতু আমাদের সবগুলো অপশনের ট্রেডঅফ বিবেচনায় নিয়ে শ্রেষ্ঠ পলিসিটা ঠিক করতে হবে, যাতে আগামি বিশবছর কোন কোন খাতে আমাদের টাকা ঢাললে বিদ্যুতের চাহিদাও মেটে আবার খরচও সবচেয়ে কম হয় (যেহেতু আমরা গরীব দেশ)।

আর এখানেই আমার কাজ করার কিছু সুযোগ আছে, যদি হাতে পর্যাপ্ত ডাটা থাকে। আমার গবেষণার বিষয় হলো অপটিমাইজেশন, সোজা বাংলায়, আপনার হাতে যদি অনেকগুলো অপশন থাকে এবং থাকে যাবতীয় কস্ট ডাটা, ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের ডাটা, তাহলে একটা মডেল তৈরি করে আমি হিসাব কষে বের করে দিতে পারব কোন কোন অপশনগুলো আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ এবং সেগুলোর কোনটা কতদিন চালালে সবচেয়ে কম খরচে আপনার চাহিদা মেটানো সম্ভব। আমি আশা করে আছি, এই পোষ্ট এবং হিমু ভাইয়ের অন্যান্য পোষ্টের মত আরো বেশ কিছু পোষ্ট সচলে আসবে, আমরা সেগুলো নিয়ে ফলপ্রসু কিছু আলোচনা করব। আর আমাকে যদি কেউ বাংলাদেশের আগামি বিশ বছরের বছর ওয়ারি বিদ্যুতের চাহিদার তথ্য, বর্তমান মোট যোগানের পরিমাণ, নির্মাণাধীন পাওয়ার প্লান্টগুলোর সাপ্লাই ডাটা, বিদুৎ উৎপাদনের যত ধরণের অপশন আছে সেগুলোর বছরওয়ারি ইনভেস্টমেন্ট ও অপারেটিং কষ্টের ধারণা দেন, তাহলে আমি একটা মডেল দাড় করিয়ে ফেলতে পারি যেটা দিয়ে অন্তত আনুমানিকভাবে হলেও বলা সম্ভব যে কোন কোন অপশন বেছে নিয়ে সেগুলোতে এখনই হাত লাগালে আগামি দশ/বিশ/ত্রিশ বছরের পুরো দেশের বিদ্যুৎচাহিদা সবচেয়ে কম খরচে মেটানো সম্ভব। আমার পিএইচডি সুপারভাইজার সম্প্রতি এরকম একটি প্রজেক্টই হাতে নিয়েছেন পুরো সিংগাপুরের জন্য। সুতরাং ডাটা থাকলে এধরণের ডিশিসন কিংবা পলিসি মেকিং কঠিন কিছু নয়। মডেলিংটা তেমন কঠিন কিছু নয়, সবচেয়ে কঠিন হচ্ছে ডাটা সংগ্রহ।

আপাতত নেট ঘেটে ডাটা যোগাড় করে হয়ত এরকম প্রিলিমিনারি কিছু করা যেত, কিন্তু আমার থিসিসের জমা এই মাসেই, তাই পরে করা যাবে। কিন্তু আমি সবাইকে একটু আহবান জানাবো, যতটা পারেন ইনফরমেশন যোগাড় করুন, বিশেষ করে কস্ট ইনফরমেশন।

হিমু এর ছবি
ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এইখানেই সচলদের সাথে অন্যদের পার্থক্য। কোন রকম প্যাঁচাপ্যঁচিতে না গিয়ে সোজা কাজে নেমে পড়েছে।

বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিংভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে বাস্তবে বিষয়টা অতটা সহজ না। উঠে আসা বাষ্পকে ট্রিটমেন্ট করার ব্যাপার আছে। বর্জ্য একটা সমস্যা। ঠাণ্ডা পানি মাটির নিচে পাঠানোও সহজ কর্ম না। এরচেয়ে গরম পানি অন্যকাজে লাগানোই শ্রেয়। তবে আমাদের জন্য এটা বেশ একটা সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। মাটির নিচ থেকে গ্যাস বের করে চুলা জ্বালানো, বিদ্যুত তৈরি, কারখানা চালানোও সহজ কাজ নয়। সেটা যখন করা গেছে তখন এটার চেষ্টা করতে অসুবিধা কী? এই ব্যাপারে দেশে বিশেষ কোন কাজ হয়েছে বলে শুনিনি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

