সায়েন্সব্লগ ৩: ব্রেইনের ছলাকলা

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: সোম, ২০/০৮/২০০৭ - ১:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এর আগের দুই পর্বে চোখাচোখি আর চোখটিপ নিয়ে কথা হচ্ছিল, শব্দদুটোতেই বেশ খানিকটা রোমান্টিক ভাব আছে, সত্যি বলতে, শুধু রোমান্টিক না তার সাথে কিছুটা দুষ্টুমিও যুক্ত আছে শব্দদুটোতে। তেমনি আরেকটি শব্দের আবির্ভাব হলো লেখাটিকে এগিয়ে নিতে গিয়ে, 'ছলাকলা'।
যদিও সিরিয়াস প্রেমিকমাত্রই শব্দটির মধ্যে দুষ্টুমির চেয়ে নষ্টামি বেশী দেখতে পারেন, তারওপর শব্দটির আগমনে অনেকের খানিকটা অস্বস্তিকর অনুভুতিও হতে পারে; কারণ, হাজারহোক আমাদের প্রচলিত সমাজে "ছলাকলা" বললে এখনও নারীর দিকেই আঙুল দেখানো হয়, ১৬ বা ৬৪ সংখ্যাটা অবধারিতভাবে চলে আসে, যদিও বাস্তবজীবনে এখন ছেলেরাও ছলাকলা করতে জানে প্রচুর।
আমার এক বন্ধুকে দেখেছিলাম একসাথে তেরটা মেয়েকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে (ওকে আমরা গুরু ডাকতাম, দাক্ষিণ্য পাইনি যদিও), আবার আজকাল অনেক জায়গায়ই এরকম ছলাকলাময় পুরুষেরা সংশ্লিষ্ট নারীর আয়ের উপরই বেঁচে থাকে, মানে জীবনযাপনকর্মটা সারে।
জাপানে এমন একশ্রেনীর পুরুষই আছে, সমকালীন জাপানীজ সাহিত্যে এদের জন্য আলাদা টার্মিনোলোজীও আছে, এতটাই এদের প্রভাব! এদেরকে জাপানীজ ভাষায় যা বলা হয় তার বাংলা করলে শব্দটা হবে 'দড়ি', কিন্তু কেন বলা হয় কারণটা আমি বের করতে পারিনি, হয়ত একবার বেঁধে ফেললে ছাড়ানো মুশকিল। শব্দটাকে জাপানী ভাষায় বলে 'হিমো', শুনলেই আমার মনে হয় ব্লগার হিমু বেঁচে গেছে, একেবারে কানের পাশ দিয়েই গুলি গেছে।
অবশ্য, হুমায়ুন আহমেদের 'হিমু'ও বেশ খানিকটা সেরকম, প্রতিবারই তার "সেইরকম" একজন নায়িকার সাথে পরিচয় হয়, ঢাকার ভ্যাপসা গরমে মানুষের ভীড়ে হাঁটতে হাঁটতে চোখ-নাক-মুখের অনিচ্ছাকৃত ঘামসেবনে আমরা যখন তিতিবিরক্ত হয়ে ফুটপাথ জুড়ে হাঁটি আর তত্তাবধায়ক সরকারের গুষ্ঠি উদ্ধার করি, তখন হিমু সেই নবাগতা 'হিমি'র পাজেরোতে ২১ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় বসে কোকের ক্যান গিলতে গিলতে মচ্ছব করে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই ব্লগকে সায়েনসব্লগ নাম দেয়ার যুক্তি কি, এতক্ষণ কি নিয়ে ভ্যাজর ভ্যাজর করলাম, সায়েন্সের সাথে তার কোনদিক দিয়েই কোন সম্পর্ক নাই, সেটা আমি হাজার হলেও প্রতিষ্ঠা করতে পারবনা। ব্রেইনের ছলাকলার শিকার কি তাহলে নামদাতা আমি নিজেই কিনা সেটাও ভেবে দেখতে হবে।

