আমাকে তোমরা হত্যা করবে জানি।
তবে আমার অনুরোধ, আমার চোখ বাঁধার প্রয়োজন নেই।
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গুলি কর।
আমি চাই হত্যাকারী আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গুলি করুক।
ভুল ভাবছেন। এটি চে'গুয়েভারার ডায়েরির কোন লেখা নয়। কবি নির্মলেন্দু গুণের বিপ্লবী কোন কবিতার জ্বালাময়ী পংক্তিও নয়। এটি ক্রসফায়ারে সদ্যমৃত ডা. টুটুলের সর্বশেষ উক্তি। আজ প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। নওগাঁর রানীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইদগাহ মাঠ, যেখানে গত ২৭ জুলাই রাতে চরমপন্থী দল পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির(এমএল-লাল পতাকা) প্রধান মিজানুর রহমান টুটুল ক্রসফায়ারে নিহত হন, সেখানে উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তা এ কথা বলেন। তার ভাষ্যমতে গত ২৫ জুলাই rabএর একটি টিম ঢাকার মিরপুরের এক মেস থেকে ডা. টুটুলকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তিনি মার্কসবাদ-লেলিনবাদের ওপর লেখা একটি বই পড়ছিলেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ডা.টুটুলের লাল পতাকা মাওবাদীদের আঞ্চলিক সংগঠন কমপোসা-এর সদস্য ছিলো। নেপালের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টিসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মাওবাদী তমিউনিস্ট পার্টি নিয়ে গঠিত হয়েছে কমপোসা। নেপালে মাওবাদীর অভাবনীয় সাফল্যের পরে ডা. টুটুলসহ লাল পতাকার অনেকেই নেপাল মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে সেখানে যান। ডা. টুটুলের সাথে নেপালের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সুসম্পর্ক ছিলো।
চরমপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির প্রকাশনা ও বিদেশি অনলাইনে rabকে সিআইএ-এর প্রত্যক্ষ্ তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হত্যাকারী বাহিনী হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়। এ বিষয়ে আমিও একমত। বিশ্বের কোথাও যাতে লেলিন, চে' কিংবা মাওয়ের মতো আর কোন বিপ্লবী শোষিতের পক্ষে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য পুঁজিবাদ নির্ভর নব্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নীলনকশারই বলি হচ্ছে ডা. টুটুলের মতো সমাজতান্ত্রিক নেতারা। যা মুক্ত বুদ্ধিমনা সচেতন সবার জন্যই চিন্তা এবং আতঙ্কের বিষয়।
মন্তব্য
এটাই হলো আসল কথা। এবং খেয়াল করবেন যখন নেপালে কংগ্রেস-ইউএমএল একে দিয়ে নোংরা খেলা খেলে মাওবাদীদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে আবার অস্ত্রের পথে, তখন একই সময় ভারতে ও বাংলাদেশে 'চরমপন্থি' নিধন চলছে। ভারত-বাংলাদেশ মিলে বারে বারে যে নিরাপত্তাগত সহযোগিতার জন্য হিল্লি-দিল্লিতে বসে চুক্তি করছে, তার প্রতিফল হলো এসব হত্যাকাণ্ড। তেনারা এসবে খুশি।
কেবল ড়্যাব কেন, গোটা দেশটাই তো আজ তাদের লাইনে চলছে। তারা আসে, যাকে যেমন ট্রেনিং দেয়া দরকার দেয়, যাকে যেমন অস্ত্র দেয়া দরকার, দেয়। তারপর মজাসে দেখে, তাদের যুদ্ধ কেমন বাদামি বান্দরেরা লড়ে দেয়।
তবে, বাংলাদেশের মাওবাদীদের গত কয়েক দশকের কার্যকলাপ দেখে তাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক অপ্রস্তুতি ও ভুলভালই বেশি চোখে লাগে। তাদের অনেককেই যে হানাহানিতে লাগানো গেছে, তার কারণও কিন্তু ওই দূর্বলতা। আবার লাল পতাকা ঠেকাতে রাষ্ট্র নিজেই তপন মালিথাদের দিয়ে জনযুদ্ধ বানায়। এসবও দেখা দরকার। টুটুলরা সম্ভবত এসবের বাইরে এসে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে চাইছিল। মোফাখখর চৌধুরী ছিলেন এর উদ্যোক্তা, এমন খবর ভাসে।
যাহোক, লেখার জন্য অভিনন্দন, তবে রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়াশীল ভাষায় চরমপন্থি' বা জঙ্গি না বলে তাদের নিজস্ব নামেই ডাকা ভাল না। চরমপন্থি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেই তো ওরা এখন ক্রসফায়ারকেও প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
......................................................................................
