গত দু বছর ধরে এদেশের রাজনীতি নিয়ে অনেক কপচাকপচি পর দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল দিন বদল কিংবা দেশ বাঁচাও স্লোগান নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় শামিল হয়েছে, এই করবো সেই করবো বলে দেশ কাঁপিয়ে দুয়ারে দুয়ারে বরাবরের মতোই ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছে। আমার ভোট আমি দেবো দেখে শুনে জেনে দেবো-একজন ভোটার হিসেবে দেখতে, শুনতে আর জানতে গিয়ে দেশ বাঁচানোর অগ্রসৈনিকদের পরিচয় পেয়ে যারপরনাই হতাশ হলাম। দেশ বাঁচাতে বিএনপি-জামাত জোট থেকে মনোনয়ন প্রাপ্ত স্বাধীনতা বিরোধী এসব কুখ্যাত লোকেরা দেশ কীভাবে বাঁচাবে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এরা হলো-
মতিউর রহমান নিজামী
পাবনা ১ আসনের চারদলীয় জোট মনোননিত প্রার্থী।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির। একাত্তরে তার ভূমিকার জন্য এলাকার লোকজন তাকে মইত্যা রাজাকার বলে চেনে। আল বদর বাহিনীর প্রধান হওয়ার ফলে নিজের এলাকা পাবনার সাঁথিয়ায় সে ভয়ঙ্কর প্রভাব বিস্তার করে। তার প্রত্যক্ষ সহায়তায় পাক বাহিনী সাঁথিয়া-বেড়া এলাকায় প্রায় ১২শ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে এবং এলাকার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর লোমহর্ষক অত্যাচার নির্যাতন চালায়।
মাওলানা আবদুস সোবহান
পাবনা ৫ আসনে বিএনপি-জামাত মনোনীত প্রার্থী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলো সে। তার নেতৃত্বে ফরিদপুর উপজেলার ডেমরারর বাউশগাড়ী খালে চলে নির্মম গণহত্যা। এখানে প্রায় ৩শ নারী-পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পাবনার নাজিরপুর এলাকায় ১৯৭১-এর ১ ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে চালানো গণহত্যার কথা বলতে গিয়ে এলাকার লোকেরা এখনো শিউরে ওঠে। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজেও পাকবাহিনীর গণহত্যার নেতৃত্ব দেয় সে ।
আলী আহসান মুজাহিদ
ফরিদপুর ৩ আসনে জোটের হেভিওয়েট প্রার্থী।
মুক্তিযুদ্ধেও সময় সে ছিলো ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকা মহানগর সভাপতি এবং ঢাকার আল বদ;ও বাহিনীর কমান্ডার। ফকিরাপুলের ফিরোজ মিয়া ওরফে ফেরু মেম্বারের সাহায্যে সে ৩০০ সদস্যেও এক সশস্ত্র স্কোয়াড গড়ে তোলে। তার নেতৃত্বে এই স্কোয়াড মতিঝিল, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টনসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হত্যা, লুণ্ঠন, নারী নির্যাতন পরিচালনা করে।
সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী
চট্টগ্রাম-২ ও চট্টগ্রাম-৬ আসনে চরদলীয় জোটের প্রার্থী।
এুক্তিযুদ্ধেও সময় তার বয়স ছিলো ২২। তাদেও বাসভবন গুডস হিল মুক্তিযুদ্ধেও সময় ছিলো কসাইখানা। ১৭ জুলাই ১৯৭১-এ ছাত্রনেতা ফারুককে ধরে এনে পাকবাহিনীর সহায়তায় সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী হত্যা করে। চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় এবং কুন্ডেশ্বরী বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর বাবু নূতন চন্দ্র সিংহের হত্যাকান্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকা।চট্টগ্রামের একজন শহীদ সন্তান শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর গণতদন্ত কমিশনকে জানান, তার বাবা শহীদ শেখ মুজাফফর আহমদ ও ভাই শহীদ শেখ আলমগী কে সালাউদ্দীন কাদেও চৌধুরী ও তার সহযোগীরা পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগীতায় হাটহাজারী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে তাদের মেরে ফেলা হয়।
গিয়াস কাদের চৌধুরী
চট্টগ্রাম ৫ আসনে জোট প্রার্থী।
তার বিরুদ্ধে ভাই সালহউদ্দীন কাদের চৌধুরীকে মুক্তিযোদ্ধা নিধনে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী গিয়াস কাদের চৌধুরীও তাদের গুডস হিলস্থ বাসভবনে মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনে অংশগ্রহণ করতো।
(চলবে)
মন্তব্য
হুম...এই রাজাকারদের পরিচয় গুলো আর ভাল করে সামনে নিয়ে আসুন ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
খু্ব দরকারি পোস্ট। ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------
The philosophers have only interpreted the world in various ways; the point, however, is to change it.
