যে জনরোষটা ছিল তার মেকনিজম কি?
পরিষ্কার করে অনেকেই হ্যতো ব্যাখ্যা দেবেন, কিন্তু সবব্যাখ্যাই যে সবাই গ্রহন করবে তাও নয়। তার চেয়ে কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে সেগুলোকে জড়ো করে, তারপর কোনধরনের সমাধানে গেলে সব ব্যাখ্যার সাপেক্ষে ভাল কিছু হয় সেরকম ইউটোপিক চিন্তা করে দেখা যায়। যদিও লিখতে গিয়ে নিজেই টের পাচ্ছি সেরকম কিছু থাকার সম্ভাবনা নাই।
প্রথমে কথা হলো, এখনকার এই আন্দোলন চলুক, থেমে না যাক এটার পক্ষে অনেকে বলছেন।
তাদের যুক্তিগুলোকে সামারাইজ করলে যেটা দাঁড়াবে,
১. সেনাশাসন কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না, হাঁসফাঁস অবস্থায় বেঁচে থাকা যায়না, মুক্তবাতাস কাম্য। তারা নিজেরা নিজেরা কেন ঠিক করে ফেলবে যে দুবৎসর ধরে তারা সরকার চালাবে?
২. বর্তমান সরকার দেশ চালাতে ভীষনভাবে ব্যার্থ, জিনিসপাতির দাম আকাশছোঁয়া, পাটকল বন্ধ হয়েছে কয়েকটি, বন্যা সামাল দিতে পারেনি।
১.
উপরের ১নং যুক্তিটা নিয়ে বিশ্লেষন করতে গেলে প্রথমে আসা যাক টাইমিংয়ের ব্যাপারে। ১ নং যুক্তিটাই যদি যদি বড় হয়ে দেখা দেয়, তাহলে তো জানুয়ারী ১১ থেকেই এর বিরুদ্ধে কথা বলার কথা ছিল। তখন উচ্চবাচ্য হয়নি, কারণ দেশের ক্রান্তিলগ্নে আর কোন অপশন আমাদের ছিলনা।
তারপর দু-তিন সপ্তার মধ্যে যখন নিশ্চিত হলো যে এই সরকারের মেয়াদ মাত্র তিনমাস হবেনা, আরো বেশী হবে তখনও মোটামুটি সবাই চুপ। শেখ হাসিনা মিনমিনিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলেন এর বিরুদ্ধে আবার চুপ হয়ে গেলেন, দেখলেন দলের নেতাদের অনেকেই এনিয়ে প্রতিবাদে আগ্রহী না। তারপর তো সরকার সুপারহিট, একের পর এক জোচ্চর ধরা পড়ছে। এদের কাউকেই ধরা নিয়ে তেমন প্রতিবাদ কেউ করেনি, পুরো বাংলাদেশে এহহামিদা নামক একজন ব্লগারই মনে হয় ভাইয়ার জন্য একটু কিছু বলার চেষ্টা করেছেন, আর সবাই খুশীই, ব্লগার হোন বা না হোন।
সেই সময়ের আশেপাশেই সরকার ঘোষনা দিল যে ২০০৮ এর মধ্যেই নির্বাচন দেবে তারা, আমরা তাতেও খুশী। তেমন প্রতিবাদ হয়নি। বিদেশে বসে শেখ হাসিনা কিছু বললেন, দেশে এসে আবার চুপ করে গেলেন প্রশাসনের চাপে, তবে দেশের জনমতে এত দেরীতে নির্বাচনের ব্যাপারে তখন ক্ষোভের প্রতিফলন হয়নি।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, উপরের ১ নং যুক্তিটা এখন আসছে সাহায্যকারী একটা কারণ হিসেবে, এটা নিয়ে কারো মাথাব্যাথা ছিলনা তেমন, অন্যসব ঠিক থাকলে এটাও চলে, অন্যকিছু ঠিক নেই বলে এটা এখন অক্সিলারী রিজন হিসেবে এসেছে। যেহেতু কারণটা খুব বেসিক, তাই এটাকে প্রয়োজনমতো সেট করা যায়।
যদি, জানুয়ারীর মাঝামাঝি থেকেই কেউ এই কারণটা নিয়ে এসরকারের বিরোধিতা করত, তাহলেই কেবল এখন তার এই কারণ দেয়া সাজে, নাহলে জিনিসটার ভিত্তি নালিফাইড হয়ে যায়।
আরও সহজ যে কারণে ১ নং যুক্তিটাকে আমি তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করিনা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, তা হলো নামে গণতন্ত্র হলেও গত ১৫ বছরও আমরা সামরিক শাসনের মতো অবস্থাতেই ছিলাম। সেনাবাহিনীর কাজ করেছে পাড়ায় পাড়ায় মাস্তানেরা, অফিসে অফিসে বেয়াড়া দুর্নীতিবাজ আমলারা, আর রাষ্ট্রযন্ত্রে রাজারা। আমরা কখনও মুক্তবাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারিনি।
৩.