গরম পানিটাকে একটা হিট রিকভারি বয়লারে ঢুকিয়ে মূল সাইকেলে পাঠিয়ে দেয়া সহজ। এ কাজে যে সামান্য কয়লা লাগবে, তা বড়পুকুরিয়া থেকে সরবরাহ করা যাবে। ঠাকুরগাঁও তো কাছেই।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সুপারহিটিং আর ইকোনোমাইজিং-এর ব্যাপারগুলোতো প্ল্যান্টে এমনিতেই থাকবে। তবে উঠে আসা বাষ্পের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের একটা ব্যাপারও আছে। সেই ব্যাপারটা একটু কঠিন বৈকি। তবে এখনকার কম্পোজিট মেটেরিয়্যালগুলো সাপ্লাই লাইন, টারবাইন ইত্যাদি ফ্লুইড সাপ্লাই অংশে ব্যবহার করলে ট্রিটমেন্টের ব্যাপারটা কতটুকু কমিয়ে আনা যাবে তা খতিয়ে দেখতে হবে। অল্প তাপমাত্রার গরম পানি লাগে এমন অনেক ইণ্ডাস্ট্রি আছে তাদের কাছে ট্রিটমেন্ট করা গরম পানি বেচা যেতে পারে। উঠে আসা বাষ্পের ফ্লো কোয়ালিটি, প্রেশার, অ্যামাউন্ট ইত্যাদি বিষয়গুলোও ভাবার বিষয়। এগুলো কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় জানি না। মাটির নিচের বাষ্পের একটা পকেট খালি হলে আরেকটাতে কীভাবে যাওয়া যাবে (বিদ্যুত উৎপাদন ব্যাহত না করে) তাও ভাবার বিষয়। সচলে কি এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ কেউ নেই?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

উঠে আসা বাষ্প বোধহয় ১০০% ট্রিট করে টারবাইনে ছাড়ার পরিবর্তে একটা হিট এক্সচেঞ্জ ইউনিটের মধ্যে দিয়ে চালানো হয়।

ইয়োরোপে গরম পানিটাকে ওরা পৌরতাপ হিসেবে কাজে লাগানোর সম্ভাবনার কথা বলে। বাংলাদেশে ঠাকুরগাঁওয়ের আশেপাশে কোন গরম পানির খরিদ্দার পেলে ঝামেলা বাঁচতো হয়তো।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

দ্রোহী এর ছবি

আমি আরো বছর বিশ/ত্রিশেক অপেক্ষা করার পক্ষপাতী। আমার পোস্ট করা ম্যাপটা খেয়াল করলে দেখবেন বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁ অঞ্চলে যেখানে জিওথার্মাল গ্র্যাডিয়েন্ট ১৪০° সেলসিয়াস/কিলোমিটার সেই কনট্যুর অংশটুকু ভারতের ভেতরেও বিস্তৃত।

ভারত একটা কিছু দাঁড়া করুক। সেখান থেকে ১০/১৫ বছরের লাভ তুলে নিক। তারপর আমাদের সামনে একটা উদারহণ থাকবে। তখন আমরা নির্ভয়ে এগিয়ে যাবো।

তথ্যপ্রযুক্তির সুপার হাইওয়েতে যোগ দিয়েছি এতোদিন পরে। আর এতো ভূগর্ভস্থ তাপবিদ্যুৎ!!!!!!!!!!!!!!!!!

আমি ভারতের সাথে তাল মিলিয়ে ভূগর্ভস্থ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প দাঁড়া করানোর বিপক্ষে। কারণ তাতে করে ভারত আমাদের ভূগর্ভস্থ তাপ টেনে নিয়ে যেতে পারে। ঠিক যেভাবে আমাদের দেশের সব তথ্য বিদেশে পাচার হয়ে যাবার কথা ছিলো। দেঁতো হাসি

হিমু এর ছবি

দিলেন তো একটা ইস্যু। বিএনপি বলবে, "ভারত আমাদের ওম চুরি করছে!" আর লীগ বলবে, "এ ওম আমাদের পারস্পরিক সম্প্রীতিকে আরো মজবুত করবে!"



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

দ্রোহী এর ছবি

এইটা আমারও কথা, বাংলাদেশের ওম লই চুদুরবুদুর ছইলতো নো।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

খাইছে

সিরাত এর ছবি

আপনারা বড় দুষ্ট লোক। মজায় চামে শেখাও হচ্ছে বেশ!

নুর এর ছবি

ভাই কী চট্টগ্রামের নি?

