ক্রসফায়ার এবং বাংলাদেশ

মূর্তালা রামাত এর ছবি
লিখেছেন মূর্তালা রামাত (তারিখ: সোম, ২৮/০৭/২০০৮ - ৬:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল ক্রসফায়ারে নিহত হলেন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা)-এর শীর্ষ নেতা ডাঃ টুটুল। গত দু'দশক ধরেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। বেশ কিছু মামলার আসামী এই বিপ্লবী নেতাকে গত পরশু ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরের ঘটনা সবার অনুমান অনুযায়ীই ঘটেছে। বিচারবহির্ভূতচভাবে ক্রসফায়ারে বাংলাদেশে আরেকটি খুনর সংঘটিত হয়েছে। এবং আমরা সবাই নির্বিকারভাবেই সংবাদটি হজম করেছি।

যেখানে আমরা সভ্যতা, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং কার্য়কর গণতন্ত্র নিয়ে গলা ফাটিয়ে ফেলছি সেখানে এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের যৌক্তিকতা কতোটুকু?এই খুনের দায় কী আমাদের সবার ওপর বর্তায় না। প্রাচীনকালে হাম্বুরাবির আইন ছিলো হাতের বদলে হাত, চোখের বদলে চোখ, খুনের বদলে খুন! তখনকার বর্বর বিচারব্যবস্থা থেকে এখনকার আধুনিক বিচারব্যবস্থা অনেক ভিন্ন। বর্তমান সভ্যতার অন্যতম অনুষঙ্গ আইন এবং আদালত।

আইন ও আদালতের ব্যর্থতার ফলেই কেবল জংলী আইনে ফিরে যাওয়া যায়। কিন্তু কথা হলো আমরা যেখানে উন্নত দেশগুলোর মতো শাসনব্যবস্থা প্রচলনে নিরন্তর চেষ্ট করে যাচ্ছি সেখানে আমরা কেনো জংলী আইনে অভ্যস্ত হবো। আর যদি জংলী আইনেই অভ্যস্ত হই তবে কেনো উন্নত দেশের অন্যতম হবার চেষ্টা করবো?

অনেকে হয়তো বলবেন যারা ক্রসফায়ারে মারা যাচ্ছে তারাতো ছিলো মূর্তিমান আতঙ্ক। এরা জেলে গেলেও কদিন পরেই বেরিয়ে আসতো। এরা আর আতঙ্ক ছড়াতে পারবেনা এটাই হলো সবচেয়ে বড় কথা। আমি তাদের সাথে একদম একমত। কিন্তু তারা যে বেরিয়ে আসতো এটার জন্য দায়ী কারা?আইনের ফাঁক গলে তাদের বেরিয়ে আসাটা কী রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নয়? শাসকগোষ্ঠীর ব্যর্থতা নয়?এই ব্যর্থতার জন্যতো আমরাই দায়ী।

তাহলে আমাদের ব্যর্থতার কারণগুলো নিয়ে আমরা কেনো ভাবছি না। আমর কেনো আমাদের আইন ও আইন প্রয়োগের কাঠামোগুলোকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা করছি না! যতদিন এটা না হবে ততোদিনতো আমরা উন্নত রাষ্ট্রগুলোর ধারের কাছেও যেতে পারবো না।

আর ক্রসফায়ারে যে দাগী অপরাধীদেরকেই মারা হচ্ছে এর নিশ্চয়তা কী?বাংলাদেশের মতো দুর্নীতিপরায়ণ দেশে কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডকেই শতভাগ বৈধতা দেয়া সম্ভব নয়। এমনকী দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানেও অস্বচ্ছতা বের হয়েছে। তাহলে আগামীকাল যে আপনাকে বা আমাকে স্বার্থসিদ্ধির জন্য দাগী আসামীর সহযোগী বানিয়ে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে না তার কী কোনো নিশ্চয়তা আছে?

rabকে যারা বাহবা দেন তারা কি একটা জিনিস ভেবে দেখেছেন এদের হাতে কিন্তু জামাত শিবিরের কেউ ক্রসফায়ার হয়নি! তাহলে?বিচার বহির্ভূত এই ক্রসফায়ার উদ্দেশ্য কী দেশকে সন্ত্রাসীমুক্ত করা নাকী কোন বিশেষ গোষ্ঠীর অবস্থানকে শক্তিশালী করা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। এ প্রসঙ্গে আমি একটা লিঙ্ক দিতে চাই -http://www.somewhereinblog.net/blog/jaakashblog/28817211

সবশেষে বলতে চাই ক্রসফায়ারের সংস্কৃতি আমাদের আইনীব্যবস্থার দৈন্যদশাকেই প্রকট করে তুলেছে যা ভবিষ্যত বাংলাদেশ এর জন্য খুবই উদ্বেগজনক।

murtala31@gmail.com


মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি

এখানে একটা মন্তব্য করেছি। বিষয়টা একই বলে আর দুহরাচ্ছি না।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আপনার লেখার সাথে প্রত্যেকটা পয়েন্টে একমত। কালাকানুনই জনগণের গোঁদেওপর বিষফোঁড়া হওয়ার জন্য যথেষ্ট আর ক্রসফায়ারতো একেবারে মগের মুল্লুকের সমার্থক।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ! এর চেয়ে আর কী'ইবা বলার আছে!

মনজুরাউল এর ছবি


rabকে যারা বাহবা দেন তারা কি একটা জিনিস ভেবে দেখেছেন এদের হাতে কিন্তু জামাত শিবিরের কেউ ক্রসফায়ার হয়নি! তাহলে?বিচার বহির্ভূত এই ক্রসফায়ার উদ্দেশ্য কী দেশকে সন্ত্রাসীমুক্ত করা নাকী কোন বিশেষ গোষ্ঠীর অবস্থানকে শক্তিশালী করা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।

ঠিক তাই আপনি যেভাবে ভেবেছেন। শুধু একটা দু'টো নয় এখানে আরো অনেক বেনিফিশিয়ারি আছে। বিচারের কথা বলছেন? কার বিচার ,কে বিচার করে?সব আর্তিই বিচারালয়ের বারান্দায় গিয়ে ভ্যানিশ হয়ে যায়। যার হাতে বন্দুক সে-ই আইন তৈরি করে , সে-ই বিচার করে, সে-ই হত্যাকে রিকগনাইজ করে। হ্যাঁ আমরা কেউই দায় এড়াতে পারিনা।
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পরপর দুটো চিন্তাশীল লেখা একই বিষয়ে এল আজকে। পড়লাম দুটাই। জামাত-শিবিরের কেউ না মরার ঘটনা খুবই লক্ষণীয়। নজরে আনবার জন্য ধন্যবাদ। এই যে এত এত বড় নেতা "ভি আই পি চোর" হওয়ার সুবাদে এক বছর ছুটি কাটিয়ে এলেন, এদের কেউ ক্রসফায়ারে ফেলতে পারলো না?


রাজাকার রাজা কার?
এক ভাগ তুমি আর তিন ভাগ আমার!

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

সুত্র -সমকাল ২৯ জুলাই ২০০৮

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
A life unexamined is not worthliving.-Socrates

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।