বাংলাদেশের জনগণই সুবিধাবাদী

মূর্তালা রামাত এর ছবি
লিখেছেন মূর্তালা রামাত (তারিখ: সোম, ১১/০৮/২০০৮ - ১১:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দুর্নীতিবাজে দেশ ছেয়ে গেছে। পরিবারতন্ত্র, অপশাসন আর লুটপাটের মহোচ্ছপে জনগণ নিষ্পেশিত। এ থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে। এই কথাগুলো কোনো রাজনীতিবিদের নয়। ১/১১ এর পরে দেশের আপামর জনসাধারণের মুখের বুলি ছিলো এরকমই। ফখরুদ্দীন সরকার তখন হয়ে উঠেছিলো জাতীয় মুক্তির প্রতীক।

এ সরকারের দু' বছর হতে চললো। নানারকম ব্যর্থতায় এ সরকারের জনপ্রিয়তা এখন তলানীতে। জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার সেই দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিকদের সাদরে বরণ করে নিতে উন্মুখ। যার প্রমাণ মিলেছে সদ্য সমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। পুরোনো অযোগ্য মুখগুলোই ঘুরেফিরে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে বীরবিক্রমে ক্ষমতায় ফিরে এসেছে।

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশের জনগণ তথা আমরা আসলে সবসময় জাতীয় স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখি। এই সুবিধাবাদী মনোভাবের কারণেই মূলত দেশের আজ এই অবস্থা। খামোখা রাজনীতিবিদদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।
তারা যতোই খারাপ হোক না কেনো আমরা আরো বেশি খারাপ কেনোনা আমরাই তাদেরকে খারাপ হতে বাধ্য করি। নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে যে যতো বেশি সুবিধা দিতে পারে আমরা তাকেই ভোট দেই, নির্বাচনে যে যতো বেশি টাকা ছিটাতে পারে আমরা তার পেছনেই দাঁড়াই; ভালো, যোগ্য লোকের পরিবর্তে দলীয় খারাপ, অযোগ্য লোকই আমাদের পছন্দ। আমাদের এই পছন্দকে প্রধান্য দিতে যেয়েই রাজনৈতিক দলগুলোতে ধান্ধাবাজদের জয়জয়াকার।

আমাদের সুবিধাবাদী চরিত্র যতোদিন না বদলাবে ততোদিন বাংলাদেশের কোনো উন্নতিই সম্ভব হবে না। আমরাই আমাদের নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছি। তাই দু'বছর পর দেখা যাচ্ছে অন্যেরা যখন দু'কদম এগিয়ে গেছে আমরা তখন যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি!


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আমরা নিজেরা ঠিক না হইয়া হুদাই যোগ্যপ্রার্থী আন্দোলন করি। এমনই আজব আমাদের দেশ! সুবিধাবাদী'তে ছাওয়া।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভীষণভাবে একমত। আমরা নিজেরা না বদলালে দেশ কখনোই বদলাবে না। শিক্ষিত ও আধুনিক মানুষ ক্ষমতায় না এলে দেশ সেই পুরোন অবস্থানেই রয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত কোন রাজনীতিবিদই (কথার কথা) মুজিব-জিয়ার গন্ডি পেরিয়ে চিন্তা করতে শেখেনি। সবার ধ্যান-ধারণা সেই পুরোন আমলের। দেশটাও চলছে মান্ধাতার আমলের নিয়মেই!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

জনগণের সামনে কোন কর্মসূচি নিয়া অন্যকোন বিকল্প রাজনীতি নিজেরে দৃশ্যমান করতে পারতেছে কি এই মুহুর্তে? রাজনীতির ব্যর্থতার দায় জনগণের উপর চাপাইয়া দেওয়া কি ঠিক?

১/১১র সরকার যাদের জেলে ঢুকাইছে, সরকার কি নিজেরে তাদের কোন বিকল্প হিসাবে দেখাইতে পারছে? বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আইসাই রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য কাইন্দা ভাসাইয়া দিয়া নিজেই আবার এগুলারে বাইর করতেছে। এই বাইর করার কাজটা কি তারা কোন জনদাবীর মুখে করতেছে? ভোটের সময় জনগণ ব্যালটে যাদের নাম দেখে তার মধ্য থিকা কাউরে না কাউরে সীল মারে। ব্যালটের সেই তালিকাভুক্তদের কৃতকর্মের দায় জনগণের ঘাড়ে চাপে কি?