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার সাথে সব বিষয়েই আমি একমত।
মূর্তালা রামাত
মাওবাদীদের নিয়ে যেটা বলা হয় সেটা রাষ্ট্রের বুলির মত প্যাশনে দাঁড়িয়ে গেছে। ফারুক আপনিও তাই বললেন। নেপাল আর ভারতের বিষয় একটু ভিন্ন। দু'জায়গাতেই কাউন্টার এ্যকশন আছে। সে কারণে রাষ্ট্রের এ্যকশনটা একতরফা নয়। দু'জায়গাতেই 'ঘাটিঅঞ্চল' আছে। সে কারণে তারা এক পুকুর হাঙ্গরের মধ্যে পুঁটি মাছ নয়। এটাই বাংলাদেশের সমস্যা। সামান্যতম প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নেই কারো মধ্যে। এটাকে ত্বাত্ত্বিক ব্যবচ্ছেদে ফেলার অবকাশ কোথায়?
বাংলাদেশের মার্কসবাদীরা আর কী করতে পারে? মেনন,রণদের মত বুর্জোয়া দালালি? বৈঠকখানায় বসে বলশেভিক বিপ্লবের ৯১ বছর পর এসে মার্কসবাদী পাঠচক্র? নাকি সিপিবি'র মত বাপ-মা-ভাই-বোন সব্বাইকে কমিউনিস্ট বানাতে গিয়ে- উদীচী ?
ডা.টুটুলের মত মোফাখখার চৌধুরীর শেষ উক্তি ছাপা হয়েছিল প্রথমআলো তে,১৮ ডিসেম্বর,২০০৪এ....
"ওনারা এসে গেছেন, আমাকে মনে হয় মেরে ফেলা হবে,তোমরা ভাল থেকো।" আর.এ.বি'র সামনেই মোবাইলে ঋত্তিক নামক সহকর্মিকে তিনি একথা বলেন।
আমরা কেউ গণমানুষের মুক্তি জন্য শ্রেণীশত্রু খতম বা ক্রসফায়ারে বিপ্লবীর মৃত্যু চাই না। কিন্তু যদি সি আই এ এবং তাদের দোসররা মনে করে থাকেন যে মাসে ১৫ বছরে ১৮০ জন বিপ্লবীকে 'চরমপন্থী' নাম দিয়ে হত্যা করলেই বিপ্লবের মৃত্যু হবে । তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। একজন তথাকথিত শ্রেণীশত্রু খতমের পর যেমন তার সন্তান আরো বেশি নিপীড়ক হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে,তেমনি একজন বিপ্লবীকে ক্রসফায়ারের পর আরো বিপ্লবী তৈরি হয়ে যাচ্ছে। হবেই।
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
বাংলাদেশের মার্কসবাদীরা আর কী করতে পারে? মেনন,রণদের মত বুর্জোয়া দালালি? বৈঠকখানায় বসে বলশেভিক বিপ্লবের ৯১ বছর পর এসে মার্কসবাদী পাঠচক্র? নাকি সিপিবি'র মত বাপ-মা-ভাই-বোন সব্বাইকে কমিউনিস্ট বানাতে গিয়ে- উদীচী ?