[MARX : Theses on Feuerbach]
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব রাজাকার আল বদরদের পরিচয় নিয়ে আসলে খুব ভাল হয় ।
ধন্যবাদ।
ঐসব নির্বাচনী এলাকার মানুষগুলা কেম্নে পারে এদেরে ভোট দিতে? কীভাবে সম্ভব?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পারে বস। এই দেশে নিজামী মন্ত্রী হওয়ার পরই আমি এইসব নিয়া কথা বলা ছাইড়া দিসিলাম, কিন্তু এখন আবার ব্লগার-প্রণোদনায় মাঝে মাঝে ঢুকে যাই। মেজাজ আবার খারাপ হয়ে যায়, নিজের মাথারই চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করে। এই ভোট ওরাই দেয়, আমি আপনি যেইটারে আমাদের দেশ মনে করি, সেই দেশেরই মানুষ ওই ভোটাররা, ওই মুসলিম উম্মা, ওই জাতীয়তাবাদী কসাইয়ের চারা-নাড়া-রা। দেশ আসলে তাদেরই। দেশকে বাঁচানো কিংবা মারাও তাই বস্তুত ওদেরই এখতিয়ার। আমরাই বরং পরিচয়হীন পথভ্রষ্ট সংখ্যালঘু।
['মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে' ব'লেও যাদেরকে জানতাম আমরা, তারাও এই দেশের মুক্তিযুদ্ধকে ঘোর-কলঙ্কিত ক'রে এই রাজাকারদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছিল ভোটে জেতার জন্য। হায় রে ভোট! :(]
-----------------------------------
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
গলার মালা হওয়ায় বিনপি কাকের মত চোখ বন্ধ করে থাকবে WAR CRIMINALদের ব্যাপারে । আর যদি নির্বাচিত হয়, নিজেদের শাসনকাল নির্বিঘ্ন রাখার নিমিত্তে আওয়ামী লীগ বোঝাতে চেষ্টা করবে, এই ইস্যুটা নিয়ে আসা হয়েছে স্বাধীনতাপন্থীদের বিপদে ফেলার জন্য ।
এর মুল কারণ criminalগুলো পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করেছে । সেই সাথে নতুন প্রজন্মের কাছে এরা ভদ্র হিসাবে নিজেদের পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছে ।
আর প্রগতিবাদীদের বিপদ এইখানে, তাদের কোন প্রপাগান্ডা নাই । কেবল নিজগুনে যারা প্রগতিবাদী হবে সেটাই তাদের ভরসার জায়গা ।তাই ইস্যুটা নিয়ে তারা কতদুর যেতে পারবে সেটা সময়ই বলে দিবে ।
আর ভরসার অন্য জায়গা হলো, "Enemy of the people" (Ebsen) দের থামানোর কোন পদ্ধতি আজও আবিস্কূত হয়নি ।
লেখককে প্রয়োজনীয় পোস্টের জন্য ধন্য্যবাদ ।
নদী
অতি প্রয়োজনীয় পোস্ট। সিরিজ চলুক।
.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...
.......................................................................................
Simply joking around...
সিরিজ চলুক। থ্যাংকস।
কিন্তু দেশ ওদেরই। ওইগুলাও চলতে থাকবে মূর্তালা।
হ্যাঁ, আমি হতাশাবাদী। আই ক্যান'ট বাট ...
------------------------------------
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
নতুন মন্তব্য করুন