প্রথমেই সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। বেশ অনেক দিনপর লিখছি। প্রায় দের বছর তো হবেই। গ্যাপটা আসলেই একটু বেশি হয়ে গেলো। বিয়ের পর নতুন জীবন শুরু করতে অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পরি, এখন নিজেকে কিছুটা অপরিচিত লাগছে লেখায়।
আজ স্বাধীনতা দিবসের লেখাটা আমাদের দেশ কে নিয়েই লিখছি। আজ থেকে ৪০ বছর আগে ২৫শে মার্চের কালো রাতে আমাদের নিরিহ মানুষদের ওপর পাকিস্তানি সেনারা আক্রমন করে। আমরা সবাই সে ইতিহাস জানি, আজ আমি আমাদের স্বাধীনতার সে ইতিহাস নিয়ে লিখছি না। আমি বলব যারা আমাদের দেশের জন্য প্রান দিয়েছেন তাঁদের সে মহত ত্যাগের কতটুকু জাসটিস আমরা করতে পেরেছি? সব রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে যা ইচ্ছা করে যাচ্ছে, আর তাদের সব অন্ধ সাপোর্টাররা সব অন্যায় অবিচারের সাথে নেচে যাচ্ছে। যাইহোক আজ আমি সেসব রাজনৈতিক দলদের নিয়েও আলোচনা করবো না, আমি ইদানিং কালের ঘটে যাওয়া এক ঘটনা বলব।
আমার এক পরিচিত বন্ধুর বাবা দেশে অসুস্থ হয়ে পরায়, ও তারাতারি চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে দেশে চলে যায়। দেশে গিয়ে উন্নত চিকিতসা এবং অপারেশনের জন্য তার বাবাকে ভারত নিয়ে যাওয়া ঠিক করে এবং যথাসময় মা ও অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ভারত ঠিকঠাক মত পৌছে। ডাক্তারের সাথে অপারেশন নিয়ে আলাপ আলোচনা করে অপারেশনের তারিখও ঠিক করা হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত তার আগেই ওর বাবা ইন্তেকাল করেন। হঠাত অসুস্থ হয়ে পরায় হাসপাতাল নেয়ার আগেই উনি ইন্তেকাল করেন। মা ভেঙে পরবে বলে ভয়ে প্রায় এক ঘন্টার মত মা কে মিথ্যে বলার পর যখন সত্যি খবর জানানো হয় তখন মা অজ্ঞান হয়ে পরেন। একে বাবার মৃত্যু তার ওপর একা মা কে সামলানো। আত্মীয়-স্বজনহীন অপরিচিত জায়গায় এমন সময় কারো মনমানুষিকতার কি অবস্থা হতে পারে তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমার বন্ধু এরপর ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বাবার লাশ দেশে নিয়ে আসার জন্য যোগাযোগ করে। সেই লোক দিল্লী থেকে জানায় ৫০০ রুপি ঘুস দিতে, মোবাইলে ক্রেডিক করে দিলেই চলবে উনি বলেন। ভারত যাওয়া, হোটেল খরচ, হাসপাতাল সব মিলিয়ে যথেষ্ট খরচ হয়ে যাওয়াও আমার বন্ধু জানায় ৫০০ রুপি খুব বেশি হয়ে যায়, ১০০ ঘুস দিলে চলবে কিনা। উনি জানায় ১০০ রুপি মোটামোটি কিছুই না অন্তত ৪০০ রুপি দিতে হবে। এরপর ৩০০ রুপি দিয়ে সেখান থেকে সে কাজ সারাতে পারে। এরপর যখন দেশে পৌছে তখন বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে আবার আটকানো হয়। প্রবাসীদের লাশ নাকি দেশে ৩০-৩৫ হাজার টাকা ফি দিয়ে ছারিয়ে নিতে হয়। আমার বন্ধু জানায় যে একদিন আগে ভারতে যাওয়াতে কিভাবে প্রবাসী হয়? এমন ভাবে বেশ কয়েক ঘন্টা আটকে থাকার পর ও বাবার লাশ আত্মীয়-স্বজনদের কাছে নিয়ে আসতে পারে।
আমি ভাবতেও পারিনা কি রকম মানুষিকতা হলে একজন মৃত মানুষের ওপর কেউ ঘুস চাইতে পারে। তাদের কারো কি মৃতুর ভয় নেই? দূর্নীতিরও তো একটা সীমা থাকা দরকার নাকি?