**********************************
এ্যাথলেটিকসের প্রতিযোগিতায় বন্দুক ফোটানো হয় কেন, কেন ফ্ল্যাশলাইটনা, উত্তরটা আমরা মোটামুটি জেনেগেছি।
মানুষের নার্ভাস সিস্টেম বড়সড়ভাবে ভাগ করলে মোটামুটি দুভাবে কাজ করে।
প্রথমটা হলো প্রসেসিং, এক্ষেত্রে যা দেখি বা শুনি, তা ব্রেইনে নিয়ে গিয়ে ইন্টারপ্রিট করা হয়, সেটা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিই আমরা। যেমন, সাধারণভাবে আমরা যখন দেখি বা শুনি, এই ইন্টারপ্রিটিশনটা কাজ করে, তবে এত দ্রুত যে আমরা হয়ত বুঝছিনা যে ব্রেইন আসলেই সিগনালগুলো (দৃশ্য, শব্দ) নিয়ে গিয়ে নিজের মতো করে একটা অর্থ দাঁড় করাচ্ছে। উদাহরন দিতে গেলে খুব সাদামাটা হয়ে যাবে, যেমন রাস্তায় গাড়ী চলতে দেখে আপনি বুঝলেন যে একটি গাড়ী চলছে।
যখন কেউ খোঁচা দিয়ে কিছু বলে, আমরা শুনে হয়ত কিছুক্ষণ ভাবি আসলে ব্যাটা কি বলতে চাচ্ছে, তারপর ইন্টারপ্রিট করি আসলেই খোঁচা দিয়েছে কিনা। তবে দুঃখের বিষয়, এটা আর উপরের ইন্টারপ্রিট একই জিনিসনা, বেশ ভিন্ন। এই দ্বিতীয় ইন্টারপ্রিটেশনের সাথে মানুষের ব্রেইনের চেয়ে সংস্কৃতির সম্পর্কই বেশী।

দ্বিতীয়টা হলো, রিফ্লেক্স, যেখানে আপনার ব্রেইন পর্যন্ত পাঠিয়ে ইন্টারপ্রিট করতে হচ্ছেনা, শরীরের মটর সেন্সরগুলো সিগনাল পাওয়া মাত্রই এ্যাকশন নিচ্ছে, কি হচ্ছে না বুঝেই। যেমন মাথা বরাবর কিছু ছুটে আসছে দেখামাত্রই আপনি 'ডাক' করেন, নরম না শক্ত সেটা বিবেচনা বা ইন্টারপ্রিট করার সময় নেননা, আসলে আপনার মাসলে ব্যাপারটা আগেই প্রোগ্রাম করা আছে বলতে পারেন, তাই ডাক করতে যে মাসলগুলো প্রয়োজন তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ডাক করে। ব্রেইনের নির্দেশের অপেক্ষা করেনা।

মজার ব্যাপার হলো, আমাদের অডিটরী রিফ্লেক্স সিসটেম, ব্রেইনের অডিটরী সিগনাল প্রসেসিং সিস্টেম (যেটা শব্দকে ইন্টারপ্রিট করবে) দুটোই ভিজ্যুয়ালের তুলনায় দ্রুত কাজ করে।
দৌড়বিদরা যখন দৌড় শুরু করবেন, তখন আসলে দুটো সিস্টেমই কাজ করে, রিফ্লেক্স আর প্রসেসর। শুধু রিফ্লেক্স সিস্টেমেই অডিটরীটা ভিজুয়ালের ৩০ মিলিসেকেন্ড আগে কাজ করে, মানে ঠিক একই মুহুর্তে দৃশ্য আর শব্দ কানে ঢুকলে, রিফ্লেক্স সিসটেম শব্দের সাপেক্ষে এ্যাকশন নিবে ৩০ মিলিসেকেন্ড আগে, মানে ০.০৩ সে আগে। সবচেয়ে দ্রুত দৌড়েরও প্রথম পজিশনটা হারানোর জন্য যথেষ্ট সময়।

চিন্তা করে দেখুন, দৌড়বিদদের জন্য নিয়মিত কান পরিষ্কার করাটা কত জরুরী!

এখন কথা হলো, এই যে ব্যবধান অডিটরী আর ভিজুয়ালের মধ্যে, এটা কি কোন ত্রুটি? মানুষের বিবর্তনের কোন ধাপে কি সে কোনভাবে ধরা খেয়ে গ্যাছে?

এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আরেকটা প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে হবে, তা হলো অডিটরী আর ভিজ্যুয়াল প্রসেসিংয়ে এই টাইম-ডিলে'র কারণে কি কোন সমস্যা হবেনা?

