কো উন ১৯৩৩ সালে কোরিয়ার গুনসানে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে কোরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী এই কবির এখন পর্যন্ত কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাসসহ তার প্রায় ১৩৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ১৪টি ভাষায় অনূদিত তার বিশাল সাহিত্যকর্মের ভেতর সাউন্ড অব মাই ওয়েভস,ওয়ার্ডস উইদাউট বর্ডার বিয়ন্ড সেলফ:জেন পোয়েমস, লিটল পিলগ্রিম, টেন থাউজেন্ড লাইভস, এবাইডিং প্লেসেস:কোরিয়া অ্যান্ড নর্থ, ফ্লাওয়ার্স অব এ মোমেন্ট, থ্রি ওয়ে ট্যাভার্ন: সিলেকটেড পোয়েমস, টোকডো লোন আইল্যান্ড সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এই কবি কোরিয়ান সাহিত্য পুরস্কার(১৯৭৪,১৯৮৭), ম্যানহে সাহিত্য পুরস্কার(১৯৮৯), দেইসান সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), চিকাদা পুরস্কার (পূর্ব এশীয় কবিদের জন্য সুইডিশ সাহিত্য পুরস্কার)২০০৬, গ্রিফিন পোয়েট্রি পুরস্কার (২০০৮)সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলায় ভাষান্তরিত কবিতাগুলো তার টোকডো লোন আইল্যান্ড,বুদ্ধধর্ম, টেন থাউজেন্ড লাইভস, ওয়ার্ডস উইদাউট বর্ডার থেকে নেয়া হয়েছে।
নামহীন
১.
দুই ভিক্ষুক
ভাগ করে খায় খাবার
নতুন চাঁদ তীব্র আলো ছড়ায়।
২.
গরিব বাড়ির আঙ্গিনায়
চাঁদ যেনো ভাপা পিঠাকেও হার মানায়।
৩.
বন্ধু হও
শত্র“কে জানো
শত্র“ হও
বন্ধুকে চেনো
এ কেমনতর খেলা?
৪.
সহস্র ফোঁটা
মরা ডাল থেকে ঝুলে আছে
বৃষ্টি অহেতুক ঝরে নাই
৫.
নিঃশব্দে
মাটিচাপা রজন হলদে পাথর হয়ে গেলো
ওপরে ঝরছিলো তুষার।
১৫ এপ্রিল, ১৯৯২
সারাদিন ঘরেই ছিলাম।
বন্ধুরা এসেছিলো
চলেও গিয়েছিলো।
তাদের যাবার পর হয়েছিলো
বৃষ্টিঝড়।
তিব্বতের, লাসায়,
সর্দার লামা মারা গিয়েছিলো।
১৬ এপ্রিল, ১৯৯২
সারাদিন ঘরেই ছিলাম।
কেউ আসেনি।
মৃত লামাকে এক পাহাড়চূড়োয় নেয়া হয়েছিলো।
ক্ষুধার্ত শকুনের ভেতর
গোটাতক ভারতবর্ষে
জড়ো হয়ে, পবিত্র লাশটির ওপর অশ্র“বর্ষণ করছিলো।
১৭ এপ্রিল, ১৯৯২
আবারো সারাদিন ঘরেই
ছিলাম। এনসাইক্লেপিডিয়া পড়ছিলাম,
যা পড়ছিলাম, ঝটপট ভুলেও যাচ্ছিলাম।
লামার হাড়গুলোই কেবল পড়েছিলো।
ওহ্ শাশ্বত নির্ভানা!
১৮ এপ্রিল, ১৯৯২
আজও সারাদিন ঘরেই।
অনুভব করলাম
লামার অজ্ঞাতেই তার
এক ছেলে ছিলো।
এক রাতে সে মৃত লামার পড়ে থাকা হাড়গোড়
নিয়ে চলে গেলো;
সূর্য ওঠার পর , হাড়ের
একজোড়া নেকলেস বানালো সে,
একটি নিজের জন্য
অপরটি আমেরিকান কবি
অ্যালেন গিন্সবার্গের কাছে
বিক্রির জন্য, চমৎকার
নির্ভানা এখন নিউইয়র্ক এবং
লাসায়!
শীত ভ্রমণ
শীত বাতাসের সৌরভ না নিয়েই
শীত দিয়ে কীভাবে তুমি এটা বানাবে?
ব্যাঙ, আর মাটির নিচের
সাপের কাছে
ঐ সুগন্ধের স্বপ্ন
পুরোপুরি অচেনা।
পুরোপুরি অচেনা,
আর সবশেষে তুমি ওখানেই পৌঁছাবে।
পুরেপুরি একদম, অচেনা!
ছোট্ট ঝরনাটি
ইয়ংতুন গ্রাম কীভাবে গ্রাম হবে
ছোট্ট ঝরনাটি ছাড়া?
তুষারপুতুলগুলো বিরতিহীন
ঝরনার গাঢ় জলে ঝরে
আর মিশে যায়।
কী স্নিগ্ধ স্থির স্থিরতা,
যেনো গায়ে তুষার জড়িয়ে
ইয়ং-সালে’র বৌ জল আনতে যায়,
সরু ছোট্ট জগটি মাটিতে নামিয়ে,
কলস তুলে নিয়ে সে তুষারপুতুলের মিশে যাওয়া দেখতে দেখতে
জল নিতে ভুলে যায়:
সেই স্নিগ্ধ স্থির স্থিরতা।
চাঁদ
প্রতি চাঁদ রাতেই, সে প্রার্থনা করতো।
অবশেষে, চল্লিশে এসে, উলনামের মায়ের ছেলে জন্মালো।
গর্ভের আগে স্বপ্নে,
সে গোগ্রাসে খেতো চাঁদ ।
ছেলের জন্মের পর, উলনামের মা তাই
প্রতি চাঁদ রাতেই
আনমনা হয়ে যেতো।
গভীর এক রাতে, বাসন ধোয়ার সময়
তার হাত ফসকে একটি থালা ভেঙ্গে যেতেই-
মেঘের আড়ালে লুকালো চাঁদ
আর পৃথিবীটা অন্ধ হয়ে গেলো।
মন্তব্য
চমৎকার। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
.... আমিও ভুলে গেছি কী করে লিখতে হয় ভালো লাগার মন্তব্যটুকু।
যা লিখেছেন তাই যথেষ্ট।
মূর্তালা রামাত
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হু, সেটাই।
মূর্তালা রামাত
২.
গরিব বাড়ির আঙ্গিনায়
চাঁদ যেনো ভাপা পিঠাকেও হার মানায়।
এটাকেই কি উপলব্ধির ঐক্য বলে, যে ঐক্যটা বোধ করলাম সুকান্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে?
কো উন জেন পোয়েমসও লিখেছেন দেখা যাচ্ছে। ওগুলোর অনুবাদ করতে পারেন কিছু?
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
সহস্র ফোঁটা
মরা ডাল থেকে ঝুলে আছে
বৃষ্টি অহেতুক ঝরে নাই
কিংবা চাঁদ , সবগুলোই দুর্দান্ত লাগলো মূর্তালা রামাত । ধন্যবাদ ।
---------------------------------------------------------
'...এইসব লিখি আর নাই লিখি অধিক
পাতার তবু তো প্রবাহেরই প্রতিক...'
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
আপনাকেও ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
নতুন মন্তব্য করুন