ফাহিম এর ছবি

দেঁতো হাসি
=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

দিগন্ত এর ছবি

ভারতের প্রাথমিক পরিকল্পনায় দেখলাম লাদাখ, হিমাচল আর ছত্তিশগড়কে বেছে নেওয়া হয়েছে। সম্ভাবনা থাকলেও ভারতের ওই অংশে জিওথার্মালের সম্ভাবনা কম, কারণ ভুটান থেকে আসা জলবিদ্যুতের কল্যাণে ওই অংশে বিদ্যুত ঘাটতি নেই। যেখানে বিদ্যুত ঘাটতি নেই সেখানে নিকট ভবিষ্যতে বিকল্প শক্তির সন্ধানও করা হবে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফ্রুলিক্স এর ছবি

জার্মান টিভি চ্যানেলগুলোতে এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টরি দেখেছিলাম।
প্রাথমিক খরচ এবং মেইনটেইনেন্স খুব বেশী।

তবে আশা করতে দোষ কি? তাই করলাম।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

যতো ঝামেলা লাগাইছে শক্তির নিত্যতা সূত্র। এইটা না থাকলে আমাদের কচিরা কবে জ্বালানিবিহীন বিদ্যুৎ প্রকল্পকে খাটের কোণায় পৌঁছে দিতো। পোস্টে জাঝা।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

দ্রোহী এর ছবি

মন্তব্যে জাঝা।

ছোটবেলায় আমি নিজেই জ্বালানীবিহীন বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কোথায় যেন শিখেছিলায় ডায়নামো দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তখন ভেবেছিলাম প্রথমে সামান্য একটু বিদ্যুৎ খরচ করে একটা ডায়নামো স্টার্ট করবো। তারপর সেই ডায়নামো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই ডায়নামো চালানোর ব্যবস্থা করবো। মাছের তেলে মাছ ভাজা আর কী!!! কী অসাধারণ বুদ্ধি। প্রথমবার সামান্য একটু বিদ্যুৎ খরচ করলেই সারাজীবন বিদ্যুৎ পাওয়া যেত।

শালার এই শক্তির নিত্যতা সূত্র না থাকলে আজ আমার নিজেরই একটা ব্যক্তিগত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থাকতো!!

ফারুক হাসান এর ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত আমার মনে বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে আমি ভবিষ্যতে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করতে যাচ্ছি, সেটি হচ্ছে একটা সিলিংফ্যান যার জন্য আলাদা কোনো বিদ্যুৎএর প্রয়োজন হবে না। সেই হাইস্কুলে থাকতেই মোটামুটি একটা ডিজাইন দাড় করিয়ে ফেলেছিলাম। শক্তি একটু যা লাগবে সেটা শুরুতেই, প্রথমে কয়েকবার প্যাডেল মেরে ফ্যানটাকে ঘুরাতে হবে। একবার ঘোরা শুরু করলে কেল্লা ফতে। ফ্যানের সাথে থাকবে একটা শ্যাফট যার অন্য মাথায় লাগানো থাকবে একটা জেনারেটর। ফ্যান ঘুরলে শ্যাফট ঘুরবে, সেটার জন্য জেনারেটরও ঘুরবে, আর সেই জেনারেটর যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে সেটা রিসাইকেল করে ফ্যান ঘোরানোর কাজে ব্যবহার করা হবে। ব্যস্, বিনা পয়সায় হাওয়া খাও যতপারো, লোডশেডিংয়ের কোনো যন্ত্রণা নেই।

আমার সেই স্বপ্ন একেবারে ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় যেদিন থার্মোডাইনামিক্সের ক্লাশ শুরু করি বুয়েটে।

শিক্ষানবিস এর ছবি

নতুন নতুন আইডিয়ার বিকল্প নাই। আগামী দশ বছরের মধ্যে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা যে পরিমাণ পাড়বে সে তুলনায় সরকারের কোন পরিকল্পনাই নেই। রুপপুর নিউক্লিয়ার প্রজেক্ট নিয়েও লেখা আসা দরকার। এটা নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যানের একটা প্রেজেন্টেশন পড়েছিলাম। উনি তো অ্যাটমিকের প্রশংসা করে একাকার করেছেন। জলবিদ্যুৎ সহ সবগুলোর সম্ভাবনাই খুব কম বলেছেন।
ভূগর্ভস্থ তাপবিদ্যুৎ নিয়ে তেমন কিছু জানতাম না। লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

সিরাত এর ছবি

জাঝা পোস্ট। জানলাম।

যারা জানেন তাদের - আপনাদের কি মনে হয় - আগামী ১০ বছরে কি আমরা আমাদের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের ধারে কাছেও আসতে পারবো? এইসব হাওয়া, তাপ ইত্যাদি প্রযুক্তি কি কোটিকয়েক লোকের চাহিদার সাথে তাল মেলাতে পারবে?

