মিউজিয়াম বা আর্ট গ্যালারীতে যাওয়ার অভ্যেস কমবেশী অনেকেরই আছে। এর বাইরে, অর্থাৎ আরেকটু হাল্কা বিনোদন, যেমন ঐতিহাসিক/দর্শনীয় স্থান দেখতে যাওয়া, অথবা চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যাওয়ার অভ্যেস হয়ত আরো বেশী সংখ্যক মানুষের আছে। আর, এরও বাইরে, মানে ঘরকুনো যারা তাদের বিনোদন হয়ত ঘরে বসে বসে বই পড়া, টিভি-মুভি দেখা অথবা নেটে ঘুরে বেড়ানো, অথবা পড়ে পড়ে ঘুমানো।
যারা পড়ে পড়ে ঘুমান তাদের বিশেষ কিছু বলার নেই, বলেও লাভ নেই, ঘুমের ঘোরে কি শুনতে কি শুনবেন। যারা ঘুমকাতুরে না তাদেরকে ভাগ করা যায় দুইভাগে -- বাউন্ডুলে আর ঘরকুনো।
এখানে বাউন্ডুলেদের একটা প্রশ্ন করা যেতে পারে, তা হলো একই মিউজিয়ামে একাধিকবার যাবেন কিনা, অথবা আপনার খুব পছন্দের একজন শিল্পীর এক্সিবিশন হচ্ছে একমাস ধরে, সেখানে একাধিকবার যাবেন কিনা? স্থাবর জায়গাগুলো, যেমন মিউজিয়াম বা ঐতিহাসিক/দর্শনীয় স্থানে যদি দ্বিতীয়বার যান, তাহলে সেটা কতদিন পর? অথবা, এমন প্রশ্নও করা যেতে পারে, সর্বোচ্চ কতবার একই নাটক থিয়েটারে দেখতে যাবেন?
আবার ঘরকুনোদের জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, নেটে যখন বিচরণ করেন, যেমন ধরুন সামহোয়ার বা সচলায়তন, তখন কি একই পোস্ট (ধরুন আপনার খুব প্রিয় পোস্ট) একাধিকবার (ধরুন কয়েকদিনের গ্যাপে) পড়েন কিনা? টিভির খবর দেখার সময় কি একই খবর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখেন কিনা? অথবা, বই যখন পড়েন, তখন একই বই বারবার পড়েন কিনা?
পড়লে কতদিনের গ্যাপে পড়েন? অথবা মুভির ক্ষেত্রেও কথাটি খাটে।
ভুমিকাটা বেশ বড় হয়ে গেল, এখন আসল কথায় আসা যাক।
ধরুন আপনি কফি খেতে খেতে কয়েকজন বন্ধুর সাথে কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন, সেটা হতে পারে এমন বিষয় যা স্পর্কে আপনি খুব ভাল জানেন, অথবা এমন বিষয় যা সম্পর্কে আপনার অনেক জানার আগ্রহ, অথব শুধুই মজা করা, এটা ওটা নিয়ে কথা বলা।
এখানে লক্ষ্য করবেন যে, আপনি যখন কথোপকথনে ঢুকে গেলেন তখন আপনি শুধু কি কথা বলছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছেননা, সাথে সাথে অনেক কাজ করছেন। যেমন একটা সহজ উদাহরন হলো, তার দিকে তাকিয়ে থেকে হয়ত বোঝার চেষ্টা করছেন কখন সে থামবে, বা এরপর কে কথা বলবে; অথবা খেয়াল করবেন যে কোন ফ্রেন্ড সার্কলে কথা বলছেন তার উপর ভিত্তি করে আপনার কথা বলার স্টাইল পরিবর্তন হচ্ছে। এমনকি, আড্ডার সবার বডি মুভমেন্টও সিনক্রোনাইজড হয়, যেমন ধরুন, আপনার বন্ধুটি যখন তার নকা চুলকোবে, আপনার হাত অটোমেটিকালি নাকের দিকে চলে ক্যাবে। এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