যেমন, আপনি এক্ষুণি আপনার কম্পিউটার ডেস্কে একটা টোকা দিয়ে দেখুন, আপনি কি একই সাথে শুনতে ও দেখতে পাচ্ছেননা? তাহলে সেই ৩০ মি.সেকেন্ড সময়ের ব্যবধান গেল কই? এটা কি যাস্ট আমরা ৩০মি. সে বুঝতে পারিনা বলে, দুটোকে একই সময়ে মনে হয়?

আসলে তা না।

আমাদের কিছু কিছু রিফ্লেক্স ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময়ে হয়। আর আগেই বলেছি, কিছুক্ষণ পরপরই চোখের সামনে পড়া ৮০ মি.সেকেন্ডের একটা কালোপর্দাকেও আমরা প্রতিনিয়ত না দেখেই দিন কাটাচ্ছি।

এখনও যদি আপনার মনে সংশয় থাকে, তাহলে আপনাকে একটু কষ্ট করে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। নাহ্, চোখাচোখি,চোখটিপ বা ছলাকলা প্র্যাকটিসের জন্য না;
আপনি বরং, আপনার বাঁ চোখটার দিকে তাকিয়ে থাকুন। তারপর, ডানচোখের দিকে তাকান।
আপনার চোখ কিন্তু মুভ করেছে, কিন্তু আপনি কি লক্ষ্য করছেন?

কেন এসব হচ্ছে?

কারণ, আমাদের ব্রেইন রিয়াল লাইফেও অডিটরী বা ভিজ্যুয়াল সিগনালগুলোকে কন্টিনিউয়াস বা নিরন্তরভাবে না নিয়ে, ডিসক্রিটভাবে নিচ্ছে। ডিসক্রিটভাবে নেয়া এই সিগনালগুলোকে সে এমনভাবে পারসিভ করছে যে আমাদের মনে হচ্ছে সে প্রতিনিয়ত বা নিরন্তরভাবে সিগনাল নিয়ে যাচ্ছে। ব্রেইন যে মুন্সিয়ানাটা এখানে করছে, তা হলো সময়কে নিয়ে।

বাস্তবে সময়ের যে সংজ্ঞা, আর ব্রেইন সময়কে যেভাবে পারসিভ করে, দুটো আলাদা; এখানে ব্রেইন একটা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের সময়কে আরেকটু বেশী দৈর্ঘ্য হিসেবে পারসিভ করে, এটাকে বলা হয় ক্যালিব্রেশন। এটা শুধু সময়ের সাপেক্ষেই করেনা ব্রেইন, স্পেসের সাপেক্ষেও করে। যেজন্য দুইচোখে দেখা দুটো দ্বিমাত্রিক ছবি থেকে আমরা ত্রিমাত্রিক জগতের ছবি ব্রেইনের মধ্যে তৈরী করতে পারি।

সাধারণ ব্রেইনের ক্যালিব্রেশন ক্ষমতা যথেষ্ট হবার কারণে বাস্তব জগতকে আমাদের কন্টিনিউয়াস মনে হয়, দৃশ্য আর শব্দকে আমরা একই সাথে বোধ করি। এনিয়ে অনেক গবেষণা চলছে, ব্রেইন আসলে কি কি বিষয়ে ক্যালিব্রেশন করছে।

তবে এই ক্যালিব্রেশন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে বা ডিস্টার্বড হয়ে গেলে আপনার পারসেপশন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। এল.এস.ডি নিলে যে হ্যালুসিনেশন হয়, সেটাও ব্রেইনের এই পারসেপশন মেকানিজমে গন্ডগোল বেঁধে যাবার কারণে।

একটা সহজ উদাহরণ দিই, ইদানিং খেয়াল করছি।
কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে রাতে যখন বাসায় ফিরি, তখন আমার ৪০ মিনিটের রাইড ট্রেনে। মাঝেমাঝে ভাগ্যভাল হলে সিট পাই, ভয়াবহ ঘুম আসে। ঘুম তো না, ঝিমুনি বা তন্দ্রা। খেয়াল করে দেখলাম, জেগে থাকলে সময় যত দ্রুত যায়, ঝিমুনিতে সময় তার চেয়ে অনেক স্লো যায়। দুতিন-মিনিট ঝিমুতেই মনে হয় ঘন্টাখানেক ঝিমুচ্ছি। প্রথমে ভেবেছিলাম আইনস্টাইনের মতো আমিও জীবের শারীরিক অবস্থার সাথে সময়ের রিলেটিভিটি নিয়ে কোন থিওরী দিয়ে ফেলব (হে হে হে), পরে েকটু পড়াশোনা করে দেখি ঘটনা ভিন্ন।

হাজারহোক, বিজ্ঞান তো আর ছলাকলা দিয়ে হয়না!