এখন দেখা যাক, ২ নম্বর যুক্তিটার ব্যাপারে কি বোঝা যায়?
জীবনযাত্রার মান খুব বেশী নীচে নেমে গেছে, বিশেষ করে গরীব মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ, বন্যা একটা অতিরিক্ত সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, মানুষ আর পারছেনা! মানুষের ক্ষোভ পুঞ্জীভুত হচ্ছে। সেটারই স্বতঃস্ফুর্ত প্রকাশ হলো ২২শে আগস্টের ঘটনা, বড় রাস্তাগুলোর মোড়েমোড়ে আন্দোলন, বাস-গাড়ী ভাংচুর।
এটাকে গ্রহন করে নিতেই হবে, তাই এটার উপর ভর করে আন্দোলন করা যায়।
তবে সেখানে মেকানিজমটা কি হওয়া উচিত ছিল?
রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ীভাঙচুর একধরনের অসুস্থ টেম্পটেশন, আমাদের দেশে এই প্র্যাকটিসকে অনেকেই উস্কে দেন, তবে এটা আমদের রাজনীতিবিদদের আরেকটা চরম মানসিক দৈন্যতার প্রকাশ। অনেকে হয়ত ভাববেন, আমি সুবিধাবাদী মধ্যবিত্ত, নিজের গাড়ীকে বাঁচানোর ভয়ে বলছি এসব; হতেপারে, সাবকনশাস মাইন্ডে কি খেলছে আমি জানিনা।
তবে যেটা বুঝতে পারি, সরকারের আইনশৃঙখলা রক্ষার ব্যাপারে একটা দায়িত্ব আছে। আজ অকারণে আমার গাড়ী রাস্তায় কেউ ভেঙে ফেললে, আমি ভাংচুরকারীকে মারতে যাবনা, আমাকে পুলিশের কাছে যেতে হবে সেটাই স্বাভাবিক নিয়ম। তখন স্বভাবতই রাষ্ট্রের দায়িত্ব চলে আসে।
এখন রাজনীতিবিদরা যেহেতু জানেন যে সরকার এই ভাংচুর, উচ্ছৃঙ্খলতাকে দমন করবে, কারণ সেটাই পুলিশের কাজ, তাই তারা সেটাই করেন। তারপর, দমনক্রিয়ার সাপেক্ষে নাকি কান্না করে সরকার অত্যাচারী এরকম তকমা লাগান। ঢাকার কয়েকটা মেইন রাস্তার মোরে যখন আগুন জ্বলে তখন সেটাকে গণরোষের চেয়েও পরিকল্পিত রাজনৈতিক এজেন্ডাই মনে হয়।
গণরোষ আছেই, ঢাকা শহরের মিনিমাম ৩০ লাখ লোক দ্রব্যমূল্যের কারণে ভয়াবহ রকমের দুর্দিন কাটাচ্ছে; কিন্তু ফ্যাক্টটা হলো এরা সেভাবে একত্রিত নয় বা সেটুকু রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এই গরীব শ্রেনীর নাই যে, যখন তারা দেখবে যে দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা আন্দোলন হয়েছে, এখন সেটাকে তারা রাস্তার মোড় পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে নিজেদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে প্রকাশ করতে পারবে।
বরং, এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে যে তারা দুচারদিনের ওয়ার্কিং আওয়ার জীবন থেকে হারিয়ে ফেলবে এবং সেটার ফলে যে অর্থনৈতিক শূন্যতা তাদের পারিবারিক জীবনে দেখা দেবে সেটার ক্ষতিপূরণ করার সামর্থ্য যে তাদের নেই, সে বিষয়েই তআদেরকে বেশী সচেতন বলে আমি ভাবি।
