২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ বইমেলায় ঘুরছি। আজাদ স্যারকে দেখলাম তিনিও ঘুরছেন। আমি ইংরেজি বিভাগের ছাত্র হলেও বাংলা বিভাগে মাঝে মাঝে স্যারের ক্লাস করতে যেতাম। তবে স্যারের সাথে কখনোই তেমন কথা হয়নি। কারণ তাঁকে আমরা বেশ ভয় পেতাম। ভয় ভেঙ্গে আমার এক সহপাঠী তার কবিতা নিয়ে স্যারের কাছে গিয়েছিলো। তোমাদের সাথে আর কী কথা বলবো, তোমরাতো এখনও আযান দিলে লুঙ্গি হাটুর উপর তুলে মসজিদে দৌঁড়াও- বলে তিনি আমার সহপাঠীটিকে তাঁর রুমের দরজা থেকেই বিদায় করে দিয়েছিলেন। এর ঘটনার পরে ইচ্ছে থাকলেও ভয়ে স্যারের কাছে যাওয়া হয়নি। দূর থেকেই অপার শ্রদ্ধা নিয়ে তাকে দেখতাম। তার লেখাগুলো গোগ্রাসে গিলতাম।
বইমেলাতেও দূর থেকে দেখলাম স্যার ঘুরতে ঘুরতে আগামীর স্টলে যেয়ে বসলেন। আমিও লিটল ম্যাগাজিন কর্ণারে আড্ডায় ভিড়লাম। মেলা ভাঙ্গলো। তখন আমার খালার বাসা ছিলো চানখারপুলে। আমি হাঁটতে হাঁটতে সেদিকে রওনা হলাম। আমি যখন ঢাকা মেডিকেলের মূল গেটের সামনে তখন ঝড়ের গতিতে একটা পুলিশ ভ্যান আমাকে পাশ কাটিয়ে মেডিকেলের জরুরী বিভাগের গেটের সামনে থামলো। কৌতূহলি আমি হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। ততক্ষণে কিছু পুলিশ ভ্যান থেকে নেমে গেটের কাছে জটলা করে থাকা রিক্সাওয়ালাদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দিতে লাগলো। আমি ভ্যানের কাছে পৌঁছানোর আগেই দেখলাম পুলিশরা চ্যাংদোলা করে গাড়ি থেকে রক্তাক্ত একজনকে নামিয়েই জরুরী বিভাগের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গেটের কাছাকাছি হতেই উপস্থিত এক রিক্সআয়ালার কাছ থেকে জানতে পারলাম- একজন বুইড়া সাংবাদিকরে ছিনতাইকারীরা কোপাইছে!আরেকজন বললো- বুইড়া সাংবাদিক না, বুইড়া টিচার!
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত কেউ হবে ভেবে আমি প্রায় দৌঁড়িয়েই মেডিকেলের জরুরী বিভাগে প্রবেশ করে দেখি আমাদের প্রিয় হূমায়ুন আজাদ স্যারকে ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিঁনি একহাত দিয়ে তার গাল চেপে ধরে আছেন। রক্তে তার সারা শরীর লাল। নিজের চোখে দেখেও আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে সত্যিই তিনি আমাদের প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় লেখক হূমায়ুন আজাদ। কম্পিত হাতে আমি স্যারকে একটু ছুঁয়ে দেখলাম।
ডাক্তাররা এলেন। স্যারকে একটি কেবিনে নিয়ে যাওয়া হলো । রক্তে লাল হয়ে যাওয়া তাকে ঘিরে অসংখ্য লোক। স্যার হতবিহ্বল,সব কিছু ভেঙ্গে পড়া দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকাচ্ছেন। আমার মনে হলো বাংলাদেশের পতাকার লাল বৃত্তটা বড় হতে হতে ঢেকে ফেলছে সমস্ত সবুজ। এই প্রথমবারের মতো স্যারের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আমি অস্ফূট কণ্ঠে বললাম স্যার, আমরা কি এমন বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?
মন্তব্য
বানানটা এরকম হওয়ার কোন বিশেষ কারণ?
তার অনেক নীতির প্রতি শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু সব লেখা গোগ্রাসে গেলার মতো না।
কারো কাছে হয়ত না, কারো কাছে হয়ত...
মূর্তালা রামাত
তার গবেষণাধর্মী লেখা বই নিয়ে কেউ কোন বিতর্ক করেনি। কিন্তু যেটার জন্য সবচে সমালোচনা, মতান্তরে তার প্রাণনাশের কারণ, সেটা শিল্পমাণে কতটুকু উত্তীর্ণ সে কথা পরে, সে বইটা পুরো পড়ে শেষ করতে পেরেছে এমন কারো সাথে দেখা হয়নি।
আমিতো মুছে দেয়ার সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নই।
আর আপনার সাথে দেখা না হলেও তার শেষ বইটা পড়ে শেষ করেছে এমন অসংখ্য লোককে আমি চিনি।
মূর্তালা রামাত
ইংরেজি সাহিত্যের ভাষায় অ্যলিটারেশন বলে একটা টার্ম আছে যার মানে হলো কোন লেখকের লেখা কোন শব্দ বা লেখার অংশবিশেষ হুবুহু একইভাবে নিজের লেখার জন্য ব্যবহার করা।
এই ব্যবহার এর ফলে পূর্বের ওই লেখকের ভাবনা চিন্তা বর্তমান লেখার সাথে সংযুক্ত হয়। আমি একই পদ্ধতিতে স্যারের বইয়ের একটি লাইন কোট করেছি, তার বানানও।
মূর্তালা রামাত
এরকম কিছু মন্তব্যই তাঁর প্রতি যাবতীয় শ্রদ্ধাকে মাঝে মাঝে শূন্য দিয়ে গুণ করে দেয়।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
এরকম কিছু মন্তব্যই তাঁর প্রতি যাবতীয় শ্রদ্ধাকে মাঝে মাঝে শূন্য দিয়ে গুণ করে দেয়।
তাই বলেতো তাকে খুন করে ফেলে যায় না।
মূর্তালা রামাত
আহা.. আপনি দেখি ভুল বুঝে বসে আছেন।
আমার মন্তব্যে আপনি তাকে খুনের পক্ষে সমর্থন কোথায় পেলেন; যার প্রতি আপনি মাঝে মাঝে শ্রদ্ধাহীন হয়ে পড়েন তাকে খুন করে ফেলার কথা মনে হয় আপনার?