খুব কষ্ট হয় যখন ভাবি আমাদের দেশের জন্য যারা প্রান দিয়েছেন তাঁরা কি ভেবেছিল দেশে এমন দূর্নীতি হবে যে মৃত বাবার লাশের ওপরও ঘুস দিতে হবে? স্বাধীনতা দিবস এলেই আমরা অনেক অনুষ্ঠান করি, গান করি, কবিতা আবৃতি করি কিন্তু ভিতরে আসলেই তাঁদের এ মহান ত্যাগের কতটুকু মুল্যায়ন করি?
"যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি
এসো স্বদেশ ব্রতের মহা দীক্ষা লভি, সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি"
--- আজ স্বাধীনতা দিবসে যারা দেশের জন্য প্রান দিয়েছেন তাঁদের আত্মার জন্য অনেক দোয়া ---
মন্তব্য
মুমু, ওই মানুষগুলো আসলে মানুষ না। অসম্ভব খারাপ লাগলো। কিছুই আসবে যাবে না, তারপরও আপনার বন্ধুর জন্য সমবেদনা রইল। এইরকম অমানবিক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে কাউকে যেন যেতে না হয়।
ধন্যবাদ বইখাতা, আপনার সমবেদনা জানিয়ে দিব।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
বিষয় নিয়ে কিছু বলার নেই
মুমুর প্রত্যাবর্তনে অভিনন্দন
ধন্যবাদ লীলেন ভাই
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
মানবিকতার মৃত্যু ঘটেছে। আছেন কি এমন ষীশু যিনি ঘটাবেন ল্যাজারাসের প্রত্যাবর্তন?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
মুমু যে
গুছিয়ে আবার শুরু হোক নতুন করে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
তাই করব ভাইয়া।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
দুঃখজনক ঘটনা। লেখায় ফেরায়
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আসলেই দুঃখজনক ধন্যবাদ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
আপনি লেখা শুরু করেছেন। বেশ ভালো লাগলো।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ধন্যবাদ গৌতম দা
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
মুমুর প্রত্যাবর্তনে স্বাগত জানাই। অভিনন্দন মুমু।
যে বিষয়টা উত্থাপন করলেন এটা জানা ছিলো না ! আমাদের মানবিক অবনমন যে এভাবে এক্কেবারে তলায় গিয়ে ঠেকেছে তা ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে !! ধিক্ ওইসব বেজন্মাদের !!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ রনদীপম দা, কি আর বলব, আমার এত্ত খারাপ লেগেছিল যখন জানতে পারি।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
শুভ প্রত্যাগমন, মুমু!
আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, যত পরিবর্তনই হোক না কেন কিছু কিছু জানোয়ার কীভাবে যেন সিস্টেমে টিকে যায়। এই সীমাহীন দুর্ভোগ যাঁদের উপর দিয়ে গেলো তাঁদের প্রতি সমবেদনা রইল।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ ষষ্ঠ পান্ডব দা। আসলেই
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
শুভ প্রত্যাগমন, মুমু !
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ধন্যবাদ মানিক ভাই
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ঘটনা নিয়ে কিছু বলার নাই...
শুভ প্রত্যাবর্তন...
জীবন আনন্দময় হোক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুল ভাই
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
কী ভয়াবহ একটা ঘটনা!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
হুমমম
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে এ সমস্যা...কোথাও আপনি স্বাভাবিক ভাবে কোনো কাজ করাতে পারবেন না। দিন দিন এ সমস্যা এমনভাবে বেড়ে চলেছে যা আমরা যারা দেশে আছি তার টের পাচ্ছি। এত এত সমস্যা আমাদের যা নিয়ে ভাবলেই কেমন জানি অসহায় লাগে। দেশের এত শত সমস্যা থাকা সত্তেও আমরা যত আজাইরা সমস্যা আছে, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো মাথা ব্যাথা নাই সে সব নিয়ে মহা ব্যাস্ত। একটা সরকারী হাসপাতালে যান, আমি নিশ্চিত, আপনি আসহায় বোধ করবেন। ভূমি অফিসে যান, আপনার সাথে যে ব্যাবহার করা হবে তা আমরা কোনো ঘোর শত্রুর সাথেও করিনা। যে যেভাবে খুশি চলছে, কারো কোনো জবাবদিহিতা নাই, কারো কোনো দায়িত্ববোধ নাই। কারো কাছে প্রতিকার চাবেন? সে সুযোগও নাই, উলটো বিপদে পড়বেন। এসব কারো নজরে আসেনা, সবাই ড. ইউনুস কে ব্যাস্ত, সে এম.ডি পদে থাকলেই কি বা না থাকলেই কি? এতে কি সাধারণ মানুষের কিছু আসে যায়? অথচ মনে হচ্ছে দেশে এর চেয়ে বড় আর কোনো সমস্যা নাই। কার কাছে এসবের প্রতিকার আশা করব?