আপনে জনগণ বলতে আসলে কী বুঝাইতে চাইতেছেন একটু কিলিয়ার করেন। আপনার কথার উদ্দেশ্য হয়তো ভালো, কিন্তু প্রকাশটা জর্জ ওয়াকার বুশ টাইপ হইয়া যাইতেছে।



অজ্ঞাতবাস

মূর্তালা রামাত এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
জনগণতো আমরাই। আবার আমাদের ভেতর থেকেই জন্ম নেয় রাজনীতিবিদ। ভালো রাজনীতিবিদ তৈরি করার দায়িত্ব জনগণেরই। অথচ আমাদের দেশের জনতার এ সম্বন্ধে কোনো ধারনাই নেই। এ কারণেই কোনো এলাকায় কোন সৎ জনপ্রিয় নেতা হঠাৎ গজানো ব্যবসায়ী প্রার্থীর কাছে হেরে যান। এই যে সিলেটে ময়ের কামরান এতো ভোট পেলো এর কারণ কী? কারণ তিনি নাকী কোন কিছুতেই না বলতে পারেন না। জনগণ এতেই খুশি। আমাদের সব অনায্য দাবী যিনি মানতে পারবেন আমরা তাকেই চাই। তার মানে দাঁড়ালো যে আমরা আমাদের সুবিধাটাই বড় করে দেখছি। এই যদি কামরান সাহেব জনগণকে খাল ভরাট, যেখানে সেখানে বাড়িঘর তোলা, পাহাড় কাটাসহ অন্যান্য সুবিধা না দিতেন তবে তিনি যত বড় যোগ্য প্রার্থীই হন না কেনো হয়ত কখনোই নির্বাচিত হতেন না।

বিকল্প রাজনীতিতো তখনই হবে যখন জনগণ তা চাইবে। কিন্তু অমরাদের সে সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি। যোগ্য লোক বলতে আমরা তাদেরই চিনি যাদের টাকা আছে, যারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে। এ দেশে লোকজনের কথা শুনলে মনে হবে তারা সবাই অন্যায়ের বিপক্ষে। তাহলে দেশে এতো দুর্নীতি কোথা থেকে হয়? ব্যালটের তালিকাভুক্তরা একা নিশ্চয় এই বিশাল দুর্নীতির জন্য দায়ী নয়। তারা দুর্নীতি করে কারণ আমরা তাদের কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সুবিধা দাবী করি।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণকেই সকল ক্ষমতা উৎস হিসেবে ধরা হয়। জনগণ যদি না চাইতো তবে দেশের রাজনীতির আবহ পাল্টাতো না। আমরা চাইলেই এখন সৎ লোকেরা রাজনীতিতে আসতে উৎসাহ বোধ করতে পারে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকেই এটা পরিষ্কার যে আমরা আসলে দলকে ভালোবাসি দেশকে নয়। এই যে দল কেন্দ্রীকতা এটাওতো আমাদের ব্যাক্তিগত পছন্দের অপছন্দের বিষয়। এটা থেকেও বেরিয়ে আসার চিন্তা আমরা কজন করে থাকি। আমরা এসব নিয়ে ভাবি না কারণ আমাদের কয়েক প্রজন্মের প্রায় পুরোটাই মোহগ্রোস্থ, ভোগবাদী আর স্বার্থান্বেষী।

মূর্তালা রামাত

নিঝুম এর ছবি

আমাদের সুবিধাবাদী চরিত্র যতোদিন না বদলাবে ততোদিন বাংলাদেশের কোনো উন্নতিই সম্ভব হবে না।

ভীষন সত্য...

--------------------------------------------------------
... বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ের গালি খাবেন, 'কীসের মুক্তিযোদ্ধা তুমি, কী দিয়েছ আমাদের'? তিনি তখন আবারো বাড়ির বাইরে যাবেন, আবারো কান পাতবেন, মা জননী কি ডাক দিল?

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

অবাঞ্ছিত এর ছবি

সহমত

I think , therefore i am - Descartes

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।