ক্যাম্নে কী?
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
না না ভুল বুঝি নাই।
আমি সামগ্রিক একটা মত দিয়েছি।
কারণ আমি বেশির ভাগ লোককেই তার প্রতি শ্রদ্ধাহীনতার কথা বলতে গিয়ে তার মৃত্যুকে সমর্থন জানাতে দেখেছি।
মূর্তালা রামাত
মানুষকে কখনো ডাটা বেসিসে বিচার করবেন না; দুজন মানুষের ক্ষেত্রে একইরকম তথ্য পুরোপুরি বিপরীত সিদ্ধান্ত দিতে পারে।
মন কিন্তু গণিত নয়।।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
যাক,ব্যতিক্রমী আপনাকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছিনা।
আপনারা আছেন বলেই জগৎটা এতো সুন্দর...
মূর্তালা রামাত
দুঃখের ব্যাপার হল স্যারের লাশ নিয়ে কাঁটা ছেড়া এখনো চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে , হুমায়ুন আজাদ ভাবমূর্তিপূজাকে ঘৃণা করতেন, তাই এই কাঁটা ছেড়ায় তারও রয়ে গেছে নীরব সায়, অদ্ভুত একজন লোক ! তবু তার প্রতি আমার শতকোটি লাল সালাম
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
অদ্ভুত একজন লোক
একদম ঠিক।
মূর্তালা রামাত
প্রসঙ্গক্রমে হুমায়ুন আজাদের একটি প্রবচন স্মরন করছি: "ধার্মিক কখনোই সম্পূর্ণ মানুষ নয়, অনেক সময় মানুষই নয়।"
যথোপযুক্ত স্মরণ।
মূর্তালা রামাত
'পাক সার জমিন সাদ বাদ' পুরো পড়তে না পারার কী কারণ আছে? আমি নিজে পড়েছি; দারুণ লেগেছে। ওখানে মিথ্যা কিছু লেখা হয় নি। যারা জামাত-শিবিরকে কাছ থেকে দেখেছে তাদের কাছে এ বই অস্বাভাবিক লাগার কথা না । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের সহবতের রেওয়াজ আছে। যিনি বইটা পড়তে পারেন নি তিনি বলবেন তাঁর রুচিতে বেঁধেছে। কিন্তু রুচিহীন বর্বর মানুষগুলোকে যখন আমরা প্রতিদিন টেলিভিশনে সংবাদপত্রে দেখি তখন আপনাদের রুচি কোথায় থাকে?
আমিও এটাই বলি।
মূর্তালা রামাত
আমরা কি করতে চাইছি তাকে নিয়ে ?শ্রদ্ধা না শ্রাদ্ধ ?
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
এটাই ভাবার বিষয়।
মূর্তালা রামাত
হৃদয়স্পর্শি লেখা।
ভয় নেই, আমার বিশ্বাস, যে যতই অপচেষ্টা করুক, হুমায়ুন আজাদ শ্রাদ্ধ হবেন না। শ্রদ্ধায় পূজিতই হবেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
শ্রদ্ধায় পূজিতই হবেন।
অবশ্যই।
মূর্তালা রামাত
হুমায়ূন আজাদ ভুল সময়ে ভুল ভূখন্ডে জন্মেছেন। অধিকাংশ লোকই তাঁকে ( আমিও বুঝতে পারি এমন দাবি করি না ) বুঝতে পারে না। তাই হুমায়ূন আহমেদের মত তৃনভোজী লেখকেরা তাঁর প্রতি আক্রমনকে জায়েজ করার চেষ্টা করে।
পুনশ্চঃ পাক সার জমিন না পড়তে পারার কি আছে , সেটা আমি জানি না। আমি নিজে বইটা কয়েকবার পড়েছি, প্রতিবারই মনোযোগের সাথে। এটুকু সত্য যদি কারো মেনে নিতে কষ্ট হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, সাহিত্যে অশ্লীলতা ব্যাপারটা খুব সহজ কিছু না। আদ্যোপান্ত রমনক্রিয়ার বর্ণনাও প্রাসঙ্গিক হতে পারে - যেখানে সামান্য চুমুও অশ্লীল হতে পারে। এত সহজেই সীমারেখা টানা যায় কিনা, তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আমার মনের কথাগুলোই বলেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
সংশোধনী- আমার তৃতীয় মন্তব্যে
অ্যালিউশনের স্থানে ভুলক্রমে অ্যালিটারেশন হয়েছে।
এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
মূর্তালা রামাত
চিত্কার করে বলতে ইচ্ছে করে -- আমরা কি এমন বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?
যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
নতুন মন্তব্য করুন