মন্তব্য

অতিথি এর ছবি

এই সিরিজটা বেশ হচ্ছে। চলুক।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ@অতিথি
সময়ে-অসময়ে চালাব হাসি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এতো দেখি কঠিন সব বিজ্ঞান বিষয়ে আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন।
ভালো হচ্ছে। নিয়মিত চলতে থাকুক।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ, শোহেইল ভাই
ব্রেইনের বইষয়গুলো মজার ,,, তবে এবারেরটা বেশী কঠিন হয়েছে লিখতে গিয়ে, কারণ আসলে ব্রেইন যে মেকানিজমে অডিটরি, ভিজুয়াল সিগনালগুলোকে সিনক্রোনাইজ করে সেই মেকানিজমটাই এখনও ক্লিয়ার না ,,শুদুঃ এটুকু ধারনা করা যাচ্ছে যে সে টাইম পারসেপশনের ক্ষেত্রে একটা ট্রিক করে ,, যার জন্য আমাদের শরীরে ঢোকা সিগনালগুলো কন্টিনিউয়াস না হলেও আমরা সেগুলোকে কন্টিনিউয়াস বলে ভাবি
আনক্লিয়ার জিনিস ক্লিয়ারলি লেখা বেশ কঠিন হাসি

তবে চালাব চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কারণ, আমাদের ব্রেইন রিয়াল লাইফেও অডিটরী বা ভিজ্যুয়াল সিগনালগুলোকে কন্টিনিউয়াস বা নিরন্তরভাবে না নিয়ে, ডিসক্রিটভাবে নিচ্ছে। ডিসক্রিটভাবে নেয়া এই সিগনালগুলোকে সে এমনভাবে পারসিভ করছে যে আমাদের মনে হচ্ছে সে প্রতিনিয়ত বা নিরন্তরভাবে সিগনাল নিয়ে যাচ্ছে।

ব্যাপারটা কি আসলেই তাই? ডিসকৃট ইভেন্ট হিসেবে চিন্তা করা হয় কেবল এ্যনালাইসিসে সুবিধার জন্য-- এটাই জানতাম। আমি ইঁদুরের নিউরনের উপর সংগৃহীত ড্যাটা নিয়ে কয়েকদিন কাজ করেছি। সামান্য আইডিয়া পেয়েছিলাম, তাই আপনার লেখা চ্যালেঞ্জ করার মত সাহস আমার নেই। একটু ব্যাখ্যা করলে ভাল হয়।

লেখাগুলো আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। হাসি

দিগন্ত এর ছবি

আমি ব্রেন নিয়ে কিছুকাল আগে একটা লেখা লিখেছিলাম সেটা মূলত ব্রেনের বিবর্তন নিয়ে। বিবর্তনের কারণেই কিন্তু ব্রেনের এই বিচ্ছিন্ন দৃশ্যাবলীকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অনুধাবন করার ক্ষমতা জন্মেছে।
ফ্যান্টমস অফ দ্য ব্রেন বইতে রামচন্দ্রন এরকম একজন পেশেন্টের কথা লিখেছিলেন, যিনি চোখে শুধু বিচ্ছিন্ন দৃশ্য দেখতে পান ... নিরবিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমি পারলে সেটাও লিখব।
এই লেখাটা আমার ইংরেজী ব্লগে পাবেন। দ্রুতই এটার বাংলা লেখা আপনাদের জন্য আসবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ঝরাপাতা এর ছবি

দারুন পোস্ট। আমি একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। যেমন আমরা হঠাৎ সাপ দেখলে কি করি। কেউ লাফ দিউ, কেউ চিৎকার করি, কেউ দৌড় দেই। এখন আসা যাক ঘটনাটার ব্যাখ্যায়।