এক্সপেরিমেন্ট থেকে দেখা গেছে যে, কেউ যখন একটা ছবি দেখিয়ে আপনাকে কিছু বর্ণনা করবে, তখন সে ছবিটার যেদিকে তাকাবে আপনিও অবচেতনভাবে সেদিকেই তাকাবেন, এককথায় ভাবলে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার চোখ তাকে ফলো করে দৃষ;টি ফেলছেনা, বরং টপিকের উপর ভিত্তি করে খুব দ্রুত খুঁজে নিচ্ছে কোথায় দেখতে হবে। এক্সপেরিমেন্টটা করা হয়েছে এভাবে; একদল ছাত্র একটি ভিডিওর উপর একটা বখ্তব্য দিয়েছে, তারপর আরেকদল সেই বক্তব্যের অডিও ভার্সন শুনেছে। দেখা গেল, বক্তা আর শ্রোতা মোটামুটি ২ সেকেন্ডের ভেতরে ভিডিওর একই দিকে চোখ রাখছে।
এখন চিন্তা করুন, আপনি একই মিউজিয়ামে দুবার গেলেন, দুবার দুজন ভিন্ন গাইড বর্ণনা দিল; অবশ্যই আপনি দ্বিতীয়বার নতুন কিছু জানবেন। অথবা, একদিন বান্ধবীসহ এবং আরেকদিন একা চিত্রকলা প্রদর্শনীতে গেলেন, আপনার মুড ভিন্ন হবে, আপনি দ্বিতীয়বারে নতুন কিছু জানবেন।
আরো সহজে বললে, একটা বই দ্বিতীয়বার পড়লে অনেক নতুন বিষয় চোখে পড়ে, মুভির ক্ষেত্রে তো অনেকে এটা এজন্যই করে থাকে। দেখুন, একই জিনিস, অথচ ভিন্ন মাধ্যম বা ভিন্ন মুডের জন্য আমাদের কাছে ধরা দেয় নতুনরূপে।
এখন আরেকটু দৃষ্টি প্রসারিত করে বিভিন্ন টিভিচ্যানেলে একই খবরের কথা চিন্তা করুন, আরো বেশী জানবেন। এখানে একই ঘটনা, ভিন্ন মাধ্যমে ভিন্নভাবে প্রকাশিত। এটাও অনেকে করেন, কারণ জানার পরিধি বাড়ে আরও।
এখন আরেকটু সাহস করে চিন্তা করুন, ঘরানা থেকে বের হয়ে,
একই টপিক, ভিন্ন ব্যাখ্যা, এবং অবশ্যই ভিন্ন মাধ্যমে ভিন্নভাবে প্রকাশিত। জানার জন্য কত এক্সাইটিং!
অথচ একাজটাই আমরা করতে পারিনা, দুপাতা পড়েই নাক সিঁটকাই, দূরো! এটা কিছু হলো!!
আমাদের চোখ, কান, মুখ এগুলো এত ক্ষমতাবান, দেখা যায়, শোনা যায়, মতবিনিময় করা যায়, যতবার ইচ্ছা ততবার করা যায়, এগুলো দিয়ে কত কিছু জানা যায়, নিজের মাত্রাকে কত বেশী প্রসারিত করা যায়!!
অথচ আমরা নাকটা দিয়ে সিঁটকাতেই পছন্দ করি।
মন্তব্য
কথা সত্য ।
কিন্তু বেশীরভাগ মানুষ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ট্যাবু অতিক্রম করতে পারেনা ।
আমি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে,বেশিরভাগ মানুষের দলে
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ঠিক, আমিও
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
মোরশেদ ভাই, আমিও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই বেশিরভাগ মানুষের দলেই ,,, আবার একটা যন্ত্রণাও বোধ করি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
পড়লাম। পড়ার পরে মাথা চক্কর মারলো।
ওজনী জিনিস।
তাইলে ঠান্ডা কফিই বেটার,কি বলেন?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
দারুন পোস্ট!
"নিজের মাত্রাকে কত বেশী প্রসারিত করা যায়।"
কথাটি আমার খুবই পছন্দ। ব্যক্তিগত জীবনে পালনের চেষ্টা করি।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
ধন্যবাদ, রেজওয়ান ভাই।
আমি আরেকটা জিনিস অনুভব করেছি,
যখন কোনভাবে বোঝা যায় নিজের মাত্রাটা খানিকটা বাড়ছে, তখন একটা ভয়ানক আনন্দ হয়।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
নতুন মন্তব্য করুন