আমার কেন যেন মনে হচ্ছে না। মন খারাপ

তবে হিমু বা জ্বীনের বাদশা ভাই একটু অন্তপ্রঁশীপ দেখালে বিলিওনিয়ার হয়ে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা।

আর সামনে আমি যদি ব্যবসা কইরা একটু হাত পাকাই, হয়তো... হাসি

এগুলি কি প্রাইভেট ব্যবসায়ীরা লাভজনকভাবে করতে পারবে? অনেক অনেক অনেক টাকার ব্যাপার তো মনে হয়। সরকার লাগবেই। তবে ভাল ব্যবসায়ী বড় রোল প্লে করতে পারবে।

ফারুক হাসান এর ছবি

আজ খবরে দেখলাম বড় বড় রাঘব বোয়ালেরা ১৫০০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। যদি প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইনভেষ্টমেন্ট কস্ট গড়ে ১৫ কোটি টাকাও হয়, তাহলে এই ঋণ উদ্ধার করে বিনিয়োগ করলেই ১০০০ মেগাওয়াটের সমাধান হয়ে যায়।

হিমু এর ছবি

না পারার তো কোন কারণ নাই। কয়েক কোটি লোককে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ দেয়া হয়তো সম্ভব হবে না, কিন্তু অন্তত ১২ ঘন্টা তো দেয়া যাবে। সেটাই বা কম কী? বোরোর সেচের সময় যদি বায়ুবিদ্যুতের মাধ্যমে সেচশক্তি সরবরাহ করা যায়, তাহলেই তো চলে।

বছরে ২০০০ ঘন্টা পূর্ণশক্তিতে চলার জন্যে ডিজাইন করা হয় বায়ুটারবাইনগুলি। মানে প্রতি মেগাওয়াটে বছরে আসবে ২০ লক্ষ ইউনিট বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎ যদি দশ টাকা করে বিক্রি করা হয়, তাহলে বছরে আসে দুই কোটি টাকা। যেহেতু হিসাবটা কম্পাউন্ড, তাই এগারো বছর লাগবে ইনভেস্টমেন্ট উঠে আসতে। এর পর প্রতি বছর প্রতি মেগাওয়াট দুই কোটি টাকা করে ডিম দেবে। টারবাইনগুলির আয়ু ২০-২৫ বছর হয়।

আমার হিসাবে কিছু গলদ আছে। যারা ফিন্যান্সের মারপ্যাঁচ বোঝেন, তাঁরা ১০ কোটি টাকা ইনিশিয়াল ব্যাঙ্ক লোন, ১৫% বাৎসরিক সুদের হার আর মাসিক আয় সতেরো লক্ষ টাকা ধরে এক্সেলে প্যাঁচ কষে দেখুন কয়মাস পর ব্যাঙ্কের কাছে দেনা শূন্য হয়। ইউনিট পিছু দশ টাকা খুব উচ্চাকাঙ্খী মনে হলে বলি, কয়েকটা বছর যেতে দিন, গ্যাস শেষ হোক, তারপর দেখবেন বিদ্যুতের দাম কোথায় যায়।

তবে মাত্র একটা টারবাইন গেড়ে লাভ করা যাবে না। সারা দেশে টারবাইনের ক্লাস্টার বসাতে হবে, যাতে করে মেইনটেন্যান্সের মার্জিনাল খরচ কমে আসে।

বায়ুটারবাইন শিল্প শুরু হলে দেশের স্টিল আর কংক্রিট শিল্পও চাঙা থাকবে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

শামীম এর ছবি

পোস্টে ব্যাপক ভাবে উত্তম জাঝা!

দেশের গভীর নলকূপগুলো ৩/৪শ মিটার পর্যন্ত হয়। ওগুলোতে পাম্প থাকার হাউজিং পাইপগুলো (ব্যাস প্রায় ০.৫ মিটার) অবশ্য ৫০ মিটারের বেশি হয় বলে শুনিনি। বিভিন্ন ধরণের কাটার যন্ত্র/কৌশল ব্যবহার করে এটা করা হয়। তবে বাংলাদেশের নরম মাটির জন্য তীব্র পানির ধারা ব্যবহার করে কাটার কৌশলটা (water jet drilling) বেশি কার্যকরী বলে জানি (এই কৌশলে পানি দিয়ে লোহাও কেটে ফেলা যায় চোখ টিপি )।

ভূগর্ভস্থ তাপ-বিদ্যূতের জন্য ১ মিটার ব্যাসার্ধের পাইপের কথা শুনে একটু ডরাইছি আরকি .... তবে ছোট্ট একটা তথ্য মনে পড়াতে আবার একটু ভয কমে গেল ....