সাপটা যেখানে আছে সেটাকে আমরা বলি এনভায়রনমেন্ট। অর্থাৎ আমরা এনভায়রনমেন্টে একটা বস্তুকে প্রত্যক্ষ করছি। এখন সেই প্রত্যক্ষ করার কাজ করেছে কে? চোখ, যেটাকে বলা হয় সেন্সর। কারণ চোখ দিয়েই আমরা সাপটার উপস্থিতি সেন্স করছি। ( ক্ষেত্রবিশেষে নাক, কান, ত্বক এসবও সেন্সর হতে পারে। যেমন হঠাত গায়ে তাপের আঁচ লাগলে আমরা সরে দাঁড়ায়, সেক্ষেত্রে সেন্সর হলো ত্বক। ) এখন সেন্স করার পরে কি হবে? সেন্স করার পর বস্তুটির একটা ভিজুয়াল ইমেজ আমাদের মস্তিষ্কে চলে যাবে। মস্তিষ্কের কাজ হলো এবার ডিসিশন নেয়া। যেটাকে বলা হয় রিফ্লেকশন। মস্তিষ্ক কিন্তু কাজটা করে অনেক জটিল উপায়ে। প্রথমে মস্তিষ্ক যে ভিজুয়াল ইমেজ পায় সেটাকে সে মিলিয়ে দেখে তার পূর্ববর্তী সব নোন ইমেজের সাথে। (ব্যাপারটা বোঝা যাচ্ছে না? ঠিক আছে, ধরুন আপনি একটা বিড়াল দেখলেন, তখন আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে? যদি বাঘ দেখেন, তাহলেও কি একই প্রতিক্রিয়া হবে? কিংবা এমন একটা প্রাণী দেখলেন যেটাকে আপনি আগে কখনো দেখেননি। তার মানে আমরা যা দেখি তারই ইমেজ মস্তিষ্কে সংরক্ষণ করি, এমন কি যা দেখিনা, তার কাল্পনিক ইমেজও)। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। এখন মস্তিষ্ক বিবেচনা করবে কোন কাজটি করা দরকার। যেখানে আছে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকবে, নাকি পালাবে? মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে তা জানিয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে। যেমন পালানোর সিদ্ধান্ত নিলে পা তখন সচল হবে, দাঁড়িয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে অচল থাকবে। ডিসিশন পরবর্তী কর্মকান্ডে অংশ নেয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলা হয় অ্যাকচুয়েটর। এই হলো মোটামুটি ভাবে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মপদ্ধতি।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

এই না হলে সচলায়তন!!
চমৎকার সিনারখজি দেখা যাচ্ছে আলোচনায়- সাইকোলজী, বায়োলজি(প্রকৃতিপ্রেমিক), ইভোল্যুশন (দিগন্ত),কগনিটিভ সায়েন্স (ঝরাপাতা) ,,,
দিগন্ত, আপনার বাংলা লেখাটার অপেক্ষায়
ঝরাপাতা, মস্তিষ্কের কর্মপদ্ধতির চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন ,,, আপনি একটা পোস্ট দিয়ে ফেলুন ,,,

প্রকৃতিপ্রেমিক, আসলে আমি নিজে এই লাইনে যাস্ট সৌখিন পাঠক ,,, ভুল ধরিয়ে দিবেন বিনা সংকোচে ,,,

যেটা বোঝাতে চেয়েছিলাম, তা হলো, রিয়াল লাইফেও চোখ বা কানের মাধ্যমে যে ভিজ্যুয়াল বা অডিটরী সিগনাল আমাদের ব্রেইনে পাঠানো হয়, তা হলো ডিসক্রিট ,, কিন্তু ব্রেইন এই ডিসক্রিট সিগন্যালগুলোকে পারসিভ করে কন্টিনিউয়াস হিসেবে ,,,যেমনটা হয় মুভির ক্ষেত্রেও
এটা লেভিন আর সিমোনের(আগের পর্ব দ্রষ্টব্য) দাবী ,, ভুল হতে পারে হাসি

আপনার গবেষনার বিষয়বস্তুও শেয়ার করুন ,,,(যদি কনফিডেনশিয়ালিটির বাধ্যবাধকতা না থাকে)

চমৎকার আলোচনা তৈরীর জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ,,,আলোচনা চলুক হাসি

(হিমু কি মাইন্ড করলো নাকি? চোখ টিপি )
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।