আরও একধাপ এগিয়ে বললে, সেই সচেতনতা থেকেই একবেলা ১০০ টাকা হিসেবে টিকাটুলীর রাস্তার মোড়ে গোটাদশেক গাড়ীতে ইটের টুকরো ছুড়ে বা কেরোসিন ঢেলে আনন্দ করতে তারা উৎসাহিত হতে পারে। এটাকে কোনভাবেই শুধু তাদের দোষ হিসেবে দেখা ঠিকনা, ১৫ বছরের ধ্বজভংগ গণতন্ত্রে আমাদের একটাই অর্জন ছিল -- মিডিয়ার স্বাধীনতা, আর মিডিয়ার স্বাধীনতার সাথে সাথে এদেশের গরীব মানুষের কাছে এই সত্যটা ঠিকই প্রকাশ পেয়ে গেছে যে তআদের এই অর্থনৈতিক কষ্টের পেছনে ঐ গাড়ীহাঁকানোওয়ালাদের একটা ভূমিকা আছে। বস্তুতঃ এই সত্যটাই তাদের ঘন্টায় ১০০ টাকার সাথে আরো বেশী উটসাহিত করে, সেখানে দোষ খুঁজলে খোঁজা যায়, তবে সোশোইকনমিক বাস্তবতা টের পাওয়াটাও জরুরী।
আরেকটা কথা যেটা না বললে অন্যায় হয়ে যায়, বর্তমান সেনাসমর্থিত সরকারের পক্ষে কথা বলা হয়ে যায় তা হলো, তাদের অদক্ষ সরকার পরিচালনা, দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ দশা অবশ্যই এই ঘন্টায় ১০০ টাকার কাজ নেয়াকে জাস্টিফাই করে ফেলেছে।
যাই হোক, আমার ধারনা ২২ শে আগস্টের যে আন্দোলন সেটাতে গনমানুষের রোষের প্রতিফলন ছিল, কিন্তু মূল মেকানিজমটা ছিল দেশের কিছু রাজনীতিবিদদের সুবিধা আদায়ের পরিকল্পনা।
এখন ভাবা যায়, সেটা কি ছি।
আরেকটু ভাবা যায়, সেটার সাপেক্ষে এখন কি করা সম্ভব।
মন্তব্য
জ্বি বাঃ এই সিরিজ টা পড়ছি । একেবারে শেষ পর্যন্ত না পরে টোটাল মন্তব্য করবোনা ।
একটা ফুচকি কাটি শুধুঃ
পুলিশ কি আসলেই তার কাজ করে?
যারা গাড়ী ভাংচুর করে তাদেরকে পিটানো কি পুলিশের কাজ নাকি তাদেরকে ধরে আদালতে সোর্পদ করা এবং আদালতকে সাক্ষ্যপ্রমান দেয়া যে, এই লোকটাই গাড়ী ভাংচর করেছে?
অথবা পিটায় সময় কি গাড়ী ভাংচুর করনেওয়ালাদেরই পিটায় নাকি আশেপাশের সাধারন মানুষকে নির্বিচারে পিটায়?
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমাদের দেশ বাংলাদেশ - একে আমরা গণপ্রজাতন্ত্র হিসেবে দেখতে চাই। আমরা মানে দেশের জনগণ।
সেই চাওয়াকে আমরা লিখিতরূপ দিয়েছি সংবিধানে।
সংবিধান জনগণের আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক।
কিন্তু দেশে যখন সংবিধানের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন না রাখার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তখন কি হবে?
যখন জনপ্রতিনিধির হাতে আমরা ক্ষমতা তুলে দিতে পারবো না, তখন?