আপনার সাথে একদম ১০০% একমত, ডঃ ইউনুস এর ব্যপারটা সব ওদের পলিটিকস, দেশের জন্য ওদের কিছু যায় আসেনা, দেশের জন্য কোনো পলিটিকাল টিমেরই কিছু আসে যায়না, যে যতদিন যেভাবেই হোক পাওয়ারে থাকার জন্ সব রকমের অবিচার অনাচার করবে, আর কেউ ভাল কিছু করতে গেলে আর ওদের মত খারাপ না হোলে তাকে সরিয়ে ফেলবে। অন্ধ সাপোর্টারদের এসব নজরে পরবেনা, এসব আপনার আমার মত সাধারন মানুষের নজরে আসে কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
congrats MUMU
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
ধন্যবাদ দেবোত্তম দা, কিন্তু congrats কিসের জন্য বুঝলামনা
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
বাংলাদেশে দুর্নীতির কোন সীমা-পরিসীমা নেই।
আপনাকে বেশ কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা বলি-
একটি আরব দেশে বাসার কাজের সহকারী হিসেবে যায় এক বাংলাদেশী অসহায় নারী। মাস তিনেক কাজ করার পর সেই বাড়ির মালিকের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে সেই বাসা হতে পালিয়ে পরিচিত এক বাংলাদেশীর কাছে আশ্রয় নেন তিনি। সেই বাংলাদেশী ভদ্রলোক মহিলাকে নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে যেয়ে সমস্ত ব্যাপার জানান এবং সাহায্য চান। এদিকে, মহিলা যে বাসায় কাজ করতেন সেটার মালিক তার নামে চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে।
বাংলাদেশী দূতাবাসের ভূমিকা কি ছিলো জানেন?
বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত ওই জারজগুলো কোন সাহায্য করার বদলে বিশাল অঙ্কের ঘুষ চায়। মহিলা ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করার পর দূতাবাস যখন জানতে পারে মহিলার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করেছে বাড়ির মালিক, তখন, জারজগুলো মহিলাকে দূতাবাস থেকে বের করে দেয়। ওই অসহায় মহিলা কোন সাহায্যই পায়নি দূতাবাস হতে।
পরে, সাত মাস পর বাংলাদেশী একটি বেসরকারী সহায়তা সংস্থা মহিলাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা বাংলাদেশী সরকারী চাকুরেরা সবাই শুয়োর সঙ্গমে পয়দা হইছে।
কি আর বলব, একদিন না একদিন এরা শাস্তি পাবেই,
তবে আপনার শেষ কথার সাথে একমত না, সবাই এক না, এখনো কম হলেও ভালো মানুষ আছে আমি বিশ্বাস করি, অন্তত ১০০ জনের মাঝে ২ জন ভালো হলেও আপনার শেষ কথা বলাটা ঠিক না। সরকারি চাকরি করে যদি মহা বড়লোক হয় তাহলে বুঝবেন কিছু ওলট-পালট আছে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
দুঃখজনক ঘটনা।
অ.ট: আপনি কি ভিকারুননিসার মুমু?
না আমি ভিকারুননিসার মুমু না, আমি ঢাকায় পড়ালেখা করিনি।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
অনেক দিন পর... লেখা নিয়ে কী বলবো, দুঃখ ও রাগ হয়ে এগুলা নিয়ে, কিন্তু এটুকুই তো...
হুমম অনেকদিন পর
জানি তেমন কিছু করার নেই, তবুও যখন এমন খারাপ কাজ করা হয় তখন সবার জানা উচিত কোথায় বা কারা এসব করল।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
নতুন মন্তব্য করুন