একেবারে খাঁটি কথা বলেছেন।
মূর্তালা রামাত
মঞ্জু ভাই, আমি আশাবাদ বা পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে রাষ্ট্রের সংকট আর জনসমষ্ঠির রাজনৈতিক চেতনার পরিগঠনের মধ্যে দেখতে চাই। কখন কোন শ্রেণী বেশি লড়াকু হবে, তারা কোন পথ নেবে, সেটা ছাড়া কেবল কিছু ঘোষণার ওপর আস্থা রাখা কঠিন।
আমি বলতে চেয়েছি যে, বাংলাদেশের মাওবাদীদের মধ্যে যে বিপ্লবী কর্মীরা আছেন, যাদের জীবন দিতে হচ্ছে বিরুদ্ধচারণ করবার জন্য তাদের প্রতি আমার মতো তুচ্ছ লোকের অভিবাদনও কম মনে হবে। কিন্তু এটা তো জানা চাই, কী রাজনীতিটা তারা করছেন। যে রাজনীতি তারা করে এসেছেন তার থেকে নতুন যে রাজনৈতিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার দিকে তারা যেতে চায়, সেদিকেই আমার আগ্রহ বেশি। এর মানে এই না যে, এটা করলেই বাংলাদেশে বিপ্লবের রাস্তা পরিষ্কার হবে। হয়তো হবে হয়তো হবে না, কিন্তু মাঠে আরো যোগ্য প্লেয়ার আসা দরকার; এসবের দ্বন্দ্ব থেকেই নতুন রাজনীতি বেরিয়ে আসতে পারে বলে।
তপন মালিথা বা এ জাতীয় যারা রাষ্ট্রের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে, তাদের বিষয়ে আমি মনে হয় ভুল বলিনি। দুধ থেকে পানি আলাদা করা না গেলে বিচার-বিশ্লেষণ এগবে না।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আপনার মতামতের সাথে বহুলাংশেই একমত । হ্যাঁ দুধ থেকে পানি আলাদা না করা গেলে বিচার-বিশ্লেষণ এগোবে না । ঠিক । কিন্তু আমারা বিচার-বিশ্লেষণ তো কম করলাম না! দিন শেষে কী পেলাম ?
এক পক্ষের অসহায় মুত্যু, অন্য পক্ষের বেশুমার দালালি। রাজনৈতিক পুনর্গঠন, বিচার-বিশ্লেষণ ইত্যকার প্রশ্নে যে কথাটা এই পরিসরে বলার যৌক্তিকতা নেই ,তবুও বলছি_যে মানুষগুলো বিপ্লবে সাহসী,জীবন দানে অকুতভয়, সেই মানুষগুলো ত্বাত্ত্বিক ভাবে অগ্রসর নন। আবার যাঁরা ত্বাত্ত্বিক ভাবে অগ্রসর তাঁরা বিপ্লবে সাহসী নন, জীবন দানে সাহসী নন। সাহসী মানুষগুলো গোষ্ঠিগত,সামন্তচিন্তাগত এবং মধ্যবিত্ত সীমাবদ্ধতার কারণে রাজনীতিকে একই গন্ডিতে ঘুরপাক খাওয়া অবস্থান থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে না,ঠিক তেমনি অগ্রসর মানুষগুলো ভীত হওয়ার কারণে,আত্মত্যাগের প্রশ্নে পলায়নবাদী হওয়ার কারণে রাজনীতিকে ওই সাহসীদের কাতারে সম্মিলন ঘটাতে পারে না। (আমি বোধ হয় বোঝাতে ব্যর্থ হলাম)।এই দ্বন্দ্বটাকে কি করে সমাধান করা যায় ?আমি বুঝি এর সমাধান ছাড়া এগোনো মানে এক পা এগোনো দু'পা পেছানো ।
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমাকে তোমরা হত্যা করবে জানি।
তবে আমার অনুরোধ, আমার চোখ বাঁধার প্রয়োজন নেই।
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গুলি কর।
আমি চাই হত্যাকারী আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গুলি করুক।
---একমাত্র বিপ্লবী'রাই এমন করে বলতে পারে।
লেখাটা খুব ভাল লাগল।
--------------------------------------------------------
বিপ্লবে কি মানুষ মারা যায়েজ নাকি? (লালপতাকার বিপ্লব আর সরকারি বিপ্লব দুই ক্ষেত্রেই প্রশ্নটা করলাম)
নতুন মন্তব্য করুন