এর যে কয়টি রূপ হতে পারে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা জরুরি অবস্থা। তারও একটা সীমারেখা জনগণ তার সংবিধানে করে রেখেছে। সে সীমারেখা ৯০ দিন। তিন মাস।
এই তিনমাস নতুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য।
এরপর যদি সীমারেখা বদলানোর বা সংবিধান বদলানোর দরকার পড়ে তবে ফিরে আসতে হবে জনপ্রতিনিধিদের কাছে। সংসদে।
এই পদ্ধতিই আমাদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের।
ড. কামাল হোসেনের মত যারা এই সহজ বিষয়টা বুঝেও অন্যরকম ভাবভঙ্গি করে তোতলান (শুনুন আজকের বিবিসির প্রভাতী) তাদের ব্যক্তিগত এজেন্ডা আছে, নানারকম সোল এজেন্সির দায়বদ্ধতা আছে। তো তাদের এইসব দায়বদ্ধতার দায়িত্ব তো আমরা নিতে পারি না। আমরা দেশকে দেখবো সবার আগে এবং সেই দেখার ক্ষেত্রে জনগণের মতামত থাকবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়।
জনগণের মতামত বুঝার জন্য কোনো পীর-ফকির ধরার তো দরকার নাই।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আজকের প্রথম আলোর অনলাইন জরিপের ফলটা কিন্তু সরকারের পক্ষেই যায়। যদিও অনলাইন জরিপ প্রচলিত অর্থ জনমত জরিপ নয়, তাও বিষয়টা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে বিবেচনা করা দরকার।
জ্বীনের বাদশা, আপনার লেখা দেরীতে হলেও পড়লাম। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে সদ্য আগত একজনের সাথে কথা বলে এই ভিন্ন দিক থেকে দেখার কিছুটা দরকার বোধ করছি।
মোরশেদ ভাই, আপনার কথাটা ঠিক আছে যে পুলিশ ভাংচুরকারীদের না মেরে সাধারণ মানুষদের মারে ,,, পুলিশের একটা ভয়ংকর ষাঁড়ামী আছে ,, জেনারেলি বাংলাদেশের সব পুলিশেরই ,, কিন্তু কয়েনের অন্য পিঠটাও দেখেন ,,,
মব যখন এলোপাতাড়ি গাড়ী ভাংচুর করে, মানুষকে আতংকিত করে তখন পুলিশ গিয়ে কি ব্যাজ দেখিয়ে ওদের থামতে বলবে? তারপর কারাকারা ভাংছে তাদের ছবি তুলে মামলা দায়ের করবে? মব এটাকের এই গতিপ্রকৃতি না ,, পুলিশের তখন তৎক্ষনাৎ থামাতে হয়,, সেজন্য লাঠিচার্জ ছাড়া কিছু করার নেই ,,, নেতারাও জানে এরকম এলোপাতাড়ি মব এটাককে উস্কে দিলে পুলিশের লাঠিচালানো ছাড়া কিছু করারা নেই ,,, কারণ, নাহলে এই এটাক থামবে কিভাবে? ,,, নেতারা এই ব্যাপারটাকে এক্সপ্লয়েট করে আসছে বাংলাদেশে সেই এরশাদের আমল থেকে ,,,আপনাকে কি বলব? আমরা নিজেরাও করছি ,,, কলোনীর গেট থেকে ইট ছুইড়া গাড়ীটে মারা ,,, পুলিশ আসতে থাকলে কাজের বুয়াদের পোলাদের পাথানো হইত পাথর হাতে ,,,
আমার কথা হলো, আন্দোলন করলে করবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো, ডাক দেবে বন্ধের , মানুষ সব বন্ধ করে দেবে সৃতঃস্ফুর্তভাবে ,,, এখন সেটা নাই কেন? আমার মন্তব্য হলো, সেটার প্র্যাকটিস হয়নি অনেকদিন
ইমরুল ভাই, এখানে তত্বের চেয়েও বাস্তবে কি ঘটছে সেটা বের করে আনার প্রচেষ;টা করেছিলাম ,,, আর রাজনৈতিক রূপ নেয়াটাকে আমি সমালোচনা করছিনা ,,, সমালোচনা করছি রূপ নেয়ার মেকানিজমকে
শোহেইল ভাই, ৯০ দিনের সমস্যা তো ইয়াজ চাচা একলাই খেয়ে দিয়েছিল ,,, কথা হচ্ছে সেই বেসিক নিয়া কথা আমরা এখন শুরু করলে অনেক দেরী করে ফেলেছি ,,, অবশ্য আমার মনে হয় আমাদের কিছু করার ছিলনা
প্রকৃতিপ্রেমিক, ধন্যবাদ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
নতুন মন্তব্য করুন