(পূর্ব প্রকাশের পর)
এই লেখার প্রথম খণ্ডের পর অনেকেই আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে জানতে চেয়েছেন আমি চারদলীয় জোটের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে এ ধরণের পোস্ট দিয়েছি কিনা? আমি তাদের কথায় অবাক হয়েছি। এই লোকগুলো খুনী, নরপিশাচ- একথা প্রমানিত সত্য। এদের মতো খুনিকে জেনেশুনে সমর্থন দেয়াটা অবশ্যই যে কারো বিবেকে বাধবে। অথচ এদেরকেই দেশের আইনপ্রণেতা হবার জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়েছে !! এ ধরণের ঘটনা মনে হয় শুধুমাত্র বাংলাদেশের মতো সব সম্ভবের দেশেই হওয়া সম্ভব। যেনতেনভাবে ক্ষমতার মসনদে যাওয়াটাই যে সবকিছুর চাইতে যে বড়-এসব খুনিদের নমিনেশন পাওয়াটা সে কথারই প্রমাণ দেয়।
যে দলটি বা গোষ্ঠীটি এদের পুণরায় নির্বাচন করার সুযোগ করে দিয়ে তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে তাদেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ধিক্কার জানাই। মুষ্টিমেয় এ কজন নরপিশাচকে নমিনেশন না দিলে দলের কী এমন ক্ষতি হতো? কোনো ক্ষতিই হতোনা বরং দেশ উপকৃত হতো, দেশের মানুষ খুশি হতো। ২০০১ এর নির্বাচনে হাজারী, ইকবাল, তাহের, মকবুলসহ কুখ্যাত গডফাদারদের নমিনেশন দিয়ে আ.লীগ যেভাবে সমালোচিত এবং বিপর্যস্ত হয়েছিলো, একইভাবে বিএনপিও এইসব নরপশুদের নমিনেশন দিয়ে সেভাবেই সমালোচনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে, সম্ভবত বিপর্যয়েরও।
অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া এসব নরঘাতকেরা যদি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে তবে নাসিরউদ্দীন পিন্টু, বাবর বা অন্য দুর্নীতিবাজদের দোষ দিয়ে লাভ কী? এসব নরঘাতকের অনেকেই পূর্বে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলো !! অর্থাৎ আমরাই অনেকে জেনে, অনেকে না জেনেই তাদের ভোট দিয়ে স্বীকৃতিদানের মাধ্যমে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছি। শুধুমাত্র দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে এসব লোকের ব্যাপারে আমরা নমনীয় থেকেছি। এটিই হয়েছে সবচেয়ে বড় ভুল। এই ভুল শোধরাবার উপায় হলো এইসব নরপশুদের চিনে রাখা এবং নিজে তাদেরকে ভোটের ময়দানে বর্জনের পাশাপাশি অন্যদেরও বর্জন করতে বলা।
দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী
পিরোজপুর-১ আসনে বিএনপি-জামাত মনোনীত প্রার্থী
পিরোজপুরের এ মাওলানা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক যুদ্ধবিরোধী কার্যকলাপে ভূমিকা রাখে। লুণ্ঠনের পাশাপাশি বহু ঘরবাড়ি পোড়ানো, হিন্দু স¤প্রদায়ের সদস্যদের চাপের মুখে ধর্মান্তরিত করা, মুক্তি যোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে পাক বাহিনীকে দেয়া ও তাদের বাবা-মাসহ আত্মীয়স্বজনকে হয়রানি, নির্যাতনের অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চার রাজাকার সঙ্গীকে পাঁচ তহবিল নামে একটি যৌথ তহবল গঠন করে লুটের মালামালকে গণিমতের মাল আখ্যা দিয়ে ভাগাভাগি করতো এই পাঁচজন। ৭১ সালের ৬ মে তার মদদে পিরোজপুর মহকুমার সাব ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদকে ধরে নিয়ে বালেশ্বর নদীর পাড়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সাইদী বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সুরা কমিটির সদস্য।
মুহাম্মদ কামরুজ্জামান
শেরপুর-১ আসনে চারদলীয় জোট মনোনীত প্রার্থী
১৯৭১ সালের আগে দোকানে দোকানে মাল ফেরি করে বিক্রিকারী মুহাম্মদ কামরুজ্জামান ৭১ এ টাঙ্গাইল, জামালপুর ও শেরপুর এই তিন জেলার আল বদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলো।শেরপুর শহরের সুরেন্দ মোহন সাহা বা সুরেন স্যারের বাড়িটি কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে দখল করে নেয় রাজাকার বাহিনী। পরবর্তীকালে এই বাড়িটি হয়ে ওঠে জল্লাদখানা। এখানে পাকিস্তানি আর্মিদের হাতে অসংখ্য নারীকে তুলে দিয়েছিলো সে। সেই ধর্ষণ অপকর্মে কামরুজ্জামান নিজেও অংশগ্রহণ করতো। এ বাড়িতে অনেক নারী পুরুষকে হত্যার পর পেছনের পুকুরে তাদের লাশ ফেলে দেয়া হতো। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ বদিউজ্জামান, শহীদ গোলাম মোস্তফাকে ৭১ এ ধরে নিয়ে যায় কামরুজ্জামান স্বয়ং। পরে আহম্মদনগরের আর্মি ক্যাম্পে বদিউজ্জামান এবং শেরী ব্রিজের নিচে গোলাম মোস্তফাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মুহম্মদ কামরুজ্জামান বর্তমানে জামায়াতের সিনিয়র সেক্রেটারি জেনারেল।