আমাদের যমুনা ব্রীজের তলায় ৪৮টা পিয়ার/পায়া আছে ... ঐ পায়াগুলোর বেশিরভাগের নিচে তিনটা করে পাইল (খুঁটি) গাঁড়া আছে ... অনেকটা তেপায়ার মত করে একটু কোনাকুনি ভাবে -- এতে স্টেবিলিটি (বাংলা কী হবে!) বৃদ্ধি পায়।
প্রতিটি পাইল-ই ৮০-১০০ মিটার গভীর এবং একেকটা ১.৫ মিটার ব্যাসার্ধের।

এগুলোকে বিরাটা একটা হাতুড়ি (ক্রেনে চড়া ৬ টনের হাতুড়ি সম্ভবত) দিয়ে মেরে মেরে মাটিতে ঢুকানো হয়েছে। একটা ছোট পাইপ গাড়ার পর আরেকটা ওর উপরে ওয়েল্ডিং করে জোড়া দেয়া হয়েছিল। এভাবে পুরাটা গাঁড়ার পর পাইপের ভেতরের মাটি সব ড্রিল দিয়ে কেটে বের করে সেটাকে কংক্রিট দিয়ে ভরে দেয়া হয়েছিল (প্রাথমিক পরিকল্পনায় শুধু বালু/পাথর দিয়ে ভরার কথা ছিল কিন্তু পাইপের পুরুত্ব নকশার ৬৩ মি.মি. এর বদলে মাতব্বরীর ৫৫ মি.মি. হওয়াতে এই শাস্তি দেয়া হয়েছিল)।

৪৮ পায়াতে যদি প্রায় দেড়শো খুটি ঢুকানো যায় ... এবং সেই কাজ সামনা সামনি দেখে শিখেছে এমন লোক দেশে থাকে তাহলে একটা/দুইটা খুটিকে কয়েক কিলোমিটার ঢুকানো সম্ভবত এঁরাই করতে পারবে। আমাদের দেশে অত ভারী হাতুড়ি নাই .... কিন্তু প্রজেক্টের খাতিরে আনা সমস্যা না। আর হাতুড়ি না থাকলেও অসুবিধা নাই .. জেট ড্রিলিং টেকনিক জানা অনেক লোক আছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

হিমু এর ছবি

একটা ছোট পাইপ গাড়ার পর আরেকটা ওর উপরে ওয়েল্ডিং করে জোড়া দেয়া হয়েছিল।

মাটির ভেতরে ওয়েল্ড করলো কীভাবে?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

শামীম এর ছবি

একেকটা পাইপ গাড়ছে ... ঐটার শীর্ষ যখন প্রায় মাটির (পড়ুন পানির উপরিতল) লেভেলে চলে এসেছে তখন পরবর্তী পাইপটা ওটার উপরে ক্রেন দিয়ে আনা হয়েছে, ওয়েল্ডিং করে জোড়া দেয়া হয়েছে ... তারপর হাতুড়ি আরেকটু উপরে তুলে আবার এটাকে পিটিয়ে মাটিতে ঢুকানো হয়েছে। এভাবে একের পর একটা করে অংশ মাটিতে চলে যাচ্ছে ...

একই পদ্ধতিতে ধাতব পাইপযুক্ত পানি তোলার নলকূপ স্থাপন করা হয়। একটা পাইপপরিমান কেটে গেলে ওটার শীর্ষে আরেকটা পাইপ লাগানো হয় (প্যাঁচ কাটা থাকে আগে থেকে) ...তারপর আবার বোরিং চলতে থাকে .... এই পাইপটা সহ মাটির লেভেলে চলে আসলে আবার এটার শীর্ষে পরবর্তী পাইপটা লাগানো হয়।

এরকম না হলে একত্রে কয়েকশো মিটার পাইপ মাটির উপরে খাড়া করতেই খবর হয়ে যেতো .... ....

সচিত্র লাগবে নাকি?
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

দিগন্ত এর ছবি

সৌরশক্তিতে ফোটোভোল্টেইক সেলের একটা বিকল্প আছে। সেটার নাম সোলার থার্মাল এনার্জি। ব্যাপারটা অনেকটা আতস কাঁচ দিয়ে সূর্যালোক কেন্দ্রীভূত করে জল বাষ্পীভবন করে টারবাইন চালানোর মত ব্যাপার। আমি আর কয়েক ঘন্টায় এটা নিয়ে একটা ছোটো পোস্ট দেব আশা করছি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ভুতুম এর ছবি

ব্যাপক পোস্ট হইছে। উত্তম জাঝা!

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

সাফি এর ছবি

পোস্টে ধাক্কা দিলাম একটা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।