এটিএম আজাহারুল ইসলাম
রংপুর ২ আসনে জামাত–বিএনপি জোটের মনোনীত প্রার্থী
১৯৭১ সালে এ ঘাতক রাজাকার পাবনা জেলার শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলো। কুখ্যাত এই রাজাকার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মহান সংগঠক কাসিমউদ্দিন হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেয়। ৭১ এর ৩০ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত দমদম ব্রিজে পরিকল্পিত গণহত্যা চালানো হয় তার নেতৃত্বে। সেখানে রংপুর কারামাইকেল কলেজের সাত শিক্ষককে সার বেধে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই গণহত্যায় প্রাক তিন ট্রাক বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়েছিলো। বর্তমানে সে জামায়াতের সহকারী সাধারণ সম্পাদক।
মোহাম্মদ আব্দুল খালেক
সাতক্ষীরা-২ আসনে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী
মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরা জেলার শান্তি বাহিনীর সভাপতি ছিল আব্দুল খালেক। তার লুটতরাজ, ধর্ষণ, হত্যা, হিন্দুদের জমিজমা দখল প্রভৃতি বর্বরতার কারণে এলাকার লোকজন তাকে এখনও জল্লাদ খালেক নামে অভিহিত করে। সাতক্ষীরার বৈতাড়ি, কুষখালি, বাগদাড় হত্যাকান্ডে সে সরাসরি নেতৃত্ব দেয়।কাথুন্ডা গ্রামের আবুল হোসেন গাজী হত্যা, মনসুর আলী হত্যাসহ ঘোনা ইউপির দফাদার বাড়ি কাথুণ্ডার তান্তিপাড়ার ২টি গণধর্সণে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
(চলবে)
প্রথম খণ্ড পাবেন এখানে
http://www.sachalayatan.com/murtala31/20584
মন্তব্য
শুনবেন না কারো কথা। লিখে চলুন। কেউ উট হতে চাইলে তাকে জোর করে মানুষ করার প্রয়োজন নেই।
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
ভাই এই দলে আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির কেউ নাই। সেদিন কোন এক চ্যানেল এ শুনলাম লেজেহোমো এরশাদ ও নাকি কিভাবে যেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। এ ব্যাপারে কিছু জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন। ধন্যবাদ।
আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির কাউকে এখনো পাইনি। জাতীয় পার্টি থেকে দুজন স্বাধীনতাবিরোধীকে প্রাথমিক পর্যায়ে মনোনয়ন দিলেও পরে তা বাতলি করা হয়। আর এরশাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা পাবেন এখানে-
http://www.sachalayatan.com/murtala31/17860
আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
আমি আপনাকে সমর্থন জানাতে চাই, কিন্তু বর্ণনাগুলোর রেফারন্সে দি লে আরো ভা লো হত ।
শেষ খণ্ডে প্রয়োজনীয় রেফারেন্স পেয়ে যাবেন।
মূর্তালা রামাত
চলুক।
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
ওই তো! বোঝো এখন। আমি আশা করি তোমার সাথে ওইরকম লোকদের এইরকম যোগাযোগ নাই, যারা ওইরকম দল-এর আর যারা তোমাকে ওই সুবাদে এই কথা জিজ্ঞেস করবে ব্যক্তিগত জিজ্ঞাসায়, যে- তুমি ওই দলদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রপাগান্ডা নিয়ে নেমেছো কি না। সো, যাদের মধ্যে থাকি আমরা, তারাও এইগুলাকে এইরকম ভোট-ক্ষমতা-অস্ত্র-মামলা-হামলা সর্বস্ব প্রচলিত-রাজনৈতিক ব্যাপার হিসেবেই দ্যাখে কেবল, এর চেয়ে গভীরে যেতে পারে না বা চায় না।

তোমার এমন বন্ধুরাই হয়তো যুদ্ধাপরাধীকে ভোট দেয় কোনোদিন, বা ওইরকম কারো নির্বাচনী অভিযানে উদ্ভট ট্রাকের পিঠে চ'ড়ে দুপুরবেলার ফ্রি তেহারি বুঝে নেয়। কে জানে- এমন কোনো বন্ধুই হয়তো বা একদিন এইসব কথাবার্তা এইভাবে বলার অপরাধে, 'আদর্শিক কারণে' তোমার নিকট-পিঠে ছুড়ি মারার সুযোগটিও হাতছাড়া করবে না।
খুব বাজে লাগে এইগুলা ভাবলে। ভীষণ ট্র্যাপ্ড আর অসহায় লাগে।
ভালো থেকো মূর্তালা।
-----------------------------------
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ইতিহাস ও সত্যকে উপেক্ষা করার প্রবণতাই আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধপতনের মূল কারণ। দল, গোষ্ঠীর উর্ধ্বে গিয়ে তাকাতে হবে দেশের দিকে। ধন্যবাদ মুর্তালা রামাত।
আগের সরকারগুলোর বিভিন্ন নেতারা (এবারও যারা প্রার্থী হয়েছে) নির্বাচিত হয়ে বা দলীয় প্রভাবে যেসব অপকর্ম করেছে সেগুলোও সম্ভব হলে তুলে দিতে পারেন।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
শেরপুর-১ আসনের এই হানাদার আলবদরটার নাম "কামারুজ্জামান" ।
নতুন মন্তব্য করুন